ফুটবলে ভিডিও এনালাইসিস বা পারফরমেন্স এনালাইসিস এখন সব দেশই ব্যবহার করছে। প্রত্যেক দেশের কোচিং টিমের জন্য তো এটা অবশ্যই দরকার সাথে টিভি চ্যানেলরা ও ব্যবহার শুরু করে দিছে। ফুটবল বিশ্বকাপে জেতার পর জার্মানির সেকেন্ড কোচ হিসেবে যার নাম আসছিলো সে কোন মানুষ না ‘SAP’ সফটওয়ার। যাদের কাছে ছিলো সব দলের সব খেলোয়াড়ের ডাটা আর SOWT এনালাইসিস।
এটা তো অনেক বড় পরিসরে সব টিভি চ্যানেলে এখন ডাটা চলে আসে একজন কত কি.মি কভার করছে, কত ট্যাকেল, কত পাস সব। এমনকি লীগ গুলাতে কোন খেলোয়াড়ের কি পারফরমেন্স এটা ওয়েব সাইটে পাওয়া যায়। এই ডাটা দিয়ে পরের বছর খেলোয়াড়দের মুল্য ও ঠিক হয়।
এখন কি কি করা যায় এই এনালাইসিস থেকে: প্রথমে নিজের দলের প্রিপারেশনে আশা যাক।একজন খেলোয়াড়ের ফিটনেস লেভেল কেমন তা যেনে ট্রেইনার আর ফিজিও ড্রিল ঠিক করে। তারপর প্রেকটিসে কোন প্লেয়ার কোন পজিশনে যাচ্ছে, কোচের ইন্সট্রাকশন কিভাবে ফলো করছে, কোন জায়গাগুলাতে ভুল হচ্ছে, সেই জায়গাতে ব্যাক আপ কেমন করছে সব এনালাইসিস সহ চলে আসে কোচের কাছে।
তারপর আসি ম্যাচের কথাতে, ম্যাচ চলাকালীন এনালিস্ট খেলোয়াড়দের পারফরমেন্স দেখে, কোন জায়গাতে ভুল করছে দেখে, ফিটনেস লেভেল খেয়াল রাখে, বিপক্ষ দলের খেলার দুর্বলতাও দেখে। আর সেই রিপোর্ট যায় মুল কোচের কাছে। অনেক সময় খেয়াল করে দেখবেন খেলার মাঝে ফরমেশন বদল, মুল কোচের পাশে ভিডিও এনালিস্ট ও ভুমিকা আছে।
ম্যাচের আগে বিপক্ষ দলকে নিয়ে কাটাছেড়া তো অনেক পুরানো খবর। আগে বোর্ড এ লিখে হতো, এখন হয় মাল্টি মিডিয়া প্রজেক্টরে। কোচের কাজ না সব দলের খেলা খুজে দেখানো। এটা ভিডিও এনালিস্টের কাজ।আর সামনে দেখলে মনে রাখা সহজ। এতো গেলো কাজের ব্যাপ্তী। ২০০৬ এ জার্মানি বনাম আর্জেন্টিনা ম্যাচে টাইব্রেকার এ যাওয়ার সময় সহকারী কোচ জার্মানির গোল কীপার লেহম্যানকে একটা চিরকুট দিয়ে যায়। বলা হয়ে থাকে কোন খেলোয়াড় কোন পায়ে এবং কোন দিকে নরমালি শট নেয় সেটা লেখা ছিলো ওই কাগজে। রেজাল্ট সবার জানা। আর আশা করি বোঝা যাচ্ছে এনালাইসিস কোন পর্যায়ে পৌছেছে।
আমাদের দেশে এই জিনিস এখনো চোখে দেখে নাই। যদি পারফরমেন্স এনালিস্ট থাকতো কোচের ম্যাচ শেষে বলতে হতো না আমার প্লেয়ারদের ৭০ মিনিটের ফিটনেস আছে। আমি যা বলি খেলোয়াড়রা শুনে না। সব প্রেকটিসেই বের হয়ে যেত। কোন খেলোয়াড়ের ম্যাচে ফিটনেস ঘাটতি হচ্ছে এটা ও কোচ জেনে যেত। বিপক্ষ নিয়ে ও থাকতো আর ও এনালাইসিস।
কিন্তু আমাদের দেশ পড়ে আছে সেই খাতা কলমের যুগে যেখানে লোকাল কোচিং স্টাফরা এখনো কম্পিউটারে সাবলীল না। প্রথম বাংলাদেশের কোচ মারুফ প্রথম কম্পিউটার এনালাইসিস শুরু করে। ভালো খেলোয়াড়ি ব্যাকগ্রাউন্ড না থাকলেও এখন বাংলাদেশের সেরা কোচ বলতে তাকেই সবাই চিনে। তারপর কিছু গ্রাফিক্যাল এনালাইসিস করার চেষ্টা করে GoalBangladesh.com আর চ্যানেল নাইন। কিন্তু জাতীয় দলের ভিতরে সেই চেষ্টা আছে শোনা যায় না।
আমাদের দেশে কিন্তু ভিডিও এনালিস্ট নতুন কিছু না। ক্রিকেট দলের সাথে নাসির আহমেদ নাসু ১৫ বছরের উপরে অত্যন্ত সফলতার সাথে এই কাজ করছেন।হকিতে ও ভিডিও এনালিস্ট ছিলো। হকি আর একটু এগিয়ে গেছিলো মোহামেডান ক্লাব লীগের জন্য ভিডিও এনালিস্ট নিয়ে এসেছিলো। সব থেকে খারাপ লাগলো শুনে যে আফগানিস্তান এর ও ভিডি ও এনালিস্ট আছে। আমাদের নাই।
বাফুফের জন্য খুব কি বেশি কষ্ট??ভিডি ও এনালিস্টকে এখন বলা হয় পারফরমেন্স এনালিস্ট। এটার জন্য দরকার সফটওয়ার যা ভিডিও ক্যামেরা এবং ফিটনেস ডিভাইসের সাথে কানেক্টেড।একটা কমপ্লিট সফটওয়ারে অনেক দাম। সেই জন্য ম্যানুফেকটারাররা মডিউল হিসেবে বিক্রি করে। আমাদের দেশের জন্য প্রথমে দরকার নিজেদের ডেভেল্পমেন্ট রিলেটেড মডিউল আর রিয়েল টাইম ম্যাচ এনালাইসিস।যেটা কেনা এখন নাগালের বাইরে না।
এরপর আসে এনালিস্টকে হবে। দেশে অনেক ইঞ্জিনিয়ার আছে যারা একটু ট্রেইনিং পেলেই বিদেশিদের সাথে পাল্লা দিতে পারে। যেখান থেকে সফটওয়ার কেনা হবে সেখানেই ট্রেইনিং দেয়া হয়। আর সেই ইঞ্জিনিয়ার যদি এ এফ সি – সি লাইসেন্স (যা বাফুফে প্রায় রেগুলার আয়োজন করে) তাহলে তো হয়েই গেল। বাংলাদেশি প্রকোশলীরা যে পারে তার প্রমান নাসু। আর খরচ কমানো সাথে দেশের উন্নতির জন্য নিজস্ব লোক ডেভেলপ করা উচিত।
বিশ্ব এগিয়ে যাচ্ছে। গুয়াম এখন বিশ্বকাপ বাছাই এর গ্রুপের টপে। পাশের দেশ মায়ানমার আর ভারত যুব বিশ্বকাপ খেলে। আর আমরা শুধু পিছাচ্ছি। খাতা কলম ছেড়ে ডিজিটাল যুগে না গেলে আমরা শুধুই পেছাবো, যা ঠেকানোর সময় এখনি।view this link