somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অনলাইন গণমাধ্যম পরিচালনা নীতিমালা - প্রযুক্তিতে বাংলাদেশের প্রস্তাব

২৩ শে সেপ্টেম্বর, ২০১২ বিকাল ৫:১০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমরা কারা?
- ‘প্রযুক্তিতে বাংলাদেশ’ প্রযুক্তিনির্ভর পেশাজীবী উদ্যোক্তা তৈরিতে দেশব্যাপী কাজ করে যাওয়া স্বেচ্ছাসেবী একটি সংগঠন। ভবিষ্যতের প্রযুক্তিনির্ভর উদ্যোক্তা উন্নয়নে অবদান রাখাই আমাদের অভিপ্রায়।

এ বিষয় নিয়ে আমাদের মাথাব্যথা কেন?
- এ ধরণের নীতিমালা প্রযুক্তিনির্ভর সমাজ গঠনের ক্রমবিকাশকে বাধাগ্রস্ত করবে। এছাড়া ক্রমবর্ধমান অনলাইন উদ্যোক্তা ও বুদ্ধিবৃত্তিক পেশাজীবীরা এতে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। নীতিগতভাবে আমরা এর সমর্থন করতে পারি না।

নীতিমালা নিয়ে আমাদের অভিমত (সারাংশ):
- এটিকে নীতিমালার খসড়া বলা হলেও চেহারাটা আইন বা প্রজ্ঞাপনের মতো। তাই এটিকে আমরা আইনের খসড়া হিসেবেই ধরে নিচ্ছি।
- এ আইন অনলাইনে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি বা অসামাজিক কার্যকলাপ রোধ করতে পারবে না। তাই এ আইন অর্থহীন। এই উদ্যোগ বন্ধ করতে হবে।
- অনলাইনে বিশৃঙ্খলা রোধে কপিরাইট, ব্যক্তিগত ও রাষ্ট্রীয় তথ্য-নিরাপত্তা, সাক্ষ্য-প্রমাণ, প্রচার-প্রকাশনা, মানহানি — ধরনের আইনগুলোকে অনলাইনে প্রয়োগোপযোগী করা হোক। প্রয়োগের ক্ষমতা (অবকাঠামো, জনবল, সম্পর্ক ইত্যাদি) বাড়ানো হোক।
- ব্যবসায়ের ক্ষেত্রে লাইসেন্স করতে বাধা নেই। সেক্ষেত্রে সমজাতীয় (প্রিন্ট-অনলাইন) / একই ধরণের ব্যবসায়িক সুবিধা-অসুবিধার বিষয়গুলো সামঞ্জস্যপূর্ণ হতে হবে।

নীতিমালা নিয়ে আমাদের অভিমত (বিস্তারিত):

১. নীতিমালা কারিগরিভাবে কেন কার্যকর হবে না ?
- সংজ্ঞা ও আওতা : এই আইনে গণমাধ্যমের কোন সংজ্ঞা দেওয়া হয়নি। সংজ্ঞা ছাড়া নিয়ন্ত্রণের আওতা নির্ণয় সম্ভব নয়। অনলাইন গণমাধ্যমের চরিত্রও প্রতিদিন পাল্টে যাচ্ছে। তাই এটিকে একভাবে সংজ্ঞায়িত করে নিয়ন্ত্রণ করা অসম্ভব। তাই আইন তৈরির এই পদ্ধতি কার্যকর হবে না।
- প্রযুক্তির পেছনে নীতিমালার দৌড় : প্রচলিত অনলাইন গণমাধ্যমগুলোর জন্য নীতিমালা তৈরি শেষ হওয়ার আগেই শত শত নতুন প্রযুক্তি এসে যাবে। সেসকল প্রযুক্তির জন্য আইন তৈরি করতে থাকা সম্ভব নয়। এরকম জাতীয় অপচয় সমর্থন করা যায় না।
- প্রযুক্তির সীমানা ও ক্রস বর্ডার আইন : অনলাইন গণমাধ্যমের প্রযুক্তিগুলো বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে নিয়ন্ত্রিত হয়। সেসব দেশের আইনের ওপর আমাদের এই আইন দিয়ে নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না। অথচ আমাদের কোনও একটি গ্রামে বসে সেই প্রযুক্তি ব্যবহার করে খুব সহজেই সংবাদ আদান-প্রদান করা যাবে। তাই এরকম আইন প্রয়োগযোগ্য নয়।
- অবকাঠামো ও জনশক্তি : আমাদের এরকম আইন কার্যকর করার মতো প্রয়োজনীয় অবকাঠামো ও প্রশিক্ষিত জনশক্তি নেই। প্রয়োগ করার চেষ্টা করা শুধুমাত্র অপচয় হবে।
- আরও কারিগরি অসঙ্গতি : নীতিমালাটিতে রয়েছে অসংখ্য কারিগরি অসঙ্গতি। এরকম কারিগরি অসঙ্গতিতে ভরা নীতিমালা প্রয়োগযোগ্য নয়। যেমন – ‘শুধুমাত্র বাংলাদেশে স্থাপিত সার্ভারে হোস্টিং’ এর বিষয়টি অবকাঠামো ও নীতিমালার কারণে এখনও ঝুঁকিপূর্ণ। সিস্টেমের সার্বক্ষণিক অনলাইন উপস্থিতি, নিরাপত্তা, তথ্যবীমা সহ অসংখ্য সীমাবদ্ধতা রয়েছে। তাই এই শর্ত বাস্তবসম্মত নয়।
- বিবিধ অপ্রাসঙ্গিক নিয়ন্ত্রণকারী : নীতিমালায় বিটিআরসির মতো কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে পুনঅনুমোদন নেবার মতো অপ্রাসঙ্গিক বিষয় যুক্ত করে অকারণ জটিলতা বৃদ্ধি করা হয়েছে।

২. অর্থনৈতিকভাবে কেন কার্যকর হবে না ?
- বিজ্ঞাপনের বাজার : প্রযুক্তির বিবর্তনের ফলে বিজ্ঞাপন প্রাপ্তির প্রক্রিয়া বদলে যাচ্ছে। এগ্রিগেটর প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ও আউটসোর্সই বিজ্ঞাপনের মূল উৎস হয়ে উঠবে। প্রতিদিন বদলে যাওয়া প্রযুক্তিতে এরকম বিজ্ঞাপন নীতি মান্য করা সম্ভব নয়।
- লাইসেন্স ফি : মুদ্রিত পত্রিকার সঙ্গে আয়, সার্কুলার, লাইসেন্স, জামানত, নবায়ন ইত্যাদি একেবারেই সামঞ্জস্যহীন। একটি স্বাস্থ্যকর প্রতিযোগিতার জন্য একই ধরণের শিল্পের খরচ ও আয়ের সমন্বয় প্রয়োজন। লেভেল প্লেয়িং গ্রাউন্ড ছাড়া এই শিল্পের বিকাশ সম্ভব নয়।
- রেভিন্যু শেয়ারিং : দেশে অনলাইন বিজ্ঞাপনের বাজার এখনও তৈরি হয়নি। এরকম অবস্থায় রেভিন্যু শেয়ারিং এর বিষয়টি অবাস্তব। পরবর্তীতে এ শিল্প বিকশিত হলে সরকার অনেক ভাবে আয় করতে পারবে।
- বিজ্ঞাপন শর্ত : ওয়েব অ্যাড এজেন্সির মাধ্যমে আসা বিজ্ঞাপনে দেশি-বিদেশী নিয়ন্ত্রণ অবাস্তব। প্রচারের ‘২০%’ বিজ্ঞাপনী শর্তটিও বাস্তবসম্মত নয়।
- সামঞ্জস্যহীন আইনী দায় ও খরচ : মুদ্রিত পত্রিকার মালিকানা ব্যক্তি করতে পারলে অনলাইন মাধ্যমের জন্য কোম্পানি আইনের রেজিস্ট্রেশন যৌক্তিক নয়।
কার্যকরি বা যৌক্তিক অ্যাপ্রোচ কী হতে পরে ?

১. লাইসেন্স নিয়ন্ত্রণ :
- ছাপা পত্রিকার মতো সহজ শর্তে এনলিস্টমেন্ট দেয়া যেতে পারে। তবে সেটি হওয়া উচিৎ শুধুমাত্র বাংলাদেশে অফিস স্থাপন ও ব্যবসা করার জন্য। দেশের বাইরে যেহেতু কিছু নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না, তাই নিয়ম করা অর্থহীন।

২. অর্থনৈতিক নিয়ন্ত্রণ :
- সরকারি বিজ্ঞাপন পাবার জন্য এনলিস্টমেন্ট এর খরচ ও প্রক্রিয়া আলাদা করা যেতে পারে।
- আয় খুব ভাল হলে ট্যাক্স-ভ্যাট দিয়ে বাড়তি আয়ের উপরে সরকার রেভিন্যু নিশ্চিত করতে পারে।

৩. আইন বিষয়ে প্রয়োজনীয় কাজ :
- ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান ও রাষ্ট্রের তথ্য নিরাপত্তার সঙ্গে সম্পৃক্ত মৌলিক আইনগুলোকে অনলাইনে প্রয়োগযোগ্য করতে হবে। যেমন : কপিরাইট, ব্যক্তিগত ও রাষ্ট্রীয় তথ্য নিরাপত্তা, সাক্ষ্য-প্রমাণ, প্রচার-প্রকাশনা, বিজ্ঞাপন, মানহানি - ধরনের আইন / নীতিমালাকে যুগোপযোগী করতে হবে। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি নিয়ন্ত্রণের মৌলিক আইন ও নীতিমালাগুলো তৈরির কাজ শেষ করতে হবে।
- আইনগুলো করার সময় মনে রাখতে হবে, সেটার বাস্তবায়ন যেন সরকারি ও বেসরকারি উভয় খাতের জন্য কম শ্রম ও ব্যয়সাধ্য হয়।
- সম্পৃক্ত সকল আইনগুলো প্রতিনিয়ত হালনাগাদ করার ব্যবস্থা করতে হবে। হালনাগাদ না করলে আইনের অপপ্রয়োগ হবে।
- সব ধরনের সংবাদমাধ্যমের জন্য নিজস্ব কারিগরি অবকাঠামো ও কর্মপদ্ধতির বিষয়ে কোন স্পষ্ট দিক নির্দেশনা বিষয়ক আইন ও মানদণ্ড তৈরি করতে হবে ।

৪. আইন প্রয়োগে প্রয়োজনীয় কাজ :
- আইন, নীতিমালা, প্রজ্ঞাপন, প্রণিধানমালা ইত্যাদি প্রয়োগের জন্য প্রয়োজনীয় কারিগরি অবকাঠামো ও জনশক্তি উন্নত করতে হবে।
- অনলাইনের বিভিন্ন অবকাঠামো নিয়ন্ত্রণকারী আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর সঙ্গে দাপ্তরিক সম্পর্কের উন্নয়ন করতে হবে।
- বিভিন্ন আন্তর্জাতিক কর্তৃপক্ষের সঙ্গে চুক্তির মাধ্যমে আইন প্রয়োগের পথ সুগম করতে হবে।
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে সেপ্টেম্বর, ২০১২ বিকাল ৫:৩৮
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় রাজাকাররা বাংলাদেশর উৎসব গুলোকে সনাতানাইজেশনের চেষ্টা করছে কেন?

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সম্প্রতি প্রতিবছর ঈদ, ১লা বৈশাখ, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, শহীদ দিবস এলে জঙ্গি রাজাকাররা হাউকাউ করে কেন? শিরোনামে মোহাম্মদ গোফরানের একটি লেখা চোখে পড়েছে, যে পোস্টে তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি করাটা প্রফেসরদেরই ভালো মানায়

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৩


অত্র অঞ্চলে প্রতিটা সিভিতে আপনারা একটা কথা লেখা দেখবেন, যে আবেদনকারী ব্যক্তির বিশেষ গুণ হলো “সততা ও কঠোর পরিশ্রম”। এর মানে তারা বুঝাতে চায় যে তারা টাকা পয়সা চুরি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঘুষের ধর্ম নাই

লিখেছেন প্রামানিক, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫৫


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

মুসলমানে শুকর খায় না
হিন্দু খায় না গাই
সবাই মিলেই সুদ, ঘুষ খায়
সেথায় বিভেদ নাই।

হিন্দু বলে জয় শ্র্রীরাম
মুসলিম আল্লাহ রসুল
হারাম খেয়েই ধর্ম করে
অন্যের ধরে ভুল।

পানি বললে জাত থাকে না
ঘুষ... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরান-ইজরায়েল দ্বৈরথঃ পানি কতোদূর গড়াবে??

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:২৬



সারা বিশ্বের খবরাখবর যারা রাখে, তাদের সবাই মোটামুটি জানে যে গত পহেলা এপ্রিল ইজরায়েল ইরানকে ''এপ্রিল ফুল'' দিবসের উপহার দেয়ার নিমিত্তে সিরিয়ায় অবস্থিত ইরানের কনস্যুলেট ভবনে বিমান হামলা চালায়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×