somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গান খেকো - শ্রোতা চোথা ২ (শোনার /বোঝার এবং রস নেবার প্রস্ততি)

২৬ শে জানুয়ারি, ২০১৪ রাত ৮:২৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



৪. শোনার /বোঝার এবং রস নেবার প্রস্ততি
শাস্ত্রীয় সঙ্গীত শুনে মজা পাবার জন্য যে খুব পণ্ডিত হতেই হবে, এমনটি না। যেকোনো বয়সী, যেকোনো ভাষাভাষী, যেকোনো মানের শিক্ষিত শ্রোতা – শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের মজা নিতে পারবে। মনোযোগ দিয়ে, সময় নিয়ে শুনতে থাকাটাই প্রধান শর্ত।

তবে অন্য যেকোনো শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের মতোই ভারতীয় শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের বেশি মজা নেবার জন্য, ক্রমশ জানাশোনাটা বাড়ানো দরকার। এর শাস্ত্র, ইতিহাস, বিবর্তন, লোকজন, এলাকা-ঘরানা বৈচিত্র্য, ইত্যাদি বিষয়ে, যত বেশি জানা যাবে, তত বেশি-বেশি মজা নেয়া সম্ভব হবে। এক জীবনে এই জানার শেষ হবে না। তাই শাস্ত্রীয় সঙ্গীত কখনও পুরানো হবে না।

শাস্ত্রীয় সঙ্গীত বোঝা মানে সঙ্গীতের ভাবটা অনুভব করা। একটি রাগের অবয়বকে অন্তর দিয়ে দেখতে পারা। সেটা ভাব কখন, কিভাবে এবং কতখানি ফুটে উঠছে, সেটাকে ধরতে পারা। যিনি কারিগরি ও ভাবরসের বিষয়গুলো যতটা ভাল জানবেন, তার কাছে রূপটা তত স্পষ্ট হবে।

সঙ্গীত শোনা শুরু করার জন্য, প্রথমে দরকার একটা ভাল অডিও লাইব্রেরী। সেখানে একটি রাগের - পরিচিত সব জনরার, বিখ্যাত প্রতিটি ঘরানার, প্রচলিত সব তালের, অন্তত ২৫ টি গান/বাজনা থাকা দরকার। সেরকম একটি লাইব্রেরী গুছিয়ে উঠতে অনেক সময় লাগে। ওরকম একটি লাইব্রেরীর আকার-প্রকার এত বড় হয়, সেটার ব্যবস্থাপনাও ভীষণ কঠিন। সেটা মাথায় রেখে, আমরা প্রতিটি রাগের শ্রোতা সহায়িকা নোটের সাথে, ওই রাগের একটি DVDযুক্ত করে দেব। ডিভিডিতে সব ধরনের ট্রাকের একটি করে স্যাম্পল দেয়ার চেষ্টা করা হবে।

শ্রোতা হিসেবে, যেকোনো রাগের বিশুদ্ধ রূপ বোঝার চেষ্টা করার আগে, ওই রাগের হালকা গানগুলো (উপশাস্ত্রীয় ও সাধারণ গান/বাজনা) শোনা দরকার। এগুলো সচরাচর শোনার অভ্যাস থাকার কারণে, আলাদা করে শেখার পরিশ্রম করতে হয় না। আবার এতে কান তৈরি হতে সুবিধা হয়।

প্রথমে যেকোনো একটি রাগ বেছে নিন। এরপর ওই রাগের ডিভিডিতে দেয়া – প্লেব্যাক, আধুনিক, গজল, রবীন্দ্র-নজরুল, টপ্পা, কীর্তনগুলো পছন্দমত শুনতে থাকুন। পাশাপাশি বোঝার চেষ্টা করতে থাকুন - গানগুলোর মধ্যে কোথায় যেন সুরের মিল আছে। রিপিট দিয়ে কয়েকবার শুনতে শুনতে, মিলগুলো খুঁজে পাওয়া যাবে। যেখানে মিল, সেখানেই আসলে রাগের কারসাজি। এরকম ১/২ দিন শুনতে পারেন (তবে বোঝার জন্য সময় বেশি লাগলে দোষের কিছু নেই)।

মনে রাখবেন - যে কদিন একটি বিশেষ রাগকে মাথায় বসাবার চেষ্টা করছেন, ওই কদিন অন্য রাগের বা মিশ্র রাগের গান/বাজনা না শোনই ভাল। তাতে মনোযোগটা ভাল থাকে। রাগটাও মাথায় বসতে সুবিধা হয়।

এরপর রাগের রূপরেখা এবং আবহাওয়াটা বোঝার জন্য, যেকোনো বাদ্যযন্ত্র নিয়ে (হারমোনিয়াম হতে পারে), রাগের নোটের “স্বর ব্যবহার” সেকশনটা নিয়ে বসতে হবে। মনোযোগ দিয়ে বারবার পড়তে হবে। পাশাপাশি বাজিয়ে/গেয়ে দেখার চেষ্টা করতে হবে। গাওয়া/বাজাবার সময়, আগে শোনা গানগুলোর সাথে মিল খুঁজে বের করার চেষ্টা করতে হবে। গানের পুরো সুরের সাথে মিল না খুঁজে, গানগুলোর মধ্যে কমন সুরের সাথে মিল খুঁজতে হবে। যদি মনে হয় - কিছুই হচ্ছে না, তার পরেও থামবেন না। ফলটা বোঝার জন্য একটু সময় দিতে হবে।

“স্বর ব্যবহার” সেকশনটা নিয়ে খেলাধুলা করার পরে, স্বর-মল্লিকা ও লক্ষনগীত শুনে, স্বরগুলোর চলাফেরা বোঝার চেষ্টা করতে হবে। যতক্ষণ দু চারটি মিল আপনি খুঁজে না পাচ্ছেন, ততক্ষণ হালকা গানগুলো শুনতে থাকুন। পাশাপাশি “স্বর-ব্যবহার” সেকশনটি দিয়ে খেলুন, স্বর-মল্লিকা-লক্ষনগীত শুনুন, গাইতে/বাজাতে চেষ্টা করুন।

একটু আরাম আসলে - এরপরে শোনা শুরু করুন স্লো আলাপ শোনা। সেখানে স্বরের ব্যাবহারগুলো ধরার চেষ্টা করুন। ধরতে না পারলেও অসুবিধা নাই, চেষ্টা করে গেলেই কাজটা হয়ে যাবে।

কাজের ফাঁকে ফাঁকে ওই রাগের যন্ত্র সঙ্গীতগুলো ছেড়ে রাখতে পারেন। রাতে শোবার সময় হালকা করে ছেড়ে রাখলে ভাল কাজে লাগে।

একই রাগে গাওয়া/বাজানো ২৫ টি বিভিন্ন ধরনের কম্পোজিশন নিয়মিত শুনুন। অল্প কয়েকদিনেই আপনি এই রাগটি চিনে যাবেন। যে কেউ গাওয়া শুরু করলেই, নিজের অজান্তেই বলে উঠবেন – অমুক রাগ গাইছে। সেখানে দু একবার ভুল হলেও লজ্জার কিছু নাই, কারণ অনেক বড় সঙ্গীতজ্ঞদেরও অনেকদিন ধরে না শোনা রাগ ধরতে কষ্ট হতে পারে।
৯টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ব্লগে বিরোধী মতের কাউকে নীতি মালায় নিলে কি সত্যি আনন্দ পাওয়া যায়।

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১৮

ব্লগ এমন এক স্থান, যেখানে মতের অমিলের কারণে, চকলেটের কারণে, ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের কারণে অনেক তর্কাতর্কি বিতর্ক কাটা কাটি মারামারি মন্তব্যে প্রতিমন্তব্যে আঘাত এগুলো যেনো নিত্য নৈমিত্তিক বিষয়। ব্লগটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

সিকান্দার রাজার চেয়ে একজন পতিতাও ভালো।

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ৮:০৭

সিকান্দার রাজা কোকের বোতল সামনে থেকে সরিয়ে রাতারাতি হিরো বনে গেছেন! কিন্তু তাকে যারা হিরো বানিয়েছেন, তারা কেউ দেখছেন না তিনি কত বড় নেমকহারামি করেছেন। তারা নিজেদেরকে ধার্মিক বলে দাবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগার'স ইন্টারভিউঃ আজকের অতিথি ব্লগার শায়মা

লিখেছেন অপু তানভীর, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ১১:০৫



সামুতে ব্লগারদের ইন্টারভিউ নেওয়াটা নতুন না । অনেক ব্লগারই সিরিজ আকারে এই ধরণের পোস্ট করেছেন । যদিও সেগুলো বেশ আগের ঘটনা । ইন্টারভিউ মূলক পোস্ট অনেক দিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

...এবং উচ্চতায় তুমি কখনই পর্বত প্রমাণ হতে পারবে না

লিখেছেন নতুন নকিব, ০৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৫৬

...এবং উচ্চতায় তুমি কখনই পর্বত প্রমাণ হতে পারবে না

ছবি কৃতজ্ঞতাঃ অন্তর্জাল।

ছোটবেলায় মুরব্বিদের মুখে শোনা গুরুত্বপূর্ণ অনেক ছড়া কবিতার মত নিচের এই লাইন দুইটাকে আজও অনেক প্রাসঙ্গিক বলে মনে হয়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমেরিকার গ্র্যান্ড কেনিয়ন পৃথিবীর বুকে এক বিস্ময়

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪১


প্রচলিত কিংবদন্তি অনুসারে হাতে গাছের ডাল আর পরনে সাধা পোশাক পরিহিত এক মহিলার ভাটাকতে হুয়ে আতমা গ্র্যান্ড কেনিয়নের নীচে ঘুরে বেড়ায়। লোকমুখে প্রচলিত এই কেনিয়নের গভীরেই মহিলাটি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×