somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমার কথা : বই পড়া আর বুক পোড়া

২১ শে অক্টোবর, ২০২৫ রাত ১:২৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :




কিছুদিন ধরে বই পড়ার ভাগ্যটাই যেন রাগ করে বসে আছে আমার উপর। একটার পর একটা বই পড়ছি, কিন্তু একটা মন ভরানো বই পাচ্ছি না। পরপর তিনটা বই পড়ে শেষ করেছি—তিনটাই ফালতু।

এর মধ্যে একটা অনুবাদ। এত জঘন্য অনুবাদ, বর্ণনা করার ভাষা নাই! মনে হয়েছে, লেখক না—কোনো ফাঁকিবাজ ছেলে গুগল ট্রান্সলেটে কপি-পেস্ট মেরে, দুই মিনিটে অনুবাদ করে প্রেসে দিয়ে এসেছে। তারপর প্রকাশনীও চোখ বন্ধ করে বসে গেছে। পাণ্ডুলিপি না পড়েই প্রেসে বসিয়ে দিয়েছে। আর প্রেসও নিজের কাজ করে গেছে—মেশিন ঘুরেছে, শব্দ বেরিয়েছে, বই ছাপা হয়েছে। শেষমেশ আমরা পাঠকরা সেই “কপি-পেস্ট” পড়ছি!
ভাবছি, খুব শিগগিরই এই বইটার রিভিউ লিখব— যদি কিছু মানুষের সময় বাঁচে ।

দ্বিতীয় বইটার অবস্থা আরেক রকম। মনে হয়েছে, লেখক পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছে—একটা বিষয় মুখস্থ করেছে, তারপর সেই একই জিনিস বারবার লিখে ফেলেছে। যেন মুখস্থ নোট গিলিয়ে দিচ্ছে পাঠকদের। আর আমাদের প্রকাশনীগুলোও একই কাণ্ড। টাকা পেলেই খুশি! পাণ্ডুলিপি না পড়েই ছাপার মেশিন চালিয়ে দেয়। সেই মেশিনটা যদি একবার কথা বলতে পারত—মনে হয় চিৎকার করে উঠত,
“আমারে দিয়া এসব ফালতু জিনিস কেন ছাপাও!”
তারপর হয়তো রাগে বেলুনের মতো ফুলে যেত।

তৃতীয় বইটার গল্পটা খুবই —দুঃখজনকও । বইটার ইংরেজি ভার্সন আমি আগেই পড়েছি। লেখক শুধু সেটাকে একটু ঘুরিয়ে নিজের নামে চালিয়ে দিয়েছে। কেন করেছে জানি না। আমার মতে দুইটা কারণ হতে পারে—

প্রথমত, হয়তো সে চেয়েছিল মূল প্রকাশকের কাছ থেকে অনুমতি নিতে, কিন্তু প্রক্রিয়াটা ঝামেলার বলে নিজেই নিজের অনুমতি দিয়ে দিয়েছে!

দ্বিতীয়ত, হতে পারে সে প্রকাশককে বলেইনি যে অন্যের গল্প কপি করে নিজের মতো করে লিখেছে।

যে কারণেই হোক, ফলাফল একটাই - বাংলাদেশে অনেক পাঠক আছেন যারা ইংরেজি বই পড়েন না। তাদের কাছে এই বইটা যেন একেবারে “ওয়াও!” — মনে হয়েছে দারুণ কিছু পড়ে ফেলেছেন। আবার আবার কারো কাছে, “মোটামুটি ভালোই।” কিন্তু যাদের হাতে আগে থেকেই বইটার ইংরেজি সংস্করণ পড়া, তাদের কাছে এই বইটা স্রেফ একটাই শব্দ— “চুরি।” তাদের চোখে লেখক যেন সেই চিরচেনা ছেলেটা, পরীক্ষার হলে বন্ধুর খাতা থেকে হুবহু নকল করে নিজের নামে জমা দিয়েছে—একটু শব্দ পাল্টে, নিজের হাতের লেখা বানিয়ে।

সাম্প্রতিক সময়ে নতুন প্রজন্মের অনেক লেখকের বই কিনেছি। পড়তেও শুরু করেছি। কিন্তু মন ভরছে না। বেশিরভাগ বই নিম্নমানের। কিছু বই মোটামুটি টাইপের, কিন্তু “ওয়াও!” বলার মতো কোনো বই এখনো পাইনি। তবুও পড়ছি—ভাবছি, হয়তো কোনো এক সকালে এমন একটা বই হাতে পাব, যেটা পড়ে বলব—‘এই তো! এমন কিছুই খুঁজছিলাম।’

শেষে মনে পড়ে যায় হুমায়ূন আহমেদের কথা—
“যে বই প্রথম পাঁচ পৃষ্ঠা আমার আগ্রহ ধরে রাখতে পারে না, সেই বই আমি পড়ি না।”

ভাবছি, আমিও বোধহয় সেই নিয়মটাই মেনে চলব এখন থেকে।

পরিশেষে একটা কথাই বলতে চাই—এখন অনেক প্রকাশনী আছে, যারা টাকার বিনিময়ে যা পায় তাই ছাপিয়ে ফেলে। ওদের নিয়ে আর কী-ই বা বলব!

আজকাল বেশিরভাগ পাঠক অনলাইনে বই কেনে। বইমেলায় গিয়ে ভালো-মন্দ আলাদা করা একটু ঝামেলার, কিন্তু অনলাইনে যারা বই বিক্রি করে, তারা যদি অন্তত ফালতু বইগুলো একটু ফিল্টার করত, তাহলে অনেক প্রকাশনী এত সহজে “যা পায় তাই ছাপানো”র সাহস পেত না।

আমি প্রায়ই এই কথা বলি—অনলাইন প্ল্যাটফর্মের রিভিউ আর পাঠক বিশ্লেষণে। জানি, আমার একার বলায় কিছু হবে না। তবুও বলি। যদি কখনও কাজ হয় , তাহলে অনেকের টাকা আর সময়—দুটোই বেঁচে যেত।

সর্বশেষ এডিট : ২১ শে অক্টোবর, ২০২৫ রাত ২:১৬
৭টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

দ্যা এডামেন্ট আনকম্প্রোমাইজিং লিডার : বেগম খালেদা জিয়া

লিখেছেন ডি এম শফিক তাসলিম, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:০৪

১৯৪৫ সালে জন্ম নেয়া এই ভদ্রমহিলা অন্য দশজন নারীর মতই সংসার নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন, বিয়ে করেছিলেন স্বাধীন বাংলাদেশের অন্যতম সুশাসক শহিদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান কে! ১৯৭১সালে এ... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

×