২০০৩ সালের কোন একদিন।প্রফেসর জামাল স্যারের ক্লাশ, খুব মনোযোগ দিয়ে স্যারের কথা শুনছি। স্যারের ক্লাশের প্রতি আমার আলাদা আকর্ষণ ছিল। ঐ ক্লাশেই তার সাথে আমার প্রথম পরিচয়। সে আমার পাশের মেসেই থাকে। তার ব্যক্তিত্ববোধ আমায় ,তার প্রতি আকর্ষণ সৃষ্টি করে। আমি ক্রমেই তার নিকটবর্তী হতে থাকি। সে ছিল মিষ্টভাষী। সমসাময়িক যে কোন বিষয়ে সে আমাদের থেকে বেশী জানত। যে আমার থেকে বেশী জানে তাকে বন্ধু ভেবে অনন্দ পেতাম। দীর্ঘ পাচটি বৎসর তার সাথে একসাথে ছিলাম। কখনো দু কথা হয়নি। তার ভাল লাগা মন্দ লাগা যে কোন বিষয়ে সে আমায় প্রশ্ন করতো ।আমি সত্যটুকুই বলতাম।
মাঝে মাঝে আমরা ক্লাশে আড্ডায় বসতাম।ছড়া ,কবিতা ,গান ,কৌতুক সবই চলতো। ডাক দিয়াছেন দয়াল আমারে, একদিন কান্নার রোল উঠবে আমার বাড়ীতে,ওরে মাটি হবো মাটি,কেনো করো কান্নাকাটি,যখন আমরা এ গান গাইতাম,তখন সে দুরে বসে মিটিমিটি হাসতো।তার প্রিয় ছিল দেশাত্নবোধক গান। মাঝে মাঝে তার সাথে আমরা ও সুর দিতাম। ক্লাশ রুম ,সেমিনার রুম ,বাবুর দোকান ছিল আমাদের মুল আড্ডাস্থল। ঘুরে বেড়াতাম একসাথেই।সে ছিল শান্তশিষ্ট ,ব্যক্তিত্ববোধ সম্পন্ন,সুঠাম দেহ, ও আকর্ষণীয় চেহারার অধিকারী। একটু পরিচয়েই যে কাউকে কাছে টানতো।খুব দ্রুত আমাদের সময় পার হয়ে যাচ্ছিলো।ফোর্থ ইয়ারের স্টাডি ট্যুরে স্যার সবার সম্মতিতে তাকে পরিচালক ও আমায় ব্যবস্থাপক ঘোষনা করলেন।
জাফলং,খাসিয়া পল্লী ,মাধবকুন্ড,শ্রীমঙ্গল ,শাবিপ্রবি,চা বাগান সব একসাথেই ঘুরলাম।তার সাথে ভ্রমনের মজাই আলাদা। তার স্বপ্ন আগামীর প্রত্যাশা আমায় তার আরো কাছে নিয়ে যাচ্ছিলো।মাস্টার্সে আবার ট্যুর,আমরাই দায়িত্ব পেলাম।সেন্টমার্টিন,শুভলং,হিমছড়ি,ইনানী দেখে মুগ্ধ হলাম। সে না থাকলে এত মজা হত কিনা জানিনা।তার সাথে আমার অনেক স্মৃতি । আমার ভাবতে খুবই কষ্ট হয় সে ্এখন নেই। সে অনেক দুরে ,কোন প্রত্যাশিত গন্তব্যে হয়তো ছুটে ছলেছে। জানি অদম্য ইচ্ছায় সে তার গন্তব্যে ঠিকই পৌছে গেছে। যে পথে সে চলে গেছে এ পথ থেকে কাউকে কোন দিন ফিরতে দেখিনি।
জানি সে আসবেনা। তার স্মৃতি আমাকে প্রত্যহ নাড়া দেয়। আমার কেনো যেনো মনে হয় ,সে হয়তো কোন কাজে ব্যস্ত আছে, সময় হলেই ফোন দিবে।অজানা দুরের পথের এ পথিক এখনো আমার প্রতিটি কাজে আমার সামনে এসে দাড়ায়। আমি তাকে প্রানভরে দেখি। তার চলে যাওয়ার দিন থেকে মাঝে মাঝে তার স্মৃতি হাতড়ে তাকে জীবন্ত মনে করি। এইতো সে হাটছে। আমাদের সাথে গল্প করছে। কিন্তু এসব মিথ্যে। জানি সে আসবেনা।
অনন্তলোকের অন্তহীন জীবনে সে সামনেই যাচ্ছে। যোজন যোজন দুর থেকে তার পশ্চাতে ফিরে আসা অসম্ভবও। কিন্তু আমিতো কোন ভাবেই এটি নিজেকে বুঝাতে পারছিনা। আজ সকালে তাকে স্বপ্নে দেখি ,সে খুব হাসছে ,আনন্দঘন পরিবেশে আমাদের সাথে কথা বলছে। তার হাসি খুশি মুখ দেখে আমার বুঝতে কষ্ট হয়না ,অনন্ত পথের প্রথম পদক্ষেপে সে খুব সুখে আছে। আমি তার ভাল থাকার বাস্তব প্রত্যাশাকে সামনে রেখে পথ চলছি। আমাদের কোন কাজে ব্যথা পেলে আমাদের ক্ষমা করো।
আজ তোমার মৃত্যুদিনে তোমাকে বারবার মনে পড়ছে।
আবদুল কাদের সুঘ্রাণ