somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একজন সাহসী জেনেবা

২৯ শে মার্চ, ২০১১ দুপুর ১:৫০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোতে কিছু কিছু পেশা অবধারিতভাবে ‘পুরুষদের’ বলে ধরে নেওয়া হয়৷ এর ব্যতিক্রমও আছে৷ এরকম একটি ব্যতিক্রমের নাম জেনেবা। জেনেবা হকারের কাজ করে৷ সেনেগালের রাজধানী ডাকারের রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে সে পত্রিকা বিক্রি করে৷

সেনেগালে ছেলেদের পাশাপাশি একটি মেয়েও চেঁচিয়ে বিক্রি করে যাচ্ছে পত্রিকা৷ সে জেনেবা৷ বয়স ৩৭৷ পরিবারকে আর্থিকভাবে সাহায্য করতে সে বেছে নিয়েছে অত্যন্ত কঠিন এক কাজ, যে কাজে শুধুমাত্র পুরুষদেরই দেখা যায়৷ সেনেগালের ডাকারের রাস্তায় একটি মাত্র মহিলাকেই পত্রিকা বিক্রি করতে দেখা যায়- সে জেনেবা৷

সেনেগালে যে কেউই যেকোন চাকরির জন্য প্রস্তুত৷ কিন্তু সমস্যা হল সেখানে সহজে কাজ পাওয়া যায় না৷ সেনেগালের প্রায় এক তৃতীয়াংশেরও বেশি মানুষ বেকার৷ যে কোন কাজের জন্য হন্যে হয়ে ঘুরতে হয় বছরের পর বছর৷ তারপরেও কাজ পাওয়া যাবে এমন কোন নিশ্চয়তা নেই৷ ছেলে মেয়ে সবারই এক অবস্থা৷

রাজধানী ডাকারে সময় ভোর পাঁচটা৷ একদল পুরুষ রাস্তার ধারে বসে পেপার গুছিয়ে নিচ্ছে৷ টাইটেল, পত্রিকার নাম, দিন, তারিখ দেখে তারা সব ক্রমিক অনুসারে গুছিয়ে নিচ্ছে বিক্রির প্রত্যাশায়৷ সবার চোখে ঘুম জড়িয়ে রয়েছে৷ কেউই খুব একটা কথা বলছে না৷ সবাই রয়েছে পত্রিকাগুলো বিক্রি হওয়ার অপেক্ষায়৷ জেনেবাও তাদের মধ্যে একজন৷ পুরুষদের সঙ্গে সেও এই কঠিন পেশায় নিজেকে নিয়োজিত করেছে৷ জেনেবা জানায়, ‘‘আমি প্রতিদিন ভোর সাড়ে চারটায় বাসা থেকে বের হই৷ আমি কখন বাড়ি ফিরি? নির্ভর করছে সারাদিনের বিক্রি-বাটার ওপর৷ অনেক সময় পত্রিকা দেরি করে আসে, তখন কাজে বের হতেও অনেক সময় লেগে যায়৷ এমন ঘটনা প্রায়ই ঘটে।'' মূলত বেশির ভাগ প্রকাশনীই সময় মতো তাদের পত্রিকা দিয়ে যায়৷ শুধু বিপত্তিটা ঘটে তখনি যখন প্রকাশনী থেকে বিশেষ একটি পত্রিকা সময়মতো এসে না পৌঁছায়৷

এই ব্যতিক্রমী কাজে পরিবার থেকেও সে যথেষ্ট সাহায্য এবং সহযোগিতা পেয়েছে৷ যদিও ডাকারের রাস্তায় সেই একমাত্র মহিলা যে পেপার বিক্রি করে, তারপরেও তার বাবা-মা এ পেশা বেছে নেওয়ায় কোনোরকম বিরোধিতা করেননি৷ জেনেবা জানায়, ‘‘আমার বাবা প্রথমে কিছুটা চিন্তিত ছিলেন। কারণ থিয়ারোয়ে থেকে ডাকার অনেক দূরে৷ অনেক ভোরে একা বাড়ি থেকে বের হওয়া সেখানে নিরাপদ নয়৷ আমার বাবা প্রথমে কিছুতেই রাজি হননি৷ বেশ কিছুদিন তিনি আমার সঙ্গে বাড়ি থেকে বের হয়েছেন৷ এখনও তিনি প্রায়ই আমার সঙ্গে ভোরে বাসা থেকে বের হন, আমাকে এগিয়ে দিয়ে যান৷''

তবে শুধু পরিবারের উৎসাহই নয় ক্রেতারাও জেনেবাকে যথেষ্ট উৎসাহ দিচ্ছেন৷ নিজের কাজ সম্পর্কে জেনেবার মন্তব্য, ‘‘আমি খুবই আনন্দের সঙ্গে এই কাজটি করছি৷ যখন থেকে শুরু করেছি তখন থেকেই এ কাজ করতে আমার ভাল লাগতো৷ আমি এতদিন ধরে যে এ কাজ করে যেতে পারছি এ জন্য আমি আমার ক্রেতাদের কাছে কৃতজ্ঞ৷ তাদের বেশির ভাগই পুরুষ৷ তারা কখনোই আমাকে নিরুৎসাহিত করেননি৷ সবসময়েই আমাকে সাহস যুগিয়েছেন৷ ক্রেতারাই আমাকে বার বার বলেছেন এ কাজ করে যেতে৷ এখন আমার মনে হয়, আমি যদি কখনো বিয়ে করি, তারপরও আমি এ কাজ করে যাবো অথবা নিজেই বড় একটি পত্রিকার দোকান দেব৷''

দুপুর গড়িয়ে যাচ্ছে, জেনেবা এখনো রাস্তায়। ঐ শোনা যাচ্ছে জেনেবার ডাক। তার পেপার বিক্রি করা শেষ হয়নি। শরীর ক্লান্ত হয়ে গেছে, কিন্তু মন ভেঙ্গে পরেনি জেনেবার। কারণ হাতের শেষ পত্রিকাটিও যে বিক্রি করতে হবে। তাই ডাকারের রাস্তায় জেনেবার পথচলা আর থামেনা।

সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে মার্চ, ২০১১ দুপুর ১:৫২
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমরা কেন এমন হলাম না!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৪ ই মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪১


জাপানের আইচি প্রদেশের নাগোইয়া শহর থেকে ফিরছি৷ গন্তব্য হোক্কাইদো প্রদেশের সাপ্পোরো৷ সাপ্পোরো থেকেই নাগোইয়া এসেছিলাম৷ দুইটা কারণে নাগোইয়া ভালো লেগেছিল৷ সাপ্পোরোতে তখন বিশ ফুটের বেশি পুরু বরফের ম্তুপ৷ পৃথিবীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অভিমানের দেয়াল

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ১৪ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:২৪




অভিমানের পাহাড় জমেছে তোমার বুকে, বলোনিতো আগে
হাসিমুখ দিয়ে যতনে লুকিয়ে রেখেছো সব বিষাদ, বুঝিনি তা
একবার যদি জানতাম তোমার অন্তরটাকে ভুল দূর হতো চোখের পলকে
দিলেনা সুযোগ, জ্বলে পুড়ে বুক, জড়িয়ে ধরেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের গ্রামে মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি

লিখেছেন প্রামানিক, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩১



২৬শে মার্চের পরে গাইবান্ধা কলেজ মাঠে মুক্তিযুদ্ধের উপর ট্রেনিং শুরু হয়। আমার বড় ভাই তখন ওই কলেজের বিএসসি সেকেন্ড ইয়ারের ছাত্র ছিলেন। কলেজে থাকা অবস্থায় তিনি রোভার স্কাউটে নাম... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিকেল বেলা লাস ভেগাস – ছবি ব্লগ ১

লিখেছেন শোভন শামস, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৪৫


তিনটার সময় হোটেল সার্কাস সার্কাসের রিসিপশনে আসলাম, ১৬ তালায় আমাদের হোটেল রুম। বিকেলে গাড়িতে করে শহর দেখতে রওয়ানা হলাম, এম জি এম হোটেলের পার্কিং এ গাড়ি রেখে হেঁটে শহরটা ঘুরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

One lost eye will open thousands of Muslims' blind eyes

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ২:২৭



শিরোনাম'টি একজনের কমেন্ট থেকে ধার করা। Mar Mari Emmanuel যিনি অস্ট্রেলীয়ার নিউ সাউথ ওয়েলসের একটি চার্চের একজন যাজক; খুবই নিরীহ এবং গোবেচারা টাইপের বয়স্ক এই লোকটি যে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×