somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সমুদ্রের দিনরাত্রি / দুই

০৫ ই মার্চ, ২০০৮ রাত ৮:৫৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

যেদিন জাহাজে উঠি সেদিন ছিল প্রবল বৃষ্টি। বাইরে বেরুনো যায় না। রাস্তাঘাট থৈ থৈ করছে জলে। পথচারীরা সব ভিজে কাক, আমি নিজেও। সমুদ্রে যেতে হলে বৃষ্টিকে পরোয়া করা চলে না।
বৃষ্টির মাঝেই রওনা দিই, এবং এক সময় পৌঁছে যাই জাহাজের কাছে। চট্টগ্রাম ড্রাইডক পেরিয়ে আরএম-৯, অনেকেই বলে র‌্যামলাইন। বেবিট্যাক্সির ড্রাইভারও তাই বলছিল। র‌্যামলাইনের কোন অর্থ খুঁজে পাই নি। এক অর্থ হয় ভেড়ার সারি। কিন্তু সেখানে জাহাজ থাকবে কেন? পরে জেনেছি রিভারমুরিঙের সংক্ষেপ হলো আরএম। আরএম-৯ এ জাহাজ বাঁধা। যেতে হলে সাম্পানে চড়তে হবে।
জাহাজের গায়ে বাঁধা ছিল সাম্পান। আমাকে দেখে সাম্পানওয়ালা এগিয়ে এল। আমার সাথে বেশ বড় লাগেজ। জাহাজের কাছে পৌঁছেই দেখতে পেলাম বন্ধু রাজুকে। ডেকে কাজ করছে, হাতে ওয়াকিটকি। আমাকে দেখেই ছুটে এলো। সাম্পানের মাঝি তাকে বলল, স্যার, একখান ওয়াইজম্যান পাঠান, ব্যাগটা নিয়ে যাক। তার কথামতো 'ওয়াইজম্যান' এলো ইতিমধ্যে ভাবতে শুরু করেছি ওয়াইজম্যান মানে কি? জ্ঞানীলোক? জ্ঞানীলোককে কি এসব ছোটখাট কাজের জন্যই রাখা হয়? পরে জাহাজে উঠে অনেকের মুখে শুনলাম ওয়াইজম্যান, আরো পরে জানলাম 'ওয়াচম্যান'। এটাই অপভ্রংশ হয়ে দাড়িয়েছে ওয়াইজম্যান। এই ওয়াচম্যানের কাজ হলো জাহাজের সামনে, পেছনে ও গ্যাঙওয়েতে বসে পাহারা দেয়া, যাতে চুরি না হয়।
তবু চোর আসে। ওয়াচম্যান জানতেই পারে না। কয়েক দিন পরই ঘটে সেই ঘটনা। রাত দুটোর দিকে সাম্পানে চড়ে চোররা আসে। দুজন উঠে যায় জাহাজে। বেঁধে ফেলে এক ওয়াচম্যানকে। আর একজন ছুরি হাতে তাড়া করে ডিউটি অফিসারকে। ডিউটি অফিসার কেবিনে গিয়ে দরজা বন্ধ করে চিত্কার করে। ভিএইচএফ- এ পুলিশ ও পোর্ট কন্ট্রোলকে ডেকে কোন সাড়া পাওয়া যায় না। এদিকে চোরের দল কয়েকটা রশি নিয়ে পালিয়ে যায়।
কয়েকদিন পর চোরের দল আবার আসে। কিন্তু কাছে না ভিড়তেই নজরে পড়ে বুড়ো সুকানির। হৈ হৈ রব পড়ে যায় জাহাজে। হাতের কাছে যে যা পায় তাই নিয়ে দৌড় দেয় পুপ ডেকে। চোরদের উদ্দেশ্যে নিক্ষিপ্ত হয় ওসব সুলভ অস্ত্র, এমন কি পায়ের স্যান্ডেল পর্যন্ত । কিন্তু চোরদের স্পর্শ করে না কোনটাই; বরং তাদের নিক্ষিপ্ত একটা ঢিলের আঘাতে আমাদের একজন আহত হয়। চোররা যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করে চলে যায় কর্ণফুলির অপর পাড়ে।
সেই চোরের ভয় আজও রয়ে গেছে। জাহাজ যতই এগিয়ে যাচ্ছে ততই চোরের ভয় বাড়ছে বৈ কমছে না। জলদস্যুরা যদি আক্রমণ করে তাহলে কী করব? আত্মরক্ষার কোন উপায়ইতো নেই। এসব চিন্তা মাথায় নিয়ে কেবিনে ফিরে আসি। ম্যাপটা বের করি ড্রয়ার থেকে।
আমরা এখন যাচ্ছি ভিয়েতনাম। কয়েকদিন আগে ভিয়েতনাম যাওয়ার কথা শুনে আনন্দিত হয়ে উঠি। অবাক নাম ভিয়েতনাম, মার্কিন সেনাদের নাস্তানাবুদ করেছ তুমি। সে জন্যই আগ্রহ সবার ভিয়েতনাম দেখার। ভিয়েতনাম যাওয়ার কথা শুনেই সে নিয়ে আলোচনা শুরু হয়ে গেছে। ম্যাপটা খুলে হোচিমিনের দেশের দিকে তাকাই। সমুদ্রের কোল ঘেঁষে লম্বা সরু একটা দেশ।
আমদের যাওয়ার কথা ছিল হোচিমিন সিটিতে। পরে সিদ্ধান্ত পাল্টেছে। এখন যাচিছ হাইফঙ। হোচিমিন সিটির বর্ণনা পড়েছি নির্মলেন্দু গুণের ভিয়েতনাম ও কাম্পুচিয়ার স্মৃতি বইটিতে। হাইফঙের নাম শুনিনি, কিন্তু ম্যাপে দেখতে পাচ্ছি। হোচিমিন সিটি এক প্রান্তে আর হাইফঙ আরেক প্রান্তে, রাজধানী হ্যানয়ের কাছাকাছি। বঙ্গোপসাগর পেরিয়ে আমরা গিয়ে পড়ব দক্ষিণ চীন সাগরে। দনি চীন সাগরের কোল ঘেঁষেই ভিয়েতনাম। যেতে সময় লাগবে দশদিন।
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিসিএস-পরীক্ষার হলে দেরিঃ পক্ষ বনাম বিপক্ষ

লিখেছেন BM Khalid Hasan, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



বর্তমানের হট টপিক হলো, “১ মিনিট দেরি করে বিসিএস পরীক্ষার হলে ঢুকতে না পেরে পরীক্ষার্থীর স্বপ্ন ভঙ্গ।” প্রচন্ড কান্নারত অবস্থায় তাদের ছবি ও ভিডিও দেখা যাচ্ছে। কারণ সারাজীবন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের কার কি করা উচিৎ আর কি করা উচিৎ না সেটাই আমারা জানি না।

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:২৮




আমাদের কার কি করা উচিৎ আর কি করা উচিৎ না সেটাই আমারা জানি না। আমাদের দেশে মানুষ জন্ম নেয়ার সাথেই একটি গাছ লাগানো উচিৎ । আর... ...বাকিটুকু পড়ুন

মানবতার কাজে বিশ্বাসে বড় ধাক্কা মিল্টন সমাদ্দার

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ২:১৭


মানুষ মানুষের জন্যে, যুগে যুগে মানুষ মাজুর হয়েছে, মানুষই পাশে দাঁড়িয়েছে। অনেকে কাজের ব্যস্ততায় এবং নিজের সময়ের সীমাবদ্ধতায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারে না। তখন তারা সাহায্যের হাত বাড়ান আর্থিক ভাবে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিসিএস দিতে না পেরে রাস্তায় গড়াগড়ি যুবকের

লিখেছেন নাহল তরকারি, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৫৫

আমাদের দেশে সরকারি চাকরি কে বেশ সম্মান দেওয়া হয়। আমি যদি কোটি টাকার মালিক হলেও সুন্দরী মেয়ের বাপ আমাকে জামাই হিসেবে মেনে নিবে না। কিন্তু সেই বাপ আবার ২০... ...বাকিটুকু পড়ুন

×