গত বছর একবার যেতে চাইলাম, দেরী করে রওনা দেয়াতে রাস্তা বন্ধ করে দিল, আর যাওয়া হল না। ইরানে কিছু ভাল নিয়ম আছে, সপ্তাহান্তে মানুষ জন তেহরান ছেড়ে উত্তরের দিকে দৌড় দেয়, তাই বৃহস্পতি বা শুক্রবার দুপুরের পর রাস্তাগুলো একমুখী করে দেয়, মানে যারা তেহরানের বাইরে গেছে তারা শুধু ফিরতে পারবে, নতুন করে কেউ যেতে পারবে না। এটা না করলে সত্যিই খবর ছিল, লোকজনের আর তেহরান ফেরা লাগত না, এত গাড়ি থাকে রাস্তায় !
এবার গত মাসে আবার লার লেইক যাওয়ার উদ্যোগ নিলাম। বৃহস্পতিবার একটু সকাল করে রওয়া দিতে চাইলেও শেষ পর্যন্ত সকাল ৯ টার আগে বের হওয়া গেল না। তবে, রাস্তা খোলা পেলাম। জিপিএস ধরে পাথুরে পথ পেরিয়ে যখন লার লেইকে ঢোকার ফটকে পৌছালাম, তখন কর্তব্যরত দারোয়ানের কথা শুনেতো মাথায় হাত ! বলে কি না, এই লার লেইক বছরে মাত্র তিন মাস দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত থাকে! আমরা এসেছি বন্ধের সময়! বুঝলাম না, কোন দুনিয়ায় থাকি ! ইরান বলে কথা !
যাহোক, ব্যাটাকে বলে একটু ভিতরে ঢুকে লার লেইক উকি দিয়ে দেখলাম, এত কষ্ট করে এসেছি ! শীতল বাতাস বইছে, এর মধ্যে মেঘের লুকোচুরি। পাটি পেতে বসে সাথে আনা আঙ্গুর আর নাশপাতি খাওয়া শুরু করলাম, দুধের সাধ ঘোলে মেটানো আর কি! ভেবেছিলাম, লেইকের পাড়ে কত সুন্দর দিন পার করব, বসে বসে ফল খাব। কিন্তু, আল্লাহ সেটা কপালে রাখেন নি। যাহোক, লেইকে উকি দেয়ার দু'একটি ছবি শেয়ার করি।
একটু পর মেঘের লুকোচুরি শুরু হলে প্রকৃতিকে অন্যভাবে উপভোগ করতে শুরু করলাম...
লার লেইক থেকে দেখা দামাভান্দ পর্বত, ইরানের সবচেয়ে উচু পর্বত শৃংগ...
রোদের মধ্যে খোলা আকাশে আর কতক্ষণ থাকা যায় বলুন, গাড়ি ঘুরিয়ে আবার প্রধান সড়কে চলে এলাম। এক দোকানে জিজ্ঞেস করলাম, আশে পাশে কিছু আছে কি না দেখার। বলল, দুই কিলোমিটার সামনে গিয়ে ডানে গেলে কি নাকি দেখার আছে। সেই মত গাড়ি চালিয়ে প্রায় ৩০ কিলোমিটার চলে গেলাম, দেখি পথ আর শেষ হয় না। শেষতক, এক জায়গায় একটা মোড় থেকে দেখলাম নীচে একটা গ্রাম মত দেখা যায়, ওখানেই ঘুরে আসা যাক। এবার তবে গ্রাম ইরানের কিছু ছবি দেখুন।
গ্রামে যাওয়ার পর স্থানীয় লোকজন আমাদেরকে একরকম পিঠা খেতে দিল। বেশ মজা লেগেছিল। আমার স্ত্রী ওদের মেয়েদের সাথে কথা বলল। পাশেই কোন ইমামের মাজার এবং মসজিদ ছিল, যোহরের নামায সেখানেই আদায় করলাম। ওযু করতে গিয়ে হাত ব্যাথা হয়ে গেল, কি ঠান্ডা পানি রে বাবা !!
গ্রামের লোকজনই বলল, একটু সামনে গিয়ে ঘুরে আসতে...
আর গত বছর শীতে লার লেইক দেখতে গিয়ে এখান থেকে ফিরে আসতে হয়েছিল। প্রচন্ড বাতাসের তোড়ে ঠান্ডায় জমে যাচ্ছিলাম আমরা...
ভাল থাকবেন সবাই, প্রচন্ড ব্যস্ততার কারণে ভ্রমন কাহিনীও তেমন লিখতে পারছি না...
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই অক্টোবর, ২০১৪ রাত ৮:৪৬