সেনেগালে ছেলেদের পাশাপাশি একটি মেয়েও চেঁচিয়ে বিক্রি করে যাচ্ছে পত্রিকা৷ সে জেনেবা৷ বয়স ৩৭৷ পরিবারকে আর্থিকভাবে সাহায্য করতে সে বেছে নিয়েছে অত্যন্ত কঠিন এক কাজ, যে কাজে শুধুমাত্র পুরুষদেরই দেখা যায়৷ সেনেগালের ডাকারের রাস্তায় একটি মাত্র মহিলাকেই পত্রিকা বিক্রি করতে দেখা যায়- সে জেনেবা৷
সেনেগালে যে কেউই যেকোন চাকরির জন্য প্রস্তুত৷ কিন্তু সমস্যা হল সেখানে সহজে কাজ পাওয়া যায় না৷ সেনেগালের প্রায় এক তৃতীয়াংশেরও বেশি মানুষ বেকার৷ যে কোন কাজের জন্য হন্যে হয়ে ঘুরতে হয় বছরের পর বছর৷ তারপরেও কাজ পাওয়া যাবে এমন কোন নিশ্চয়তা নেই৷ ছেলে মেয়ে সবারই এক অবস্থা৷
রাজধানী ডাকারে সময় ভোর পাঁচটা৷ একদল পুরুষ রাস্তার ধারে বসে পেপার গুছিয়ে নিচ্ছে৷ টাইটেল, পত্রিকার নাম, দিন, তারিখ দেখে তারা সব ক্রমিক অনুসারে গুছিয়ে নিচ্ছে বিক্রির প্রত্যাশায়৷ সবার চোখে ঘুম জড়িয়ে রয়েছে৷ কেউই খুব একটা কথা বলছে না৷ সবাই রয়েছে পত্রিকাগুলো বিক্রি হওয়ার অপেক্ষায়৷ জেনেবাও তাদের মধ্যে একজন৷ পুরুষদের সঙ্গে সেও এই কঠিন পেশায় নিজেকে নিয়োজিত করেছে৷ জেনেবা জানায়, ‘‘আমি প্রতিদিন ভোর সাড়ে চারটায় বাসা থেকে বের হই৷ আমি কখন বাড়ি ফিরি? নির্ভর করছে সারাদিনের বিক্রি-বাটার ওপর৷ অনেক সময় পত্রিকা দেরি করে আসে, তখন কাজে বের হতেও অনেক সময় লেগে যায়৷ এমন ঘটনা প্রায়ই ঘটে।'' মূলত বেশির ভাগ প্রকাশনীই সময় মতো তাদের পত্রিকা দিয়ে যায়৷ শুধু বিপত্তিটা ঘটে তখনি যখন প্রকাশনী থেকে বিশেষ একটি পত্রিকা সময়মতো এসে না পৌঁছায়৷
এই ব্যতিক্রমী কাজে পরিবার থেকেও সে যথেষ্ট সাহায্য এবং সহযোগিতা পেয়েছে৷ যদিও ডাকারের রাস্তায় সেই একমাত্র মহিলা যে পেপার বিক্রি করে, তারপরেও তার বাবা-মা এ পেশা বেছে নেওয়ায় কোনোরকম বিরোধিতা করেননি৷ জেনেবা জানায়, ‘‘আমার বাবা প্রথমে কিছুটা চিন্তিত ছিলেন। কারণ থিয়ারোয়ে থেকে ডাকার অনেক দূরে৷ অনেক ভোরে একা বাড়ি থেকে বের হওয়া সেখানে নিরাপদ নয়৷ আমার বাবা প্রথমে কিছুতেই রাজি হননি৷ বেশ কিছুদিন তিনি আমার সঙ্গে বাড়ি থেকে বের হয়েছেন৷ এখনও তিনি প্রায়ই আমার সঙ্গে ভোরে বাসা থেকে বের হন, আমাকে এগিয়ে দিয়ে যান৷''
তবে শুধু পরিবারের উৎসাহই নয় ক্রেতারাও জেনেবাকে যথেষ্ট উৎসাহ দিচ্ছেন৷ নিজের কাজ সম্পর্কে জেনেবার মন্তব্য, ‘‘আমি খুবই আনন্দের সঙ্গে এই কাজটি করছি৷ যখন থেকে শুরু করেছি তখন থেকেই এ কাজ করতে আমার ভাল লাগতো৷ আমি এতদিন ধরে যে এ কাজ করে যেতে পারছি এ জন্য আমি আমার ক্রেতাদের কাছে কৃতজ্ঞ৷ তাদের বেশির ভাগই পুরুষ৷ তারা কখনোই আমাকে নিরুৎসাহিত করেননি৷ সবসময়েই আমাকে সাহস যুগিয়েছেন৷ ক্রেতারাই আমাকে বার বার বলেছেন এ কাজ করে যেতে৷ এখন আমার মনে হয়, আমি যদি কখনো বিয়ে করি, তারপরও আমি এ কাজ করে যাবো অথবা নিজেই বড় একটি পত্রিকার দোকান দেব৷''
দুপুর গড়িয়ে যাচ্ছে, জেনেবা এখনো রাস্তায়। ঐ শোনা যাচ্ছে জেনেবার ডাক। তার পেপার বিক্রি করা শেষ হয়নি। শরীর ক্লান্ত হয়ে গেছে, কিন্তু মন ভেঙ্গে পরেনি জেনেবার। কারণ হাতের শেষ পত্রিকাটিও যে বিক্রি করতে হবে। তাই ডাকারের রাস্তায় জেনেবার পথচলা আর থামেনা।
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে মার্চ, ২০১১ দুপুর ১:৫২