somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অপ্রকাশিত চিঠি ২ ..............

১৭ ই জুলাই, ২০০৯ সকাল ১০:৩৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

অপ্রকাশিত চিঠি ১...........
Click This Link

রাজর্ষি

কাল স্বপ্ন দেখলাম।
আধো ঘুমে নাকি স্বপ্ন আসে?
দেখলাম ঘন সবুজের মধ্যে দিয়ে আমরা হেঁটে যাচ্ছি............
দুরে দৃষ্টিসীমায় একটা নদী।
তুমি বললে নদীটার নাম জানো?
আমি চমকে তাকালাম।
এই অচেনা নদীর নাম আমি জানবো কি করে?
তুমি বললে কাঞ্চন।
আমরা নদীটার পাশ দিয়ে হাঁটতে থাকলাম.......।
ছোট্ট কিন্তু স্রোতবাহী নদীটার এপার থেকে ওপারে হেঁটে যাওয়া যায়।
শীতকালেই এমন সম্ভব।
ওপারে কাশবন।

আমরা যখন ওখানে পৌছুলাম তখন ভোরের বাতাস বইছে চারিদিকে। আকাশের রং বদলাচ্ছে আস্তে আস্তে। আকাশে সূর্যের আভা ফুটছে।
আমাদের যাওয়া পথের ধারে একটু থামলাম.......।
একজন খেজুরেররস বিক্রি করছে।
আমরা খুব খুশী হয়ে খেলাম সেই ফেনা উঠা রস।
কতদিন পর!
তুমি বললে মহুয়ার মত.........তাইনা?
আমি বললাম মহুয়া? আমি তো খাইনি কখনো!

আমি জানিনা সেই ক্ষনটার নাম কি............যখন তুমি মাতাল হলে।
আমার ও কেমন অদ্ভুত একটা অনুভূতি হচ্ছিল। একে কি মাতাল হওয়া বলে?
মনে ভাবছিলাম আমি একটা ছোট্ট খরগোস। এই উপলদ্ধিটা হতেই আমি ঘাসের উপর ছুটতে থাকলাম.......
তুমি কিছুতেই সেই খরগোসটাকে ছুঁতে পারলে না।
উত্তাল সেই আনন্দক্ষনে গাছ থেকে পাখীরাও নেমে আসলো..........

কী আনন্দ, কি আনন্দ,কি আনন্দ
দিবারাত্রি নাচে মুক্তি নাচে বন্ধ---
আমি নাচতে থাকি............
হাসি কান্না হীরাপান্না দোলে ভালে
কাঁপে ছন্দে ভালো মন্দ তালে তালে.....
নাচে জন্ম নাচে মৃত্য..........
আমি থেমে যাই।
মৃত্যু শব্দটা আমাকে থামিয়ে দেয়।

সামনে তাকাতেই দেখি তুমি মুগ্ধ বিস্ময়ে তাকিয়ে আছো।
তোমার চোখের দিকে তাকিয়ে আমি আবার স্পর্শচূড়া হয়ে যাই........
চুপ করে বসে পড়ি ঘাসের উপর।
এই আমি কি সেই আমি!
এইতো ক'দিন আগেই আমি একা একা ঘুরে বেড়াতাম দিনের পর দিন .......

আনন্দ যে এত দূর্বার হতে পারে,
নদী ,কাশবনএবং তুমি সব কিছু আমাকে কেমন যে মুগ্ধ করে দেয়...........
চোখ দুটো বুজে পড়ে থাকি ঘাসের উপর..................

এ্যালার্মের শব্দে ঘুম ভেঙে যায়!
হাতের মুঠোয় তখনো ঘাসের গন্ধ।
চোখের তারায় তখনো কুয়াশা...........
রাজর্ষি
তুমি চলে গেছো
৮ ঘন্টা পার হয়ে গেছে...........
কোন সে মেঘের দেশে তুমি উড়ে যাচ্ছো,জানতে পারি?
জানতে পারি তোমার বুকের মধ্যে কি এখনো সেই কাঁপন?

সেই যে প্রাচীন বটগাছটার নীচে।
দুটো মানুষ। জ্বলছিলাম।
আমি সমুদ্রের বিশালতা নিয়ে হাত বাড়াতেই কি আশ্চর্য্য সেখানেও আগুনখেলা করে!

আমি জ্বলতে থাকি।
তুমি জ্বলতে থাকো।
আমি কি আর কখনো শুনতে পাবো কেউ আমাকে আগ্নেয়গিরী বলে ডাকছে।
বলছে তুমি কি বিসুভিয়াস?
বলছে কি নাম তোমার?

তটিনী
____________________________________________

তটিনী


মেঘের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছি তো যাচ্ছি।
আকাশ এত ভালো লাগে....অথচ মেঘের কাছে আসলে মাটির জন্য মন কেমন করে।
মানুষ আমরা আসলে কি যে চাই!
তোমাকে ফেলে এলাম বেশ কয়েক ঘন্টা পার হয়ে গেছে।
আসবার আগে যখন দেখা হলো তোমার মুখের দিকে তাকাতে পারছিলাম না......
মনে হচ্ছিল নিজের হৃদপিন্ডের কিছু অংশ রেখে যাচ্ছি।
তোমাকে কথাটা বলা হয়নি।
যা ভেবেছি তার কতটুকুই বা বলা হয়েছে তোমাকে..........
আর বললে যদি আমার পুরো হৃদপিন্ডটা চেয়ে বসো !........
তুমি কি ম্যাজিক জানো তটিনী ?
কেমন অবলীলায় বললে যাচ্ছো যাও। শুধু হাত দুটো রেখে যাও। আমি হৃদপিন্ড হারাবার ভয়ে আছি তুমি কি করে জানলে !
হৃদপিন্ড হারালে আর কি থাকে তটিনী?.........
হাত দুটো ধরে কতক্ষন দাঁড়িয়েছিলাম !.......

প্রথম যেদিন তোমার সাথে বাইরে বের হলাম......আগে থেকেই সময় ঠিক করা ছিলো।
সকালে ঘুম ভেঙে রেডী হয়ে নীচে নামতেই রিসিপশনে জানালো তুমি এসে লবিতে অপেক্ষা করছো।
আমাকে ডাকলে না কেনো জানতে চাইতেই হেসে জানালে এমন কিছু দেরী হয়নি।
আমি তোমাকে দেখে তো রীতিমত অবাক।
হলুদ সালোয়ার কামিজ পড়ে এসেছিলে।
সবুজ ছোট ছোট ফুল তাতে।
আমি বললাম তোমাকে দেখতে সর্ষে ফুলের মত লাগছে.......
হেসে ধন্যবাদ জানালে।

আমাদের প্রথম দিনের গন্তব্য কালাবগী নামে একটা লেক.........এই নামটা শুনেই একটা ছড়া মনে পড়েছিলো। তোমাকে ফোনে সেকথা বলতেই শুনতে চাইলে........
"ঐ দেখা যায় তালগাছ ঐ আমাদের গাঁ
ঐ খানেতে বাস করে কানাবগীর ছাঁ"
তুমি বললে কানাবগী তো না কালাবগী..........
আমি বললাম সে যাই হোক ....কানাবগী আর কালাবগী।

আমাদের যাত্রা শুরু হলো। আমি বললাম ......."ঐ দেখা যায় তালগাছ ঐ আমাদের গাঁ
ঐ খানেতে বাস করে কানাবগীর ছাঁ"
পুরো ছড়াটাই বলে গেলাম। একসময় দেখি তুমিও সুর মিলিয়েছো..............

কালাবগী পৌছুতে পৌছুতে আকাশে অনেকবার মেঘ রৌদ্দুর এর খেলা দেখলাম....মনে হচ্ছিল বৃষ্টি এই এলো বুঝি।
কালাবগী লেকটা শুরু হবার একটু পরই একটা পিকনিক স্পট দেখে থামলাম।
পাহাড় আর নদীর দারুণ এক সংযোগস্হল। পানির নীচে অজস্র পাথর।

তুমি জাফলং গেছো কখনো? জানতে চাইলে।
গ্যাছিতো।
অনেকবার।
ওখানেও নদীতে পাথর নেমে আসে পাহাড় থেকে। কিযে ভালো লাগে।
তুমি গেছো?
বিষণ্ন মুখে মাথা নাড়লে।
আমি বললাম তুমি যখন বাংলাদেশে যাবে,আমি তোমাকে জাফলং এ নিয়ে যাবো,মাধবকুন্ড নিয়ে যাবো...... আরো অনেক জায়গায় নিয়ে যাবো।
তুমি একটা দীর্ঘনিঃশ্বাস ছাড়লে...........
আমার শুধু মনে হলো তোমার সেই দুঃখভরা নিঃশ্বাসটা গিলে ফেলি।

তুমি বললে চলো তোমাকে মজার খাবার খাওয়াই।
হটপট থেকে বের করলে পরোটা ,আলুভাজি আর সুজি।
আমার বিস্ময়ের কোন সীমা ছিলো না.................কি করে বুঝলে এগুলো আমার পছন্দের খাবার?
বললে পরোটা কেনা.......
বাকিগুলো নিজে বানানো।
আলুভাজি তো খুবই সোজা............কুচিকুচি করে কাঁটাটাই একটু কষ্ট।
ফ্রাইপ্যান এ তেল দিয়ে ধোঁয়া আলুর কুচি দিয়ে ওতে হলুদ আর লবন আন্দাজমত দিয়ে ভাজলেই হলো।প্রথমে অল্প আঁচে পরে একটু বাড়িয়ে আলুগুলো একটু মচমচা হতেই কয়েকটা কাঁচা মরিচ দিয়ে নামিয়ে নিতে হবে........

আমি মন দিয়ে শুনলাম..........
শুনলাম ঠিক না । মাথা নাড়লাম।
কানে কিছু গেলো না।
কয়েক মিনিটের মধ্যেই দেখি খাবার সব শেষ........তোমার খুশীর কোন অন্ত নেই।
সব শেষ। তারমানে রান্না ভালো হয়েছে............
আমি শুধু বললাম এই এই দুর দেশে পরোটা, মচমচা আলুভাজা আর সুজি খেলাম ,তাও আবার কালাবগী লেকের পাশে............
আহা কি যে দারুণ!

গাড়িতে করে আবার কিছুক্ষন।
তুমি তোমার সূর্য্যচশমাটা চোখে দিয়ে সামনে তাকিয়ে আছো।
আমি পাশ থেকে তোমাকে দেখছি।

একটা সুন্দর মোটেলের সামনে গাড়ি থামালে। আসলে একটা নয়....অনেক মোটেল এখানে আর রেষ্টুরেন্ট। আমি নেমেই ছবি তোলা শুরু করলাম। এত সুন্দর স্ট্রাকচার মোটেলের.......

হঠাৎ দেখি তুমি নাই।
দুরে লেকের দিকে তাকিয়ে দেখি তুমি একটা কাঠের ব্রীজের কোনায় গিয়ে বসে আছো।
পানিতে সম্ভবতঃ পা ডুবিয়ে।
পেছন থেকে তোমাকে দেখতে মারমেইড এর মত লাগছিলো।
তোমার পিছনে যেয়ে দাঁড়ালাম।
বললে জানো," আমার ঘরের দেয়ালে একটা ছবি আছে। ছবিতে
বিরাট একটা পাহাড়। অন্য দিকে একটা নদী.........নদীর উপর একটা দীর্ঘ কাঠের ব্রীজ।
যখন আমার মন খুব খারাপ লাগে আমি ওখানে গিয়ে বসি। ঝুলানো ব্রীজের উপর পা ঝুলিয়ে বসে থাকি। অনেকটুকু পা পানির নীচে থাকে।
পানিতে প্রথম পা পড়তেই সারা শরীরে কেমন রিনরিন সুর বয়ে যায়।
মানুষের মত প্রকৃতিরও ম্যাজিক আছে........."
..............................
আমি শুনতে থাকি।
একটা বিশাল নীল আকাশ,একটা লেক আর অজস্র পাহাড় ঘেরা কালাবগীতে এসে একোন সময়ের মুখোমুখি আমি।
এই জীবনে কত মেয়ের সাথে দেখা হলো।
কই কেউ তো এমন ছাপ ফেলেনি মনে।
কারো কথা শুনে তো মনে হয়নি একে অনেককাল ধরে চিনি।

আমি কোন ধর্ম বিশ্বাস করিনা।
আমি শুধু সৃষ্টিকর্তাকে বিশ্বাস করি।
এবং তাঁর সৃষ্টিকে ।

সৃষ্টির এ কোন গভীর রহস্য!
এ কোন সত্যর মুখোমুখি হলাম আমি !

ভাবনার মাঝখানেই তুমি বললে বসো।
আমি তোমার পাশে বসলাম।
পানিতে পা ডুবালাম।

তুমি গুন গুন করে গাইছিলে.........
"আমি আকাশ হতে জানি
তুমি দেখো ডানা মেলে।
আমি নদী হতে জানি
যদি ইচ্ছে ভাসাও জলে।"

খুব ইচ্ছে করে বলি একটু জোরে গাইবে? বলিনা।
মনে হয় যদি থামিয়ে দাও।
তারচেয়ে এই ভালো এই গুনগুন সুর।

কি অদ্ভুত এক অনুভব.........দম বন্ধ করা।
একেই কি মৃত্যুর উপলদ্ধিবলে?
কে বলে তাহলে মরে যাওয়া অনেক কষ্টের ! আমি তো এমন ভালোলাগায় দম আটকে মরে যেতে পারি অযুত নিযুত কোটি বার।

শুধু ইচ্ছা ভাসালেই কি এমন হয় তটিনী?
খুব জানতে ইচ্ছে করছে ।
এক্ষুনি!

রাজর্ষি

চলবে........
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে জুলাই, ২০০৯ ভোর ৪:২২
৫১টি মন্তব্য ৪৭টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=নিছক স্বপ্ন=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৯ শে মে, ২০২৪ রাত ৯:৪৮



©কাজী ফাতেমা ছবি
তারপর তুমি আমি ঘুম থেকে জেগে উঠব
চোখ খুলে স্মিত হাসি তোমার ঠোঁটে
তুমি ভুলেই যাবে পিছনে ফেলে আসা সব গল্প,
সাদা পথে হেঁটে যাব আমরা কত সভ্যতা পিছনে ফেলে
কত সহজ... ...বাকিটুকু পড়ুন

একদম চুপ. দেশে আওয়ামী উন্নয়ন হচ্ছে তো?

লিখেছেন তানভির জুমার, ১৯ শে মে, ২০২৪ রাত ১০:৫৯



টাকার দাম কমবে যতো ততোই এটিএম বুথে গ্রাহকরা বেশি টাকা তোলার লিমিট পাবে।
এরপর দেখা যাবে দু তিন জন গ্রাহক‍কেই চাহিদা মতো টাকা দিতে গেলে এটিএম খালি। সকলেই লাখ টাকা তুলবে।
তখন... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে গরু দুধ দেয় সেই গরু লাথি মারলেও ভাল।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২০ শে মে, ২০২৪ রাত ১২:১৮


০,০,০,২,৩,৫,১৬, ৭,৮,৮,০,৩,৭,৮ কি ভাবছেন? এগুলো কিসের সংখ্যা জানেন কি? দু:খজনক হলেও সত্য যে, এগুলো আজকে ব্লগে আসা প্রথম পাতার ১৪ টি পোস্টের মন্তব্য। ৮,২৭,৯,১২,২২,৪০,৭১,৭১,১২১,৬৭,৯৪,১৯,৬৮, ৯৫,৯৯ এগুলো বিগত ২৪ ঘণ্টায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

কোরআন কী পোড়ানো যায়!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ২০ শে মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৮

আমি বেশ কয়েকজন আরবীভাষী সহপাঠি পেয়েছি । তাদের মধ্যে দু'এক জন আবার নাস্তিক। একজনের সাথে কোরআন নিয়ে কথা হয়েছিল। সে আমাকে জানালো, কোরআনে অনেক ভুল আছে। তাকে বললাম, দেখাও কোথায় কোথায় ভুল... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরানের প্রেসিডেন্ট কি ইসরায়েলি হামলার শিকার? নাকি এর পিছে অতৃপ্ত আত্মা?

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ২০ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৯


ইরানের প্রেসিডেন্ট হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হয়ে নিহত!?

বাঙালি মুমিনরা যেমন সারাদিন ইহুদিদের গালি দেয়, তাও আবার ইহুদির ফেসবুকে এসেই! ইসরায়েল আর।আমেরিকাকে হুমকি দেয়া ইরানের প্রেসিডেন্টও তেমন ৪৫+ বছরের পুরাতন আমেরিকান হেলিকপ্টারে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×