somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শাহাবাগের চত্বরে ফিরে এসেছিলো একাত্তর, দ্রোহের আগুন জ্বলে উঠলো লক্ষ কোটি বাঙ্গালির প্রানে

০৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ বিকাল ৫:৫৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

স্মৃতি ফিরে ফিরে আসে বার বার। স্মৃতি বড়ই মধুর, কখনো বড়ই বেদনাদায়ক। স্মৃতি কখনো আমাদের আনন্দ দেয়, কখনো কষ্ট দেয়, কখনো দেয় অনুপ্রেরনা আবার কখনো রক্তে দ্রোহের আগুন জ্বালিয়ে নিভ্রিতে উজ্বল হয়ে থাকে স্বমহিমায়। আমার কাছে স্মৃতি একান্তই আমার। আমি এক এক করে পাতা উল্টাই, দেখি আমার আনন্দ, আমার গর্ব, আমার প্রেরনা, আমার বেদনা, আমার স্বপ্ন আর আমার সম্পদ। তাই স্মৃতি নিয়ে আমি বড়াই করি না, আত্ম অহমিকায় নিজেকে ভাসিয়ে দিই না। স্মৃতি একান্তই আমার। আমার কাছেই থাকুক সযত্নে।

আবার ফিরে এসেছে ৫ ফেব্রুয়ারি। যেদিন আমরা ইতিহাস সৃষ্টি করেছিলাম। আজ থেকে ঠিক এক বছর আগে। কিভাবে শুরু করেছিলাম, কি করেছিলাম, কেন করেছিলাম তা আজ ইতিহাস। এই ইতিহাসের অংশ আমি, আমরা, আমাদের মতো হাজারো তরুন, তরুনী, যুবক, যুবতী, ছাত্র, শিক্ষক, শ্রমিক, কৃষক, পেশাজীবী এবং শিশু থেকে শুরু করে অসংখ্য অবাল বৃদ্ধা বনিতা। যারা নেমে এসেছিলেন রাজপথে, যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবীতে। যুদ্ধাপরাধী এবং স্বাধীনতা বিরোধী সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসী দল জামায়াত শিবির নিষিদ্ধের দাবিতে। একাত্তরের চেতনা বাস্তবায়নের দাবীতে।

হাজারো মুক্তিযোদ্ধা এখানে খুঁজে পেয়েছিলেন একাত্তর। তারা আবারো যুদ্ধে নামলেন। প্রজম্মের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে। কন্ঠে কন্ঠ মিলিয়ে। আমরা নির্ঘুম রাত কাটালাম। স্লোগানে স্লোগানে কাঁপালাম রাজপথ। আমাদের স্লোগানের শব্দে কেঁপে উঠলো গোটা দেশ। স্লোগানের শব্দ ছড়িয়ে পড়লো দেশের সীমানা পেরিয়ে বিশ্বময়। দ্রোহের আগুন জ্বলে উঠলো লক্ষ কোটি বাঙ্গালির প্রানে। গড়ে উঠলো হাজারো মঞ্চ। নাম হলো গনজাগরন মঞ্চ। যার কেন্দ্র বিন্দু হলো শাহাবাগের প্রজম্ম চত্ত্বর।

শাহাবাগের চত্বরে ফিরে এসেছিলো একাত্তর। একাত্তরের চেতনাই ছিলো গনজাগরন মঞ্চের মূল শক্তি। আমরা ফিরে গিয়েছিলাম একাত্তরে। যা আমাদের অস্তিত্বের সাথে মিশে ছিলো। কিন্তু আমরা ভূলে গিয়েছিলাম সবকিছু। আমাদের গোল্ডফিস মেমোরি আমাদের সব ভূলিয়ে দিয়েছিলো। আমরা মুক্তিযুদ্ধ ভূলে গিয়েছিলাম, মুক্তিযোদ্ধা ভূলে গিয়েছিলাম, তিরিশ লক্ষ শহীদ ভূলে গিয়েছিলাম, দু-লক্ষ মা বোনের ইজ্জত ভূলে গিয়েছিলাম, এক কোটি শরনার্থী ভূলে গিয়েছিলাম, নয় মাসের জ্বলন্ত বাংলাদেশ ভূলে গিয়েছিলাম, আমরা যুদ্ধাপরাধ ভূলে গিয়েছিলাম, যুদ্ধাপরাধী রাজাকার আলবদর আলশামস ভূলে গিয়েছিলাম, আমরা জামায়াতে ইসলাম ভূলে গিয়েছিলাম, আমরা জয় বাংলা ভূলে গিয়েছিলাম, আমরা জয় বঙ্গবন্ধু ভূলে গিয়েছিলাম। শাহাবাগ আমাদের নতুন করে স্বরণ করিয়েছে এসব। আজ আমরা জয় বাংলা বলতে পারি। জয় বঙ্গবন্ধু বলতেও গর্ব বোধ করি।

শাহাবাগ আমাদের কি দিয়েছে! শাহাবাগের প্রাপ্তি কি! গনজাগরন মঞ্চের ভূমিকা কি ! কি পেয়েছি আমরা ! কি পাইনি! আমাদের কি করা উচিৎ ছিলো! আমরা কি করেছি, কি করছি! এসব নিয়ে বিতর্ক হতে পারে। বিশেষজ্ঞরা তা নিয়ে বিতর্ক করবেন। বিশ্লেষকরা কথার ফুলঝুরি দিয়ে ব্যাখ্যা করবেন। এসব তাদের জন্য থাকুক। আমরা শুধু জানি, আমাদের কিছু সাফল্য আছে। আবার ব্যার্থতাও কম নয়। যতটুকু পেয়েছি এই আন্দোলনের মাধ্যমেই পেয়েছি। যতটুকু পাইনি তা এই আন্দোলনের মাধ্যমেই আদায় করে নিতে হবে। আন্দোলনের কৌশলগত সাফল্য কিংবা ব্যার্থতা ভিন্ন ব্যাপার।

এখনো আমাদের অনেক পথ বাকি। যে উদ্দেশ্যে আমরা শাহাবাগ আন্দোলন শুরু করেছিলাম তার গন্তব্য এখনো অনেক দূর। সেই গন্তব্যে পৌঁছাতে হলে আরো দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে হবে আমাদের। আমরা কে কতটুকু করেছি না করেছি তার হিসাব নিকাশ না করে সেই দূর গন্তব্যের পথ পাড়ি দেয়ার চিন্তা করার সময় হয়েছে এখন। এর জন্য সবাইকে একই ছায়াতলে সমবেত হতে হবে। যেভাবে আমরা সমবেত হয়েছিলাম ফেব্রুয়ারির সেই উত্তাল দিনগুলোতে। ৫ ফেব্রুয়ারি থেকে যা শুরু করেছিলাম আমরা। আবার জাগতে হবে আমাদের। আবার কন্ঠে আওয়াজ তুলতে হবে। আবার রাখতে হবে হাতে হাত।

আমাদের সমবেত কন্ঠের উত্তাল ঝড়ে ভেসে যাবে সব অন্যায়, ভেসে যাবে সব অপশক্তি, যারা আমাদের অস্তিত্বকে অস্বীকার করেছিলো। যারা অস্বীকার করেছিলো আমার মা'কে, আমার প্রিয় জম্মভূমিকে। যারা আমাদের মুক্তি চায়নি, স্বকীয় স্বাধীন সার্বোভৌম রাষ্ট্র হিসাবে বিশ্বের বুকে মাথা তুলে দাঁড়াই চায়নি যারা। যারা হত্যা করেছিলো আমার ভাইকে, ইজ্জত নিয়েছিলো আমার মা বোনদের, জ্বালিয়ে দিয়েছিলো গ্রামের পর গ্রাম, শহরের পর শহর, ভেঙ্গে দিয়েছিলো দেশের সমস্ত অর্থনৈতিক ভীত, যারা আজো আমাদের প্রিয় মাতৃভূমিতে হিংস্র থাবা ঘেড়ে বসে আছে, তারা ভেসে যাবে। নিশ্চিহ্ন হবে, এই বাংলার বুক থেকে। গনজাগরনের বর্ষ ফুর্তিতে এই হোক আমাদের প্রতিজ্ঞা।

গনজাগরনের এক বছর ফুর্তিতে সকল সহযোদ্ধা, সকল সংগঠক, কর্মী, সমর্থক এবং দেশ বিদেশের বিভিন্ন প্রান্তে গনজাগরনে অংশগ্রহনকারী এবং সমর্থনকারী সকল জাগরন যোদ্ধাদের জানাই সংগ্রামী শুভেচ্ছা।

জয় প্রজম্ম
জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু।
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমার প্রফেশনাল জীবনের ত্যাক্ত কথন :(

লিখেছেন সোহানী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সকাল ৯:৫৪



আমার প্রফেশনাল জীবন বরাবরেই ভয়াবহ চ্যালেন্জর ছিল। প্রায় প্রতিটা চাকরীতে আমি রীতিমত যুদ্ধ করে গেছি। আমার সেই প্রফেশনাল জীবন নিয়ে বেশ কিছু লিখাও লিখেছিলাম। অনেকদিন পর আবারো এমন কিছু নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×