somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ডুবে যাচ্ছে বাংলাদেশ(!).....নাকি শুধুই অপপ্রচার(?)

১৮ ই ডিসেম্বর, ২০১২ রাত ১০:৫৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

জলবায়ু সংক্রান্ত হাঁড়ির খবর বের করে এনেছে একদল হ্যাকার। তারা যুক্তরাজ্যের ইউনিভার্সিটি অব ইস্ট অ্যাংলিয়ার জলবায়ু গবেষণা ইউনিটের (সিআরইউ) রাশিয়া ভিত্তিক একটি ওয়েবমেইল সার্ভারে ঢুকে কয়েক হাজার ই-মেইল চুরি করেছে।
সিআরইউ থেকে আইপিসিসি এবং আইপিসিসি থেকে সিআরইউতে যাওয়া-আসা এসব ই-মেইল থেকে ধরা পড়ে গেছে, ২০৩৫ সালের মধ্যে হিমালয়ের হিমবাহ গলে বাংলাদেশসহ এই অঞ্চল পানিময় হবে বলে যে ভয় দেখানো হয়েছিল, তা আসলেই ভুয়া! মানবসৃষ্ট কারণে তাপমাত্রা যে বাড়ছেই সেটা বিশ্ববাসীকে বিশ্বাস করানোর জন্য জলবায়ু গবেষণা রিপোর্ট অনেক ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে ভয় দেখানোর মতো করে উপস্থাপন করার নির্দেশ ছিল বিজ্ঞানীদের প্রতি! যে রাজেন্দ্র পাচুরি বাংলাদেশকে বাঁচানোর আহ্বান জানিয়ে এবং তাপমাত্রা বৃদ্ধির পিলে চমকানো তথ্য দিয়ে রীতিমতো হিরো হয়ে গিয়েছিলো, সে এখন নিজের চাকরি বাঁচাতে লড়ছেন কারণ জলজ্যান্ত মিথ্যাকে এত বড় সত্য হিসেবে তুলে ধরার জন্য দাবি উঠেছে তার পদত্যাগের। পাচুরি স্বীকার করেছে, ভুল হয়ে গেছে! ২০৩৫ সালে হিমবাহ গলে পানি হয়ে যাবার তথ্যটা সঠিক নয়। তবে সে পদত্যাগ করবে না বলে জানিয়ে দিয়েছে। কারণ হিসেবে বলেছে, সে আইপিসিসি’র প্রধান। ভুল হয়ে থাকলে তা করেছে জাতিসংঘের হয়ে কাজ করা জলবায়ু বিজ্ঞানীরা। আইপিসিসি’র রিপোর্টের জন্য তাপমাত্রা সংক্রান্ত তথ্য সরবরাহের দায়িত্ব সিআরইউ-এর। কেলেঙ্কারি ফাঁস হবার পর সিআরইউ-এর প্রধান ফিল জোনস্ সম্প্রতি পদত্যাগ করেছে।
জাতিসংঘের আইপিসিসি’র ৯৯৮ পৃষ্ঠার চতুর্থ অ্যাসেসমেন্ট রিপোর্টের দশম অধ্যায়টির
বিশ্বের যে কোনোও অংশের তুলনায় হিমালয়ের হিমবাহ গলছে দ্রুত গতিতে। হিমবাহ গলার হার যদি একইরকম থাকে, তাহলে ২০৩৫ সালের মধ্যে সব হিমবাহ গলে যাবে। এমনকি তার আগেও গলে যাওয়া অসম্ভব কিছু নয়।
এই রিপোর্টে যা বলা হয়েছে তার ভিত্তিতেই ভবিষ্যদ্বাণী করা শুরু হয়েছিল- বাংলাদেশ, মালদ্বীপসহ আরো কয়েকটি দ্বীপরাষ্ট্র পানির নিচে তলিয়ে যাবে। মালদ্বীপ কথাটি বিশ্বাস করে কয়েকমাস আগে অক্সিজেন মাস্ক পরে সাগরের পানির নিচে মন্ত্রিসভার বৈঠক করে গোটা বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দিয়েছিল। হুমকিটা যে অন্তঃসারশূন্য ছিল তা এখন প্রমাণিত হয়েছে।
প্রসঙ্গত, ২০৩৫ সালের মধ্যে সব হিমবাহ গলে এই অঞ্চল ডুবে যাবার কথাটা আসলে উঠল কি করে। সেটি আরো মজাদার। আইপিসিসি নিজস্ব বিজ্ঞানীদের গবেষণা থেকে এই ভবিষ্যদ্বাণী করেনি। ১৯৯৯ সালে লন্ডনভিত্তিক বিজ্ঞান বিষয়ক ম্যাগাজিন ‘নিউ সায়েন্টিস্ট’ একটি রিপোর্ট ছেপেছিল। ওই রিপোর্টের মধ্যে টেলিফোনে নেয়া ভারতীয় হিমবাহ বিশেষজ্ঞ ড. সৈয়দ ইকবাল হাসনাইনের কিছু বক্তব্য ছিল, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল ‘২০৩৫ সালের মধ্যে হিমবাহ গলে যেতে পারে’ এই কথাটি। এরপর ২০০৫ সালে ডব্লিউডব্লিউএফ নামের একটি চ্যারিটি প্রতিষ্ঠান তার একটি রিপোর্টে ‘নিউ সায়েন্টিস্ট’ ম্যাগাজিন থেকে ওই কথাটি উদ্ধৃত করে। আর ২০০৭ সালে জাতিসংঘের আইপিসিসি তার ‘সাড়া জাগানো’ জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক রিপোর্টে নকলবাজ ছাত্রের মতো এই কথাটি ডব্লিউডব্লিউএফ-এর পাতা থেকে মেরে দেয়! তারপর থেকে আইপিসিসি রিপোর্টের এই অংশটিকে উদ্ধৃত করে ভয় দেখানো শুরু করে। নানা রং মিশিয়ে বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে নানা গুজব তৈরি হতে থাকে। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের দুঃস্বপ্নের আশঙ্কা থেকেই অনেকে দম্পতিদের সন্তান না নেয়ার পরামর্শও দেয়া শুরু করে! নাউযুবিল্লাহ
উল্লেখ্য, ২০৩৫ সালের ডেডলাইনের ‘জন্মদাতা’ ভারতীয় বিজ্ঞানী ড. সৈয়দ ইকবাল হাসনাইন। গত ১৯ জানুয়ারি ভারতসহ কয়েকটি দেশের নামকরা পত্রিকায় তার সাক্ষাৎকার ছাপা হয়। পত্রিকাগুলোর কাছে ড. হাসনাইন বেমালুম অস্বীকার করেছেন এমন ভবিষ্যদ্বাণীর কথা। তিনি বলেন, ‘১৯৯৯ সালে নিউ সায়েন্টিস্ট ম্যাগাজিনের সাংবাদিক ফ্রেড পিয়ার্স একটি রিপোর্টের জন্য হিমালয়ের হিমবাহ সম্পর্কে আমার সাথে কথা বলেন। আমার স্পষ্ট মনে আছে আমি বলেছিলাম, আগামী ৪০ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে কেন্দ্রীয় এবং মধ্য হিমালয় অঞ্চলের হিমবাহের ‘পুরুত্ব কিছুটা কমে যেতে পারে’। আমার কথাকে ওই ম্যাগাজিনে ভুলভাবে উপস্থাপন করা হয় এবং সম্ভবত ৪০-৫০ বছর কথাটিকে জোরালো করতে পত্রিকাটি নিজেই ২০৩৫ সাল বসিয়ে দেয়।’ আপনার কথা ভুলভাবে ছাপা হয়েছে এটা জানতেন কি না এই প্রশ্নের জবাবে ড. হাসনাইন বলেন, হ্যাঁ জানতাম। প্রতিবাদ করেছিলেন কিনা জানতে চাইলে বিব্রত হাসনাইন বলেন, ‘ওটা কোনো গুরুত্বপূর্ণ বৈজ্ঞানিক গবেষণা ছিল না, যা পাঠক পড়লে মহাক্ষতি হয়ে যাবে। তাই প্রতিবাদ পাঠাইনি। সামান্য একটা কথাকে এত বড় এবং ভুলভাবে দেখানো হবে বুঝতে পারিনি’। তিনি বলেন, আমার কথার মধ্যে বিশ্বের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে, জলবায়ু পরিবর্তন হচ্ছে কিংবা সব হিমবাহ গলে যাবে এমন একটা কথাও ছিল না।
এদিকে জলবায়ু পরিবর্তন কথাটির সাথে যে কথাটি ঘুরে ফিরে উচ্চারণ হচ্ছে সেটি হচ্ছে পৃথিবীর তাপমাত্রা বৃদ্ধি। শিল্প কারখানা বৃদ্ধির কারণে কার্বন ডাই অক্সাইড বাড়ছে। একই সাথে বাড়ছে বিশ্বের তাপমাত্রা। তাপমাত্রা বৃদ্ধি নিয়ে গবেষণা করার জন্য আইপিসিসি’র এক ঝাঁক বিজ্ঞানী আছে। তারা যে তথ্য দিচ্ছে সেই তথ্যই বিশ্বাস করে ভয়ে কাঠ হয়ে যাচ্ছি আমরা। প্রতিবছর তাপমাত্রা বাড়ছে এই কথা শুনলে ‘হিমবাহ গলে ডুবে যাবার’ মতো ‘তাহলে কি একদিন পুড়ে মরে যাব, কিংবা আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের চামড়া কি তাপরোধী ও ভীষণ পুরু হয়ে যাবে’ এই ভয় ঢুকে যেতে পারে! কিন্তু আশার কথা হলো, আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে গরম থেকে বাঁচতে চামড়া পুরু হয়ে জন্ম নেয়ার দরকার পড়বে না! কারণ, আইপিসিসি তাপমাত্রা বৃদ্ধি নিয়েও কারচুপি করেছে! কোপেনহেগেন জলবায়ু সম্মেলনে প্রতিবছর পৃথিবীর তাপমাত্রা বাড়ছে বলে যে দাবি করা হয়েছিল সেটাও আসলে সঠিক নয়। ফাঁস হয়ে যাওয়া ই-মেইল থেকে জানা গেছে, শিল্প-কারখানার কার্বন দূষণের ফলে তাপমাত্রা বৃদ্ধির গল্প তারা ইচ্ছা করেই তৈরি করেছে। পৃথিবীর ইতিহাসে তাপমাত্রা বৃদ্ধির এবং কমে যাওয়ার নজির আছে। আধুনিক যুগ ও শিল্পায়ন শুরু হবার পর থেকে একটানা তাপমাত্রা বেড়েছে বলে আইপিসিসি দেখানোর চেষ্টা করেছে। কিন্তু এটি সর্বাংশে মিথ্যা।
৮টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মুসলিম কি সাহাবায়ে কেরামের (রা.) অনুরূপ মতভেদে লিপ্ত হয়ে পরস্পর যুদ্ধ করবে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪৯




সূরাঃ ৩ আলে-ইমরান, ১০৫ নং আয়াতের অনুবাদ-
১০৫। তোমরা তাদের মত হবে না যারা তাদের নিকট সুস্পষ্ট প্রমাণ আসার পর বিচ্ছিন্ন হয়েছে ও নিজেদের মাঝে মতভেদ সৃষ্টি করেছে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদে মসজিদে মোল্লা,ও কমিটি নতুন আইনে চালাচ্ছে সমাজ.

লিখেছেন এম ডি মুসা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সকাল ১০:২৩

গত সপ্তাহে ভোলার জাহানপুর ইউনিয়নের চরফ্যাশন ওমরাবাজ গ্রামের এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। লোকটি নিয়মিত মসজিদে যেত না, মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়েনি, জানা গেল সে আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসী ছিল, স্বীকারোক্তিতে সে... ...বাকিটুকু পড়ুন

গল্পঃ অনাকাঙ্ক্ষিত অতিথি

লিখেছেন ইসিয়াক, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ দুপুর ১:১২

(১)
মাছ বাজারে ঢোকার মুখে "মায়া" মাছগুলোর উপর আমার  চোখ আটকে গেল।বেশ তাজা মাছ। মনে পড়লো আব্বা "মায়া" মাছ চচ্চড়ি দারুণ পছন্দ করেন। মাসের শেষ যদিও হাতটানাটানি চলছে তবুও একশো কুড়ি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগে বিরোধী মতের কাউকে নীতি মালায় নিলে কি সত্যি আনন্দ পাওয়া যায়।

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১৮

ব্লগ এমন এক স্থান, যেখানে মতের অমিলের কারণে, চকলেটের কারণে, ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের কারণে অনেক তর্কাতর্কি বিতর্ক কাটা কাটি মারামারি মন্তব্যে প্রতিমন্তব্যে আঘাত এগুলো যেনো নিত্য নৈমিত্তিক বিষয়। ব্লগটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগার'স ইন্টারভিউঃ আজকের অতিথি ব্লগার শায়মা

লিখেছেন অপু তানভীর, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ১১:০৫



সামুতে ব্লগারদের ইন্টারভিউ নেওয়াটা নতুন না । অনেক ব্লগারই সিরিজ আকারে এই ধরণের পোস্ট করেছেন । যদিও সেগুলো বেশ আগের ঘটনা । ইন্টারভিউ মূলক পোস্ট অনেক দিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×