somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অসুরের সুরলোকযাত্রা

১২ ই ডিসেম্বর, ২০১৪ রাত ১১:০৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আইটি, ব্যবসা, উদ্যোগ - নিয়ে বলতে চাইলে লোকে শোনে, লিখলে পড়ে, একটু আধটু হাত তলি দেয়। মাঝে মধ্যে দু চারটে পয়সাও দেয়।
কিন্তু আমার প্রিয় জিনিস গান নিয়ে কিছু বলতে চাইলেই সবাই বলে "এবার উঠি"। .আর লেখা ছাপার তো প্রশ্নই আসে না।

এবারে বেঙ্গলের সান্ত্রীয় সঙ্গীত উৎসবকে সামনে রেখে, চারবেলা চারদিক এর জন্য সংক্ষেপে একটি লেখা দিতে বললেন @Nobonita Chowdhury। আমি তো আহ্লাদে লাউঘন্ট। সুযোগে পেয়ে ১৪০০ শব্দ++ মেরে দিলাম। আমার প্রতি দয়-পরবাস হয়েই হোক, আর চক্ষু লজ্জার খাতিরেই হোক, দেখলাম পুরোটাই ছেপে দিয়েছে !!!

সেই আপদ নিয়ে, হাসিমুখে আবার আপনাদের সামনে হাজির হলাম :D
আমি জানি - আপনাদের পড়তে না ইচ্ছে করলেও, লজ্জায় পড়ে পড়বেন। লিখতে না ইচ্ছে করলেও, করুণা করে করে লাইক-কমেন্ট করবেন। কারণ আপনাদের প্রশ্রয় পেয়েই আমার পাগলামির বাড় এতখানি বেড়েছে :)






==============
অসুরের সুরলোকযাত্রা
==============

সুখী মানুষ আমি। জীবনের ব্যালান্স শিটে বা পূর্ণতার হিসেবে “সুখ” নামক দুই বর্ণের ওই শব্দটিকে সবচেয়ে বেশি মূল্য দিই। ছোট-খাটো কোনো লেনদেনই বাদ যায় না। ভোরের শিশির আমার পায়ের কোষগুলোর মধ্যে দিয়ে যে আদর ঢুকিয়ে দেয়, সেই আদরের সুখটুকুও যত্ন করে টুকে রাখি জীবনের খেরোখাতায়। বিজ্ঞান জানে সেই শিশিরের আদর আদৌ হৃদয় পর্যন্ত পৌঁছে কি না। কিন্তু আমি জানি, সেটা পৌঁছে যায় এবং বিন্দু বিন্দু জমতে থাকে।

এই অনুভবটুকু হবার পর থেকে — অর্থ-অনর্থ সবকিছু মিলিয়ে জীবনে ৩৬০ ডিগ্রি সুখ নিশ্চিত করার কাজ করে গেছি। তথ্যপ্রযুক্তির মতো শুকনো পেশায় থাকলেও, ৩০ বছরের মধ্যে, শুধুমাত্র নিজের পছন্দ মত কাজ করে, জীবন চালানোর ব্যবস্থা করে ফেলেছিলাম। ফুলে-ফলে-ছন্দে-বর্ণে ভরপুর সেই সময়ে খুব বড়ো একটা চোট পেলাম। সেরকম চোট, যার পরে পৃথিবী অর্থহীন লাগে, এলোমেলো লাগে। মনে হয়, মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে পৃথিবী। মনে হয়, মনের সবগুলো জানালা একদিন একসাথে হঠাৎ করেই সশব্দে বন্ধ হয়ে গেছে মুখের ওপরে। তার কব্জাগুলো জং ধরে গেছে রাতারাতি। এ পর্যন্ত বিশ্বাস করে আসা সকল পোক্ত অবলম্বন হয়ে গেছে ঘুণে-ধরা ঝুরঝুরে, ধরলেই যেন গুঁড়ো গুঁড়ো হয়ে ভেঙে পড়বে। মনে হয়, এই প্রেমহীন-বিশ্বাসহীন-আশ্রয়হীন কলমন্দ্রমুখর পৃথিবীতে শান্তির এতোটুকু আশ্রয় আর নেই।

বাস্তববাদী শক্ত মানুষরা এমন চোট সামলে নেন সহজেই। ‘নেভার মাইন্ড’ বলে নতুন পথে সামনে এগিয়ে যান। ঝামেলা হয় আমার মতো দুর্বলদের নিয়ে। কেউ জড়িয়ে যায় ড্রাগ-অ্যালকোহল-সন্ত্রাসের মতো ধ্বংসাত্মক নেশায়। কেউ আবার মানবিক, সামাজিক বা আরো সব সুকুমারবৃত্তি থেকে চোখ ফিরিয়ে ধর্ম বা বিশ্বাসের মাধ্যমে পরিপূর্ণ আত্মকেন্দ্রিক হয়ে পড়ে। আমাকেও সেই পথ হাতছানি দিলো। কিন্তু সামান্য অর্থব্যয়ে যা মেলে, বা যাতে শুধুই সাময়িক শারীরিক স্বস্তি, তা কেন যেন টানতে পারলো না। সেগুলোর চাহিদা যেহেতু ক্রমাগত বাড়তেই থাকে, তাই শরীরে ক্রমশ অসহ্য লাগে, সামাজিক জীবন নোংরা হতে থাকে, পেশাদারি জীবনও তথৈবচ। আবার খুব তাড়াতাড়ি তার আবেদনও শেষ হয়ে যায় বলে, পরের রাতে ও ঘরে যেতে আর মন চায় না। দেখলাম সেসবে সাময়িক স্বস্তি হয়, তবে আশ্রয় হয় না। ফূর্তি হয় বটে, কিন্তু আনন্দ হয় না।

সেই উদভ্রান্ত সময়ে পাগলের মতো, কাঙালের মতো খুঁজে চলেছি একটি অবলম্বন, যেখানে সাময়িক প্রশ্রয় থাকবে, আবার অনন্ত আশ্রয়ও থাকবে। সেই আশ্রয়ে বসে প্রতিনিয়ত তাকে আরও কাছে পাবার কামনা করা যাবে, খুঁজতে থাকা যাবে। তার সব ভাঁজ খুলে দেখার পরেও সে থাকবে নিত্যনবীনা। সেই পথপরিক্রমায় সাময়িক উত্তেজনা থাকবে, নির্মল আনন্দ থাকবে, আবার অনাবিল সুখও থাকবে। কিন্তু আমি চাইলেই তো আর সব মিলবে না। আবার মিললেও তার জন্য কী মূল্য দিতে হবে কে জানে?

গান প্রশ্রয়-আশ্রয় দিয়েছে জীবনে বহুবার। প্রেমে-আবেগে-বেদনায় কুঁকড়ে গিয়ে পড়েছি গানের কোলে। আধুনিক-পপ-রক-ফোক জনরার — বাংলা-ইংরেজি-হিন্দি-উর্দু ভাষার বহু গানে। সেগুলো বড়োজোর ছিলো সেমি-ক্লাসিক্যাল জনরার। কিন্তু শুদ্ধ গান বা শাস্ত্রীয় সঙ্গীত ওভাবে কোনোদিন শোনার সুযোগ হয়নি (শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের ক্ষেত্রে বিটিভির রাতের শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের “সুরলহরী”-র ভয়াবহ সৃতি তো ছিলোই)। বাণীনির্ভর সেসব গানের সাথে, সেই মুহূর্তের অনুভবকে মিশিয়ে ফেলার মাধ্যমেই পেয়েছি আশ্রয়। কিন্তু বয়স বাড়ার সাথে সাথে অনুভব পেকেছে, নিজের অজান্তেই কখন ভাষার গণ্ডি ছাড়িয়ে চলে গেছে বিমূর্ততায়। সেই প্রেয়সী গানগুলো আজও মাঝে মধ্যে ডাকে বটে, কিন্তু আর যেন আশ্রয় হতে পারে না; ম্লান মুখে দেখিয়ে দেয় সামনের অজানা রাস্তা।

এই চক্রে ঘুরতে ঘুরতে একদিন দেখা দিলো সঙ্গীত। হ্যাঁ, সঙ্গীত মানে শাস্ত্রীয় সঙ্গীত। অনেকটা হঠাৎ করেই। প্রথমবার বেঙ্গল ক্লাসিকাল ফেস্টিভ্যালে গিয়েছিলাম পিকনিক মোডে। সেখান থেকে ফিরে এক রাতে ইউটিউবে ঘুরতে ঘুরতে, পাতিয়ালা ঘরানার ওস্তাদ বড়ে ফতেহ আলি খাঁ সাহেবের “ন্যায়ন সে ন্যায়ন মিলায়ে” বন্দিশটি শুনলাম। এক ধরনের ঘোরে আটকে গেলাম। রাত ১২টায় শুরু। সকাল হবার আগেই ওনার গাওয়া এই বন্দিশের সব কটা ভার্শন বের করে শুনলাম। মাঝরাতে যখন ওই বন্দিশসহ, পুরো আধা ঘণ্টার “খেয়াল” শুনছিলাম, হঠাৎ খেয়াল করলাম, শুধু গানের বাণী নয়, রং “বাণীহীন সুর” এক অসম্ভব মায়াজাল দিয়ে আমাকে ঘিরে ফেলছে। চিরদিনের বিরক্তিকর আ-আ-ই-ও ধরনের শব্দগুলোও নানান রূপ নিয়ে মনের জানালায় এসে দাঁড়াচ্ছে। ভারী লাগছে, হালকা লাগছে, ভালো লাগছে। বুকের মধ্যে থেকে পাকিয়ে কান্না উঠে আসছে, সেই কান্নায় যেন সব সুখ। সেদিন সকালের প্রার্থনাতে বসে, জীবনের অপূর্ব পূর্ণতার দিশা অনুভব করলাম। মনে হতে লাগলো, নতুন আশ্রয়ের সন্ধান বোধহয় পেয়ে গেছি। তখনই সোশাল নেটওয়ার্কে “হাইবারনেটিং” বোর্ড ঝুলিয়ে, ১ সপ্তাহের জন্য পৃথিবী থেকে সব যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে ফেললাম। সব ধরনের ফোন-ইমেইল সহকারীকে ধরিয়ে দিলাম। খুঁজে চললাম, খুঁড়ে চললাম।

সেই বন্দিশ দিয়েই আমার শুরু। জানতে পারলাম, আমাকে ওই মুহূর্তে যাতে টেনেছিল, সেটা একটা মেলোডিক ফর্ম, শাস্ত্রীয় সঙ্গীতে যাকে বলে “রাগ”। সেই রাগের বন্দিশটা যে ছন্দে বাঁধা, তাকে বলে “তাল”। জানলাম, সেই রাগটার নাম “দরবারী”, আর তালের নাম “একতাল”। এরপর দরবারীতে তৈরি আরও কম্পোজিশন শুনতে লাগলাম। দরবারী দেখলাম-শুনলাম হিন্দি ফিল্মের গানে, আধুনিক বাংলা গানে, ধ্রুপদে, ধামারে, খেয়ালে। শুনলাম কণ্ঠে, শুনলাম সুরবাহার-সেতার-সরোদ-সারেঙ্গী-বাঁশি-সানাইয়ে। ওস্তাদ বিলায়েত খাঁ সাহেবের সেতারে আর ডাগরদের আলাপ শুনেই তো ৩ দিন কেটে গেলো।

প্রেম যখন গভীর হতে থাকে, তখন প্রিয়াকে নানান আঙ্গিকে জানতে ইচ্ছে হয়। তেমন করেই সুরের আমেজটা মাথায় বসার পরেই আরও ভাঁজ খুলতে ইচ্ছে হয়। জানতে ইচ্ছে হয়, সে প্রিয়ার আকার-প্রকার-মেজাজ-সময়-অনুভব... সব। প্রসঙ্গত এসে যায় তার জন্ম ও বেড়ে ওঠার ইতিহাস, তার আত্মীয়-স্বজন আর সুখ-দুঃখের গল্প। সেভাবেই জানা হলো দরবারী মূলত মধ্যরাতের রাগ। এই রাগ দুঃখ, শোক আর বিয়োগান্তক অনুভবের গম্ভীর প্রকাশ। কম্পোজ করেছিলেন মিয়া তানসেন, আকবর বাদশার দরবারে। দক্ষিণের সঙ্গীতের “কানাড়া” রাগের প্রভাব ছিলো এই রাগে। সুরের গাম্ভীর্য, অনুভবের অতলে নিয়ে যাবার ক্ষমতা এবং আকার-প্রকারে, আকবর বাদশার দরবারের মতো “গ্র্যান্ড” হবার কারণে, এর নাম হয়েছিলো দরবারী। সম্ভবত আকবরই নামটা দিয়েছিলেন। গাইয়ে বাজিয়েরা সবাই এ রাগের মাস্টারপিস মানেন ওস্তাদ বিলায়েত খাঁ সাহেবের সেতারে বাজানো “দরবারী” রাগের দুই রেকর্ডের ৪৮ মিনিটের বাজনা। আবার এই বিলায়েত খাঁ সাহেবই বলেছিলেন, আমি ওস্তাদ ফৈয়াজ খাঁ সাহেবের দরবারীতে সম্রাটের কান্না শুনেছি।

যা হোক, দিন-দশেকের হাইবারনেশন কাটিয়ে ফিরে প্রতিদিনের সূচি থেকে চার ঘণ্টা সঙ্গীতকে দিয়ে দিলাম। বন্ধুমহলে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিলাম, শুদ্ধ গান শোনা শিখতে চাই, যে যা পারেন সাহায্য করেন। আমার বন্ধুভাগ্য ও শত্রুভাগ্য দুটোই ঈর্ষণীয়। দেখতে দেখতে নানা রকম দুষ্প্রাপ্য গানের বই, হরেক রকম সঙ্গীতের ডকুমেন্ট, মিউজিক ইনস্ট্রুমেন্টে ঘর ভরে গেল। আইটিউনস্-এর লাইব্রেরি ভরে উঠল হিন্দুস্তানি ক্লাসিক্যাল ট্র্যাকে। প্রায় সবই উপহার। পাশাপাশি কেউ এসে স্বর বুঝিয়ে দেন, কেউ বোঝান রাগ বোঝার কায়দা। সেই মানুষগুলোর কাছে আজীবন কৃতজ্ঞ থাকবো, যাঁরা তাঁদের ভীষণ ব্যস্ততার মাঝেও সময় করে, মমতা নিয়ে আমাকে গান বুঝতে সাহায্য করেছেন।

কিন্তু সুর বুঝতে চাইলেই তো চট করে হাতের মুঠোয় আসে না। আবার এমনও নয় যে, কিছু পয়সা খরচ করলেই তা দ্রুত হবে। সুরের প্রেমে পড়ার পরেই বুঝলাম পৃথিবীর সেরা বিনোদনগুলো শুধুমাত্র পয়সা খরচ করে উপভোগ করার সুযোগ নেই। সেগুলোর জন্য রীতিমতো খেটেখুটে নিজের তনু-মন-মননকে প্রস্তুত করতে হয়।

শুদ্ধ গানে বিস্তর কারিগরি বিষয় আছে। ভিন্ন মুহূর্ত, বা আলাদা মুডের জন্য আলাদা সব রাগ। আছে তাদের “আরোহ-অবরোহ”, “চলন”, “পকড়”, “ঠাট”, “জাতি”, “রাগাঙ্গ”। কারিগরি বিষয়গুলো স্বভাবতই একটু কাটখোট্টা। তবে এর চেয়ে মজার জিনিস আছে - বিভিন্ন “ঘরানা”র বিভিন্ন গায়নরীতির গল্পমোড়া বাহারি ইতিহাস। আছে শরীরে-মনে-পরিবেশে সেসব সুরের বিচিত্র প্রভাবের গল্প। আছে বিচিত্র সব প্রশ্ন - কোন রাগাঙ্গে গাওয়া কোন রাগ? এক সুরে ভূপালী আর দেশকার হয়েও, কেন এক ঠাটে পড়ে না? কেমন গান্ধার লাগে মিয়া কি মল্লারে, আর কেমন লাগে দরবারীতে? কেমন ঋষভ লাগে ভৈরবে, আর কেমন মারওয়াতে? কার “ঘরের” দরবারী শুনে বিষণ্ণ লাগে, আর কার ঘরেরটা শুনে প্রতিজ্ঞায় মন কঠোর হয়? “ধ্যানেশ্রী” অঙ্গ আগে এসেছে, নাকি “ভীমপলশ্রী”? যেসব স্বরে “ভৈরবী” হয়, ঠিক সেসব সুরে কেমন করে হয় “বিলাসখানি টোড়ি”? “গৌড় সারং” নাম হয়েও, কেন সে “সারং অঙ্গ” থেকে এতো দূরে? ভিন্ন সময়, ভিন্ন মুডের রাগ “দরবারী” আর “জৌনপুরী”, “আশাবরী”র কেন এতো মিল, আর কোথায় অমিল? গান ভালো জানলেও, যন্ত্রীরা কেন আনুষ্ঠানিকভাবে গান পরিবেশন করেন না? “ঘরানা” স্বাতন্ত্র্যের এতো সৌন্দর্য থাকার পরেও কেন মরে যাচ্ছে? গড়ে ওঠার সময় এক ঘরানার গুরু কেন অন্য ঘরানার গান শুনতে নিষেধ করেন? বিভিন্ন ঘরানা তৈরি হয়ে বিস্তৃত হলো কীভাবে? মহীরুহের উচ্চতার ওস্তাদদের কেন তেমন নাম-করা শিষ্য নেই? ধ্রুপদ গায়ন কেন মরে যাচ্ছে ক্রমশ? শত বছর আগে খেয়ালের যে চেহারা ছিলো তা কি এখন আছে, আর ভবিষ্যতে কি আরও বদল হবে? ওস্তাদ আমীর খাঁ বাড়িতে এতো ভালো ঠুমরি গাইলেও কেন আসরে গাইতেন না?

গানের সাথে যাঁদের তেমন একটা সম্পর্ক নেই, প্রশ্নগুলো পড়ে তাঁরা এর মধ্যেই ক্লান্ত হয়ে গেছেন, জানি। বিশ্বাস করুন, এই প্রশ্নগুলো শুধু পরীক্ষায় কমন-না-পড়া বিরক্তিকর প্রশ্ন সেট নয়। এর উত্তর খুঁজে আগাতে থাকাটাই আসল অভিযাত্রা, মিউজিক্যাল জার্নি, যার মধ্যে আছে অবর্ণনীয় আনন্দ। সেই মজায় যে মজে, সেই শুধু বোঝে। যার আসে না, তার কাছে মাগে না। কেউ বলবেন, এসব নান্দনিকতার বোধ, কেউ বলতে পারেন শুধুই চুলকানি। আসলে দুটোর মধ্যে দারুণ মিল আছে। দুটোরই যন্ত্রণা নিজে উপলব্ধি না করতে পারলে সেটা খোঁজা বা চুলকানোর সত্যিকারের আনন্দ বোঝা যায় না।

গানের নেশায় পাবার দু’মাসের মাথায় প্রতিজ্ঞা করেছিলাম ভালো শ্রোতা হবো, এ প্রেয়সীর মূল্য দেবার মতো প্রেমিক হবো। সেই চেষ্টার প্রায় দুই বছর চলছে। বর্ণে- গন্ধে-ছন্দে-লিপিতে ভরা এই অভিযাত্রার কবে শেষ হবে জানি না। শেষ হোক, তা-ও চাই না। আসলে এই বয়ে চলা এক জীবনে শেষ হওয়া সম্ভবও নয়, এটা জেনেই “এ তনু ভরিয়া পুলক রাখিতে নারি”।

চলে যাবার আগে বলি - আমাদের দেশে শুদ্ধ গান শোনার-শেখার সুযোগ খুব একটা নেই। ধর্মীয় কুসংস্কার কাটিয়ে উঠে সঙ্গীতের উপকারি দিকগুলো এখনও সমাজে প্রতিষ্ঠিত হয়নি। তাছাড়া পর্যাপ্ত শিল্পি নেই, আয়োজক নেই, স্পন্সর নেই। এর মাঝে ঠুকঠাক যে আয়োজন হয় তাই আমাদের ভরসা। তবে বছরের নভেম্বর মাসটা আমার মুখ হাসিহাসি থাকে। কারন আসছে বেঙ্গলের পাঁচদিনের শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের আয়োজন। দিন গুনে গুনে সেই অভিসারের অপেক্ষায় থাকি। শুধু অভিসারের লোভই না, পৃথিবীর সবেচেয়ে বড় শাস্ত্রীয় সঙ্গীত সম্মেলন বাংলাদেশে, বিষটি আমকে গর্বিত করে।

সবার জীবন সুরেলা হোক।
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই ডিসেম্বর, ২০১৪ রাত ১১:০৯
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আইনের ফাঁকফোকর-০৩

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৪২

যেকোনো চাকরির নিয়োগের পরীক্ষা চলছে। সেটা পাবলিক সার্ভিস কমিশন, বিভিন্ন সংস্থা, বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক বা উপজেলা পর্যায়ের কোনো কার্যালয়ে হতে পারে। এই নিয়োগ পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁস হতে পারে। একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

গল্পঃ অনাকাঙ্ক্ষিত অতিথি

লিখেছেন ইসিয়াক, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ দুপুর ১:১২

(১)
মাছ বাজারে ঢোকার মুখে "মায়া" মাছগুলোর উপর আমার  চোখ আটকে গেল।বেশ তাজা মাছ। মনে পড়লো আব্বা "মায়া" মাছ চচ্চড়ি দারুণ পছন্দ করেন। মাসের শেষ যদিও হাতটানাটানি চলছে তবুও একশো কুড়ি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগে বিরোধী মতের কাউকে নীতি মালায় নিলে কি সত্যি আনন্দ পাওয়া যায়।

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১৮

ব্লগ এমন এক স্থান, যেখানে মতের অমিলের কারণে, চকলেটের কারণে, ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের কারণে অনেক তর্কাতর্কি বিতর্ক কাটা কাটি মারামারি মন্তব্যে প্রতিমন্তব্যে আঘাত এগুলো যেনো নিত্য নৈমিত্তিক বিষয়। ব্লগটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

সিকান্দার রাজার চেয়ে একজন পতিতাও ভালো।

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ৮:০৭

সিকান্দার রাজা কোকের বোতল সামনে থেকে সরিয়ে রাতারাতি হিরো বনে গেছেন! কিন্তু তাকে যারা হিরো বানিয়েছেন, তারা কেউ দেখছেন না তিনি কত বড় নেমকহারামি করেছেন। তারা নিজেদেরকে ধার্মিক বলে দাবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগার'স ইন্টারভিউঃ আজকের অতিথি ব্লগার শায়মা

লিখেছেন অপু তানভীর, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ১১:০৫



সামুতে ব্লগারদের ইন্টারভিউ নেওয়াটা নতুন না । অনেক ব্লগারই সিরিজ আকারে এই ধরণের পোস্ট করেছেন । যদিও সেগুলো বেশ আগের ঘটনা । ইন্টারভিউ মূলক পোস্ট অনেক দিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×