somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

এলোমেলো চিরকুট... (২)

১৪ ই সেপ্টেম্বর, ২০০৯ বিকাল ৩:৪৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


অপেক্ষা:
এই শহরে অজস্র চৌকাঠ আছে। যেগুলো দরজা জানালা আর গল্পের বইয়ের মলাটের মত চারদেয়ালের ভেতরের গল্পগুলোকে আগলে রাখে।
নিজের গল্পটা সবাই জানি। অন্তত জানার ভান করে থাকি। মাঝে মাঝে খুব কৌতূহল নিয়ে জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে খুব কাছের অথচ
অজানা চৌকাঠের ওপাশের গল্পগুলোকে পড়তে ইচ্ছে করে।

এই শহর আমাকে অনেকগুলো মুখোশ দিয়েছে। ভদ্রতার মুখোশটা সেইসব চৌকাঠ পাড়ি দিতে গিয়ে আট্‌কে যায়।

আসলেইতো এই অনাবশ্যক কৌতূহলের তো কোন মানে নেই।

কি দরকার জেনে, ওইপাশের একটুকরো বারান্দায় ওই বুড়ো মানুষটা ইজিচেয়ারে শুয়ে
সারাদিন কি ভাবে। এই এলাকার কাকগুলো ছাড়া আর কেউই-কি নেই সঙ্গ দেবার মত?

নিঃসঙ্গতা নিয়ে অনেকরকম আয়েশ করি আমরা। কিন্তু মাঝে মাঝে ছুটির দুপুরগুলোতে এই বুড়োকে দেখে নিজেই শিউড়ে উঠি। সময় একদিন আমারও
হবে। তবে যেন ওই সর্বগ্রাসী নিঃসঙ্গতার পর্বে যাবার আগেই চ্যাপ্টারটা শেষ হয়ে যায়।

জীবনটা ঠিক কতটুকু লম্বা হলে খারাপ হয় না এটা নিয়ে ভাবিনি কখনো। তবে ঝট্‌পট্‌ সহজ যে উত্তরটা মাথায় আসে সেটা হল, যতদিন আমার জন্য
কেউ অপেক্ষা করে থাকবে... ঠিক ততদিন। যথেষ্ট স্বার্থপর আমি। সম্ভবত ভীতুও। তারপরও ঘোলাচোখে স্মৃতির জাবর কেটে অপেক্ষার চেয়ে, মুক্তি পাওয়া
অনেক ভাল।


... :
মাসখানেক হল আমার একপথের বাসস্ট্যান্ডের পরিবর্তন হয়েছে। ফেরার বাসটা এখন নতুন এক জায়গা থেকে ধরতে হয়। রাতের প্রায় ফাঁকা বাসে চড়াটার
সম্ভবত কোন নেশা আছে। কিছু মানুষ চন্দ্রাহত হয়। চাঁদের আলোয় তাদের নেশা হয়। আমার নেশা হয় ধুলোর ছায়া পড়া রাতের সোডিয়াম বাতির আলোয়।
কথাটার মধ্যে যথেষ্ট ঢং-ভাব আছে তারপরও রাতের প্রায় ফাঁকা বাস আর এইসব আলোছায়ার মায়ায় পড়ে গেছি। কোন কাজ না থাকলেও ইচ্ছে করে দেরি
করে বের হই।
ছোট স্ট্যান্ড। দিনের শেষ বাসে চড়ার জন্য দুয়েকজন অপেক্ষায় থাকে। আর অপেক্ষায় থাকে রাস্তাঘেঁষে দাড়ানো ভ্যানের ওপর চা-সিঙ্গারার দোকানটা।
বাপ-ছেলের যৌথ উদ্দোগের দোকান। বাবার বয়স খানিকটা ক্যালেন্ডারে আর বেশিরভাগটাই ক্লান্তিতে বেড়েছে, কিন্তু ছ-সাত বছরের ছেলেটাই প্রায় সব।
পিচ্চিটার সাথে গল্প করার চেষ্টা করে দেখেছি কয়েকবার। তেমন আগ্রহী না, বরং বাপটা বেশ গল্পবাজ। একয়েকদিনে মুখচেনা হয়ে গেছে। দোকান ফাঁকা থাকলে
টুকটাক গল্প জমানোর চেষ্টা করে।
শহরের সবচেয়ে বড় প্রাসাদটার সামনে রাতে আমরা অপেক্ষায় থাকি। কয়েকজন ঘরে ফেরার, আর দুজন আরেকটা একইরকম দিন শুরু করার।

রাতের শহরটা অন্যরকম। ফুটপাথের ছায়ায় যেসব ছায়ামানুষেরা অপেক্ষায় থাকে ঠিক তাদের মত। দিনের আলোয় শহরটা হারিয়ে যায়।
খুব প্রিয় একটা মানুষের হাত ধরে একদিন ঘুমিয়ে যাওয়া শহরে আমার পছন্দের একটা রাস্তা ধরে সারারাত হাটব। সব ফ্যান্টাসি হয়ত সত্যি হয় না...
তার পরও মাঝে মাঝে এইসব ছোট-ছোট প্রিয় অপেক্ষাগুলো মন্দ না।

এবং মাইনক্যা-চিপা:
ইউনিভার্সিটির পোলাপাইন সব ছিটকে যেতে আরম্ভ করেছে। কেউ বৈদেশ কেউ নিরুদ্দেশ। মাঝে মাঝেই কারো কথা মনে পড়লে খোঁজ নিয়ে দেখা যায় পাসপোর্টে
এক্সপোর্ট কোয়ালিটি, মেইড-ইন-বাংলাদেশ সিল নিয়ে চলে গেছে। নয়ত চড়ে খাচ্ছে। ধুর-ধুর ...সবই মায়া :)

পোলাপাইনের অনেক রকম লক্ষ। সবাই সেদিকেই ছোটার চেষ্টা করছে। আমার কোন লক্ষ নেই এটাই একটা বড় সমস্যা। :) ... সপ্তাহে দু-দিন এডভাইজরকে
কি করছি দেখাতে হয়। ভদ্রলোক যেভাবে নিয়ম করে সপ্তাহে দু-দিন মুখ কালো করে সময়টা পার করে তাতে আমারই মায়া লাগে। ভাবছি সামনে স্যারকে
বেনামে 'ফেয়ার এন্ড আগলি' টাইপ ক্রিমগুলো পার্সেলে পাঠাব। হাজার হোক... শিক্ষকের মুখ কালো করার মত পাপের ভাগিদার হতে চাই না।
মাঝে মাঝে নিজের হাত-পা কামড়াতে ইচ্ছে করে। কোন পাপে যে এইলোক আমার এডভাইজর হয়ে গেল!

ব্লগর-ব্লগর:
সকাল থেকে মেঘ আজকে। বাতাসটা শরৎকালের কিন্তু মেঘটা ছন্নছাড়া। ব্যাপার্না। :) ...ভালই লাগছে। মাথায় দুটো এলোমেলো লাইন ঘুরছে।

মেঘের পরে মেঘ জমেছে, আঁধার করে আসে।
আমায় কেন বসিয়ে রাখ একা দ্বারের পাশে।। ...


বহুদিন ব্লগর-ব্লগর করা হয় না। মিস করি ব্লগের প্রিয় মানুষগুলোর লেখাগুলো, তারপরও জোর করে দূরে থাকি। বেশিদিন কোনকিছু নিয়ে মেতে থাকতে
পারি না। ...পুরানো মানুষগুলোর নতুন লেখাগুলো পড়তে পড়তে মনেই হয়না বহুদিন এর লেখা পড়া হয়নি।
নিজের একটা ব্যক্তিগত খুব খারাপ সময়ে ব্লগ লেখা শুরু করেছিলাম। ভাল সময়টা যখন ফিরে এলো, সবকিছু ভুলে থাকার ব্লগটাও কেমন করে যেন দূরে চলে গেল।
মানুষ হিসেবে-- আসলেই আমি খুব স্বার্থপর।


মেঘের পরে মেঘ জমেছে...
৩৪টি মন্তব্য ২৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। গানডুদের গল্প

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:২৮




তীব্র দাবদাহের কারণে দুবছর আগে আকাশে ড্রোন পাঠিয়ে চীন কৃত্রিম বৃষ্টি নামিয়েছিলো। চীনের খরা কবলিত শিচুয়ান প্রদেশে এই বৃষ্টিপাত চলেছিলো টানা ৪ ঘন্টাব্যাপী। চীনে কৃত্রিম বৃষ্টি নামানোর প্রক্রিয়া সেবারই প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×