somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমার দেখা একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের রিয়েলিটি

০৫ ই জানুয়ারি, ২০১৯ বিকাল ৩:৫৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



এবারে একটি মফস্বল শহর থেকে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন দেখার সুযোগ হয়েছে আমার। সীমান্ত লাগোয়া শহর যশোরে ছিলাম দুই সপ্তাহ। দেখেছি নির্বাচনমুখী রাজনীতির নানা নোংরামির চিত্র। পুলিশের ভোট করা এবং ভোটের আগের রাত থেকে ভোটের দিনের খুঁটিনাটি অনেক কিছু। এবং আমি যা দেখেছি সেই একই চিত্র ছিল দেশের সব কয়টি ভোট কেন্দ্রে। কিন্তু পরবর্তিতে যা দেখলাম, ভোট নিয়ে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ থেকে মাঠ পর্যায়ের দায়িত্বশীল কর্তাব্যক্তিরা যা বললেন, সবার কথা হুবুহু একই। একই কথা ও সুরে, একই ঢং এ যেন তারা একাদশ নির্বাচনটি শাসক দলের বা সরকারের কেন্দ্রীয় কর্মসূচি মনে করে প্রদেয় নির্দেশনা ও কৌশল অনুসরণ করেছেন যে যার গন্ডি থেকে। মিথ্যাচার করেছেন ছাপানো অক্ষরে। এবং এ ক্ষেত্রে ভয়াবহ রকমের মিথ্যাচারের দৃষ্টান্ত দেখিয়েছে আমাদের মিডিয়া, আমি নিজেও যার একটি অংশ। সে প্রসঙ্গে বিস্তারিত আলোচনার পূর্বে প্রাসঙ্গিক কিছু কথা বলে নেয়ার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করছি। আর তা হলো এই যে একটি ক্ষেত্রে বাংলাদেশের মানুষের পারদর্শিতার বিষ্ময়কর উন্নয়ন হয়েছে। বিশেষ করে যারা উচ্চ শিক্ষিত এবং যারা রাষ্ট্রের বিভিন্ন পদমর্যাদার নাগরিক। এ ক্ষেত্রে তাদের সফলতা অর্জনের ভাগ ১২০% বা তারও বেশি।

গুছিয়ে কথা বলার ক্ষেত্রে আমাদের প্রজাতন্ত্রের বিভিন্ন পদ মর্যাদার কর্মচারী ও দায়িত্বশীল পদের কর্তাব্যক্তিরা আগের চেয়ে অনেক বেশি দক্ষতা অর্জন করেছেন। অবলিলায় তারা মিথ্যে বলতে পারেন। তারা এমন ভাবে গুছিয়ে মিথ্যে বলতে পারেন যে কোন ঘটনা সম্পর্কে আপনি যদি অবগত হয়ে থাকেন, তাহলে আপনার পূর্বে জানা ঘটনাটি ভুল বলে মনে হবে। আপনি আপনার চোখকে অবিশ্বাস করবেন। নিজের কানে শোনা কথা এবং আপনার চিন্তাশক্তি, উপলব্ধি জ্ঞান ও বিবেচনাবোধকে অস্বীকার করতে বাধ্য হবেন। আপনার মনে হবে রাষ্ট্রের সম্মানীয় ও দায়িত্ত্বশীল ব্যক্তিরা এভাবে সত্য কে আড়াল করতে পারেন না। মিথ্যে বলতে পারেন না! আর আপনি যদি আপনার দেখা চোখের বাস্তবতা, বিবেচনাবোধ ও বিবেকের আলোয় সাম্প্রতিক নানা ঘটনা, বিশেষ করে সদ্য হয়ে যাওয়া একাদশ নির্বাচনটি বিশ্লেষণ করেন, আমি নিশ্চিত আপনি স্তব্ধ হয়ে যাবেন অবাক বিস্ময়ে!!

যেমনটি স্তব্ধ হয়ে গেছেন দেশের কোটি কোটি নাগরিক। ভাবলেশহীন। প্রতিক্রিয়াহীন।

গেল দশ বছরে বাংলাদেশের দায়িত্বশীল লোকজনের বড় একটি অংশের চিন্তাধারা, ধর্মীয় ও মানবিক মূল্যবোধ এবং পেশাগত নৈতিকতার যে স্খলন ঘটেছে, তা শুধু আগামী প্রজন্মের জন্য ক্ষতিকর নয়, দেশের সুবিধাভোগী ওই গোষ্ঠীর ভাবনা চিন্তায় রাষ্ট্রের চেয়ে অর্থবিত্ত এবং ব্যক্তিস্বার্থ যে অধিক গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে তা পরিস্কার বোঝা গেছে। বিষয়টি অনুমেয় নয়, প্রমানিত। ফলশ্রুতিতে সাধারণ মানুষ আজ বাধ্য হয়েছেন বা হচ্ছেন স্বজ্ঞানে নিজের বুদ্ধি, বিবেক ও প্রতিবাদী মনকে শিকলবন্ধী করে রাখতে।

নিষ্ঠুরতা ও অবিচারের কাছে তাই ঘটে চলেছে মানুষের অসহায় আত্মসমর্পণ। মানুষ আজ পদধারী কর্তাব্যক্তিদের ঐক্যবদ্ধ অপশক্তির কাছে পরাজিত। তাদের দৃশ্যমান মিথ্যাচার শুনতে শুনতে এখন শব্দহীন। নির্বিকার।



সবচেয়ে মজার ব্যাপার হলো ভোট কেন্দ্রের যে সকল অনিয়মের ভিডিও ফুটেজ মাঠ পর্যায়ের সাংবাদিকরা ঝুঁকি নিয়ে, পরিশ্রম করে, ব্রডব্যান্ড লাইনের সহায়তা নিয়ে মিডিয়া হাউজগুলোতে পাঠালেন, সেগুলো প্রচার করা হলো না।


সত্যি কথা বলতে কি জীবনে মনে রাখার মত একটা নির্বাচন দেখার সুযোগ হলো এই প্রথম। মৃত্যুর পর আল্লাহর কাছে গিয়ে বলতে পারবো হে মহান পারক্রমশালী, হয়তো নানা ব্যস্ততায় অনেক কিছু আপনার দৃষ্টিগোচর হয়নি সময় মত, কিন্তু পেশাগত কাজে আজ আমি যা দেখলাম, এমন নির্বাচনের নামে প্রতারণা যেন বিশ্বের কোন রাষ্ট্রের জনগণের জীবনে আর না ঘটে।

আমার আওয়ামী ঘরানার অনেক বন্ধু নির্বাচন নিয়ে এমনটি আভাস দিচ্ছলো বেশ আগে ভাগেই। কিন্তু এতটা লজ্বাহীন ভাবে তা ঘটতে পারে বা পুলিশ এবং শাসকদল যৌথ ভাবে অপারেশন চালিয়ে সবাইকে মাঠ ছাড়া করে দেবে, কাউকে ঢুকতে দেয়া হবে না এবং একচেটিয়া প্রায় সব আসন ছিনিয়ে নেবে বা তুলনামূলক ভাবে গুটি কয়েক আসন প্রতিদ্বন্দ্বীদের দেয়া হবে, এমনটি ওই বন্ধুরাও ভাবেনি।

মহান স্রোষ্টাও সম্ভাবত শাসক দলের কাছে তা প্রত্যাশা করেননি। তাছাড়া আমার পর্যবেক্ষণের সুযোগ হওয়া নির্বাচনী এলাকা যশোরের রাজনীতিতে যে জিনিসটা কখনও ছিল না, সেটিরও এক ন্যাক্কাজনক নজির অবলোকন করলাম শহরের বারান্দীপাড়ায়। এই নোংরা মানসিকতার দায় কি কোন ভাবেই এড়াতে পারবেন যশোর সদর আসনে একতরফা ভাবে নির্বাচিত, বিজয়ী প্রার্থী নৌকা প্রতীকের মি. নাবিল।

ভোটের দিন যশোর সদর ৩ আসনের ধানের শীষের প্রার্থী অনিন্দ্য ইসলাম অমিতের গাড়ি বহরে একজন মিডিয়াকর্মী হিসাবে ছিলাম আমি। সকাল আট্টা থেকে বিকেল চারটা পযর্ন্ত প্রায় ২০টি ভোট কেন্দ্রে যাওয়ার সুযোগ হয়েছিল আমার। সেই গাড়ি বহরে আওয়ামী ও বিএনপি ঘরানার গোটা বিশেক সাংবাদিক ছিলেন, যারা বিভিন্ন টিভি ও প্রিন্ট মিডিয়ার এবং স্থানীয় নানা দৈনিকের সাংবাদিক। অনুরূপভাবে নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর গাড়ী বহরেও সাংবাদিকরা ছিলেন।

মজার ব্যাপার হলো ধানের শীষের প্রার্থীসহ তার সাথে থাকা সাংবাদিকরা প্রতিটি কেন্দ্রে যাওয়া মাত্রই বোমা ফাটিয়ে এক ধরণের আতংকের মধ্যে ফেলে দেয়া হয়েছিল। কেন্দ্র ছেড়ে বেরিয়ে যেতে না যেতেই আবারও বোমা ফাটার শব্দ শুনেছিলাম। সঙ্গে থাকা আওয়ামী ঘরানার সাংবাদিকরাও সবকিছু দেখেছেন নিজের চোখে। কোন কোন কেন্দ্রে গিয়ে দেখা গেছে ধানের শীষের পুলিং এজেন্ট নেই। থাকলেও তাদের কেউ কেউ অনেক দূরে অসহায়ের মত দাঁড়িয়ে আছেন। অধিকাংশরা কেন্দ্রে ঢুকতে পারেননি। দলের লোকজনকে কোথাও দাঁড়াতে দেয়া হয়নি।

পেশাগত প্রয়োজনে ভোটের দিন নেয়া আমার ফুটনোটে থাকা তথ্যগুলো ছিল এমনইঃ

সকাল ৮.২০
ঘোপ জেলরোডস্থ এন এম খান প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে /
এজেন্টদের মারধর করে বের করে দেয়া হয়।
সকাল ৮.৪০
জেলরোডের বি এড কলেজ সেন্টার /
অধিক ভোটার উপস্থিতি ছিল সকালে। স্ট্রাইকিং ফোর্স এসে মাঠ ফাকা করে দেয়।
সকাল ৮.৫৫
ঘোপ নওয়াপাড়া রোডস্থ মাহমুদুর রহমান মাঃ বিঃ কেন্দ্র /
বিএনপির এজেন্টদের বের করে দেয় আওমীলীগ নেতা কামাল হোসেন।
অভিযোগ করা হলে তিনি প্রার্থীর কাছে তা অস্বীকার করেন। সেখানে দায়িত্বরত
প্রিজাইডিং অফিসার রিংকু মোড়ল ( জনতা ব্যাংক) একটি কক্ষে অবস্থান করছিলেন। তিনি কিছুই জানেন না বলে দাবি করেন।
একাধিক প্রত্যক্ষদর্শী জানান, রাতে এই কেন্দ্রে ভোট কেটে আলাদা করে রাখা হয়েছে।
সকাল ৯.১৫
আশ্রম কেন্দ্র/
বাইরে ভোটারদের লম্বা লাইন কিন্তু বুথগুলো সব ফাকা। মোড়ে মোড়ো শাসকদলের গুন্ডাদের অস্ত্র হাতে মহড়া। বিষয়টি প্রিজাইডিং অফিসার মনজুর আহম্মদ (জনশক্তি) কে অবহিত করা হয়। প্রার্থী বের হতে না হতেই বোমা বিস্ফোরণ ঘটায় দুর্বৃত্তরা।
সকাল ৯.২৫
আলহাজ্জ মতিয়ার রহমান কেন্দ্র/
নৌকার এজেন্ট বাবুল ইসলাম প্রার্থীর সাথে খুব খারাপ আচরণ করে এবং ধানের শীষেভোট দেওয়ায় ভোটারদের মারধর করে।
প্রিজাইডিং অফিসার প্রদীপ হাজম (কৃষি গবেষণা ইঃ) ভয়ে আগে থেকেই একটি কক্ষে দরজা বন্ধ করে বসে ছিলেন।
সকাল ৯. ৩৫
শংকরপুর মাঃ বিঃ/
ভোটারদের অস্ত্র নিয়ে ধাওয়া করে স্থানীয় গুন্ডা বাহিনী। সেখানকার গুন্ডা হিসাবে শায়ন,শয়ন, জুয়েল, পর্বতের নাম পাওয়া গেছে। তারা স্টাইকিং ফোর্সের উপস্থিতে ভোটারদের ওপর আক্রমণ করে এবং প্রার্থী ও পুলিশের উপস্থিতিতে বোমা বিস্ফোরণ ঘটায় দুর্বৃত্তরা।
সকাল ৯.৫০
হাজী মোঃ মহসিন মাঃ বিঃ/
কিছু মহিলা ভোটারের উপস্থিতি ছিল। প্রিজাইডিং আফিসার আব্দুল হাই (এম এম কলেজ)
সকাল ১০.০০
বকচর প্রাথমিক বিদ্যালয়/
ভোটার নেই অথচ ব্যালেট বক্স ভর্তি।
প্রিজাইডিং অফিসার তহিদুল ইসলাম (সমাজসেবা)
সকাল ১০.১১
বালিয়াডাঙ্গা মডেল সরকারি প্রাথমিক বিঃ/
প্রার্থীকে লক্ষ করে দফায় দফায় বোমা নিক্ষেপ প্রিজাইডিং মধুসূদন পাল(শাহীন স্কুল এন্ড কলেজ)
সকাল ১০.১৮
সিটি কলেজ/
বিএনপি এজেন্টদের অস্ত্র ঠেকিয়ে কেন্দ্র থেকে বের করে দেয় শাসক দলের লোকজন।
প্রিজাইডিং তপন কুমার মজুমদার(বিআরডিবি)

সকাল 10ঃ32
বারান্দী পাড়া সরঃ প্রাথমিক বিঃ/
কসাই রবিউলের স্ত্রী শ্যামলী ও শ্যালোক শিমুল ধানের শীষের প্রার্থী অনিন্দ্য ইসলাম অমিতকে লাঞ্ছিত করে, গাড়ী ভাংচুর করাসহ সাংবাদিকদের নির্মম ভাবে মেরে আহত করে। স্টাইকিং ফোর্সের উপস্থিতে এ ঘটনা ঘটে।
সহকারী প্রিজাইডিং কল্পনা সরকার(সেক্রেটহাট মাধ্যমিক বিঃ)
সকাল ১০.৪৮
বারান্দীপাড়া শতদল পৌর রেজিঃ প্রাথমিক বিঃ/
ভোটকেন্দ্র শূন্য, ব্যালেট ভর্তি বক্স ভর্তি।
বেলা ১২.২০
ইনঃ সরঃ প্রাথমিক বিঃ/
ভোটকেন্দ্র শূন্য,ব্যলেট ভর্তি বক্স, প্রার্থীর ও সাংবাদিকদের গাড়ী ভাংচুর এবং টাউন হল মাঠে অস্ত্রের মহড়া।
বেলা ১২.৫১
আঃসামাদ মেমোরিয়াল একাডেমি
ভোটকেন্দ্র শূন্য।
বেলা ১ টা
যশোর জিলা স্কুল
প্রিজাইডিং অফিসার (ফুড ষ্টক)
ব্লাঙ্ক রেজাল্ট সিটে নৌকা ও কুলা প্রতীকের পুলিং এজেন্টের স্বাক্ষর করানো হয়। ধানের শীষের পুলিং এজেন্টদের ঢুকতে দেয়া হয়নি।



যাইহোক বারান্দীপাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কেন্দ্র প্রসঙ্গে আর একটু বলতে চাই। সেখান থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সময় অত্র এলাকার ইয়াবা ব্যবসায়ী কসাই মনিরের স্ত্রী শ্যামলী ঐক্যজোটের প্রার্থী অমিতের সাথে অসৌজন্যমূলক আচরণ শুরু করে। তিনি নৌকার ব্যাচ বুকে লাগিয়ে ঘন ঘন বুথের ভেতরে ঢুকছিলেন এবং বেরিয়ে আসছিলেন। সেখানে কর্তব্যরত আনসারদের বিশ্রামে পাঠিয়ে দিয়ে তিনি নিজেই স্বেচ্ছাসেবকের কাজ করছিলেন। মাঝের মধ্যে কিছু পোলাপান নিয়ে বুথের ভেতরে ঢুকে নৌকা প্রতীকে ধাপাধাপ সিলমেরে বাক্সে ভরে দিচ্ছিলেন। প্রিজাইডিং অফিসার ও অন্যান্যরা ছিলেন নির্বিকার। ঘটনাস্থলে ওই মহিলার ভাই শিমুল ধানের শীষের প্রার্থীকে একপর্যায় জোর করে গাড়িতে তুলে দেয়ার চেষ্টা করে। কিছু বুঝে ওঠার আগেই হঠাৎ করে ওরা প্রার্থীর গাড়িতে ইট নিক্ষেপ শুরু করে। প্রার্থীর খুব সন্নিকটে থাকায় আমাকেও হামলার শিকার হতে হয়। পরে পুলিশ তাদেরকে ধাওয়া করে।



ঘটনার দুই ঘন্টা পর ঘটনাস্থলের আশেপাশে অভিযান চালিয়ে হামলাকারীদের একজনকে আটক করতে সক্ষম হয় পুলিশ। পরে জেলা প্রশাসকের অফিসে গিয়ে রিটানিং অফিসারের প্রতিনিধির কাছে ঘটনার সবকিছু বর্ণনা করা হয়েছিল।

এতো গেলো ভোটের দিনের চিত্র। ঠিক আগের দিন রাতে কি হলো? রাত নয়টা থেকে বারোটা সাড়ে বারোটা পর্যন্ত সারা শহর জুড়ে চললো সাউন্ড গ্রেনেডের বিকট শব্দ। থেকে থেকে বিকট শব্দে প্রকম্পিত হয়ে উঠছিল গোটা শহর। এগুলো কারা মারছিল আমার জানা নেই। চোখে দেখিনি। তবে এই সাউন্ড গ্রেনেডের চাক্ষুষ অভিজ্ঞতা আমার প্রথম হয়েছিল ঢাকার মতিঝিলে। শাপলা চত্বরের সেই হেফাজতে ইসলামের অনুষ্ঠানের দিন। পেশাগত কাজে সেদিন আমি আটকে গেছিলাম সভাস্থলের আশেপাশে। কোন ভাবেই বের হতে পারিনি। সন্ধ্যার পর আগুনে ঝলসে উঠেছিল মতিঝিল, দৈনিক বাংলা, পল্টনসহ আশেপাশের গোটা এলাকা। সন্নিকটে পুরানো পল্টনে এক ভাড়া বাসায় স্ত্রী ও সন্তানকে নিয়ে তখন থাকতাম। আমার জীবনে সেটাও প্রথম কোন রাত ঢাকা শহরে ওদেরকে ছেড়ে একা থাকার। ওরাও ছিল ভীত তটস্থ। সেদিন উপায় না পেয়ে পূরবানী হোটেলে আমিসহ কয়েকজন থেকে গিয়েছিলাম। সম্ভবত চার তলা অথবা ছয় তলার কোন এক রুমে ছিলাম আমি, যে রুম থেকে ষ্ট্রেডিয়ামের ওপাশের পুরোটাই দেখা যাচ্ছিল। আবার করিডোরে আসলে বক চত্বর থেকে সিটি সেন্টার পর্যন্ত দৃষ্টিগোচর হচ্ছিলো। সারারাত না ঘুমিয়ে দু'পাশে নজর রাখছিলাম এবং সেই রাতে প্রথম দেখলাম সাউন্ড গ্রেনেডের ব্যবহার। পরিস্কার মনে আছে রাত দুইটা পঞ্চাশ মিনিটে শুরু হয় সেই বহুলালোচিত অপারেশন ব্লাক আউট।

ভোটের আগের রাতে সেই একই শব্দ। হেফাজতের লোকজন সেদিন শাপলা চত্বরে নিজেদের চোখের সামনে দেখা অপারেশন ও শব্দের তিব্রতায় যেমন কুঁকড়ে গেছিল, ভয়ে ছুটাছুটি করছিল, তেমনি ঘরের ভেতরে বসে ভীত হয়ে পড়েন সাধারণ মানুষ। তারা এতটাই আতংকিত হয়ে পড়েন যে ভয়ে পরের দিন অনেকেই ভোটের মাঠে যাওয়ার সাহস করেননি। এটিও যে সাধারণ ভোটারদের নির্বাচন থেকে দূরে রাখার একটি কৌশল, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। যতদূর জেনেছি দেশ জুড়ে এ কৌশল হাতে নিয়েছিল সরকারের একটি বাহিনী। এর আগে অর্থাৎ প্রচারণা শুরুর পর থেকে বিএনপির সকল স্তরের পদধারী নেতাদের ওপর যে দমন নির্যাতন এবং সমর্থকদের ঘরবাড়ি ভাড়াটে গুন্ডা দিয়ে তছনছ করার যে চিত্র দেখেছি নিজের চোখে যশোর সদর উপজেলার কচুয়া গ্ৰামসহ বিভিন্ন এলাকায়, তা রীতিমত বিভৎস, পাক বাহিনীর পৈশাচিকতা কে হার মানায়। আমি এসব নিয়ে সংবাদ পরিবেশন করতেও ভয় পাচ্ছিলাম।



যদিও ক্ষুদ্র পরিসরে বাংলাদেশের কেবল একটি আসনের নির্বাচন অবলোকন, পর্যবেক্ষণ ও পর্যালোচনার সুযোগ হয়েছিল আমার। তবে পরবর্তিতে পাওয়া নানা তথ্য উপাত্ত, স্থীর ও ভিডিও চিত্র দেখে মনে হয়েছে এবারের নির্বাচনে জনগণের ইচ্ছা আকাঙ্ক্ষার কোন প্রতিফলন ঘটেনি। জনগনের অংশীদারিত্বের কোন তোয়াক্কা করা হয়নি। উপরোন্ত মানুষের বিবেককে স্তব্ধ করে দেয়া হয়েছে বৈধ ও অবৈধ অস্ত্রের অপপ্রয়োগে।

যশোর সদরের প্রার্থী অনিন্দ্য ইসলাম অমিতের গাড়ীতে ভাঙচুরের সংবাদ দৈনিক ইত্তেফাক

view this link
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই জানুয়ারি, ২০১৯ বিকাল ৩:১৫
৬টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×