somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমি আস্তিক কারণ নাস্তিকতা হলো অসুস্থ মস্তিস্কে এলোমেলো ভাবনার ফসল

০৪ ঠা আগস্ট, ২০০৯ সকাল ১১:০৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বিশাল মহাবিশ্বের আদি অবস্থা কিরকম ছিল, আদৌ কোন অস্তিত ছিল কিনা তা নিয়ে বিতর্কের কোন শেষ নেই। যুগে যুগে দার্শনিকেরা যুক্তি দিয়ে তাদের অবস্থান ব্যাখ্যা করেছেন। কেউ বলেছেন সৃষ্টিকর্তা বলে অবশ্যই কেই আছেন আবার কেউ এর বিপক্ষে মত প্রদান করেছেন। সৃষ্টিকর্তা নিয়ে আমার মত কি, আমি কি ভাবি, বা কেন ভাবি ও কিভাবে ভাবি তা তুলে ধরতেই এই লেখা।
আমরা জানি প্রাকৃতিকভাবে ঘটে যাওয়া কোন ঘটনার ব্যাখ্যা দিতে একটি মডেল দাঁড় করানো হয়, এবং সেই মডেলের আলোকে যদি ঐ ঘটনার কারণে ঘটিত অধিকাংশ প্রভাবকে ব্যাখ্যা করা যায় তাহলে মডেলটিকে মোটামুটি সত্য হিসাবে ধরে নেওয়া হয়। সেই মডেলই আবার অনেক সময় বিবর্তিত হয়ে যুক্তি প্রমানের ভিত্তিতে থিওরি হিসাবে আবির্ভুত হয়। তবে যাহাই সত্য বা মিথ্যা হিসাবে বিবেচনা করা হোক না কেন সেটা মানুষের বিচারে সত্য বা মিথ্যা। যেটাকে মিথ্যা বলা হচ্ছে সেটা কি আসলেই মিথ্যা? বা যেটাকে সত্য বলা হচ্ছে সেটা কি আসলেই সত্য? সেটা বিচার করার চরম পদ্ধতি মানুষের অজানা! মানুষের নলেজ খুবই সীমিত। এখন পর্যন্ত মানুষ ৪ টি (সব মিলিয়ে ১০টি) ডাইমেনশনের বেশি ডাইমেনশনকে অস্তিত দিতে অক্ষম। পৃথিবীর বিভিন্ন গবেষণাগারে এই নিয়ে গবেষণা ও চলছে নতুন ডাইমেনশন সৃষ্টি করা যায় কিনা। আবার এই মহাবিশ্বের ব্যাপ্তি এত বিশাল যে মানুষের বিচরণের ক্ষেত্র সেখানে শুন্যের কোঠায় বলা চলে।
যাই হোক প্রসংগে যাওয়া যাক, সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্ব আছে নাকি নাই। অনেকে অনেকভাবে এই প্রশ্নের জবাব খুঁজে বেড়ায়। তেমনি আমি শুরু করি একটি জায়গা থেকে, মনে করি সৃষ্টিকর্তা আছে। তাহলে তার কতটুকু নলেজ থাকার কথা? গ্রহ, উপগ্রহ, গ্যালাক্সি, আলো, অন্ধকার, কোয়ান্টাম মেকানিক্স, ক্লাসিক্যাল মেকানিক্স, মেডিক্যাল সায়েন্স, ইন্জিনিয়ারিং, দেখা, অদেখা সহ মানুষ যা কল্পনা করতে পারে বা পারে না তার সবগুলোর উপরই সৃষ্টিকর্তার পূর্ননলেজ থাকা আবশ্যক বৈকি। কোন মানুষের এই সকল বিষয়ের উপর নলেজ নেই এ কথা সহজেই অনুমেয়, তাহলে সৃষ্টিকর্তার সৃষ্ট জিনিষসমুহের উপরেই যেখানেই কোন মানুষের ধারণা পূর্ণ নয় সেখানে সৃষ্টিকর্তা কেমন হবে? কিভাবে এল? কে তাকে সৃষ্টি করলো এসব প্রশ্ন অবান্তর মাত্র। তারপরও যদি কারো মনে সৃষ্টিকর্তার উৎস সম্পর্কে জানতেই ইচ্ছা করে তবে তার উচিৎ হবে এ মহাবিশ্বের প্রতিটি জিনিষ সম্পর্কে সম্যক ধারণা পাবার জন্যে মরিয়া হওয়ার। কিন্ত অনেক সময়ই দেখা যায় সেটা না করে সরাসরি সৃষ্টিকর্তা কোথা থেকে এলো তাই নিয়ে টানাটানি, যেন আদার ব্যাপারি হয়ে জাহাজের খবর নেওয়ার মত।

প্রশ্ন উঠবে একজন মানুষ না হয় সব বিষয় সম্পর্কে জানে না কিন্ত সব মানুষের মিলিত নলজকে এক জায়গায় করলেই তো সমষ্যার সমাধান হয়ে যায়। উত্তর হলো সেটা সম্ভব না। কারণ ঐ মিলিত নলেজ ও মহাবিশ্ব সম্পর্কে তেমন কোন ফলাফলাই প্রদান করে না, বরং মানুষের সীমাব্ধতাকে আরো স্পষ্ট করে তোলে। মানুষ জানে না, এই সব নলেজ মিলিত করলে মিলিত নলেজ লিনিয়ারিটি ফলো করে কিনা? তাই ঘুরে ফিরে ঐ একই কথা যে সৃষ্টিকর্তার উৎস সম্পর্কে টানাটানি করা কোন যোক্তিক মানুষের নেচার নয় বরং রোগাক্রান্ত চিন্তাধারার ফসল মাত্র। সেই সাথে এই সব চিন্তাধারা তার চরম নাস্তিক হওয়ার পথে বাঁধাও বৈকি।

চরম নাস্তিকতা আবার কি জিনিষ? মহাবিশ্বের সমস্ত সম্ভাব্য নলেজ থাকার পর কোন ব্যাক্তি যদি এই সিদ্ধান্তে উপনিত হয় যে সৃষ্টিকর্তা বলে কিছু নেই তবেই তাকে চরম নাস্তিক বলা যাবে। সুতরাং সমস্ত নলেজ না অর্জন করেই যদি কেউ নাস্তিক হয় তাহলে তাকে চরম নাস্তিক বলছি না। সেই একই যুক্তিতে চরম আস্তিকতা বলে কিছু আছে কি? উত্তর হলো হাঁ এবং তার ডেফিনেশনও ঐ একই রকম। তাহলে ফলাফল, সকল আস্তিকই আপেক্ষিক আস্তিক আবার সকল নাস্তিকই আপেক্ষিক নাস্তিক। কিন্ত পার্থক্য, আস্তিকতায় সৃষ্টিকর্তার অস্তিতকে বিশ্বাসের মাধ্যমে এই পৃথিবীর সব কিছুকে ব্যাখ্যা করা সম্ভব হয়ে ওঠে, অপরদিকে নাস্তিকতায় সৃষ্টিকর্তার অস্তিতকে অবিশ্বাসের মাধ্যমে এই পৃথিবীর সব কিছুকে ব্যাখ্যা করতে গিয়ে তালগোল পাকিয়ে ফেলে। কারণ একজন আপেক্ষিক নাস্তিক একবার বলে ডিম আগে, আরেকবার বলে মুরগি আগে, অর্থাৎ সে শুরু আগেই চিন্তা জগতের মাথা খেয়ে বসে থাকে পরিণত হয়ে অসাড় এবং গর্দভ হাবাগোবায়।
সৃষ্টিকর্তা কিভাবে তার সৃষ্টিকে পরিচালনা করবেন বা করেন? উত্তর খুব সহজ, সৃষ্টিকর্তার যেমন ইচ্ছে তেমন। তার ইচ্ছেটা কেমন, তা কি আমার পক্ষে জানা সম্ভভ! তবে আমি অনুমান করতে পারি মাত্র, সেটি বুদ্ধিদীপ্ত এবং জটিল এক হিসাবের মধ্য দিয়ে, যে হিসাবে রয়েছে সমস্ত অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যতের প্রোগ্রামিং ফ্লো। তাই আমি চাইলেই তিনি আমার মত আচরণ করবেন তা নয়, আমি তাকে যেমন নির্দেশনা দিব তেমনটি নয়, আমি তার সম্পর্কে কোন কিছু প্রিডিক্ট করে ফেলবো তা নয়। তিনি আদি ও অনন্ত (কতটা আদি ও কতটা অনন্ত!!!) তাই আমার এই শুন্যসময়তুল্য জীবনকালে তার কাজের দোষ-ত্রুটি নিয়ে আলোচনা করা হাস্যকর বটে। একজন আপেক্ষিক নাস্তিক সেই কাজটিই করে চলে এবং ফলশ্রুতিতে সে পরিণত নির্বোধ ব্যাক্তিতে। কারণ? যে কোন একটি কাজ বা আবিষ্কার তৈরি যেমন কঠিন সেই কাজ বা আবিষ্কারের সত্যতা যাচাই আরো কঠিন। নির্বোধরা পারলে তারা প্রথমটি আগেই করে দেখাক অর্থাৎ এরকম একটি মহাবিশ্ব তৈরি করুক তারপরেই না হয় বর্তমান মহাবিশ্বের সৃষ্টিকর্তার ভুল-ত্রুটি নিয়ে ফালাফালি করুক। কিন্ত তারা তা করবে না কারণ তারা বিকারগ্রস্ত এবং আউট অব সিসটেমেটিক।
সৃষ্টিকর্তা কোথায় বা কোন ফর্মে (আকার) আছে? উত্তর আমি জানি না তবে আমি ধারণা করতে পারি। কিভাবে? ধরে নিই তিনি দেখতে আমার বাস্তব বা কাল্পনিক কোন চিত্র, তার মানে সেটা হবে এই মহাবিশ্বের সৃষ্টকর্তারই কোন সৃষ্টির অনুরুপ বা কতগুলো সৃষ্টির সংমিশ্রন ছাড়া আর কিছুই না। কিন্ত সৃষ্টকর্তা নিজেই কোন সৃষ্টির অনুরুপ বা কতগুলো সৃষ্টির সংমিশ্রন হবেন সেটা অযোক্তিক বটে। তাই তিনি নিরাকার হবেন এবং কাজেই তিনি অদৃশ্য হবেন সেটাই বিবেচ্য বৈকি।

বস্তত, নাস্তিকতা একটি বাস্তবতা বিবর্জিত চিন্তাধারার ফসল ছাড়া আর কিছুই নয়। সৃষ্টিজগত নিয়ে ভাবনার সিঁড়িতে যখন তার পদযাত্রা থেমে যায়, তখন-ই সে নাস্তিকতার বুলি আওড়ায় কারণ নাস্তিক হতে যে সাধনার প্রয়োজন সেটা তার নেই বা হারিয়ে ফেলে। অপরদিকে আস্তিকতা সত্য সন্ধানের পথে একটি সিসটেমেটিক পদ্ধতি।
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই জুলাই, ২০১০ বিকাল ৪:২১
৬৪টি মন্তব্য ৫০টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মৃত্যুর আগে ইবলিশ ঈমান নিয়ে টানাটানি করে

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:০২



ইউটিউব হুজুর বললেন, মৃত্যুর আগে ইবলিশ ঈমান নিয়ে টানাটানি করে। তখন নাকি নিজ যোগ্যতায় ঈমান রক্ষা করতে হয়। আল্লাহ নাকি তখন মুমিনের সহায়তায় এগিয়ে আসেন না। তাই শুনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মহিলা আম্পায়ার, কিছু খেলোয়ারদের নারী বিদ্বেষী মনোভাব লুকানো যায় নি

লিখেছেন হাসান কালবৈশাখী, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯



গত বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল প্রাইম ব্যাংক ও মোহামেডানের ম্যাচে আম্পায়ার হিসেবে ছিলেন সাথিরা জাকির জেসি। অভিযোগ উঠেছে, লিগে দুইয়ে থাকা মোহামেডান ও পাঁচে থাকা প্রাইমের মধ্যকার ম্যাচে নারী আম্পায়ার... ...বাকিটুকু পড়ুন

জানা আপুর আপডেট

লিখেছেন আরাফআহনাফ, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৫৭

জানা আপুর কোন আপডেট পাচ্ছি না অনেকদিন!
কেমন আছেন তিনি - জানলে কেউ কী জানবেন -প্লিজ?
প্রিয় আপুর জন্য অজস্র শুভ কামনা।



বি:দ্র:
নেটে খুঁজে পেলাম এই লিন্ক টা - সবার প্রোফাইল... ...বাকিটুকু পড়ুন

×