somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ছোটগল্পঃ নুরজাহানের শরীরে অসংখ্য কীটের বাস

১০ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ রাত ৮:১৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


[ছবি প্রাপ্তিঃ গুগল]
(বিজনদা কবিতার লিংকগুলো একত্রিত করতে কঠোর পরিশ্রম করেন। বন্ধু স্রাঞ্জি সে কে দেখেছি গল্প পোষ্টের লিংক সমন্বয় করতে। বিজনদার কবিতা সংকলন পোষ্টে আমার লেখার লিংক থাকতো। বন্ধু স্রাঞ্জি সে তাই গল্প পোষ্ট করতে বলেছিলো একবার। প্রথম আলোতে প্রকাশিত আমার একটা গল্প ব্লগে পোষ্ট করেছিলাম। স্রাঞ্জির পুনরায় গল্প লিংক সংকলন পোষ্ট দেখে গল্প পোষ্ট করার শখ জাগলো। প্রিয় পদাতিক, আখেনাটেন, মনিরা সুলতানা আপা, বিশেষ করে গল্প বলিয়ে প্রিয় নীলাকাশ, রহমান লতিফ ভাইদের গল্প পাঠ করার পর গল্প পোষ্ট করার সাহস করে উঠতে পারিনা। তারেক ফাহিম ভাই, তানভীর অপু, প্রিয় হাবিব ভাইদের গল্প পাঠ করে পুলকিত হই। এই তালিকায় আরও অনেকে আছেন। শ্রদ্ধেয় চাঁদগাজী একজন সচেতন ও স্পষ্টবাদী পাঠক। তাঁর কথাটাও মাথায় আছে আমার। সবার প্রতি শ্রদ্ধা রেখে, ভুল ত্রুটি ক্ষমা প্রার্থনা করে গল্পটি পোষ্ট করলাম।)

ফজরের ওয়াক্ত থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত ফুলবানুর সংসারের কাজ করতে করতে নুরজাহানের জীবন যাবার দশা। নুরজাহান যেদিন থেকে ঘরের কাজে হাত দিয়েছে, ফুলবানু সেদিন থেকেই যেন ছুটি নিয়েছে । সারাদিন গাধার মতো পরিশ্রমের পর শান্তিতে যে একটু দুচোখ বন্ধ করবে তারও উপায় নেই। রান্না ঘরের খুপরির বিছানায় শোয়ামাত্র ফুলবানুর লম্পট বড় ছেলেটা ঝাঁপিয়ে পড়ে ওর উপর। ফজরের আজান না দেয়া পর্যন্ত ওর শরীরটা নিয়ে খেলে। নুরজাহানের আজকাল ঘুম হয়না বললেই চলে। শরীরে কীট বাসা বাঁধলে ঘুম আসে কীভাবে? বাপজান কত শখ করে তার নাম রেখেছিল নুরজাহান। গর্ব করে বলতো, "আমার মাইয়া সারা দুনিয়ার আলো। দেখতে য্যান হুর পরী।" অভাবে তাড়নায় পরের বাড়িতে ঝিয়ের কাজ করতে এসে এই গতরই কাল হয়ে দাঁড়ালো ওর।

প্রতিদিন সকালে নুরজাহান পাশের কয়েকটা বাড়িতে গরুর দুধ দিয়ে আসে। ফুলবানুর তিনটে দুধেল গাই আছে। খাওয়ার লোক নাই বলে বিক্রিও করে। এ বাড়ি-ওবাড়ি দুধ পৌঁছে দেয়ার কাজটা নুরজাহানই করে। আজকে বাড়ি ফেরার সময় হঠাৎ করেই পথ আগলে দাঁড়ালো জেলেখার বাপ। লোকটা বেশ কয়েকদিন হল নুরজাহানের আশপাশ ঘুরঘুর করে। জেলেখার বাপ নিম গাছের ডাল দিয়ে মেছওয়াক করছিলো। একদলা থুথু ফেলে বলে," আহারে তুমার ওমন সোনার শরীলডা দিন দিন কেমুন তামা হইয়া যাইতাছে। খলিলের মায়ে খাওন দেয়না তুমারে?"
নুরজাহান শুকনো চোখ দিয়ে কি বললো বোঝা গেলনা। জেলেখার বাপ একটু এগিয়ে এসে বলে," তুমি আমার লগে ঘর করবা?"
নুরজাহানের দুচোখ এবার যেন বিষ্ফোরিত হল। চিনচিন করে বলল," কি কন জেলেখার বাপ? আপনের ঘরে বউ আছে। দুইডা সোমত্ত মাইয়াও আছে। আমারে ঘরে নিবান কেমনে?"
খ্যাক খ্যাক করে হাসে জেলেখার বাপ। মুখে চু চু শব্দ করে বলে," সতীনের ঘর করবা। মাইনষে সতীনের ঘর করে না? তুমার এই কষ্ট আমি সহ্যি করবার পারতাছিনা। তুমারে যদি আমি সুখী করবার পারি, তাইলে খুদা আমারে নাজাত দিবো।"

দিন যায়, রাত যায়। নুরজাহানের শরীরে এখন দুটো কীটের বাস। প্রতিদিন কীটদুটো ওকে কুটকুট করে খায়। একজন খায় মধ্যরাতে, আর একজন খায় ভোররাতে। জেলেখার বাপের কাছে অনুযোগ করে," ও জেলেখার বাপ তুমি আমারে ঘরে নিবানা? চুরি চামারি কইরা কয়দিন আমারে এইভাবে লুইটা খাইবা?"
জেলেখার বাপ খ্যাক খ্যাক করে বলে," রোসো, রোসো।"
নুরজাহান আর অপেক্ষা করতে চায়না। চাপ দেয় বিয়ে করার। জেলেখার বাপ অবশেষে রাজি হয় ওকে ঘরে নিতে। বিয়ের অনুষ্ঠান শহরে হবে শুনে কিছুটা অবাক হয় নুরজাহান। জেলেখার বাপ ওকে বুঝায়। বউ থাকতে একজন কাজের মেয়েকে বিয়ে করলে গ্রামবাসী ক্ষেপে উঠবে, বাঁধা দেবে। জেলেখার মা হয়তো এই বিয়ে ভেঙ্গেও দিতে পারে। তারচেয়ে শহরে গিয়ে নূরজাহানকে বিয়ে করে গ্রামে ফিরে আনলে তখন কেউ কিছু আর বলতে পারবেনা। জেলেখার মা বড়জোড় চিৎকার চেচামেচি করে দুইদিন কাঁদবে আর কপাল চাপড়াবে। তারপর ঠিক হয়ে যাবে। নুরজাহান রাজি হয়।

পরদিন ফুলবানুর বড় ছেলের মনের খায়েশ মিটিয়ে সকালের ট্রেনে লুকিয়ে জেলেখার বাপের সাথে রওয়ানা হয় শহরের দিকে। রাস্তা অনেক দীর্ঘ মনে হচ্ছে নুরজাহানের কাছে। একসময় ঘুমিয়ে পড়ল। স্বপ্ন দেখলো নতুন সংসারের, নতুন সুখের সুখ নামক একটি পাখির। দুপুরে জেলেখার বাপ নুরজাহানকে নিয়ে একটি বস্তিতে ঢুকলো। সেখানে কতগুলো বেঢপ মেয়ে রং তামাশা করছে। " ও জেলেখার বাপ, তুমি আমারে কোনে আনলা?" নুরজাহানের কথার জবাব
না দিয়ে একটা খুপরিতে ঢুকলো। মাঝ বয়সী এক মহিলা বিছানায় আধাশোয়া ছিল। নুরজাহানের দিকে একনজর দেখে জেলেখার বাপকে বলল, " জব্বর জিনিস আনছো আনছার মিয়া।" নুরজাহানকে বসে রেখে আধা বুড়িটাকে নিয়ে পাশের ঘরে গেল জেলেখার বাপ। প্রায় দশ মিনিট পরে আধা বুড়ি একা ও ঘর থেকে বের হয়। নুরজাহান জিজ্ঞেস করে, "খালা জেলেখার বাপে কই?"
"তোকে রাইখ্যা দশ হাজার টেকা লইয়া ঐ ঘরের পেছন দরজা দিয়া পলাইছে আনছার মিয়া।" বলে খ্যাক খ্যাক করে হাসে আধাবুড়ি।

চারদিকে সন্ধ্যা নেমেছে। জানালায় দাঁড়িয়ে অন্ধকার দেখছে নূরজাহান। কতদিন হয়ে গেল এখানে আছে সে। হয়তো মৃত্যুটাও এখানে হবে। বড় করে দীর্ঘশ্বাস ফেলে। এখন তার শরীরে অসংখ্য কীটের বাস।
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ রাত ৮:১৭
১১৮টি মন্তব্য ৬৭টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মেঘ ভাসে - বৃষ্টি নামে

লিখেছেন লাইলী আরজুমান খানম লায়লা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩১

সেই ছোট বেলার কথা। চৈত্রের দাবানলে আমাদের বিরাট পুকুর প্রায় শুকিয়ে যায় যায় অবস্থা। আশেপাশের জমিজমা শুকিয়ে ফেটে চৌচির। গরমে আমাদের শীতল কুয়া হঠাৎই অশীতল হয়ে উঠলো। আম, জাম, কাঁঠাল,... ...বাকিটুকু পড়ুন

= নিরস জীবনের প্রতিচ্ছবি=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৪১



এখন সময় নেই আর ভালোবাসার
ব্যস্ততার ঘাড়ে পা ঝুলিয়ে নিথর বসেছি,
চাইলেও ফেরত আসা যাবে না এখানে
সময় অল্প, গুছাতে হবে জমে যাওয়া কাজ।

বাতাসে সময় কুঁড়িয়েছি মুঠো ভরে
অবসরের বুকে শুয়ে বসে... ...বাকিটুকু পড়ুন

Instrumentation & Control (INC) সাবজেক্ট বাংলাদেশে নেই

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৫




শিক্ষা ব্যবস্থার মান যে বাংলাদেশে এক্কেবারেই খারাপ তা বলার কোনো সুযোগ নেই। সারাদিন শিক্ষার মান নিয়ে চেঁচামেচি করলেও বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরাই বিশ্বের অনেক উন্নত দেশে সার্ভিস দিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনের গল্প

লিখেছেন ঢাকার লোক, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:৩৫

মাত্র মাস দুই আগে আমার এক আত্মীয়ের সাথে দেখা আমার এক বোনের বাড়ি। তার স্ত্রী মারা গেছেন তার সপ্তাহ দুই আগে। মক্কায় উমরাহ করতে গিয়ে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অভিমান

লিখেছেন জিনাত নাজিয়া, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১০:১২

" অভিমান "

তোমার ঠোঁটে বোল শিখেছি
তুমি আমার মা, কেমন করে
ভুলছ আমায় বলতে
পারিনা। এমন করে চলে
গেলে, ফিরে ও এলেনা। হয়তো
তোমার সুখেই কাটছে দিন,
আমায় ভাবছ না।

আমি এখন সাগর... ...বাকিটুকু পড়ুন

×