somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কুমারখালি ছাত্র কল্যাণ সমিতি ঢাকা-র বুকলেটের জন্য লেখা চিঠি

১০ ই আগস্ট, ২০১৪ বিকাল ৪:৩৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

প্রিয় ভাই/বোন,
তোমাদের জন্য আমাকে একটি লেখা লিখতে বলা হয়েছে। লেখাটা লিখতে বসার পরে চট করে শেষ হয়ে গেল বটে। কিন্তু প্রথমবার পড়তে গিয়েই হোঁচট খেলাম। "কি করবে" আর "কি-করবেনা"র লম্বা তালিকা। ভয় পাচ্ছি পাছে তোমরা আমাকে অনাকাঙ্ক্ষিত পরামর্শ দাতা মুরুব্বী হিসেবে বয়কট না কর! সেজন্য ফিরে এসে শুরুতে একটু ভণিতা করার সিদ্ধান্ত নিলাম। জানিয়ে রাখছি - আমি মুরুব্বী না, আমাকে তোমাদের বন্ধু ভাবতে পারো। যে Do's/Don'ts এর তালিকা দিয়েছি, এটাকে উপদেশ ভেবো না। বরং তোমার বড় ভাইয়ের ঠেকে-দেখে শেখার অভিজ্ঞতার গল্প ভাবতে পার। এটাকে কোন আর্টিকেল না ভেবে, তোমার কাছে আমার একটি চিঠি ভাবতে পারো।

আমি বিশ্বাস করি - আজ তোমাদের প্রায় সবার চোখে, আগামী দিনে বিশ্ব জয়ের স্বপ্ন। যার স্বপ্ন যত বড়, আজ শুরুতেই তাকে তত বড় করে সালাম দিলাম। কারণ আমি বিশ্বাস করি - অর্থ নয়, বিত্ত নয়, মানুষ আসলে তার স্বপ্নের সমান বড়। যার স্বপ্ন নেই, তার জন্য এই শহর না। তাই চোখের সামনে স্বপ্ন যদি না থাকে, তবে চোখটা আরও খুলে, লম্বা একটা শ্বাস নিয়ে স্বপ্নটা গোছাতে শুরু করো। হ্যাঁ চোখ খুলে দেখ স্বপ্ন। যেই স্বপ্ন তোমাকে অলস হতে দেবে না, হাল ছাড়তে দেবে না। সেই স্বপ্নের কথা প্রতিদিন নিজেকে বল, বন্ধুদের বল, আমাকে বল। নিজের সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য, প্রতিদিন স্বপ্নকে আর নিজেকে শানিত করো।

আমার মতো গ্রাম/মফস্বল শহর থেকে আসা বেশীরভাগ তরুণদের একটা বিশেষ রোগ থাকে। আমি নাম দিয়েছিলাম "Glass Door Phobia"। অনেক পাবলিক বক্তৃতায় এ গল্প বলেছি। মনে করো - শহরের দুটি দোকান। একই জিনিস পাওয়া যায়, দামও কাছাকাছি। একটাতে কাঁচের দরজা ঠেলা দিয়ে ঢুকতে হয়। অন্যটাতে কোন দরজা নেই। আমরা কেন যেন - ওই কাঁচের দরজাটা ঠেলে ঢুকতে ভয় পাই। গলা শুকিয়ে আসে। আমরা মোড়ামুড়ি করে, শেষ পর্যন্ত ওই খোলা দোকানটাতেই ঢুকি। এই কাঁচের দরজাটা শুধু একটা উদাহরণ। এরকম হাজার উদাহরণ আছে। আমাদের পকেটে খরচ করার মত যথেষ্ট পয়সা থাকতেও, ভালো রেস্টুরেন্টে ঢুকে ডাঁটে মেন্যু দেখে খাবারের অর্ডার দিতে ভয়। শহুরে সহপাঠীদের চেয়ে অনেক ফিট থাকার পরেও, ট্রেন্ডি পোশাকটা পরতে ভয়। খেলাধুলা, আর্ট, গান বাজনার রুচি - শহুরে বন্ধুদের চেয়ে কয়েকশ গুন ভাল হবার পরে, নিজের পছন্দ উচ্চ স্বরে জানাতে ভয়। নিজের ভাল খারাপ লাগা স্পষ্টভাবে জানাতে ভয়। অকারনেই ভয় হয় এই শহরের স্মার্ট তরুণ/তরুণীদের। এরকম আরও কত শত জিনিসে অকারণ ভয়। এই ভয় আমাদেরকে আরও সীমিত গণ্ডির মধ্যে আটকে ফেলতে চায়। এই ভয়ই ওদের-আমাদের আলাদা করে। ওদেরকে দেয় আরও এগিয়ে, আমাদেরকে দেয় সমানুপাতে পিছিয়ে।

এই ফোবিয়ার একটি মাত্র চাবি। যার নাম "Self Confidence"। বুক ভরে শ্বাস নিয়ে পূর্ণ চোখে তাকানো। নিজেকে পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্রের জন্য দরকারি মনে করতে পারা। কারও চেয়ে নিজেকে ছোট না মনে করা। আমাদেরকে জয় করতে হলে, প্রথম এই ফোবিয়া কাটাতে হবে। আত্মবিশ্বাসী হতে হবে। জানতে হবে আজ যারা এই শহরের অর্থনীতি, রাজনীতি, শিল্প, সংস্কৃতি নিয়ন্ত্রণ করছেন, তারা সিংহভাগই তোমার/আমার মতো গ্রাম থেকে আসা। তারা সবাই আত্মবিশ্বাস নিয়ে, নিজেদের স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য, কঠোর অনুশীলনে নিজেদের তৈরি করেছেন। পরিবার, টাকা, সামাজিক প্রতিবন্ধকতা - কিছুই তাদের রুখতে পারেনি। তাই তাদের যখন হয়েছে-তোমাদেরও হবে।

তোমাদের ঢাকাতে আসার মুল উদ্দেশ্য লেখাপড়া। তোমরা হয়ত বেশিরভাগই ইতোমধ্যে একাডেমিক বিষয় নির্বাচন করে ফেলেছ। যারা করনি, তারা একটু চিন্তাভাবনা করে বিষয় নির্বাচন করো। মনে রাখবে - বিজ্ঞান ও তথ্য প্রযুক্তির কল্যাণে খুব দ্রুত বদলে যাচ্ছে পেশা। বদলে যাচ্ছে কর্মকৌশল। তাই আজকে যেটা ভাল আয় করা গুরুত্বপূর্ণ পেশা, কাল সেটার অস্তিত্ব নাও থাকতে পারে। আজকে আমরা জানি না, এরকম হাজারো পেশায়, আগামী দশ বছর পরে, বহু টাকা মাইনে দিয়ে লোক খোঁজা হবে। তাই ভবিষ্যতে কর্মের নিশ্চয়তা আছে, এ ধরনের একাডেমিক বিষয় নির্বাচন করার চেষ্টা করো।

অনেককেই বলতে শুনেছি - আমার দরকার নাই, এটা শুধু বাবা মায়ের প্রত্যাশা পূরণের জন্যই পড়ছি। কেউ বলে - একটা সার্টিফিকেট পেলেই হল, সেটা যে কোন কায়দায় হোক। কেউ বলে - কাজ/চাকরি পাওয়াটা বড় কথা, একাডেমিক রেকর্ড কোন বিষয় নয়। আমি বলব - এ কথাগুলো এভাবে না ভাবতে। বরং জেনো - খারাপ একাডেমিক রেকর্ড হয়তো তোমার লক্ষ অর্জনকে বিপর্যস্ত করতে পারবে না। কিন্তু মোটামুটি ভাল একটি একাডেমিক রেকর্ড, তোমাকে স্বপ্ন বাস্তবায়ন আরও বেশি এগিয়ে দেবে। পাশাপাশি মনে রাখতে হবে - জয় করার জন্য শুধু একাডেমিক পড়া নয়, পাশাপাশি সেটার প্রায়োগিক কায়দা রপ্ত করা দরকার। যে দরকারি জিনিসগুলো একাডেমীতে শিখছ না, সেগুলোও খুঁজে হাতে-কলমে শেখা দরকার।

জয় করে নেবার জন্য মুল দরকার দক্ষতা। যেকোনো একটি কাজে, অন্যদের চেয়ে উল্লেখযোগ্য দক্ষতা। সেই কাজটা যেন তোমার মতো ভালভাবে বেশি লোক করতে না পারে । ভাল হয় সেটা তোমার একাডেমী সম্পৃক্ত বিষয়ে হলে, না হলেও খুব অসুবিধা নেই। শুধু মনে রাখতে হবে - তুমি একটি কাজ খুব ভালভাবে করতে পারো, যেটা একই পেশার আরও ১০ জন মানুষ আন্তরিক ভাবে স্বীকার করতে হবে। সেই ১০ জন থেকে ১০০ হবে, তা থেকে হাজার, লক্ষ, কোটি ...। তারপর আন্তরিক ভাবে কাজ করে যাও, নিজের দক্ষতা ক্রমশ বাড়াতে থাক, দেখবে একদিন তুমি বাংলাদেশের মধ্যে অনন্য বলে পরিচিত হয়ে গেছ। আমি তোমার সংবর্ধনা সভায় তোমার ভূয়সী প্রশংসা করে বক্তৃতা দিচ্ছি (সৃষ্টিকর্তার কাছে মনেপ্রাণে সেই প্রার্থনা করি)। দেখবে তোমার ওই উন্নতিতে -চাচা, মামা, খালু ফুফা বা প্যালা লাগে নাই। তুমি নিজের মহিমায় মহীয়ান।

কিছু ছোট, কিন্তু খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে বলি। ঢাকা শহরে খুব দ্রুত, কর্ম ছাড়া বড়লোক হবার অসংখ্য অফার চারদিকে ঘুরে বেড়ায়। ভুলেও সেদিকে পা বাড়িয়ো না। মনে রেখ তুমি যোগ্য হলে, তোমার অর্থ অমনি হবে। নৈতিক ভাবে অর্থ আয় করতে যত দেরি ভাবছ, তার আগেই হবে। ঢাকা শহরে কুমারখালীর শিক্ষার্থীদের বাইরেও বন্ধুত্ব করতে চেষ্টা করো। তোমার লক্ষ্য যেই পেশা, সেই পেশার বড় ভাইদের সাথে সম্পর্ক রাখতে চেষ্টা করো। চাচা-মামার চেয়ে তোমার সেই বন্ধু-বড় ভাইরা তোমার ক্যারিয়ারে বড় সম্পদ হতে পারে।

৭০০ শব্দের মধ্যে লেখার কথা ছিল। কিছু বোধ হয় বেশি হয়ে গেল। বাকিটা দেখা হলে বলবো।

তোমাদের,
সুফি ভাই
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×