somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আসুন শবে বরাতের হালুয়া রুটিকে না বলি; সত্য ও সঠিক পথে চলি

১৭ ই জুলাই, ২০১১ সকাল ৮:০৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

শব একটি ফারসী শব্দ যার অর্থ রাত৷ বারায়াত যদি আরবী শব্দ ধরা হয় তাহলে এর অর্থ হচ্ছে সম্পর্কচ্ছেদ, পরোক্ষ অর্থে মুক্তি৷ সুরা তাওবার প্রথম আয়াতেই বলা হয়েছেঃ সম্পর্কচ্ছেদ করা হল আল্লাহ্ ও তাঁর রসূলের পক্ষ থেকে সেই মুশরিকদের সাথে, যাদের সাথে তোমরা চুক্তিবদ্ধ হয়েছিলে। যেখানে 'বারায়াত' শব্দটি উল্লখে আছে। যার অর্থ বোঝাচ্ছে সম্পর্কচ্ছেদ।

তবে ফারসীতে বরায়াত শব্দের অর্থ হচ্ছে সৌভাগ্য। শবে বরাত শব্দটাকে যদি আরবীতে অনুবাদ করা যায় তাহলে বলতে হবে ‘লাইলাতুল বারায়াত‘

প্রসঙ্গ তা নয়। শবে বরাত কিংবা লাইলাতুল বারায়াত বলুন কোন আকৃতিতে শব্দটি কুরআন মাজীদে নেই৷ আমরা সহজভাবে বলতে পারি পবিত্র কুরআন মাজীদে শবে বরাতের কোন আলোচনা নেই৷ সরাসরি তো দূরের কথা আকার ইংগিতেও নেই৷

অনেকে শবে বরাতের গুরুত্ব উত্থাপন করতে গিয়ে সুরা দুখানের প্রথম চারটি আয়াত উল্লেখ করেন। সেখানে উল্লেখ আছে (১) হা-মীম (২) শপথ সুস্পষ্ট কিতাবের (৩) আমি একে নাযিল করেছি। এক বরকতময় রাতে, নিশ্চয় আমি সতর্ককারী। (৪) এ রাতে প্রত্যেক প্রজ্ঞাপূর্ণ বিষয় স্খিরীকৃত হয়।

এখানে পবিত্র কুরআন শরীফ নাজিল করার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। কিন্তু আমরা জানি, পবিত্র কুরআন শরীফ নাজিল হয়েছে লাইলাতুল কদরের রাতে। যার উল্লেখ আছে সুরা কদরে। বলা হয়েছেঃ (১) আমি একে নাযিল করেছি শবে-কদরে। (২) শবে-কদর সমন্ধে আপনি কি জানেন? (৩) শবে-কদর হল এক হাজার মাস অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ।

বরকতময় রাত হল লাইলাতুল কদর৷ লাইলাতুল বারায়াত নয়৷ যারা লাইলাতুল কদরের দোহাই দিয়ে লাইলাতুল বরায়াতকে উপস্থাপন করতে চান তাদের উপরোক্ত আয়াত কটি গভীর মনোযোগ দিয়ে পর্যবেক্ষণ করা উচিত।

কুরআন এ না হয় না থাকলো। তাহলে কি হাদীসে লাইলাতুল বরায়াত বা শবে বরায়াত নেই? আপনি জেনে অবাক হবেন যে, হাদীসের কোথাও শবে বরাত বা লাইলাতুল বারায়াত নামের কোন রাতের নাম খুঁজে পাওয়া যায়নি।

যে সকল হাদীসে এ রাতের কথা বলা হয়েছে তার ভাষা হল মধ্য শাবানের রাত্রি৷ শবে বরাত বা লাইলাতুল বারায়াত শব্দ আল-কুরআনে নেই, হাদীসে রাসূলেও নেই৷ এটা মানুষের বানানো একটা শব্দ৷

ফিকহ শাস্ত্রের কোথাও শবে বরায়াতের উল্লেখ নেই।

শবে বরায়াত নিয়ে আমরা যেসব ধারনা পোষণ করি ও যেসব কাজ করে থাকি সেগুলো হলঃ শবে বরাতে আল্লাহ তা‘আলা সকল প্রাণীর এক বছরের খাওয়া দাওয়া বরাদ্দ করে থাকেন৷ এই বছর যারা মারা যাবে ও যারা জন্ম নিবে তাদের তালিকা তৈরী করেনে। এ রাতে বান্দার পাপ ক্ষমা করা হয়৷ এ রাতে ইবাদাত-বন্দেগী করলে সৌভাগ্য অর্জিত হয়৷ এ রাতে কুরআন মাজীদ লাওহে মাহফুজ হতে প্রথম আকাশে নাযিল করা হয়েছে৷ এ রাতে গোসল করাকে সওয়াবের কাজ মনে করা হয়৷ মৃত ব্যক্তিদের রূহ এ রাতে দুনিয়ায় তাদের সাবেক গৃহে আসে৷ এ রাতে হালুয়া রুটি তৈরী করে নিজেরা খায় ও অন্যকে দেয়া হয়৷ বাড়ীতে বাড়ীতে মিলাদ পড়া হয়৷ ক্ষেত্রবিশেষে আতশবাযী করা হয়৷ সরকারী- বেসরকারী ভবনে আলোক সজ্জা করা হয়৷ সরকারী ছুটি পালিত হয়৷ পরের দিন সিয়াম (রোযা) পালন করা হয় ৷ কবরস্থানগুলো আগরবাতি ও মোমবাতি দিয়ে সজ্জিত করা হয়৷ লোকজন দলে দলে কবরস্থানে যায়৷ মাগরিবের পর থেকে মাসজিদগুলি লোকে পরিপূর্ণ হয়ে যায়৷ যারা পাঁচ ওয়াক্ত সালাতে ও জুমু‘আয় মাসজিদে আসেনা তারাও এ রাতে মাসজিদে আসে৷ মাসজিদগুলিতে মাইক চালু করে ওয়াজ নাসীহাত করা হয়৷ শেষ রাতে সমবেত হয়ে দু‘আ-মুনাজাত করা হয়৷ বহু লোক এ রাতে ঘুমানোকে অন্যায় মনে করে থাকে৷ নির্দিষ্ট পদ্ধতিতে একশত রাকাত, হাজার রাকাত ইত্যাদি সালাত আদায় করা হয়৷

সবচেয়ে মজার কথা হল-শবে বরাত সম্পর্কে যে সকল ধর্ম বিশ্বাস বা আকীদাহ পোষণ করা হয় তা কিন্তু কোন দুর্বল হাদীস দ্বারাও প্রমাণিত হয় না৷

আমরা মনে করি আল্লাহ এ রাতে মানুষের হায়াত, রিযিক ও ভাগ্যের ফায়সালা করে থাকেন, এ রাতে ইবাদাত-বন্দেগীতে লিপ্ত হলে আল্লাহ হায়াত ও রিযিক বাড়িয়ে সৌভাগ্যশালী করেন ইত্যাদি।

এসব যেহেতু কুরআন হাদীসের কোথাও নেই সেহেতু আমরা কি আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের প্রতি মিথ্যা আরোপ করছিনা? সুরা সাফ এর ৭ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছেঃ তার চেয়ে বড় যালিম আর কে যে আল্লাহর প্রতি মিথ্যা আরোপ করে?

হাদীসে পাওয়া যায় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বিছানা ছেড়ে চলে গেলেন, আর পাশে শায়িত আয়িশা (রাঃ) কে ডাকলেন না৷ ডাকলেন না অন্য কাউকে৷ তাকে জাগালেন না বা সালাত আদায় করতে বললেন না৷ অথচ আমরা দেখতে পাই যে, রামাযানের শেষ দশকে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজে রাত জেগে ইবাদাত-বন্দেগী করতেন এবং পরিবারের সকলকে জাগিয়ে দিতেন৷ বেশী পরিমাণে ইবাদাত-বন্দেগী করতে বলতেন৷ যদি ১৫ শাবানের রাতে কোন ইবাদাত করার ফাযীলাত থাকত তাহলে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম কেন আয়িশাকে (রাঃ) বললেন না? কেন রামাযানের শেষ দশকের মত সকলকে জাগিয়ে দিলেন না, তিনি তো নেক কাজের প্রতি মানুষকে আহ্বান করার ক্ষেত্রে আমাদের সকলের চেয়ে অগ্রগামী ছিলেন৷ এ ব্যাপারে তিনি তো কোন অলসতা বা কৃপণতা করেননি৷

তবে কিছু মুনকার হাদিস এসেছে। কিন্তু মুনকার হাদীস ‘আমলের জন্য গ্রহণ করা যায় না৷

তাই আসুন সত্য-সঠিক পথের সন্ধানে চলি আর ভ্রান্ত ধারনাগুলির সাথে হালুয়া রুটিকে না বলি। কারণ এসব বিদ‘আত আর সকল ধরনের বিদ‘আত পথভ্রষ্টতা৷ (মুসলিম, ইবনে মাজাহ) বিদ‘আত রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লামের আনুগত্য থেকে মানুষকে বের করে দেয় এবং সুন্নাতের বিলুপ্তি ঘটায়৷

(লেখাটি আগে আমার অন্য ব্লগে প্রকাশিত)
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

৫০১–এর মুক্তিতে অনেকেই আলহামদুলিল্লাহ বলছে…

লিখেছেন বিচার মানি তালগাছ আমার, ০৩ রা মে, ২০২৪ বিকাল ৩:০০



১. মামুনুল হক কোন সময় ৫০১-এ ধরা পড়েছিলেন? যে সময় অনেক মাদ্রাসা ছাত্র রাজনৈতিক হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছিল। দেশ তখন উত্তাল। ঐ সময় তার মত পরিচিত একজন লোকের কীভাবে মাথায় আসলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঝিনুক ফোটা সাগর বেলায় কারো হাত না ধরে (ছবি ব্লগ)

লিখেছেন জুন, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৮:০৯

ঐ নীল নীলান্তে দূর দুরান্তে কিছু জানতে না জানতে শান্ত শান্ত মন অশান্ত হয়ে যায়। ১৯২৯ সালে রবার্ট মোস নামে এক ব্যাক্তি লং আইল্যান্ড এর বিস্তীর্ণ সমুদ্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

'চুরি তো চুরি, আবার সিনাজুরি'

লিখেছেন এমজেডএফ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৮


নীলসাধুকে চকলেট বিতরণের দায়িত্ব দিয়ে প্রবাসী ব্লগার সোহানীর যে তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছিল তা বিলম্বে হলেও আমরা জেনেছি। যাদেরকে চকলেট দেওয়ার কথা ছিল তাদের একজনকেও তিনি চকলেট দেননি। এমতাবস্থায় প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বরাবর ব্লগ কর্তৃপক্ষ

লিখেছেন নীলসাধু, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২২

আমি ব্লগে নিয়মিত নই।
মাঝে মাঝে আসি। নিজের লেখা পোষ্ট করি আবার চলে যাই।
মাঝেমাঝে সহ ব্লগারদের পোষ্টে মন্তব্য করি
তাদের লেখা পড়ি।
এই ব্লগের কয়েকজন ব্লগার নিজ নিক ও ফেইক... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ অপেক্ষা

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২৩



গরমের সময় ক্লাশ গুলো বেশ লম্বা মনে হয়, তার উপর সানোয়ার স্যারের ক্লাশ এমনিতেই লম্বা হয় । তার একটা মুদ্রা দোষ আছে প্যারা প্রতি একটা শব্দ তিনি করেন, ব্যাস... ...বাকিটুকু পড়ুন

×