কথা বলবা না? বলবাই না?? আমিই বলি তুমি কেবল কান খুলে রাখো...
কোথা থেকে শুরু করবো ভাবছি.... কথা গুলো এতটা এলোমেলো ঘুরপাক খায় যে আদি-অন্ত সমীকরন দাড় করানো কষ্ট সাধ্যই বটে। আচ্ছা শুরু করা যাক কোন বালু চর থেকে যেখানে শুধু বালু আর বালু, তুমি পা ফেললেই চিক চিক করতে থাকা বালু গুলো তোমার পা গলে ছড়িয়ে যাবে পায়ের ছাপগুলো হুবহু নকল করে করে, রাতে যদি জোছনা পাও তবে সেই বালুমেলায় তুমি পাবে রুপালী জোছনার শুভ্র-সাদা উচ্ছলতা অথবা সেটা যদি হয় নিকষ কালো রাত? আমি ঠিক জানিনা সেই বালু চরটি কেমন লাগবে, কারন আমি জোছনার শুভ্রতাই কেবল অনুধাবন করতে পেরেছি আঁধারের নিস্তব্ধতা আর নিকষ কালো বালু কতটা কালো হয় আমি ঠিক মনে করতে পারছি না। তবে যদি কখনো খুব নিঃসঙ্গ হয়ে যাও অবশ্যই যেও সেই বালুচরে, যেও একদিন....
মাঝে মাঝে খুব অদ্ভুত অনুভুত হয় যখন শীতল বুনটের খোলা হাওয়াগুলো ছুঁয়ে যায় হাতে, মুখে, কানে ফিস-ফাস, তখন খুব ইচ্ছে করে পিছনে ফিরে তাকাতে, হয়তো অবচেতন মনটা বোকার মতো ভেবে বসে তুমি পিছনেই আছো কোথাও আমাকে ফিস ফাস করে বলছো কিছু.... আসলেই বলছো কি কিছু? নাহ এলোমেলো কথাগুলো জমাট বাঁধছে না আরো ছড়িয়ে ছিটিয়ে যাচ্ছে তাই না? আচ্ছা চলো তবে তোমাকে নিয়ে যাই কোন এক অনেক উঁচু অট্টালিকার একদম উঁচুতে, তুমি চারদিক তাকিয়েই অবাক হয়ে দুই হাত মুখে দিয়ে হয়তো বলবে "দুনিয়াটা এখনো কি গোল!"
এই গোল দুনিয়ার হাসপাতালগুলোতে কত পারসেন্ট লোক কোমায় আছে তোমার কাছে এই ব্যপারে কোন স্ট্যাটিসটিকস কি আছে? জানো এরা কিন্তু আশে পাশের মানুষগুলোর কথা শুনতে পায়, কেবল সিগন্যাল ঠিকমতো পাঠাতে পারে না ওদের নিজস্ব অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে, মাঝে মাঝে মনে হয় বেঁচে আছি এটাই সর্বোচ্চ বিষ্ময়। আর বিষ্ময়ের দ্বীতিয় ধাপ হলো যখন আর বেঁচে থাকবো না, তখন কোথায় যাবো বলতে পারো? হয়তো তোমাকে দেখতে পাবো অথবা পাবো না, কি জানি! ....
কোন অভিমানে তুমি এমন চুপ করে আছো বলতে পারো?
একটা রুপকথা বলি শুনো, কোনো এক অনেক সুন্দর দেশে এক যে ছিলো চুপকুমারী আর এক ছিলো বাঁচাল-কুমার, চুপকুমারী যে কথা বলতে জানতো না এমনটি নয় কিন্তু বেশিরভাগ কথা মনেই চেপে রাখতো আর তার সুন্দর সুন্দর চোখ দিয়ে অনেক কথা বলতে পারতো আর বাঁচাল কুমার সেগুলো ঠিকমতো খেয়াল না করার কারনে সে ভেবে বসলো সে হয়তো চুপকুমারীর চোখের ভাষাঠিক মতো পড়তে পারছে না,তার উল্টোপাল্টা বকবকানির জন্য চুপকুমারী অভিমান করে মুখ হাউপ করে বসে থাকতো, বাঁচাল-কুমার বিপদে পড়ে গিয়ে দোকানে দোকানে চশমা খুঁজতে লাগলো, যাতে চুপকুমারীর কথাগুলো ঠিকমতো পড়া যায়, কিন্তু বাঁচালকুমারের কাছে বেশি টাকা-পয়সা ছিলো না তাই সে "মেড ইন চায়না" মার্কা একটা চশমা কিনে নিয়ে আসলো কিন্তু সে সঠিক লেন্স বাছাই করে আনলো না, মোটা কাঁচের চশমাটা পড়লেই বাঁচালকুমারের চোখ গুলো অনেক বড় বড় দেখাতো, এখন যে সমস্যাটা হলো সে ঠিকমতো দেখতেও পারছিলো না, সে কারনে আগে যাও চুপকুমারীর চোখ দেখে টুকি টাকি কথা বুঝতো এখন তাও বুঝতে পারছিলো না এমনকি অভিমানগুলোও দেখতে পারছিলো না, তাই তার বকবকানির মাত্রা গেলো বেড়ে, আর চুপকুমারী হয়ে গেলো আরো নিশ্চুপ। বাঁচালকুমার যেমনটি ভালোবাসতো চুপকুমারীকে, চুপকুমারীও অনেক ভালোবাসতো বাঁচালকুমারকে, মাঝে মাঝে দুজনেই অনেক গল্প করতো, কিন্তু দু'জনের বোঝাপড়ার ঝামেলা থাকার কারনে তারা ভুলেই গেলো যে তারা দু'জন দু'জনকে কতটা ভালোবাসে, তো কিছুদিন পর বাঁচালকুমার রাগ করে তার চশমা সিটি কর্পোরেশনের ডাস্টবিনে ফেলে দিলো আর নতুন একটা চশমা কিনে নিলো এবার সে পরিস্কার দেখতে পাচ্ছে, তার ধারনা সে চুপকুমারীর কথাও ঠিক মতো বুঝতেও পারছে, তাই তারা দু'জন আবার হাসিখুশি হয়ে উঠলো আর অনেক গল্পে মেতে উঠলো, এভাবেই বেশ কিছুদিন অনেক আনন্দে কেটে যেতে লাগলো,অবশেষে অনেকদিন পর একদিন বাঁচালকুমার তার চশমাটা খুলে দেখতে পেল আসলে সেই চশমায় কোন কাঁচই ছিলো না দোকানী ভুল করে চশমার ফ্রেমে কাঁচ দিতেই ভুলে গিয়েছিলো! অথচ এই চশমাকেই বাঁচালকুমার ভালবাসা বোঝার অব্যর্থ অবলম্বন ভেবেছিলো.... ওদের সব কিছু ঠিকমতোই চলছিলো অনেক ভালোবাসায় দুজন দুজনকে ঘিরে রাখছিলো আর বোঝাপড়ায়ও কোন ঘাটতি হচ্ছিলো না কিন্তু হঠাৎ একদিন অজানা অভিমানে চুপকুমারী আবার চুপ হয়ে গেলো আর তার চোখটিও বন্ধ করে রাখলো এখন বাঁচালকুমার পড়ে গেলো বিপদে কারন সে এখন চুপকুমারীর মনও পড়তে পারছে না কথাও শুনতে পারছে না, বাঁচালকুমার চুপ কুমারীর হাতটি ধরে বসে বসে এলোমেলো কথা বলতে লাগলো যদি চুপকুমারী শুধু একবার চোখ মেলে তাকায় এই ভরসায়....
ছেলেটি তার মৃত ভালবাসার মানুষটির হাত ধরে এভাবেই এলোমেলো কথা বলতে লাগলো গল্প করার বাহানায়........