somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ব্যাংকক, পাতায়া ভ্রমন ২০০৬

১৮ ই মে, ২০১২ রাত ১০:২৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আগের পোস্টের লিংকঃ সিংগাপুর ভ্রমন ২০০৬

সিংগাপুর এয়ারলাইন্সের এয়ারবাস যখন থাইল্যান্ডের সুবর্ণভূমি বিমান বন্দরের রানওয়ে স্পর্শ করল, তখন রাত প্রায় ন’টা। আমাদের প্যাকেজের মধ্যে ব্যাংকক প্যালেস হোটেলে বুকিং ছিল, সাথে ফ্রি এয়ারপোর্ট থেকে হোটেল ট্রান্সফার। এদিক ওদিক অনেক খুজেও যখন আমাদের নিতে আসা গাড়ীর টিকির দেখা পেলাম না, তখন বাসে করেই ব্যাংকক এর উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম। এয়ারপোর্ট থেকে বেরিয়েই বাস উঠে গেল ফ্লাই ওভার এ, আর সেটা গিয়ে শেষ হল একেবারে ব্যাংকক শহরে। বাস ব্যাংকক প্যালেসের কাছেই নামিয়ে দিল। হোটেলের মান বেশ ভালই।

পরদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে কমপ্লিমেন্টারি ব্রেক ফাস্ট দেখেতো আমরা যারপরনাই উচ্ছ্বসিত। এত আইটেমের আয়োজন, কোন কার্পণ্য ছাড়াই নাশতা এস্তেমাল করলাম।:)

একটু পর শুনি, ট্রাভেল এজেন্সি থেকে গাড়ী এসেছে। গতকাল রাতে যে আমাদের বিমান বন্দর থেকে হোটেলে আনতে যায়নি, তার বদলা হিসেবে অর্ধ দিবস সিটি ট্যুর করাবে। ভাবলাম, যাক কিছু তাহলে পাওয়া যাচ্ছে !

বাইরে প্রচন্ড রোদ। এর মধ্যে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত মাইক্রো বাসে করে ঘুরতে বেরুলাম। রাস্তা ঘাটের পরিচ্ছন্নতা দেখে মুগ্ধ হলাম। ট্যাক্সি ক্যাবগুলো এমন চকচকে, দেখলে মনে হয় এই মাত্র শোরুম থেকে নিয়ে এসেছে। সিটি ট্যুরের প্রধান আকর্ষন হল এমেরাল্ড বৌদ্ধ মন্দির, বলা যায় রাজকীয় বৌদ্ধ মন্দির।



বিভিন্ন কারুকার্য খচিত খুবই সুন্দর এক মন্দির। সেথায় বিশাল এক বৌদ্ধ মূর্তি শায়িত অবস্থায় আছে, দেখে মনে হয় পুরোটাই স্বর্ণে মোড়া।



আমার সহকর্মী আবার বৌদ্ধ, তাই তার জন্য বেশ ভালই হল, ধর্মীয় গুরুত্বপূর্ণ একটি জায়গায় সে প্রার্থনাও করতে পারছে।



এদিক সেদিক ঘুরে আমরা চলে এলাম MBK মার্কেটে। সেখানেই দুপুরের খাওয়া সারলাম। খাবারে অবশ্যই চিংড়ি মাছ ছিল। থাই রান্না আমার কাছে বরাবরই ভাল লাগল। খাওয়া সেরে মার্কেটে টুকটাক ঘুরে BTS বা স্কাই ট্রেনে চড়ে হোটেলে চলে এলাম।


ব্যাংকক স্কাই ট্রেন (বিটিএস)


MBK মার্কেটের সামনে থেকে দেখা ব্যাংকক শহর

ব্যাংককে মজার ব্যাপার দেখলাম, অফিস বা বাণিজ্যিক এলাকায় দিনে যেসব ফুটপাথ ফাকা, রাতে সেগুলো জমজমাট বাজার হয়ে যায়, চেনাই যায়না যে দিনে এলাকাটা এত ফাকা ছিল। এগুলো মূলতঃ নাইট বাজার।

পরদিন আমাদের গন্তব্য এক দিনের পাতায়া কোরাল দ্বীপ ট্যুর। গাড়ী করে যাবার সময় দেখলাম, প্রায় ১৫০ কিমি রাস্তা বরাবর ফ্লাই ওভার তৈরী হচ্ছে ! যাবার পথে ওরা বিশ্বের সবচেয়ে বড় অলংকারের শো রুমে থামাল।



এটা আসলে GEMS GALLERY PATTAYA এর শোরুম। ঢোকার মুখেই ঐতিহ্যবাহী পোষাক পরিহিতা থাই নারীদের অভ্যর্থনা আর গরমে দিল জুড়ানো ঠান্ডা শরবত দিয়ে আপ্যায়ন!



এরপর ট্রেনে চড়িয়ে একটি গাইডেড শো দেখায়, কিভাবে তারা এই দামী GEM গুলো তৈরী করে। এর এক পর্যায়ে এক জায়গায় কিছু হলোগ্রাফিক ভিডিও দেখায়, এতটাই বাস্তব, বিশ্বাসই হতে চায় না সেটা আলোর খেলা ছিল। আমার সহকর্মী তার হবু বউ এর জন্য কিছু অলংকার কিনল। অবিবাহিত ভাইয়েরা ব্যাপারটা মাথায় রাখতে পারেন।

পাতায়া পৌছে বীচ ধরে একটু হাটাহাটি করলাম। এখানে বেশী সময় থাকার উপায় নেই কারণ, আমাদের গন্তব্য একটি প্রবাল দ্বীপ। নৌকা ছাড়ল, সমুদ্রে কিছু দূর যাওয়ার পর একটা ইভেন্ট এর জন্য থামলাম, প্যারা সেইলিং ! প্যারাসুটের সাথে আপনাকে বেধে স্পিড বোট দিয়ে টেনে নেয়া হবে, আপনি উঠে যাবেন ওপরে ! ভাল লেগেছিল, কিন্তু মনে হচ্ছিল, আরেকটু ওপরে ওঠালে ভাল লাগত।


প্যারা সেইলিংরত আমি... :)

প্যারা সেইলিং শেষে আমাদের নৌকা সমুদ্রের বুক চিরে প্রবাল দ্বীপের দিকে আগাতে লাগল। প্রবাল দ্বীপ যখন নজরে এল, তখন মনে হল, ওটা বাস্তবে নয়, কোন ছবিতে দেখছি। অদ্ভুত সুন্দর সবুজাভ নীল পানি।



পৌছানোর কিছুক্ষণ পরেই দুপুরের খাবার দেয়া হল। রান্না বেশ ভাল ছিল, থাই ফুড আসলেই মজার।



দুপুরে খেয়ে দেয়ে একটু বিশ্রাম নিয়ে পানিতে ঝাপাঝাপি।


পাতায়া কোরাল দ্বীপের বিচ...

ফেরার পথে আকাশ মেঘে ঢেকে যাওয়ায় কিছুটা স্বস্তি, পানিতে মেঘ আর রৌদ্রের খেলা।



রাতে ব্যাংককে রাস্তায় বেরিয়ে দেখি সব ফুটপাতে জমজমাট বাজার। যেগুলো দিনে ছিল পুরো দস্তর অভিজাত অফিস পাড়া! এসব জায়গা থেকে কিছু কিনতে গেলে ভাল দরদাম করে কিনতে হয়, নয়ত ঠকে যাওয়ার বিপুল আশংকা। আর কারো কারো আচরণ বেশ খারাপ, সেক্ষেত্রে মাথা ঠান্ডা রাখাই উত্তম।

পরদিন আমাদের প্রোগ্রামে ছিল অর্ধ দিবস ভাসমান মার্কেট ট্যুর। ছাও ফ্রায়া নদী ধরে যাবে, পথে একটা সাপের খামারও দেখিয়েছে। এ প্রসংগে বলে রাখি, আমাদের ব্যাংককের এই ট্যুরটি খুব একটা ভাল ছিল না, কারণ আমরা কম সময়ে ব্যাংককের সাথে চিয়াং মাই ও গিয়েছি, যার কারণে ব্যাংককের আরো অনেক কিছুই দেখতে পারিনি। আপনার যখন যাবেন, তখন সাফারি পার্ক (বাঘের বাচ্চাকে কোলে নিয়ে দুধ খাওয়ানো যায়), হলিউডের শুটিং দেখায়, এই জাতীয় কিছু প্যাকেজ আছে, সেগুলোও ঘুরে আসবেন। আর ভাসমান মার্কেটের পুরো দিনের প্যাকেজ নিবেন, সেটাই আসল ভাসমান মার্কেটের ট্যুর প্যাকেজ।

কিছু ছবি শেয়ার করছি।


ছাও ফ্রায়া নদীর উপর সুন্দর একটি ব্রিজ...


নদীর ধারে সুন্দর বৌদ্ধ মন্দির...


ফ্লোটিং মার্কেটে এভাবেই কেনা বেচা হয়...

সেদিন রাতেই আমরা চিয়াং মাই এর ট্রেন ধরেছিলাম। বেশ ভাল ছিল চিয়াং মাই এর ট্যুরটা, পরের পর্বে সে কথা বলব। :)
৩৮টি মন্তব্য ৩৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছবির গল্প, গল্পের ছবি

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৩:১৫



সজিনা বিক্রি করছে ছোট্ট বিক্রেতা। এতো ছোট বিক্রেতা ও আমাদের ক্যামেরা দেখে যখন আশেপাশের মানুষ জমা হয়েছিল তখন বাচ্চাটি খুবই লজ্জায় পড়ে যায়। পরে আমরা তাকে আর বিরক্ত না করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে লীগ আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে জামাত

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৪৬


বাংলাদেশে রাজনৈতিক ছদ্মবেশের প্রথম কারিগর জামাত-শিবির। নিরাপত্তার অজুহাতে উনারা এটি করে থাকেন। আইনী কোন বাঁধা নেই এতে,তবে নৈতিক ব্যাপারটা তো অবশ্যই থাকে, রাজনৈতিক সংহিতার কারণেই এটি বেশি হয়ে থাকে। বাংলাদেশে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৪৩

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

চা বাগানের ছবি কৃতজ্ঞতা: http://www.peakpx.com এর প্রতি।

আমাদের সময় একাডেমিক পড়াশোনার একটা আলাদা বৈশিষ্ট্য ছিল। চয়নিকা বইয়ের গল্পগুলো বেশ আনন্দদায়ক ছিল। যেমন, চাষীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×