somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সমুদ্রের দিনরাত্রি / তিন

০৮ ই মার্চ, ২০০৮ রাত ১:২২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ঘুম ভাঙে খুব ভোরে। তাড়াতাড়ি উঠে পড়ি। দূরে সূর্য উঠছে সমুদ্রের বুক থেকে। সমুদ্রে সূযোর্দয় দেখার জন্য কতজনই না সমুদ্র সৈকতে বেড়াতে যায়। সেটা এখন দেখতে পাচ্ছি অনায়াসে। কাপড় পড়ে বাইরে যাই। অবাক হয়ে তাকাই। চারদিক শুধু জল আর জল। পানি এতো নীল হবে ভাবিনি। কোথাও কোন স্থল নেই। নীল জলে সাদা ফেনার সৃষ্টি করে আমাদের জাহাজ এগিয়ে চলছে সামনে। জাহাজের রেলিঙের ধার ঘেষে দাঁড়াই। নিচে দেখার চেষ্টা করি। না, কোন কিছু নজরে পড়ছে না, হাঙড়, তিমি দূরে থাক একটা মাছ পর্যন্ত দেখা যাচ্ছে না। এত সব বিচিত্র প্রাণী সবাই কি এখনও ঘুমুচ্ছে? নাকি মানুষ নামক এই হিংস্র প্রাণীটির সাথে সাক্ষাতের ইচ্ছে তাদের নেই? সমুদ্রদর্শন শেষ করে কেবিনে ফিরে আসি। হাতমুখ ধুই। তারপর বেশ কিছুক্ষণ বসে থাকি চেয়ারে।

ডিউটির সময় হয়ে আসে। বয়লার স্যুট পরে ডিউটি মেসে যাই। নাস্তা সারি। দুই ডিমের অমলেট, দু' টুকরো টোস্ট, কর্নফ্লেকস আর একটা কলা। এত কিছু খাওয়ার পর পেটে আর জায়গা থাকে না। আটটা থেকে শুরু হয় ডিউটি। চলবে বারটা পর্যন্ত। ইঞ্জিনরূমে ঢুকতেই কানে তালা লাগার উপক্রম। মেইন ইঞ্জিন চলছে ফুল স্পীডে। খটাস খটাস শব্দ। এগজস্ট ভাল্ব ওঠানামা করছে দ্রুত। নেমেই গোটা ইঞ্জিনরূমে রাউন্ড দিতে হয়, দেখতে হয় কোন যন্ত্র কেমন আছে, তাপ, চাপ, তেল-পানি সব ঠিক আছে কিনা। ইঞ্জিনরূমের তাপমাত্রা ৪২ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড। সর্বত্র আগুনের হলকা। কোথাও দাড়াবার জায়গা নেই।

দুপুরে সেলুনে খেতে গিয়ে বাইরে তাকাই। সমুদ্র পুকুরের মতো শান্ত, একটুও ঢেউ নেই কোথাও। খাওয়া দাওয়ার পর কেবিনে ফিরে আসি। ঘুমুনোর চেষ্টা করি। কিন্তু ঘুম আসছে না। কী করা যায় ভাবছি। বই আছে একগাদা। কিন্তু সবই পড়া। জাহাজ ছাড়ার আগের দিন কয়েকটা বই কিনেছি। তার মধ্যে আছে পুতুল নাচের ইতিকথা, পথের পাঁচালী, অপরাজিত। পথের পাঁচালী ও অপরাজিত কয়েকবার পড়েছি। এখন কি পুতুলনাচের ইতিকথা শুরু করব নাকি? না, থাক এখনই যদি সব শেষ করি তাহলে সামনে দুই মাস কী পড়ব! সেই চিন্তায় বইটা হাতে নিয়েও রেখে দিই। তাহলে কি লিখতে বসব? পর্যাপ্ত কাগজ কলম আছে। লিখে শেষ করতে পারব কিনা সন্দেহ। কিন্তু কি লিখব? চিঠি? না, চিঠি লিখতে ইচ্ছে করছে না। কারণ, এখনও অভিজ্ঞতা তেমন কিছু জমেনি। যদি একটা তিমি দেখতে পেতাম কিংবা সিন্দবাদের মতো কোন অচেনা দ্বীপে পৌঁছে যেতাম তাহলে না হয় বেশ ফলাও করে লেখা যেত; বন্ধুদের কাছে, বান্ধবীদের কাছে। সেই শুনে তারা আফশোস করত- আহা! কী ভাগ্য। কিন্তু কেমন করে লিখি একটা শান্ত পুকুরের সমুদ্র পাড়ি দিচ্ছি, যেখানে ঢেউ নেই, মাছ নেই, পাখি নেই।

আমার সঙ্গে আছে আরেক বন্ধু সৌরভ। বেশ মজার ছেলে। বাকপটু। সারাক্ষণ বকবক করছে। কেউ কেউ তার নাম দিয়েছে 'রসরাজ' বা 'রসের ভান্ডার'। কথা বলে কৌতুক ভরে। স্বাস্থ্য বেশ মোটাসোটা। মাথার চুল অর্ধেক উধাও। সে বিষয়ে তার কোন উদ্বেগ নেই। বুদ্ধিমান লোকদের মাথায় চুল থাকে না, এটাই ওর উত্তর। তার সাথে দেখা হচ্ছে খুবই কম। আমি ডিউটি শেষ করলে সে নামে ডিউটিতে। আর অন্য সময়ে থাকে ঘুমের ঘোরে। স্মোকরূমে বসে হয় টিভি দেখছে, না হয় গল্প করছে। বেশিরভাগই আষাঢ়ে গল্প। পথের পাচাঁলী দেখেই সে বলেল, 'কি পড়িস? পথের পাচাঁলী পড়িসনি?' 'পড়েছি, বহুবার পড়েছি।' 'তাহলে আবার কেন?' সত্যিই তো, তাহলে আবার কেন? নিজেকেই প্রশ্ন করি, কেন পড়ি বারবার? ভাল লাগে বলে? কেন ভাল লাগে? উত্তর খুঁজতে বেশি দূর যেতে হয় না। সহজেই পেয়ে যাই। ভাল লাগে এজন্য যে ওর মাঝে খুঁজে পাই নিজেকে, নিজের শৈশবকে। অপু তো আমিই, হরিহর আমার বাবা, সর্বজয়া আমার মা, দুর্গা আমার বোন। কোন পার্থক্য নেই, হুবহু মিলে যায়। নিজেকে একাত্ম করে ফেলি ছোট অপুর সাথে। আম আঁটির ভেঁপু বাজানো আমার প্রিয় খেলা। মাঠে মাঠে ঘোরা, পাখির বাসা থেকে ডিম চুরি কিংবা চুপচাপ বসে থেকে গাছপালা দেখা, চুপিচুপি খাতা ভর্তি গল্প লেখা- সবই মিলে যায়। বোন দুর্গা ছিল দু'বছরের বড়। দুজনে মাঠের মাঝে হারিয়ে গেছি, রাত হয়ে গেছে, ভয়ে গা শিউরে উঠেছে। তারপর আছে বাবা হরিহর। আর মা তো সর্বজয়াই। সবকিছুকে জয় করেছে যে- অভাব- অনটন- দুঃখ- কষ্ট সবকিছুকে।
৪টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিসিএস-পরীক্ষার হলে দেরিঃ পক্ষ বনাম বিপক্ষ

লিখেছেন BM Khalid Hasan, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



বর্তমানের হট টপিক হলো, “১ মিনিট দেরি করে বিসিএস পরীক্ষার হলে ঢুকতে না পেরে পরীক্ষার্থীর স্বপ্ন ভঙ্গ।” প্রচন্ড কান্নারত অবস্থায় তাদের ছবি ও ভিডিও দেখা যাচ্ছে। কারণ সারাজীবন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের কার কি করা উচিৎ আর কি করা উচিৎ না সেটাই আমারা জানি না।

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:২৮




আমাদের কার কি করা উচিৎ আর কি করা উচিৎ না সেটাই আমারা জানি না। আমাদের দেশে মানুষ জন্ম নেয়ার সাথেই একটি গাছ লাগানো উচিৎ । আর... ...বাকিটুকু পড়ুন

মানবতার কাজে বিশ্বাসে বড় ধাক্কা মিল্টন সমাদ্দার

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ২:১৭


মানুষ মানুষের জন্যে, যুগে যুগে মানুষ মাজুর হয়েছে, মানুষই পাশে দাঁড়িয়েছে। অনেকে কাজের ব্যস্ততায় এবং নিজের সময়ের সীমাবদ্ধতায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারে না। তখন তারা সাহায্যের হাত বাড়ান আর্থিক ভাবে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিসিএস দিতে না পেরে রাস্তায় গড়াগড়ি যুবকের

লিখেছেন নাহল তরকারি, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৫৫

আমাদের দেশে সরকারি চাকরি কে বেশ সম্মান দেওয়া হয়। আমি যদি কোটি টাকার মালিক হলেও সুন্দরী মেয়ের বাপ আমাকে জামাই হিসেবে মেনে নিবে না। কিন্তু সেই বাপ আবার ২০... ...বাকিটুকু পড়ুন

×