নিউজ ১:
নৌ-পরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খানের মেয়ের ঐশী খানের মালিকানাধীন এমভি ঐশী খানকে ১০ হাজার টাকা জরিমানা ও ২ মাসের জন্য রেজিস্ট্রেশন স্থগিত করা হয়েছে। গতকাল শুক্রবার বিকালে কাওড়াকান্দি লঞ্চঘাটে ভ্রাম্যমাণ আদালত এ জরিমানা করেন। এ সময় ২ মাসের রেজিস্ট্রেশন স্থগিতসহ একই পরিমাণ জরিমানা করা হয় এমএল প্রিন্সেসকে। এমএল নারিশাকে ১০ হাজার ও এমভি তপন এক্সপ্রেসকে ৫ হাজার টাকা করে জরিমানা করা হয়। এছাড়া এমভি সজল-১ ও এমভি সজল-২ নামের আরও দুটি লঞ্চের ত্রুটি ধরা পড়ে। কিন্তু কর্তৃপক্ষ লঞ্চ ফেলে পালিয়ে যাওয়ায় তাৎক্ষণিক জরিমানা আদায় করতে পারেননি ভ্রাম্যমাণ আদালত। সমুদ্র পরিবহন অধিদপ্তরের চিফ ইন্সপেক্টর সফিকুর রহমান জানিয়েছেন, এ দুটি লঞ্চের বিরুদ্ধে মেরিন কোর্টে মামলা করা হবে। মাওয়া-কাওড়াকান্দি নৌ-রুটে চলাচলকারী এ লঞ্চ ৬টিতে অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র, জীবন রক্ষাকারী পর্যাপ্ত বয়া না থাকা এবং বসার সিট নিম্নমানেরসহ নানা ত্রুটির কারণে সমুদ্র পরিবহন অধিদপ্তরের ম্যাজিস্ট্রেট সাইফুল হাসান এ জরিমানা করেন।অধিদপ্তরের চিফ ইন্সপেক্টর সফিকুর রহমান নৌ-মন্ত্রীর মেয়ের মালিকানা লঞ্চ কি না প্রশ্ন করলে তিনি সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, জরিমানা করার পরে শুনতে পেরেছি এটি মন্ত্রীর কন্যার লঞ্চ।
মাওয়া-কাওড়াকান্দি নৌ-রুটে চলাচলকারী লঞ্চ মালিক সমিতির এক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে নিশ্চিত করেছেন লঞ্চটি মন্ত্রীর পরিবারের মালিকানাধীন সার্বিক এন্টারপ্রাইজের একটি লঞ্চ। সূত্র: আমাদের সময়
নিউজ ২: তিন বোনের শেষ সেলফি
পদ্মায় ডুবে যাওয়া এমএল পিনাক-৬ লঞ্চের যাত্রী ছিল নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খানের তিন ভাগি্ন। তাদের একজনের লাশ সোমবার উদ্ধার করা হয়। এখনও নিখোঁজ অন্য দুজন। তাদের পরিবারে চলছে মাতম। পরিবারের সঙ্গে ঈদ কাটিয়ে ঢাকায় ফেরার সময় তারা তুলেছিল একটি সেলফি। সেটাই এখন তাদের শেষ স্মৃতি। সোমবার লঞ্চডুবির ঘটনায় নিখোঁজ রয়েছে বরিশালের পাঁচ যাত্রী। অফিস ও সংবাদদাদের খবর-
মুন্সীগঞ্জ : মঙ্গলবার দুপুরে মুন্সীগঞ্জের মাওয়ায় সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে নৌমন্ত্রী শাজাহান খান বলেন, লঞ্চডুবির ঘটনায় একই পরিবারের ১০ সদস্য পর্যন্ত নিখোঁজের তথ্য আমরা পেয়েছি। আমার আপন খালাতো বোনের তিন মেয়ে ওই লঞ্চে ছিল। তাদের মধ্যে শিকদার মেডিকেল কলেজের ছাত্রী হিরার লাশ সোমবার উদ্ধার করা হয়েছে। অন্য দুজনের নাম স্বর্ণা ও লাকী। তারা এখনও নিখোঁজ রয়েছে। তিনি আরও বলেন, দুর্ঘটনাকবলিত লঞ্চটিতে কাওড়াকান্দি ঘাট থেকে দেড় শতাধিক যাত্রী ওঠে। পরে কাঁঠালবাড়ী ঘাটে এসে আরও শতাধিক যাত্রী ওঠানো হয়। ধারণক্ষমতার অধিক যাত্রী ওঠানোর কারণে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
মাদারীপুর : বড় বোন নুসরাত জাহান হিরা (২০) শিকদার মেডিকেল কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী ছিল। অন্য বোন ফাতেমাতুজ জোহরা স্বর্ণা (১৮) শিবচরের শেখ ফজিলাতুন্নেছা বালিকা উচ্চবিদ্যালয় থেকে চলতি বছর এসএসসি পাস করেছে। বিজ্ঞান বিভাগ থেকে সে জিপিএ-৫ পেয়েছে। ভর্তি হয়েছিল ঢাকার বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ পাবলিক কলেজে।
শিবচর কাদিরপুরের গুয়াতলা গ্রামের নুরুল ইসলাম তার দুই মেয়ে হিরা ও স্বর্ণা এবং তাদের খালাতো বোন জান্নাত নাঈম লাকীকে নিয়ে ঢাকায় যাচ্ছিল। লঞ্চডুবির পর বাবা বেঁচে গেলেও তিন বোন বাঁচতে পারেনি। সোমবার রাত ১০টার দিকে নিজ বাড়িতে হিরার দাফন সম্পন্ন হয়। অন্যদিকে নিখোঁজ মেয়েদের লাশ খুঁজে পেতে পদ্মার পাড়ে ঘুরে ফিরছেন বাবা, মা ও আত্মীয়স্বজন। পরিবারে চলছে শোকের মাতম।
তিন বোনের শেষ সেলফি : তখনও তারা জানত না ফেরা হবে না ঢাকায়, ফেরা হবে না প্রিয় ক্যাম্পাস প্রাঙ্গণে, বন্ধুদের সান্নিধ্যে। হয়তো ভাবেনি ফিরে যাওয়া হবে না প্রিয় গ্রামে, পছন্দের মানুষের কাছে। ঈদ শেষে ?তিন বোন আনন্দে ফিরছিল ঢাকায়। আনন্দপথের যাত্রায় তুলেছিল একটি সেলফি। কিন্তু আনন্দ যাত্রাকে বিষাদে ডুবিয়ে সে সেলফিই হয়ে থাকল জীবনের শেষ স্মৃতি, যেটা পাওয়া গেছে জান্নাতুন নাঈম লাকীর ফেসবুক পেজে।
চীনের জইনজু ইউনিভার্সিটির এমবিএর ছাত্রী ছিল লাকী। সোমবার সকালে মাদারীপুর শিবচরের বাড়ি থেকে ভ্যানগাড়ি করে কাওড়াকান্দি লঞ্চঘাটে আসার পথে তিন বোন সেলফি তোলে। পরে তাদের একজন নিজের ফেসবুক পোস্টে সোমবার সকাল ৯টা ৩৬ মিনিটে আপলোড করে। ছবিটির ক্যাপশন ছিল 'On the Way Sister journey.
তাদের যাত্রাটি ছিল যেন সত্যি অন্যরকম। ছবির ক্যাপশনই বলে দেয় সে কথা। জার্নিটা তিন বোনের। উদ্দেশ্যটাই যেন তিন বোন... উদ্দেশে যেন হারিয়ে যাওয়া ...।
সূত্র: দৈনিক আলোকিত বাংলাদেশ