somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বাংলার ঐতিহ্য : নৌকা বাইচ

০৮ ই মার্চ, ২০১১ দুপুর ১:৩২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

নদীমাতৃক বাংলাদেশ নদীর তরঙ্গভঙ্গের সঙ্গে এ মাটির মানুষের আশৈশব মিতালি। নদী তাই হয়ে উঠেছে এখানে মানুষের প্রাণোচ্ছল ক্রীড়াসঙ্গী। এই প্রেক্ষাপটে নদীবক্ষে নৌকা শুধু যোগাযোগের মাধ্যমই নয়, হয়ে উঠেছে জলক্রীড়ার গুরুত্বপূর্ণ অংশ। নৌকা বাইচ তারই একটি দৃষ্টিনন্দন রোমাঞ্চময় দৃষ্টান্ত। আবহমানকাল থেকে বাংলার ঐতিহ্যের অন্যতম অনুষঙ্গ নৌকা বাইচ। আবেগ-উত্তেজনার নৌকা বাইচ হয়ে ওঠে আপামর মানুষের নির্মল আনন্দের সপ্রাণ প্রতিভূ।

বাংলাদেশের প্রাচীন ঐতিহাসিক খেলাগুলোর মধ্যে নৌকা বাইচ অন্যতম। প্রাপ্ত রেকর্ড অনুযায়ী ধারণা করা হয়, খ্রিস্টপূর্ব প্রায় ২০০০ বছর আগে ‘মেসোপটেমিয়ার’ লোকেরা ইউফ্রেটিস নদীতে এক ধরনের নৌকা বাইচের আয়োজন করত। এর কয়েক শতাব্দী পর মিসরের নীলনদের জলে নৌকা প্রতিযোগিতা শুরু হয়। এর পর ছড়িয়ে পড়তে থাকে এর প্রসার। অক্সফোর্ড ও ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে অনুষ্ঠিত নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতা এখনও ব্যাপক জনপ্রিয়। ১৯০০ সাল থেকে অলিম্পিক প্রতিযোগিতায় এ পর্যন্ত প্রায় ১৩৫টি ফাইনাল হয়েছে। এর মধ্যে ২৬ বার যুক্তরাষ্ট্র, ২৫ বার জার্মানি ও ১৪ বার যুক্তরাজ্য বিজয়ী হয়।
‘বাইচ’ শব্দটি ফরাসী। ফরাসীদের সময় এই খেলার উৎপত্তি হলেও এর আধুনিক ছোঁয়া লাগে ব্রিটিশদের সময়। পরে ছড়িয়ে পরে ভারতবর্ষে। সর্বত্র জনপ্রিয় হতে থাকে খেলাটি। সেই ধারাবাহিকতায় এই জনপদে নৌকা বাইচ আমজনতার জনপ্রিয় প্রতিযোগিতা হিসেবে স্থান করে নেয়। সৃজনশীল কাজের মাধ্যমেই ইতিহাসের প্রসার ঘটে। বিক্রমপুর তথা মুন্সীগঞ্জের ঐতিহ্য রক্ষার্থে ১৭ সেপ্টেম্বর মফম্বল শহর মুন্সীগঞ্জের পাশের নৌকা বাইচটি ছিল এই অঞ্চলের আলোচিত একটি বড় উৎসব। এই কর্মকান্ড নগণ্য মনে হলেও এই জনপদের হারানো ঐতিহ্য নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরার চেষ্টায় বড় ভূমিকা রাখতে পারে। আয়োজকরা রেকর্ড পরিমাণ দর্শক সমাগম দেখে প্রতিবছরই এই উৎসব করার ঘোষণা দিয়েছে।

সমাজ বা রাষ্টীয় ক্রান্তি লগ্নে জনসাধারণের মন মানসিকতা, অসামাজিক, অপসংস্কৃতির চর্চা, সামাজিক অবক্ষয় রোধে বিভিন্ন ধরনের খেলাধুলার মধ্যদিয়ে মানসিক উৎকর্ষ সাধণের জন্য সহায়ক। খেলাধুলা শুধু সমাজের জনগণের বিনোদন আর রোগ নিরাময় হিসেবেই কাজ করে না, এটা হতে পারে একজন ব্যক্তি, সমাজ তথা রাষ্ট্রের পরিচয়। অনুসন্ধানে দেখে গেছে, পৃথিবীতে অনেক জাতি আছে, যারা শুধু তাদের ঐতিহ্যগত খেলাধুলা খেলেই আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে তাদের পরিচিতি। যেমন ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা, ইতালি ইত্যাদি।

এই বাংলায় প্রচলিত আছে বিভিন্ন ধরনের খেলাধুলা, যেমন নৌকা বাইচ, হা-ডু-ডু, ফুটবল, কানামাছি, দাঁড়িয়াবান্দা, গোল্লাছুট ইত্যাদি। এই সমস্ত খেলাধুলা সমাজের একে অপরের সঙ্গে যেমন পারিবারিক বা সামাজিক সম্পর্ক উন্নয়ণ ও বিনোদনের সর্বোত্তম মাধ্যম। তার মধ্যে অন্যতম খেলা আমরা ধরতে পারি নৌকা বাইচ। এই আয়োজনকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন ধরনের মেলা, মানুষের মাঝে এক আনন্দঘন মুহূর্ত সৃষ্টি হতো, বাড়ত এক গ্রাম হতে অন্য গ্রামের হৃদ্যতা। সবাই মিলেমিশে কাজ করত, একে অপরের সহযোগিতায় এগিয়ে আসত, একে অন্যের বিপদে এগিয়ে আসত। যার ফলে সমাজে সুখ শান্তি বিরাজ করত এবং সেই সময়ের যুব ছেলেমেয়েদের সংস্কৃতি, খেলাধুলার চর্চার মধ্যদিয়ে তারা সামাজিক ব্যাধি থেকে দূরে থাকত।

কিছুদিন ধরে লক্ষ্য করা যাচ্ছে, দেশের বিভিন্ন স্থানে নৌকা বাইচের আয়োজন চলছে। এই আয়োজন অব্যাহত থাকলে নৌপথের খেলা দীর্ঘদিনের হারানো ঐতিহ্য নৌকা বাইচ পুরোপুরি স্বরূপে ফিরে না আসলেও অন্তত টিকিয়ে রাখা সম্ভব হবে। এই খেলাকে সারাদেশে আগের অবস্থানে নিয়ে যাওয়ার পথ আমরাই নষ্ট করে ফেলেছি। বিভিন্নভাবে নদী দখল ও কল কারখানার বর্জ্যের মাধ্যমে নদীকে মেরে ফেলেছি। নষ্ট করে ফেলেছি নদীর পানি। নদী হারিয়ে ফেলেছে তার স্বাভাবিক গতি। ফলে পানি শুকিয়ে এমনিতেই হারিয়ে যাচ্ছে নৌপথের খেলা নৌকা বাইচ। বুড়িগঙ্গা, তুরাগ ও ইছামতি নদীতে তাই এখন আর নৌকা বাইচের আয়োজন দেখা যায় না।

প্রমত্তা নদীবক্ষে সঙ্গীতের-তাল-লয়ে দাঁড়ীদের ছন্দময় দাঁড় নিক্ষেপে নদীজল আন্দোলিত করে যে মনোমুগ্ধকর দৃশ্যের অবতারণা হয় তা অতুলনীয়। মাঝিদের একত্র জয়ধ্বনিতে এবং একই লয়ের গানের তালে, ঝোকে ঝোকে বৈঠার টানে; এক সঙ্গে পানিতে এক অপূর্ব অভিঘাতের সৃষ্টি হতে থাকে। গায়েন বা পরিচালকের কাঁসির শব্দ এই বৈঠার এবং গানের গতি বজায় রাখতে সাহায্য করে। অন্য সব নৌকাকে পেছনে ফেলে নিজেদের নৌকাকে সবার আগে যাওয়ার চেষ্টায় প্রয়োজন বোধে কাঁসির শব্দের মাধ্যমে বৈঠার গতি বাড়ানোর নির্দেশ দেয়া হয় এবং সেই সঙ্গে গানের গতিও বেড়ে চলে। এ ছাড়া এই সময় গানের মধ্যে ‘হৈ হৈয়া’ এই ধরনের শব্দের ব্যবহারো দেখা যায়। এটিই সারি গানের বিশেষ বৈশিষ্ট্য। মাল্লাদের কণ্ঠ যখন দরাজ হয়, তখন বিশাল নদীবক্ষই যেন উন্মনা হয়ে ওঠে।

২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×