সর্বশেষ ভোটার তালিকা অনুযায়ী বাংলাদেশে মোট ভোটার সংখ্যা ১২ কোটি ৪৪ লাখ ৮০ হাজার ৬৮৭ জন।
১৮ থেকে ২৯ বছরের ভোটারঃ ৩ কোটি ৪ লাখ ৭ হাজার (২৪.৪২%), এদের জন্ম হয়েছে ১৯৯৬ সাল বা তার পরে। এরা কখনোই ভোট দিতে পারে নি এবং বুঝ হওয়ার পর থেকেই আওয়ামী শাসন দেখেছে। এদের জীবন পুরোটাই আওয়ামী দুঃশাসনে কেটেছে। এরা বিএনপি বা জামায়াত কাউকেই কোন কার্যকর আন্দোলন করে আওয়ামী লীগকে বড় চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলতে দেখেনি। এরা দেখেছে, কিভাবে ২০২৪ এর ছাত্র-জনতার আন্দোলনের ফসল হিসেবে একটি রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীরা মুক্ত হয়ে সেই আন্দোলনকারীদের অবদানকে এখন অস্বীকার করছে এবং বিশ্বাসঘাতকতা করছে! এরা বুঝতে পারছে যে কিভাবে তাদের বিপ্লব হাতছাড়া হয়ে যাচ্ছে…
৩০ থেকে ৪১ বছরের ভোটারঃ ৩ কোটি ৫৯ লাখ ৭৩ হাজার (২৮.৮৯%), এদের জন্ম হয়েছে ১৯৮৪ সাল বা তারপরে। বুঝ হওয়ার সময় থেকে এরা আওয়ামী লীগে এবং বিএনপির ক্যাচাল দেখে বড় হয়েছে বা ১/১১ এর কাহিনী দেখেছে! এরপরে দেখেছে আওয়ামী দুঃশাসন! এই গ্রুপেরও একটা বড় অংশ কখনো ভোট দিতে পারে নি!
৪২ থেকে ৪৯ বছরের ভোটারঃ ২ কোটি ১০ লাখ ৯ হাজার (১৬.৮৭%), এই বয়সের ভোটাররা কৈশোরে এরশাদের পতন দেখেছে, বিএনপির প্রথম শাসন এবং আওয়ামী লীগের আন্দোলন সংগ্রাম দেখেছে। এরা মূলতঃ ১৯৯১ সাল থেকে ২০০৬ এর পুরো রাজনৈতিক ক্যাচালটাই দেখেছে। যারা সচেতন, তারা বিএনপি এবং আওয়ামী লীগের ওপর বীতশ্রদ্ধ! এরা দেখেছে, কিভাবে এই দল দু’টো দুর্নীতিতে লিপ্ত ছিল আর একে অপরকে ক্ষমতা থেকে টেনে নামানো জন্য হরতাল, অসহযোগ আন্দোলন, ভাংচুর করে মানুষের জীবন অতিষ্ট করেছে! এরা দেখেছে ১/১১ এর সরকার কিভাবে ভারতের প্রেস্ক্রিপশনে আওয়ামী লীগের হাতে ক্ষমতা তুলে দিল ২০০৯ সালে! আমি এই বয়স গ্রুপের একজন!
৫০ বছর ও তার চেয়ে বেশি বয়সের ভোটারঃ ৩ কোটি ৭০ লাখ ৮৯ হাজার (২৯.৭৯%)
তারমানে পঞ্চাশের নীচে ভোটার মোট ভোটারের ৭০.১৮%, বিশাল একটি সংখ্যা। আমার বিবেচনায় এই অংশে যারা আছে, তাদের অধিকাংশই কোন নির্দিষ্ট দলের অন্ধ ভক্ত না। এই ৭০% এর সচেতন অংশ একটা নতুন বাংলাদেশ দেখতে চায়, রাজনৈতিক সংস্কৃতির পরিবর্তন চায়, দুর্নীতিমুক্ত একটা দেশের স্বপ্ন দেখে যেখানে নাগরিক অধিকার পেতে ঘুষ দিতে হবে না, মেধার মূল্যায়ন হবে, শাসন ব্যবস্থায় সংস্কার এবং পলাতক খুনীদের বিচার চায়! যদি সুষ্ঠু নির্বাচন হয়, আশা করছি আগামীর নির্বাচনে এরা তাকেই ভোট দিবে যারা সৎ এবং যোগ্য নেতৃত্বের আশা দেখাতে পারবে, পরিবর্তনের আশা দেখাতে পারবে। তাই, যারা নির্বাচন হলেই ক্ষমতায় চলে যাবেন বলে দিবাস্বপ্ন দেখছেন, আশা করি সমীকরণটা এত সরল হবে না।
ঠিক একারণেই অনলাইনে প্রায় সবাই ডঃ ইউনুস সরকারকে আরো ৫ বছর দায়িত্বে রাখতে ক্যাম্পেইন করছে। এজন্যই ইউটিউব চ্যানেলে জরিপে ৮৮% মানুষ ইউনুস সরকারকে আরো ৫ বছর ক্ষমতায় রাখতে চায়। কারণ, তারা ভয় পাচ্ছে যে নির্বাচনের পরে যদি এমন একটি দল সরকার গঠন করে যারা চাঁদাবাজি, দখলদারি, খুনোখুনিতে ইতোমধ্যেই তাদের স্বরুপ চিনিয়ে দিয়েছে, তাহলে জুলাই-অগাস্টে যারা প্রাণ দিল, তাদের আত্মত্যাগ বৃথা যাবে, হয়ত দেশ চলে যাবে আওয়ামী লীগের দুঃশাসনের চেয়েও বড় জাহিলিয়্যাতের যুগে… এ জাতি আরেকটা জুলাই-অগাস্টের ভার সইতে পারবে না…
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৫ রাত ১০:৩৪

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।


