somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

অজয় শীল
মানুষের মাঝে মানবীয় গুণাবলী বিকশিত হোক, মানুষ সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ জীব হিসেবে মানুষের সম্মান নিয়ে বেচে থাকুক। বাঘ, ভাল্লুক, জন্তু-জানোয়ারের বিশেষণে যেন আর বিশেষায়িত না হয়। এ উদ্দেশ্যে আমার মিশন "চরিত্র গঠন আন্দোলন"।

বিনয়াবনত চিত্ত আপনার জীবনকে উর্ধ্বমুখী করবে

০৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৩ দুপুর ২:৪২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



বর্তমান প্রজন্মের একটা নিয়মিত অভ্যাস নিজেকে একটু ফোকাস করতে পারা। অথচ এ কাজটা করতে গিয়ে সে নিজেকে প্রতিনিয়ত কলুষিত করছে নিজের অজান্তেই। একটু ভেবে দেখুন। আজকালকার ছেলেদের “বডি ল্যাংগুয়েজ” একটু দৃষ্টি কটু। আগে দেখতাম একজন সিনিয়র, শিক্ষক বা কোন শ্রদ্ধেয় ব্যক্তি পথ দিয়ে গেলে সকলের মাথা নুয়ে থাকতো। তাঁদের সাথে আচরণে থাকতো শিষ্টাচার। আর এখন ১০০ জন ছাত্রের মধ্যে মনে হয় ৮০ জনই জানবে না ‘শিষ্টাচার’ বলতে কি বুঝায়। হুম, আমরা এখনো মাথা নুয়াই……, তবে যার-তার সামনে নয়, শুধু মাত্র যার কাছ থেকে ডাইরেক্ট কোন সুবিধা পাব, তাদেরই সমীহ করি।

বিনয়, শ্রদ্ধা আজকাল সমাজ থেকে উঠে গেছে। অপরিচিতের সাথে আমরা শত্রুভাবাপন্ন ব্যবহার করি। হোক সে ভাল কিংবা খারাপ। কিন্তু কেন? কেন প্রথম দেখাতেই আমরা কোন অপরিচিতের দেখা সেরা মানুষ হতে পারি না।

“আরে কার কি আসে যায়। এ স্বাধীন বাংলাদেশে আমার যা খুশি আমি তাই করবো”। “আমি তাকে শুধু শুধু শ্রদ্ধা দেখাতে যাব কেন? সে আমার কি করতে পারবে”। “আমিও কম কিসে”। “এখন কি আর সেই মান্দাতার আমলের যুগ আছে যে শুধু গুরুজনের পা চাটতে হবে”। “এখন পরিবারের আমিই উপার্জনক্ষম ব্যক্তি সুতরাং সবাইকে আমার কথাই শুনতে হবে, আমি কারো ধারধারি না”। “আরে ও বহুতদিন নেতাগিরি করছে, এখন আমাদের সময়। এসব নেতা-কেতার বেল নাই”। “এখন ডিজিটাল যুগ, ফেইজ বুকে আমার ছবিতে 1K লাইক পড়ে। সুতরাং আমি এখন সেলিব্রিটি। সেলিব্রিটিরা যাকে তাকে পাত্তা দেয় না”। “আরে সিনিয়র হইসে তো কি হইসে, তাই বলে সিট ছেড়ে দিতে হবে?” – এ ধরণের চিন্তা কোন কোন সময় এসে যায়।

আগেকার লোকদের চক্ষুলজ্জা বেশি ছিল, যার কারণে “পাছে লোকে কিছু বলে” ভাবনায় অনেকেই জীবনে কিছু করতে পারেননি। অতঃপর কালের গহ্বরে হারিয়ে গেছেন। বর্তমান তরুণ সমাজ এ চক্ষুলজ্জা কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হয়েছে সত্যি, বরং তাদের আচরণ দেখে আশেপাশের লোকের চক্ষুলজ্জা বেড়ে গেল।

নেতার সাথে দাঁড়িয়ে ছবি তুলে কখনো সেলিব্রিটি হওয়া যায়না। সিনিয়র বা গুরুজনদের সামনে পায়ের উপর পা তুলে বসে “ডোন্ট কেয়ার” টাইপের আচরণ করে কখনো বড় হওয়া যায় না। আপনি কাউকে পাত্তা না দিলেও তার দিন চলে যাবে, পাত্তা দিলেও তার দিন চলে যাবে। কারো জন্য কেউ আটকে থাকবে না। জীবন আপন গতিতে চলে, কারো অনুরোধে তাকে আটকে রাখতে পারবেন না। শত চেস্টা করেও আপনার বয়সটাকে ধরে রাখতে পারবেন না। সব সময় স্বপ্নের ঘোরে থেকে দিন পার করা যায়, কিন্তু বাইরের লোকজন আপনাকে ঠিকই বুঝে নিবে। আপনি চোখ বন্ধ করে নিজেকে রাজা ভাবলেও বাইরের লোক পরিষ্কার দেখতে পাচ্ছে আপনার সত্যিকারে অবস্থান কোথায়? জ্ঞান যার সীমিত, সে-ই কুয়ার ব্যাঙের মতো নিজেকে সেরা মনে করে। জ্ঞান অনুসন্ধিৎসু মানুষ প্রতিনিয়ত নিত্য নতুন কিছু শিখতে চায়, সবার কাছ থেকে ভালটা গ্রহণ করে। আর নিজেকে ঐ ভাবে পরিচালিত করে।

ভেবে দেখুন, আজ যাকে আপনি হেয়-প্রতিপন্ন করছেন, কাল হয়তো সে আপনার সম্পর্কে অন্যকে ভাল কিছু বলবে না, বরং বলবে ছেলেটা বেয়াদব, ঘাড়-তেরা, আচরণে সমস্যা আছে। প্রত্যেকের একটা আত্মসম্মানবোধ রয়েছে, আপনি আজ তাকে অবজ্ঞা করলেন, অপমানিত করলেন, ভবিষ্যতে এমন দিন যে আসবে না তা বলা কঠিন, সুযোগ পেলে সেও আপনাকে একহাত দেখে নেবে। হয়তো এমন একটা টার্নিং পয়েন্টে সে এমন মন্তব্য করে বসবে যা হয়তো আপনার জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দিবে। মানুষের ক্ষমতা সবসময় কন্সটেন্ট নয়, মানুষ ঘটনা ক্রমে কখনো জিরো পাওয়ার হয় আবার কখনো কখনো অসম্ভব ক্ষমতার অধিকারী হতে পারে। আজ যাকে মনে হচ্ছে অপাংক্তেয়, কাল সে হয়ে উঠবে আপনার ভাগ্য নির্ধারক। সুতরাং সাধু সাবধান। আপনার আচরণে যত্নবান হোন।

আজ আপনি বড়দের শ্রদ্ধা দেখান, ছোটরা আপনার থেকে শিখবে। কাল তারাই আপনাকে শ্রদ্ধা করবে। আজকের একজন বিশ্বস্ত অনুগামী কর্মীই হতে পারে আগামী দিনের যোগ্যতম নেতা। সুতরাং একজন সুদক্ষ নেতা হতে হলে আগে নিষ্ঠাবান কর্মী হয়ে আসতে হয়। কর্মী হওয়ার আগে যে নেতা হতে চায়, সে এখনো স্বপ্নের ঘোরে আছে। তাকে জাগাতে হবে। কেউ নেতা হয়ে জন্মায় না, তার মানবীয় গুণাবলীই তাকে নেতা করে। আর এ গুণাবলী অর্জন করতে হলে কাজ করতে হবে। আজ আপনি যা করছেন, আপনার কাজে অন্যকেউ বিব্রতবোধ করছেন কিনা একটু যাচাই করুন। আপনার অন্যের ক্ষতি করার কোন অধিকার নাই, যদি নিজের অজান্তে কারো ক্ষতি করেও থাকেন একটু ভাববেন আশেপাশে কি ঘটছে, কেউ আপনাকে গালি দিচ্ছে কিনা। কেউ নিয়ম মেনে না চললেও ভাবুন এখানে একটা নিয়ম আছে। নিয়ম মেনে চলুন, নিয়মকে শ্রদ্ধা করুন অন্যকে নিয়ম মেনে চলতে উৎসাহিত করুন। তাহলে অন্তত কেউ পেছনে গালি দিবেনা। আর আপনার দেখা দেখি হয়তো অনেকে তা অনুসরণ করবে।

অনেকে বলে, “বিনয়কে মানুষ দুর্বলতা মনে করে। যে বিনয়ী হয় বাঁশটা খেতে হয় তাকে সবার আগে।“ আপনাকে বুঝতে হবে – অন্যায়কে মেনে নেয়া “বিনয়” নয়; অনিয়মের সাথে আপোষ “বিনয়” নয়; বিশৃঙ্খলাকে গ্রহণ করা “বিনয়” নয়। “বিনয়” দেখাতে পারেন কেবল ক্ষমতাবান ব্যক্তি। সুতরাং আগে ক্ষমতাবান হোন, মানুষকে বুঝতে শিখুন, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে শিখুন, নিজের বিবেককে জাগ্রত করুন, অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী হোন, সমাজের অচেতন মানুষদের সচেতন করুন। সমাজের কুসংস্কার দূর করুন, সমাজ সংস্কারক হোন। তারপর বিনয়ী হোন, দেখবেন সমাজ আপনাকে মাথায় তুলে রাখবে।
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৩ দুপুর ২:৪৬
১০টি মন্তব্য ৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শোকের উচ্চারণ।

লিখেছেন মনিরা সুলতানা, ২৬ শে জুলাই, ২০২৪ সকাল ১০:১৬

নিত্যদিনের জেগে উঠা ঢাকা - সমস্তরাত ভারী যানবাহন টানা কিছুটা ক্লান্ত রাজপথ, ফজরের আজান, বসবাস অযোগ্য শহরের তকমা পাওয়া প্রতিদিনের ভোর। এই শ্রাবণেও ময়লা ভেপে উঠা দুর্গন্ধ নিয়ে জেগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

যা হচ্ছে বা হলো তা কি উপকারে লাগলো?

লিখেছেন রানার ব্লগ, ২৬ শে জুলাই, ২০২৪ দুপুর ১:২৮

৫ হাজার মৃত্যু গুজব ছড়াচ্ছে কারা?

মানুষ মারা গিয়েছে বলা ভুল হবে হত্যা করা হয়েছে। করলো কারা? দেশে এখন দুই পক্ষ! একে অপর কে দোষ দিচ্ছে! কিন্তু... ...বাকিটুকু পড়ুন

আন্দোলনের নামে উগ্রতা কাম্য নয় | সন্ত্রাস ও নৈরাজ্যবাদকে না বলুন

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ২৬ শে জুলাই, ২০২৪ বিকাল ৫:২৭



প্রথমেই বলে নেয়া প্রয়োজন "বাংলাদেশকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করার সমস্ত অপচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে" ধীরে ধীরে দেশে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে আসছে। ছাত্রদের কোটা আন্দোলনের উপর ভর করে বা ছাত্রদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

কোন প্রশ্নের কি উত্তর? আপনাদের মতামত।

লিখেছেন নয়া পাঠক, ২৬ শে জুলাই, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১৬

এখানে মাত্র ৫টি প্রশ্ন রয়েছে আপনাদের নিকট। আপনারা মানে যত মুক্তিযোদ্ধা বা অতিজ্ঞানী, অতিবুদ্ধিমান ব্লগার রয়েছেন এই ব্লগে প্রশ্নটা তাদের নিকট-ই, যদি তারা এর উত্তর না দিতে পারেন, তবে সাধারণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

চাকুরী সৃষ্টির ব্যাপারে আমাদের সরকার-প্রধানরা শুরু থেকেই অজ্ঞ ছিলেন

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৬ শে জুলাই, ২০২৪ রাত ৯:০৭



আমার বাবা চাষী ছিলেন; তখন(১৯৫৭-১৯৬৪ সাল ) চাষ করা খুবই কষ্টকর পেশা ছিলো; আমাদের এলাকাটি চট্টগ্রাম অন্চলের মাঝে মোটামুটি একটু নীচু এলাকা, বর্ষায় পানি জমে থাকতো... ...বাকিটুকু পড়ুন

×