সুলতানা হিরণ
অনেক চেষ্টার পর গার্মেন্টস থেকে তিন দিনের ছুটি বেবর করতে পেরেছে সুলতানা। খুশিতে মনটা তাই বার বার নেচে উঠতে চাইছে। প্রায় এক বছর পর বাড়ি যাবে সে, বাবা-মায়ের সাথে ঈদ করবে। ছোট ভাই-বোন দুটি অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে আছে। সুলতানা ওদের জন্য জামা-কাপড় কিনেছে। সাধ্যমতো বাবা-মায়ের জন্যও কিনেছে। এর আগে পর পর দুই বছর ঈদে বাড়িতে কাউকে কিছু দিতে পারেনি সুলতানা। মালিকপক্ষ দিবে দিবে করেও শেষ পর্যন্ত ঈদের বোনাস দিতে পারেনি। এবার তেমনটা হয়নি। সব আশংকার অবসান ঘটিয়ে এবার কর্মচারীদের ঈদের বোনাসসহ চলতি মাসের অগ্রিম বেতন পরিশোধ করে দিয়েছে। তাই মনের মতো বাড়ির সবার জন্য কেনাকাটা করেছে সুলতানা। এখন শুধু বাড়ি পৌঁছার অপেক্ষা।
ট্রেনের টিকেটও আগাম কেটে রেখেছিল সুলতানা। নির্দিষ্ট দিনে কমলাপুর স্টেশন থেকে ট্রেনে চড়ে বসে একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে সে। আর মাত্র কয়েকটা ঘন্টার ব্যাপার। সুলতানার মনটা চলে যায় নান্দাইলের গ্রামের বাড়িতে। ঈদের দিন তিন ভাই-বোনে মিলে কত আনন্দ করবে ! ঈদের পর আরও তিন দিনের ছুটি এনেছে সুলতানা। অনেকদিন পর সবাই মিলে মামার বাড়ি যাবে। সুলতানার মনটা কল্পলোকের আনন্দে ভাসতে থাকে।
এমন সময় পাশেই একটা ছোট্ট শিশুর কান্নায় চমকে উঠে সুলতানা। তার পাশের সিটে বোরকাপরা এক মহিলা কোলে একটি বাচ্চা নিয়ে কখন এসে বসেছট টের পায়নি সে। বাচ্চাটা অনবরত কাঁদছে, কিন্তু মহিলা বাচ্চাটার কান্না থামানোর কোন চেষ্টাই করছে না। এ কেমন মা ! অবাক হয় সুলতানা। জানলা দিয়ে দৃষ্টি বাইরে ছড়িয়ে দিয়ে সে কান্নার শব্দকে অবজ্ঞা করতে চেষ্টা করে। ততক্ষণে ট্রেন চলতে শুরু করেছে ঢাকা নগরীর সমস্ত কাঠিন্যতাকে পেছনে ফেলে। চলন্ত ট্রেন থেকে বাইরের দৃশ্য দেখার মজাই আলাদা। কিন্তু সুলতানা সেদিকে পুরোপুরি মনযোগ দিতে পারছে না। শিশুটির তারস্বরে কান্নায় এবার একটু বিরক্ত হয় সে। মহিলার দিকে তাকিয়ে বলে
আপনি ওর মা। ওর কান্না থামাতে পারছেন না কেন ? খারাপ লাগছে না আপনার ও এভাবে কাঁদছে ?
শব্দে আশেপাশের অনেকে সেদিকে মনযোগী হয়েছে। সুলতানার কথায় মহিলা আস্তে করে বলে, ওর ক্ষুধা লেগেছে।
ক্ষুধা তো লাগবেই। অতটুকুন বাচ্চা ! ওকে খাওয়াচ্ছেন না কেন ?
ততক্ষণে কাঁদতে কাঁদতে গলা শুকিয়ে গেছে শিশুটির। কান্নার স্বর আটকে আসছে। মহিলা সুলতানার দিকে একটু ঝুঁকে বলে
না মানে, বুকের দুধ খাওয়াতে হবে তো। এভাবে সকলের সামনে কি করে খাওয়াই বলুন তো। আমাকে যদি জানলার পাশে একটু বসতে দিতেন।
একথা আগে বলবেন তো। মিছিমিছি বাচ্চাটাকে কষ্ট দিচ্ছেন।
বলে নিজের সিট ছেড়ে উঠে দাঁড়ায় সুলতানা। মহিলা তার সিটে সরে গেলে সে এপাশের সিটে বসে পড়ে।
মায়ের বুকের ষ্পর্শ পেয়েই থেমে যায় শিশুটির কান্না। সে আপন মনে দুধ টানতে থাকে এবং একটু পরেই নিশ্চিন্তে ঘুমিয়ে পড়ে। মহিলা বোরকায় ঢাকা মুখটি সুলতানার দিকে ফিরিয়ে বলে
আপনার অনেক অসুবিধা করলাম। আপনি যান, আপনার সিটে বসুন। ও এখন অনেকক্ষণ ঘুমোবে, আর কাঁদবে না।
না, থাক। আপনি ওখানেই বসুন। নড়াচড়া করলে আবার ঘুম ভেঙে যেতে পারে আপনার বাচ্চার।
এরপর একটু নিরব সময় কেটে যায় দু’জনের মধ্যে। নিরবতা ভাঙে সুলতানা। জিজ্ঞেস করে
আপনার বাচ্চার বয়স কত ? মনে তো হয় খুব ছোট। ঈদের ভিড়ে এত ছোট বাচ্চাকে নিয়ে একা ট্রেনে উঠেছেন তো তাই জিজ্ঞেস করছি।
সুলতানার জিজ্ঞাসার উত্তরে একটু সময় নেয় মহিলা। তারপর বলে
আমার বাচ্চার বয়স এখনও এক মাস হয়নি, বাইশ দিন মাত্র। ওর বাবা ঈদে ছুটি পায়নি। তাই আমি একাই যাচ্ছি বেড়াতে। বলা আছে, স্টেশনে লোক আসবে আমাকে নিতে।
আপনি কোথায় যাবেন ?
গৌরিপুর।
তাহলে তো অনেকটা পথ।
জী, আস্তে করে বলে মহিলা। তারপর সুলতানাকে জিজ্ঞেস করে, আপনি কোথায় যাবেন ?
নান্দাইল রোড।
আপনি অনেক আগে নেমে যাবেন।
মহিলার এ কথার কোন জবাব দেয়না সুলতানা। ততক্ষণে ট্রেনের দুলুনিতে শরীরে একটা ঝিম ধরা ভাব এসে গেছে ওর। সুলতানা চোখ বন্ধ করে মাথাটা এলিয়ে দেয় পেছন দিকে। সাথে সাথে একটু তন্দ্রার মতো এসে যায় ওর দু’চোখে। কিন্তু মহিলার উসখুস আওয়াজে ওর তন্দ্রাভাব কেটে যায়। একটু বিরক্তি নিয়ে চোখ মেলে তাকায় সে মহিলার দিকে। সুলতানা কিছু বলার আগেই মহিলা বলে
আপা, কিছু মনে করবেন না। আমার বাচ্চাটাকে একটু দেখবেন। আমার একবার বাথরুমে যাওয়া দরকার।
ঠিক আছে, ওকে আমার কোলে দিন।
কাপড় দিয়ে ভাল করে পেঁচিয়ে বাচ্চাটিকে সুলতানার কোলে দিয়ে মহিলা চলে যায় বাথরুমের দিকে। যাবার আগে বোরকার পকেট থেকে ছোট্ট একটা ফিডার বের করে সুলতানার হাতে দিয়ে বলে
যদি ঘুম থেকে জেগে যায় তাহলে এটা মুখে ধরে দিবেন, আর কাঁদবে না। পারবেন তো আপা ?
হ্যাঁ পারব। আপনি যান। কতটুকুন-ই-বা সময় লাগবে ? ও মনে হয় ততক্ষণে ঘুম থেকে জাগবেই না। আপনি চিন্তা করবেন না।
শিশুটিকে কোলে করে জানলার পাশে গিয়ে বসে সুলতানা। ট্রেন ছুটে চলছে দুরন্তবেগে। শহরের কাঠিন্যতা এখন অনেক দূরে। এখন চারপাশে শুধু সবুজ গাছ-পালা, বাড়িঘর, মাঠ-পুকুর-জলাশয়। ভাল লাগে সুলতানার।
এমন সময় ট্রেন এসে থামে এক স্টেশনে। প্ল্যাটফরমে মানুষ গিজ গিজ করছে। কার আগে কে উঠবে - এ নিয়ে জীবন-মরণ প্রতিযোগীতা শুরু হয়েছে ট্রেনের প্রতিটি কামরার দরজায়। সুলতানা গলাটা একটু বাড়িয়ে মানুষের হুড়োহুড়ি দেখে। আর ভাবে প্রিয়জনের সাথে ঈদের আনন্দ উপভোগ করার জন্য মানুষের মধ্যে কি প্রাণান্তকর চেষ্টা ! এজন্যই মানুষ মানুষ ! এদিক থেকে সে ভাগ্যবতী। কমলাপুর স্টেশন থেকে একটা সিট নিয়ে এসেছে।
সুলতানা দৃষ্টি ফেরায় ট্রেনের ভিতর। দাঁড়াবার এতটুকু জায়গা খালি নেই। গায়ে গা লাগিয়ে দাঁড়িয়ে আছে মানুষ। সুলতানা গলাটা একটু বাড়িয়ে সামনে দেখতে চেষ্টা করে। এখনও কেন আসছে না শিশুটির মা ? ট্রেনের কামরার বাথরুম কতটা দূর হতে পারে ? এত সময় তো লাগার কথা নয়। আবার ভাবে, এই ভিড় ঠেলে আসাটা সত্যিই দুঃসাধ্য।
এমন সময় সুলতানার কোলে শিশুটি একটু নড়ে উঠে। সুলতানা তাড়তাড়ি ফিডারটা ওর মুখে ধরে। সাথে সাথে শান্ত হয়ে ফিডারটা টানতে থাকে বাচ্চাটা। নিশ্চিন্ত হয় সুলতানা। ঠিক তখনি একটি মধ্য বয়স্ক লোক এসে ওর পাশের সিটে বসে পড়ে। সুলতানা সাথে সাথে বলে
চাচা, এখানে বসে পড়লেন যে ! এটা তো এই বাচ্চার মায়ের সিট।
লোকটা দুপাটি দাঁত বের করে বিগলিত একটা হাসি দিয়ে বলে, অনেকক্ষণ ধরে সিটটা খালি দেখছি তো, তাই বসে পড়লাম। বাচ্চার মা আসলে ছেড়ে দেব। ততক্ষণে আমার পা দুটি একটু স্বস্তি পাক।
কিন্তু আমার যে অস্বস্তি লাগছে - মনে মনে বলে সুলতানা। ততক্ষণে আরও একটা স্টেশন পার হয়ে গেছে ট্রেনটা। সুলতানার ভেতর অস্থিরতা বাড়তে থাকে। সে বাচ্চাটাকে কোলে নিয়ে কোনমতে উঠে দাঁড়ায়। সামনে একজন লোক প্রথম থেকেই দাঁড়িয়েছিল- তাকে জিজ্ঞেস করে, ভাই, বাথরুমটা কতদূর ?
ঐ তো ওখানে, বেশি দূর নয়।
ভাই, একটু উপকার করেন। এই বাচ্চাটির মা বাথরুমে গেছে অনেকক্ষণ হয়েছে। এখনও আসছে না। একটু খুঁজ নিবেন ?
আচ্ছা আপনি বসুন, আমি দেখছি।
লোকটি দু’হাতে ভিড় ঠেলে বাথরুমের দিকে এগিয়ে যায়। বাথরুমের কাছে যারা বসেছিল তাদেরকে জিজ্ঞেস করে
বোরকাপরা একজন মহিলা বাথরুমে এসেছিল অনেকক্ষণ আগে, সে বাথরুমে থেকে বেরিয়ে কোনদিকে গেল বলতে পারেন ?
কোন মহিলার কথা বলছেন ? ঐ যে লম্বামতো, বোরকাপরা, মুখঢাকা, ঐ মহিলা ?
জ্বি।
ঐ মহিলা তো আরও দুই স্টেশন আগে ট্রেন থেকে নেমে গেছে।
বলেন কি ?
আমরা ঠিকই বলছি। কিন্তু আপনি এমন করছেন কেন ? কি হয় মহিলা আপনার ?
আমার কিছু হয়না। আপনারা আসুন আমার সাথে।
আরও দুইজনকে সাথে নিয়ে সুলতানার নিকট ফিরে আসে লোকটি। সুলতানা ওদের মুখ থেকে শুনেও বিশ্বাস করতে পারেনা যে একজন মা এমন করতে পারে। সে লোকজনকে আবার অনুরোধ করে
ভাই, আপনারা ট্রেনের অন্য কামরায় একটু খুঁজে দেখুন না। একজন মা এটা কি কখনও করতে পারে ? সে তার সন্তানকে অন্য কারও কাছে রেখে ট্রেন থেকে নেমে যাবে ?
কিন্তু আমরা তো নিজের চোখে দেখেছি।
আপনাদের ভুলও তো হতে পারে। অন্য কোন মহিলাকে নেমে যেতে দেখেছেন হয়তো।
ঠিক আছে দেখি আরেকবার - তিনজন আবার যায়। ভয়ে-উৎকন্ঠায় সুলতানার সারা শরীর ঘামতে থাকে। সে একবার তার কোলে শিশুটির মুখের দিকে তাকায়, আবার ভিড়ের ফাঁক গলিয়ে সামনের দিকে তাকায়। বার বার মনে হয় এমন ফুটফুটে বাচ্চাকে কোন মা কি এভাবে ছেড়ে চলে যেতে পারে ?
এমন সময় লোক তিন জন ফিরে আসে। মহিলাকে কোথাও পাওয়া যায়নি। কেঁদে ফেলে সুলতানা আসন্ন বিপদের কথা ভেবে।
ভাই, আপনারাই বলুন এই বাচ্চাকে নিয়ে এখন আমি কি করব ? সামনের স্টেশনের পরের স্টেশনে আমি নামব। কিন্তু এই বাচ্চা ?
ততক্ষণে উৎসুক লোকজন জড়ো হয়েছে সুলতানাকে ঘিরে। তাদের মধ্য থেকে কেউ একজন বলে, আপনি নিয়ে যান বাচ্চাটাকে।
কিন্তু আমি ওকে নিয়ে গিয়ে কি করব ? কি জবাব দিব মানুষের কাছে ? আমার কথা কি কেউ বিশ্বাস করবে ?
একজন জিজ্ঞেস করে, ঐ মহিলা কোথায় নামবে বলেছিল আপনাকে ?
বলছিল গৌরিপুর নামবে।
তাহলে আপা, আপনি একটা কাজ করেন। গৌরিপুর চলে যান। মহিলা যদি ভুলে ট্রেন থেকে নেমে গিয়ে থাকে তাহলে পরের ট্রেনে আবার উঠবে গৌরিপুর যাবার জন্য। আপনি স্টেশনে অপেক্ষা করলে দেখা পেয়ে যেতে পারেন ঐ মহিলার।
কিন্তু আমি তো একা। গৌরিপুর কোনদিন যাইনি। অচেনা জায়গায় একা একা যেতে আমার ভয় করছে। আর এতটা পথ এই বাচ্চাটাকেই বা সামলাব কি করে ? ওখানে গিয়েও যদি মহিলার দেখা না পাই তাহলে আমি কি করব ? বাড়ি ফিরব কি করে ?
ভিড়ের মধ্য থেকে একজন বলে, তাছাড়া পুলিশও সন্দেহ করতে পারে, ঝামেলা করতে পারে। ওখানে তো সাক্ষী হিসেবে আমরা কেউ থাকব না।
ঠিক বলেছেন - স্বমস্বরে সায় দেয় কয়েকজন। একজন এগিয়ে এসে বলে, এটারও একটা মিমাংসা আমরা এখানেই করে দিতে পারি। একটা বাচ্চা নিয়ে মেয়েটা বিপদে পড়েছে, ওকে সাহায্য করা দরকার।
লোকটার কথায় সম্মত হয়ে ট্রেনের টিটি ও নিরাপত্তা পুলিশকে ডেকে আনা হয়। ঘটনার আদ্যোপান্ত শুনে তারাও রাজী হয় বাচ্চাসহ সুলতানাকে গৌরিপুর স্টেশনে নামিয়ে দিতে। সেখানে পরের ট্রেন পৌঁছানো পর্যন্ত অপেক্ষা করবে সুলতানা স্টেশন মাস্টারের হেফাজতে। মহিলা যদি ফিরে যায় তো ভালই, না হলে অবস্থা বুঝে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
কিন্তু গৌরিপুর স্টেশনে পরের ট্রেন পর্যন্ত অপেক্ষার পরও মহিলার দেখা পায়নি কেউ। শেষে স্থানীয় থানার সহযোগিতা চাওয়া হয়। পুলিশ বাচ্চাটাকে সুলতানার হেফাজতে দেয়াই শ্রেয় মনে করে এবং বাচ্চাসহ সুলতানাকে বাড়ি পৌঁছে দেয়।
জীবনের নতুন ঘোরপথে আটকে যায় সুলতানা। ওর বাবা-মা বাচ্চাটাকে রাখতে অস্বীকার করে। কিন্তু সুলতানা প্রতীজ্ঞা করে বুক দিয়ে আগলে রাখবে সে এই বাচ্চাটিকে। সেটা করতে গিয়ে ছুটিশেষে নির্দিষ্ট তারিখে কর্মক্ষেত্রে ফিরে যাওয়া হয়না সুলতানার। দুই মাস পর ফিরে গিয়ে দেখে তাকে চাকুরি থেকে বরখাস্ত করা হয়েছে। মালিকের কাছে শত কাকুতি-মিনতি করেও চাকুরিটা ফিরে পায়নি সুলতানা। ফিরে যেতে হয় তাকে আবার গ্রামে। কিন্তু সংসার চলবে কি করে ?
এক টুকরো জমি আর ওর চাকুরি - এই ছিল সংসারের ব্যয় নির্বাহের একমাত্র উপায়। এখন সুলতানার সেই চাকুরিটা নেই। তার উপর বাড়তি একটা খরচ। নিরুপায় হয়ে সুলতানা অন্যের বাড়িতে কাজ নেয়। এতে করে একটা দিক না হয় সামলানো গেল। কিন্তু সুলতানার বিয়ে দিতে গিয়ে নতুন করে সমস্যার সম্মুখীন হয় ওর বাবা-মা। কাউকে বুঝাতে পারে না যে এই বাচ্চা সুলতানার নয়, ওর বিয়েই হয়নি।
এসব দেখে সুলতানা তার জীবনের দিশা ঠিক করে ফেলে। সে সিদ্ধান্ত নেয় বিয়ে করবে না কোনদিন। তার কুড়িয়ে পাওয়া মানিক হিরণকে নিয়েই সে কাটিয়ে দিবে তার জীবন। মানুষের মতো মানুষ করবে সে হিরণকে।
শুরু হয় সুলতানার কঠিন জীবন সংগ্রাম। বড় হতে থাকে হিরণ। হাঁটি হাঁটি পা পা করে যখন দুই বৎসরে পা দেয় হিরণ, তখনই স্থানীয় এক সাংবাদিক তার রিপোর্ট তুলে আনে সুলতানা আর হিরণকে। দৃষ্টি পড়ে অনেকের সেদিকে। এগিয়ে আসে কেউ কেউ সাহায্যের হাত বাড়িয়ে। কিন্তু সুলতানা এখন অনেক দৃঢ়-কঠিন, অনেকটা ঋজু ওর মেরুদন্ড। জীবন সংগ্রামের প্রতিটি অলিগলি তার চেনা হয়ে গেছে। তাই সে ফিরিয়ে দেয় সব সাহায্যের হাত। কারণ, এতসব সাহায্যের চেয়ে এখন সুলতানার কাছে বড় প্রয়োজন হলো তার হিরণের জন্য একটা নির্ভরতার ছায়া। কে দিবে সুলতানাকে সেই ছায়া ?
(গল্পটি কোন কল্পকাহিনী নয়, আমাদের অঞ্চলের একটি সত্য ঘটনা। আমার এক ফেসবুক বন্ধু এবং স্থানীয় সাংবাদিক শাহ আলম ভুঁইয়ার অভিজ্ঞতালব্ধ কাহিনী নিয়েই এই গল্প। গল্পে স্থানীয় সাংবাদিক হিসেবে তার কথাই বলা হয়েছে। কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি সাংবাদিক শাহ আলম ভুঁইয়ার প্রতি।)