somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কিংবদন্তির কোলে দুই বছর- সুমন জাহিদ (ঢাকা কলেজ-৯১) -তৃতীয় পর্ব

১৬ ই নভেম্বর, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:২৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমার জীবনের সবচেয়ে স্মরণীয় দিন কোনটি? কেউ যদি জিজ্ঞাসা করে, তবে বলবো ১৯৯০ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর, যেদিন কলেজে ছাত্র সংসদস নির্বাচন হলো। সকাল থেকেই ভোটগ্রহন শুরু। আমরা সবাই কনফিডেন্ট পূর্ণ প্যানেলে জীতবো! আমি প্রতি বুথে বুথে গিয়ে দরজার বাইরে থেকে আমার ব্যালট নম্বরসহ নিজের চেহারাটা দেখিয়ে আসি। যাতে ভোট দেয়ার মুহূর্তে কেউ যেন ভুলে না যায়। অশ্রু ভাইর বৃদ্ধ বাবা এলো। কলেজে ভোট গ্রহণের পরিবেশ দেখে খুবই খুশী। কলেজ থেকে বাসায় যাবার পথে অনেক মিষ্টি আর ফুলের মালা নিয়ে গেলেন। আমাদের বললেন রাতে যেন তার হাত থেকে মিষ্টি খেয়ে আসি। সন্ধ্যার পর ফলাফল বের হওয়া শুরু হলো। খুবই থমথমে গুমোট অবস্থা। পোলিং এজেন্টরা গোপনে ফলাফল সরবরাহ করছে। বেশ মন ভাঙারমত সংবাদ আসছে। নিঃশব্দ এক গভীর প্রতীক্ষা। কারো মুখে কোন কথা নেই। কোন বুথে আমরা ৫ ভোটে এগিয়ে তো অন্যবুথে ওরা ২৫ ভোটে আগানো। হঠাৎ খেয়াল করলাম ছাত্রদলের নেতারা একে একে সবাই কলেজ ত্যাগ করছে। কলেজের মুল ফটকের বাইরে শহরের বিভিন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের হাজার হাজার ছাত্রলীগের নেতা-কর্মী মধ্য রাত অবধি ফলাফলের অপেক্ষায় দাড়িয়ে আছে। সাইয়ীদ স্যার প্রধান নির্বাচন কমিশনার। অবশেষে মাইকে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের মুখ থেকে ঘোষিত হলো চূড়ান্ত ফলাফল। গড়ে ৩০/৪০ ভোটে হেরে যাচ্ছে সবাই। প্রথম দু তিনটি ফল ঘোষণা হওয়ার পরেই গগণ বিদারী কান্নায় জেগে উঠলো ক্যাম্পাস। সায়ীদ স্যারের গাড়ীটি পোড়ানো হলো। কারো কথা কেউ শুনছে না। শুধুই কান্নার শব্দ। এত আবেগ, এত কান্না, এত চিৎকার আমি কোনদিন দেখিনি। কেউ একজন এসে আমাকে কানে কানে বললো একমাত্র তুইই জিতেসিস। আস্তে আস্তে খবরটি ছড়িয়ে পড়লো। অশ্রুর সমুদ্রে তা কোন প্রভাব ফেললো না। ছাত্রলীগের কয়েক নেতা আমাকে জড়িয়ে চিৎকার করে কাঁদছে। ব্যক্তিগত বিজয়ের সংবাদে আমার কান্নার স্বর আরো তীব্র হলো। বিশ্বাস করুন এমন বিজয় আমি চাই নি। আমার বাবার মৃত্যুতেও এতটা কাঁদিনি আমি!

কলেজে ছাত্রলীগের পরাজয়ের মূল কারণ হিসেবে সবাই জসিম গ্রুপকে দায়ী করা হলো। ওরা কলেজের আমতলায় আড্ডা দিতো। ওদের নাম দেয়া হলো আমতলা গ্রুপ। সন্দেহের আঙ্গুল কিছুটা ফারুক ভাইর দিকেও। যেহেতু আমি একা জিতেছি অতএব ফারুকের গেটিস হিসেবে অনেকের কাছে আমিও সন্দেহের উর্ধ্বে নই। আজ দুইযুগ পরে যখন গ্রুপিং এর দিনগুলোর কথা ভাবি মজাই লাগে। তবে ব্যক্তিগতভাবে আমি ছাত্রলীগের কোন নেতাকেই নেতিবাচক কোন রোল প্লে করতে দেখিনি। ছাত্রদল নির্বাচনের রাত থেকে কলেজ থেকে বিতারিত। নির্বাচিত নেতারাও কলেজে আসতে পারছে না। আমি একা সংসদে গিয়ে কি করবো? পদত্যাগ করতে চাইলাম। আমার নেতারা বললো তুমি পদত্যাগ করলে কিই বা এমন আসে যায়! একাই থাকো সংসদে, অন্তত তোমার কাছ থেকে তো সংসদের ভিতরের সংবাদগুলো পাওয়া যাবে! বেশকিছুদিন পর নির্বাচিতরা আসলেন।

প্রিন্সিপ্যাল নাজির উদ্দিন আহমেদ স্যার খুবই দক্ষ ও দূরদর্শী ছিলেন। আমাকে ডেকে নিয়ে বললেন তুমিই হচ্ছো একমাত্র যক্ষের ধন, নিরপেক্ষ সহাবস্থানের স্বার্থে তোমার স্বাধীনতায় কেউই হস্তক্ষেপ করবে না। ভিপি সপুভাইকে স্যার ডেকে আনলেন। সপু লোকটি সম্পর্কে আমার আগে একটু মিশ্র ধারণা ছিল। সপুভাই আমার সাথে কোলাকুলি করলেন। বললেন সুমন যে কোন সমস্যায় পড়লে তুমি আগে আমার কাছে আসবে, আমার সমাধানে যদি তুমি সন্তুষ্ট না হও তখন তুমি সভাপতির (প্রিন্সিপ্যাল) কাছে আসবে। সত্যি কথা বললে আমার সহযোদ্ধা ছাত্রলীগের ভাই বন্ধু অনেকে বিশ্বাস করতে চাইবে না। তবু বলছি সপুভাইর বিরুদ্ধে কোন নালিশ দিতে আমার কোনদিন সভাপতির কাছে আসতে হয় নি। অনেক বড় বড় স্পর্ধা দেখিয়েছি কোনদিন কেউ আমাকে চার্জ করেনি। কলেজে যেদিন আমরা অভিষিক্ত হলাম ব্যারিষ্টার মইনুল ইসলাম প্রধান অতিথি ছিলেন। অনুষ্ঠান শেষে পপগুরু আজম খানের কনসার্ট ছিলো। ‘আনন্দ ধ্বনি বাজাও’ নামে বেশ চমৎকার একটি প্রকাশনা বের করলাম। লিটু ভাই হাতে ডিজাইন করে দিলেন। ঢাকায় তখন ‘কালার ডটস’ নামে পল্টনের একটি প্রতিষ্ঠান অটো কালার সেপারেশন মেশিন এনেছে। প্রথমে ড্রাম স্ক্যানকরে পরে ইমেজ সেটারে অটো কালার সেপারেশন হয়ে আউটপুট (পজেটিভ) বের হয়। আজিব কারবার। আগে এটি ফিল্টার দিয়ে ক্যামেরায় সেপারেশন করতে জান বেরিয়ে যেত এবং রেজাল্ট ৫০% ও আসতো না। সবার বাণী ও নতুন সংসদের প্রতি আশাবাদ সম্বলিত লেখাগুলো নিয়ে স্যুভেনীড় ছাপানো হয়েছিল। আমার সম্পাদকীয়তে শেষ লাইনটি ছিল ‘সবাইকে মুজবীয় শুভেচ্ছা’। তদুপরি অনুষ্ঠানের দিন বঙ্গবন্ধুর একটি ছবি সম্বলিত টি-শার্ট পরে তার উপরে সাদা একটি পাতলা জ্যাকেট পরেছিলাম। জ্যাকেটটির চেইন খুলে মঞ্চ ও তার আশেপাশে ঘোরাঘুরি করছিলাম। এটি ছিল আসলে একটি এসিড টেষ্ট। দেখিনা প্রতিক্রিয়াটা কেমন হয়! পিছন থেকে ছাত্রদলের বেশ কয়েকজন নেতা উস্কানি দিচ্ছিল। কিন্তু সপু ভাইর কারনে কেউ কিছু বলার সাহস পায় নি। এখানে উল্লেখ্য জিএস জাকির ভাইর সাথে আমার আগে সুসম্পর্ক; আর এজিএস সোহাগ আমার ব্যক্তিগত বন্ধু। যদিও সোহাগের বোকা বোকা চেহারার কারনে অনেক বন্ধুরই ওর সম্পর্কে উঁচু ধারণা নেই। আসলে সোহাগ খুবই পলিটিক্যাল ও মেচিউরড ছেলে; না মিশলে আমিও হয়তোবা টের পেতাম না। সোহাগও বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের পাঠ চক্রের সদস্য। পরবর্তিতে সংসদের বিভিন্ন কাজে ও আমাকে নিরংকুশ সমর্থন দিয়েছিল। এরই মধ্যে ৯০-এর আন্দোলনের দামামা বাজা শুরু হলো। সব কাজ-কর্ম-ক্লাশ ফেলে শুধু মিছিল আর মিছিল। নূর হোসেনের মৃত্যুর মধ্যদিয়ে আন্দোলনে গতি আসলো। সব ছাত্র সংগঠন পারস্পারিক স্বার্থ ভুলে ‘ছাত্র ঐক্য পরিষদ’ গঠন করলো। ঐক্য পরিষদের ব্যানারেই সকল মিছিল মিটিং হয়। অভি-নীরু এরশাদের সাথে আঁতাত করে জেল থেকে দসখৎ দিয়ে বের হলো। আমরা সকাল হলেই মধুর ক্যান্টিন, সন্ধ্যায় পার্টি অফিস ও রাতে কলেজে এসে মিছিল করি।

আন্দোলন যখন তুঙ্গে তখন কলেজের সামনে সরকারী ব্যাংক-অফিস-গাড়ি ভাংচুর করা শুরু করলাম। নিউ মার্কেটের গাড়ি পার্কিংয়ে একদল ওৎ পেতে থাকে কখন একটা সরকারী গাড়ী পাওয়া যায়। একটি আর্মির গাড়ী আসলো। কায়কোবাদভাই গিয়ে বললো ‘এক্সকুয়িজ মি, গাড়ী থেকে নামুন, আমরা একটু গাড়ীটা পুড়াবো’। নব্বইর আন্দোলনে আমরা যেন ব্রিটিশ বিরোধী অগ্নিযুগের গন্ধ পেয়েছিলাম। মৌসুমী প্রিন্টার্সের এক কর্ণারে বসে কিছু শক্তিশালী হাতবোমা তৈরী করা হয়েছিল। দড়ি দিয়ে বোনা বলের মত হাত বোমা। আমাদের দায়িত্ব দেয়া হলো সাইন্স ল্যাবরেটরির পুলিশ বক্সে এটি চার্জ করতে হবে। অলোকদা’র নেতৃত্বে কয়েল প্রযুক্তিতে টাইম বোমের মত ওটির বিস্ফোরন ঘটনা ঘটেছিল। কয়েল প্রযুক্তির টাইম বোম মানে হচ্ছে এক মিনিট, পাঁচ মিনিট, কিংবা আধা ঘন্টা ধরে জ্বলবে এমনভাবে মশার কয়েলগুলো ভেঙে রাখা হতো। কয়েলটি জ্বালিয়ে বোমার সাথে টেপ দিয়ে লাগিয়ে দেয়া হতো। যথা সময়ে আগুনের স্পর্শ পেলে বোমাটি বিষ্ফোরিত হবে। কম পয়সায় বেশ কার্যকর পদ্ধতি।

আন্দোলনের এক পর্যায়ে কলেজের সামনে প্রায় প্রতিদিনই পিকেটিং হয় এবং পুলিশের সাথে সংঘর্ষ বাঁধে। টিয়ারসেলের ঝাঁঝালো গন্ধের সাথে পরিচয় হয় তখন থেকেই। পুলিশ কলেজের ভিতরে টিয়ার গ্যাস ও ছোড়্ড়া গুলি ছুড়ে। দু একটা গুলি আমার পায়েও বিদ্ধ হয়েছিল। টিয়ার গ্যাসের সেল কুড়িয়ে আবার তা পুলিশের দিকেই নিক্ষেপ করতাম। একবার এক পাল্টা ধাওয়ায় পুলিশ পালাতে গিয়ে একজন কনস্টেবল হোঁচোট খেয়ে পড়ে গেল। তাকে ধরে কলেজে আনা হলো। তাকে হাল্কা পালিশ দিয়ে পোষাক খুলে রেখে দেয়া হলো সাথে তার রাইফেলটাও। পরে রাইফেলটি প্রিন্সিপ্যালের কাছে জমা দেয়া হয়। কলেজের সামনে প্রতিদিনই পিকেটিং হয়, পুলিশের সাথে চলে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া। একদিন সন্ধ্যায় হঠাৎ করে শহরে কার্ফু জারি হলো; রাস্তায় নামানো হলো সেনা-বিডিআর-পুলিশের যৌথ বাহিনী।

জীবনে দেখা প্রথম কার্ফু। কার্ফু জারীর সাথে সাথেই স্বতস্ফূর্তভাবে কার্ফু ভেঙ্গে মিছিল বের হলো কলেজে। কাউকে মিছিলে ডাকা হয়নি অথচ দল মত নির্বিশেষে প্রতিটি সাধারণ ছাত্র হল ছেড়ে সেদিনের সান্ধ্য মিছিলে সামিল হয়েছিল। এ এক অভূতপূর্ব দৃশ্য। ৯০’র গণ অভ্যুত্থানের এটিই বোধহয় কার্ফুভাঙ্গা প্রথম মিছিল। মিছিলটি কলেজের প্রধান ফটকের দিকে এগোতে থাকলে যৌথ বাহিনী গুলি শুরু করে। আমরা দৌড়ে পালাতে থাকি। হলের ভিতরে এসে বিদ্যুতের মেইন সুইচ অফ করে দেই। খুব ভয় পেয়েছিলাম সেবার। যৌথ বাহিনী কলেজের ভিতর ঢুকে পুকুর পার পর্যন্ত এসে ফিরে যায়। ভাগ্য খুব সুপ্রসন্ন কেউ আহত হয়নি। রাতে হলের ডাইনিংয়ে খাবার খেলাম। রিয়াজ-আজাদ নামে সাউথ হোষ্টেলে ভীষণ বদ দুটি সতীর্থ ছিল। ওদের বিরুদ্ধে ইভ টিজিং, চাঁদাবাজী ও ছিনতাইয়ের অভিযোগ ছিল। কলেজে হেষ্টেলের নিরীহ ছাত্রদের উপরও গোপনে নির্যাতন চালাতো। কার্ফুর ভিতরেই সংবাদ পেলাম ও একটি রিভারবল দেখিয়ে নর্থের এক ছাত্রকে আজ শাসিয়েছে। নর্থ থেকে সোহাগের নেতৃত্বে মাইনুল, মতিন, বিপ্লবসহ বেশ কিছু বন্ধু এসেছে। নওগার শহীদ মুক্তিযোদ্ধার সন্তান শাহেদ ও বরাত নামে খুলনার অসীম সাহসী এক বন্ধু ছিল সাউথে। সবাই মিলে ধাওয়া দেয়া হল রিয়াজ-আজাদকে। নিরীহ বন্ধু সন্দ্বিপের হাশেম গণ-ধোলাই উদ্বোধণ করলো। দুজনেই ভালো ধোলিত হলো, আজাদ একটু বেশী। আহত অবস্থায় রিয়াজ-আজাদ কার্ফুর ভিতরে উত্তরের গেট দিয়ে দৌড়ে পালালো। রিয়াজ আর কোনদিন কলেজে ফিরেনি। আর আজাদ তারপর থেকে ভদ্র হয়ে গেল। ২ ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ তারিখ রমনা রেস্তরায় আমাদের ৯১ ব্যাচের প্রথম পুনর্মিলনী অনুষ্ঠান করেছিলাম। প্রায় দুই শতাধিক বন্ধু তখন একত্রিত হয়েছিলাম ২২ বছর পর। প্রায় সবাই বেশ প্রতিষ্ঠিত। হিরক, নাজমুল, শুভ, সোহেলসহ বেশ কিছু বন্ধু অকালেই চলে গেলেন আমাদের ছেড়ে। কয়েক মাস আগে আমাদের হ্যান্ডসাম হিরো মাসুদ ও চলে গেলেন। আজাদের মুখে সংবাদ পেলাম সেই রিয়াজ আর ভালো হয়নি। বিয়ের সুযোগে আমেরিকা গিয়ে সেই স্ত্রীকেই আবার হত্যা করে এখন আমেরিকার কারাগারে। আর সেই নিরীহ বন্ধু হাশেমকেও আর দেখেনি কেউ। অনেক পড়ে শুনেছি ২৯ এপ্রিলের ঘূর্ণিঝড় নাকি হাশেমকেও কেড়ে নিয়েছে!

অলি ভাই, মান্নান ভাই, কুদ্দুস ভাই, ইয়াসিনসহ এই ৪/৫ জন মানুষ ছিলেন সাউথ পরিবারের স্থায়ী সদস্য। হলের এই কয়জন কর্মচারীর জন্যই দুই বছর সবাই অল্প পয়সায় তিনবেলা খেয়ে পড়ে ভালোই ছিলাম। রাত ৯-১০ টার ভিতরে ডাইনিং বন্ধ হলেও গভীর রাত পর্যন্ত খাবার নিয়ে অপেক্ষা করতো অলি ভাই। আমার বন্ধু আপ্যায়নের জন্য নিজের খাবারও দিয়েছেন অনেকদিন। কোনদিন বকশিসও দাবী করেনি। সত্যিকথা বলতে কি সদ্য কৈশরোত্তীর্ণ কিছু ঘরছাড়া বালকের এই ইট-পাথরের কঠিন শহরে মায়ের অভাব কিছুটা হলেও তারা পূরোন করেছিলো। সেজন্যই হয়তো ডবল মা হিসেবে তাদের মামা বলে ডাকে সবাই। সকাল বেলা মামারা মহন চাঁদ থেকে পরাটা, ডাল-ভাজি-হালুয়া নিয়ে এসে রুমে রুমে পৌছে দেয়। হলে সকালে কোন নাস্তা হয়না। কিন্তু কার্ফুতে তো সবই বন্ধ, খাব কি? বাসায় থাকে পরিচিত এমন অনেক বন্ধু-সহযোদ্ধা হলে আটকা পড়েছে। সকালবেলা ডাইনিংয়ে সাধারণ ছাত্রদের জন্য ভাত রান্না হলো। আর আমরা কয়েকজন চললাম বাড়তি খাবারের খোঁজে। খুব সাবধানে আমরা কলেজ থেকে বেড়িয়ে নায়েমে গেলাম। নায়েমের ভিতরের ক্যান্টিন আর দোকানে যা খাবার পেলাম কিনে নিয়ে এলাম। পরদিন সন্ধ্যার দিকে বোধহয় কয়েক ঘন্টার জন্য কার্ফু শিথিল করা হলো। হলগুলো ভ্যাকেন্ট করে দিলো। হল ছেড়ে সবাই বাড়ী যেতে থাকলো। আমার বন্ধু জয় এসে আমাকে ওর বাসায় নিয়ে গেল। জয় খুবই মেধাবী ও চৌকষ ছেলে, বাসা শুক্রাবাদে। এসএসসিতে জয় মেধাতালিকায় ৫ম স্থান অধিকর করেছিল। ওর নানা ইয়ার মোহাম্মদ খান গ্রীন রোডের জমিদার ও বঙ্গবন্ধু-ভাষানীর খুবই ঘনিষ্ঠজন ছিলেন। আওয়ামী মুসলিম লীগের প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে তিনি অর্থযোগান দিয়েছেন। তিনি আওয়ামী মুসলিম লীগের ও পরবর্তিতে আওয়ামীলীগের প্রতিষ্ঠাতা অর্থ সম্পাদক। তার অর্থেই মাওলানা ভাসানী আওয়ামীলীগের মুখপাত্র হিসেবে দৈনিক ইত্তেফাক প্রতিষ্ঠা করেন। জয়ের বাসায় আগে থেকেই আমাদের নিয়মিত আড্ডা ছিল। ৯০’র আন্দোলন করার জন্যই জয় আমাকে বাসায় নিয়ে এসেছে। প্রতিদিন খুব সকাল বেলা জয়, আমি ও ওর ছোটভাই রুবেল ফুটবল খেলতে রাজাবাজারের টিএন্ডটি মাঠে যাই। ফেরার পথে পিকেটিং করতে করতে বাসায় ফিরি। সকাল বেলা নাস্তা করে আবার চলে যেতাম কলেজে বা মধুতে। ডাঃ মিলন যেদিন মারা যায় সেদিনের কথা ভোলার নয়। দিনটি ছিল ২৭ নভেম্বর। যার যা কিছু আছে তাই নিয়ে সেদিন সবাই বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে এসেছিল। পাখী মারার এয়ার গানও অনেকে এনেছে। স্বৈরাচার বিরোধী শ্লোাগান ও ‘এরশাদের জাউরা পোলা-নীরু শালা, অভি শালা’ বলে ওদের ধাওয়া দেয়া হলো। নীরু-অভিসহ ছাত্রসমাজের সব গুন্ডা-সন্ত্রাসীরা দোয়েল চত্বর দিয়ে পালালো। পালানোর সময় ওদের গুলিতে ডাঃ মোস্তফা জালাল মহীউদ্দিনের কোলে রিক্সায় বসে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা গেলেন ডাঃ মিলন। শহীদ ডাঃ মিলনের বুকেবিদ্ধ গুলিটিই ছিল স্বৈরাচারের কফিনে বিদ্ধ শেষ পেরেক। তারপরের ইতিহাসতো সবার জানা। শুরু হলো স্বৈরাচার পতনের কাইন্টডাউন।

৯০’র আন্দোলনের পরে আবার আমরা ক্লাশে ফিরে যাই। তখন হুশ হলো লেখা পড়াতো কিছুই করা হয় নি। আমাদের ফার্স্ট ইয়ার ফাইনাল হয়ে গিয়েছিল নির্বাচনের আগেই। সবাই ঠিকমত অংশগ্রহণও করে নি। কিন্তু কলেজ কর্তৃপক্ষ সবাইকে দ্বিতীয় বর্ষে উন্নিত করে। ৬ ডিসেম্বর এরশাদের পতনের পর ডিসেম্বরেই কর্তৃপক্ষ টেষ্ট পরীক্ষার নোটিশ টানিয়ে দেয়। আমরাতো মহা ক্ষুব্ধ। ক্লাশই শুরু করতে পারলাম না এখন আবার পরীক্ষা। যে করেই হোক পরীক্ষা বানচাল করতে হবে। পরীক্ষা শুরুর আগের রাতে অফিসরুম ভেঙ্গে পরীক্ষার সাদা খাতালুট করা হলো। কিছু ফেলে দেয়া হলো পানিতে। বাকী খাতাগুলো ছেলেরা রুমে নিয়ে যায় ব্যক্তিগত খাতা বানানোর জন্য। শেখ সাহেব বাজারের একটি লেটার প্রেস থেকে শিশার ব্লক এনেছিলাম। ওগুলো হাতুরি দিয়ে তালার ভিতরে ঢুকিয়ে সিলগালা করা হলো। কিছু জর্দার কৌটার মধ্যে বালি ঢুকিয়ে, উত্তমরূপে স্কশটেপ পেচিয়ে তালার সাথে ঝুলিয়ে দেয়া হলো। ব্যাকডেটেড স্যাররা ককটেল নাও চিনতে পারে ভেবে দু’একটির উপর ককটেল, হাতবোমা ইত্যাদি শব্দও লিখে দেয়া হলো। সকালবেলা মজা দেখতে ট্রাউজার পরেই কলেজে গেলাম। গিয়ে দেখি ফায়ার ব্রিগেড, বোম স্কোয়াডসহ শতশত পুলিশ কলেজে গিজ গিজ করছে। কলেজের কোরিডোরে ফিতা দিয়ে ডেনজেরাস জোন ঘোষণাকরে সকলের প্রবেশ নিষেধ করেছে। তারা বিশাল বিস্ফোরক নিরোধক গ্লাস, হেলমেট, হ্যান্ড গ্লোবস পরে প্রতিটি তালা ও জর্দার কৌটার পরীক্ষা করে সিজার লিস্ট করছে। আমাদের প্রিন্সিপ্যাল স্যার খুব ভালো মানুষ ছিলেন। সবকিছু বুঝেও তিনি চেঁপে গিয়েছিলেন। কারো বিরুদ্ধে কোন অভিযোগও গঠন করা হয়নি। টেষ্ট ছাড়াই সবাইকে ফাইনাল পরীক্ষা দেয়ার অনুমতি দিলেন।

আমার অনেক ফটোগ্রাফার বন্ধু ছিল। ওদের কাছ থেকে ছবি সংগ্রহ করে ৯০’র আন্দোলনের উপর প্রথম আলোক চিত্র প্রদর্শনী করেছিলাম ছাত্র সংসদের উদ্যোগে। আমাদের ছাত্র সংসদ কলেজে প্রচুর কাজ করেছিল। বর্তমান ছাত্র সংসদের রুমটি আগে কলেজ ক্যান্টিন ছিল। পুকুরের পূর্বপাশে দৃষ্টি নন্দন একটি ক্যান্টিন তৈরী করে সাবেক জায়গাটি সংস্কার করে ছাত্র সংসদ ভবন করা হলো। কলেজে বৃক্ষ রোপন করেছিলাম। কলেজের মসজিদটিও আমাদের সংসদের করা। নতুন হোস্টেল নির্মানের উদ্যোগও তখন নেয়া হয়। কলেজ বাস দুটিও আমাদের সময়ে পাওয়া। এছাড়া প্রতিটি জাতীয় দিবস উদযাপন, সাহিত্য-সাংস্কৃতিক-নাট্য সপ্তাহ, বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতাসহ সবই হয়েছিল। বিএনপি সরকার ক্ষমতায় থাকার কারনে ছাত্র সংসদ এ কাজগুলো সহজে করতে পেরেছিল।

আমাদের সময়েও ভর্তি বানিজ্য ছিল। নেতারা লাখ লাখ টাকা আয় করেছে। জয়ের ভাই রুবেল নাছেরবান্ধা ওর এক বন্ধুকে ঢাকা কলেজে ভর্তি করতে হবে। সে ঢাকা কলেজে চান্স পায়নি। ভর্তি হয়েছে নটরডেমে। আমি কখনও এই ধরণের কাজ করিনি। আমাদের ভাইস প্রিন্সিপ্যাল ছিলেন খুবই নির্ঝঞ্ঝাট স্বল্পভাষি সজ্জ্বন। প্রিন্সিপ্যাল স্যারকে না বলে ভাইস প্রিন্সিপ্যাল স্যারের কাছে গেলাম বুদ্ধি নিতে। স্যার আমাকে প্রিন্সিপ্যাল স্যারের কাছে না পাঠিয়ে নিজ দায়িত্বেই ছেলেটিকে ভর্তি করে নিলেন। স্যার শুধু বললেন আমি তোমাকে পছন্দ করি বলেই কাজটি করে দিলাম, কাউকে কিন্তু বলো না! কারো পছন্দিত হওয়ার মত গুণাবলিও আমার আছে শুনে একটু বিব্রত ও বিষ্মিত হয়েছিলাম। আব্দুল্লাহ আবু সায়ীদ স্যার ছিলেন আমার বার্ষিকী বিভাগের ভারপ্রাপ্ত শিক্ষক। যার কারনে আমি অনেকটা ভারমুক্ত ছিলাম। স্যার পাশে থাকলে একটি মানসম্পন্ন বার্ষিকী বের করা কোন ব্যাপারই হবে না। হঠাৎ করেই স্যার স্বেচ্ছা-অব্যহতি নিয়ে বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রে পুরোপুরি মনোনিয়োগ করলেন। এদিকে শামীম আপা অনেক আগেই কলেজ ছেড়ে লন্ডন চলে গেলেন। আমি তো অকুল সমুদ্রে। এ দিকে ফাইনাল পরীক্ষা সমাগত। প্রিন্সিপ্যাল স্যারকে বললাম, স্যার আমার কি হবে! স্যার বললেন অস্থির হওয়ার কোন দরকার নেই। মনদিয়ে পড়াশুনা করো, আগে পরীক্ষাটা দাও, তারপর দেখা যাবে। সায়ীদ সাহেবের জায়গায় যিনি আসছেন তিনিও খুব ভালোই হবেন আমার বিশ্বাস। টেনশনে পড়াশুনাও মন দিতে পারছি না। এর ভিতর একদিন স্যার আবার ডেকে পাঠালেন। প্রিন্সিপ্যাল স্যারের রুমে ঢুকলাম।

দেখি অনেক মানুষ। স্যার আমাকে বসতে বললেন। আমি দূরে একটি চেয়ারে বসে আছি। স্যারের পাশে চেয়ারে বসে কবি কবি চেহারার এক ভদ্রলোক বঙ্গবন্ধুর মত কালো মোটা ফ্রেমের চশমা পড়ে সেই ঢঙে পাইপ টানছে। মাথায় শামসুর রাহমানের মত কাশবন। কিছু কাঁচাও আছে। ফতুয়া পরিহিত, কাঁধে একটি শান্তি নিকেতনি ব্যাগ ঝোলানো। দেখলেই পায়ে হাত দিয়ে আশীর্বাদ নিতে ইচ্ছা করে। একে একে রুমটি পাতলা হলো। স্যার আমাকে কাছে ডাকলেন। বললেন সুমন আলাপ করিয়ে দেই, তুমি তার নাম শুনতে পারো, উনি হচ্ছেন অধ্যাপক আখতারুজ্জামান ইলিয়াস। তোমার বার্ষিকী বিভাগের নতুন ভারপ্রাপ্ত অধ্যাপক। আমার মাথা তখন ভোঁ ভোঁ করে ঘুড়ছে। বাংলা সাহিত্যের প্রধানতম কথা সাহিত্যিক, চিলেকোঠার সেপাইখ্যাত আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের সামনে আমি। আর তিনিই আমার নতুন অভিভাবক। কোনকিছু বুঝতে না দিয়েই আমি স্যারকে কদমবুচি করে ফেললাম। স্যার অপ্রস্তুত হয়ে দাড়িয়ে বললো আরে আরে পাগল ছেলেটা করে কি! এত শ্রুতি মধুর, মিষ্টি সে ভাষা আমি আর কারো শুনিনি। কবি আসাদ চৌধুরী কিংবা সৈয়দ হাসান ইমামের কন্ঠ আমার কাছে খুব শ্রুতিমধুর লাগে। পেশাদার আবৃত্তিকার হয়েও কিন্তু তাদের আটপৌরে কন্ঠ এত টা মিষ্টি নয় যতটা ইলিয়াস স্যারের। স্যার রুম থেকে বেরিয়ে আমাকে তার বাংলা বিভাগে নিয়ে গেলেন। সোলেয়মান নামক একজন পিয়ন ছিল বাংলা বিভাগে। স্যার বললেন সোলেয়মান আমাদের চা দাও। আমি একটু সুমনের সাথে গল্প করি। স্যার আমার সম্পর্কে পুরোটা শুনলেন। বাড়ির কথা, পরিবারের কথা, ব্যক্তিগত পছন্দ অপছন্দের কথা, বার্ষিকী নিয়ে পরিকল্পনার কথা, পরীক্ষার প্রস্তুতির কথা...। স্যারের কাছ থেকে উঠতে ইচ্ছে হয় না। অনেকক্ষণ গল্প করলাম। স্যার পরিশেষে বললেন তুমি শুধু লেখা আহ্বানের একটি নোটিশ করে যাও। লেখাগুলো আসতে থাকুক। মাথা থেকে সব ঝেড়ে ফেলে পড়তে বসো, মাত্রতো কয়েকটা মাস।

রুমে ফিরে মার্কার দিয়ে কাগজে লিখে দরজায় একটা নোটিশ টানিয়ে দেই। তাতে লেখা ছিল ‘সামনে পরীক্ষা, আসুন একটু আড্ডা দেই!’ রিটন ভাইর সেই টেবিল গ্লাশ সুরক্ষার টেকনিক। ভালোই কাজ দিলো। খাটের নীচ থেকে ধুলো পড়া সব বই খাতা পরিস্কার করে টেবিলে তুললাম। প্রথম যে কয়মাস বাবা মায়ের আদর্শ ছেলের মত জীবন কাটিয়েছি তখন পাবলিক লাইব্রারীতে গিয়ে কিছু হ্যান্ড নোট তৈরী করেছিলাম। মানবিকের ছাত্র হিসেবে যুক্তিবিদ্যা না নিয়ে অর্থনীতি নিয়েছিলাম। ভালো মার্কস পরিপন্থী সিদ্ধান্ত। নীলক্ষেত গিয়ে প্রয়োজনীয় সকল পাঠ্য বই কিনলাম। সাথে বিগত কয়েক বছরের প্রশ্নমালাসহ কয়েকটি গাইড বুকও কিনলাম। এতপড়া কীভাবে পড়বো। এর ভিতরে বাংলা ইংলিশে কিছু ডাহা মুখস্ত বিদ্যাও রয়েছে যাতে আমি খুবই দুর্বল। কয়েকটি শর্টকাট পদ্ধতি আবিস্কার করলাম। স্কুলে বসে কেনা ওয়াকম্যানটি তখনও আমার কাছে অক্ষত অবস্থায়ই ছিলো। ব্রড কোশ্চেনগুলো যেভাবে সবাই নোট করে, মানে অনেক গুলো উত্তরপত্র সামনে রেখে প্রতিটি থেকে চৌম্বুক অংশ কম্পাইল করে নোট তৈরী করে, আমিও সেইভাবেই করলাম তবে সবারমত লিখলাম না আমি নিজ কন্ঠে সরাসরি রেকর্ডকরলাম। দোকান থেকে উন্নতমানের ৯০ মিনিটের কয়েকটি টিডিকে ব্ল্যাংক ক্যাসেট কিনে এনেছিলাম। লিখে রেকর্ড করার সময় কই। মুখস্ত নির্ভর প্রশ্নগুলো সবই এভাবে রেকর্ড করলাম। তারপর বাইরে কোথাও গেলে ওগুলোই হেড ফোনে শুনতে থাকি। সবাই মনে করে গান শুনছি। হেডফোন কানে দিয়ে তাস ও খেলেছি। পদ্ধতিটি বেশ কার্যকারী ছিল। নীচতলা থেকে রুম বদল করে তিনতলায় শাখারী পট্টিতে উঠলাম। ডবল বেডের রুম। সুনামগঞ্জের রোজি নামে সায়েন্সের একটি ছেলে আমার রুমমেট। খুবই ভদ্র ছেলে। আমি ওয়াকম্যানের সাথে বড় স্পিকার লাগিয়ে হাউস টিউটর রফিক স্যারের বাসার দিকে মুখ করে গান শুনতাম। রফিক স্যার স্কাউট করতেন। ছাত্ররা ছিলেন তার জান অন্তপ্রান। স্যারের বউয়ের হাতে রান্না খায়নি এমন ছেলে হোস্টেলে কমই ছিল। বন্যা নামের স্যারের এক বোন ছিল। তার সাথে একটু প্রেম প্রেম ভাব হয়েছিল বোধহয়। কিন্তু বিখ্যাত লোকের প্রেম করার সময় কোথায়। প্রেমতো করবো দেশের সাথে, মাটির সাথে, আদর্শের সাথে। সামান্য নারীর সাথে প্রেম করা কি আমার সাজে?

এরমধ্যে ৯১’র ২৯ এপ্রিল বাংলাদেশে ভয়াবহ ঘুর্ণিঝড় হলো। হাজার হাজার মানুষ মারা গেল। ছাত্র সংসদ থেকে প্রধানমন্ত্রীর ত্রানতহবিলে ১ লাখ টাকা জমা দেয়া হলো। আমার বার্ষিকী বিভাগের বাজেট বরাদ্দ হয়েছিল মাত্র ২৫ হাজার টাকা। সেখান থেকে ত্রানের জন্য আবার ৫ হাজার টাকা কেটে নেয়া হলো। আপত্তি করলাম না। বার্ষিকীর কাজ গোপনে গোপনে করছি। কানে যেহেতু ওয়াকম্যান আছে রোজই একবার কলেজে যাই। স্যাররা কেউ কেউ দেখে খুব দুঃখ পেল; ছেলেটার কয়দিন পর পরীক্ষা এখনও কলেজে বসে রাজা-উজির মারে, সব সময় মউজে মত্ত! একদিন বাংলা বিভাগের সোলায়মান এসে সংসদ রুমে খবর দিলো ইলিয়াস স্যার ডাকছেন। শুনলাম স্যারের এক বন্ধু এসেছে। দোতলায় বাংলা বিভাগে ঢুকলাম। ইলিয়াস স্যারের সাথে কয়েকজন শিক্ষক ছিলেন, আলেয়া ম্যাডাম, খুরশীদ জাহান, জামান স্যার প্রমুখ। সবাই আমাকে যথেষ্ট স্নেহ করেন। দু’একজনের কাছ থেকে খাওয়ার জন্য টাকা পয়সাও নিয়েছি। সবাই একটি লোককে কেন্দ্র করে গল্প করছে। খুবই আনইম্প্রিসিভ এক ভদ্রলোক। স্যারের চেয়েও পাওয়ারফুল কালো ফ্রেমের চশমা। বেশ কালো চেহারার ছিপছিপে শরীর কোনভাবেই স্মার্ট বলা যায় না। প্রথম দর্শনে ইলিয়াস স্যারকে দেখে যে অনুভুতি হয়েছিল তার ঠিক বিপরীত অনুভুতি। আমাকে দেখে স্যার বলে উঠলেন এই যে সুমন এসে পড়েছে, বসো। সোলায়মান সুমনকে চা দাও। ঐ ভদ্রলোকের দিকে তাকিয়ে বললেন এই হচ্ছে সুমন। সুমন উনি আমার বন্ধু, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করে। আমি ঠিক বুঝে উঠতে পারছি না এমন একজন আগন্তুককে কেন সবাই এতটা সমীহ করছেন। স্যার বলে উঠলেন ভদ্রলোক কিন্তু তোমারও খুব প্রিয় মানুষ আমি জানি, কিন্তু চিন না। তোমাকে সারপ্রাইজ দেয়ার জন্যই ডেকেছি। আমি স্যার ডেকে তার সাথে হ্যান্ডসেক করলাম, স্যার আর আমাদের সংকোচ বাড়ালেন না। বললেন উনি হচ্ছেন হাসান আজিজুল হক। আমার খুবই প্রিয় লেখক বাংলা ছোট গল্পের জীবন্ত দিকপাল হাসান আজিজুল হক।

মাথার উপর আকস্মিক বজ্রপাতেরমত হঠাৎ করেই পরীক্ষার রুটিন ঘোষণা করলো। সম্ভবত মে মাসের শেষ সপ্তাহ থেকে শুরু হবে। সবাই ভেবেছিলাম জুনের শেষ সপ্তাহে পরীক্ষা হবে। এখন কি হবে! ভূগোল, অর্থনীতি, পরিসংখ্যান আর মনোবিদ্যা আমার বিষয়; অধিকাংশ বইই আমার কেনা হয় নি। হলফ করে বলতে পারি শুধু আমি কিংবা আমার ছন্নছাড়া বন্ধুরাই নয় আমাদের কোন সহপাঠিই মে মাসে পরীক্ষা দেয়ার জন্য প্রস্তুত ছিল না। ঐদিন রাতেই নর্থ ও সাউথ হলের আমাদের সকল পরীক্ষার্থী সাউথের কমনরুমে একত্রিত হলাম। সবার দাবী পরীক্ষা পিছানোর। প্রিন্সিপ্যাল স্যারের কাছে গেলাম বুদ্ধি নিতে। কোন স্যারই কোন অবস্থায় পরীক্ষা পিছানোর আন্দোলনকে সমর্থন করে না। স্যারকে বুঝালাম এক ৯০’র আন্দোলনে ৬ মাস কারো পড়াশুনা হয় নি। তদুপরি মাত্র কয়েকদিন আগের ঘুর্ণিঝড়ে হাজার হাজার মানুষ মারা গেল। উপকুলীয় অঞ্চলের প্রায় সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কম বেশী বিধ্বস্ত। এ অবস্থায় কেমনে মে মাসে পরীক্ষার নোটিশ দিতে পারে? স্যারকে অনুরোধ করলাম বোর্ড চেয়ারম্যানের সাথে কথা বলতে। সাবেক প্রিন্সিপ্যাল আবুল হোসেন স্যার বোর্ড চেয়ারম্যান হিসেবে এরশাদের সাথে বিদায় নিয়েছে। নতুন চেয়ারম্যানকে স্যার ফোন দিলেন। প্রধান পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের সাথেও কথা বললেন। রাজী করাতে পারলেন না। সিদ্ধান্ত নিলাম আন্দোলনে যাব। বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রের আড্ডার বদৌলতে বিভিন্ন কলেজের বেশ কিছু ছাত্র-ছাত্রী আমাদের খুব ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিল। নটরডেমের রোমেল, তিতুমীরের মোখলেস, হলিক্রসের লায়লা, বিজ্ঞানের তুর্য..। ওরা সবাই নিয়মিত আড্ডা দিতে ঢাকা কলেজে আসতো; তদুপরি প্রত্যেকেই আমার নির্বাচনের সময়ও মেধা, শ্রম, সময় কিংবা অর্থ দিয়ে আমার পাশে দাড়িয়ে ছিল। ঢাকার প্রধান প্রধান কলেজগুলোতে গোপন মিটিং করে এলাম। মিছিলের প্রস্তুতি হিসেবে আগের রাতেই ফেস্টুন, ব্যানার ও স্মারকলিপি তৈরী হলো। খুব যুক্তিপূর্ণ কথামালা দিয়ে স্মারকলিপিটির ড্রাফট করলাম। তিনদিনের আল্টিমেটামের পর প্রেসক্লাবে মানব বন্ধন ও সচিবলায় ঘেরাওয়ের কর্মসূচিও ঘোষণা করা হয়েছিল স্মারকলিপিতে যেটি মিছিলের আগে সবাইকে পড়ে শোনানো হলো। সকলের সমর্থন নিয়ে আমরা প্রায় হাজার খানেক সহপাঠি মিছিল শুরু করলাম। সেই ঢাকা কলেজ থেকে পায়ে হেঁটে বকশীবাজার বোর্ড অফিস ঘেরাও করলাম। যদিও পথিমধ্যে প্রায় অর্ধেক মুখ হাওয়ায় মিলিয়ে গেল। তারপরও কয়েকশত পরীক্ষার্থী ছিলাম। কতক্ষণ শ্লোগান ও বক্তৃতাবাজী করা হলো। তারপর আমি, সোহাগ ও আরো কয়েকজন বোর্ডের চেয়ারম্যান ও পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের বরাবরে স্মারকলিপি প্রদান করলাম। পত্র-পত্রিকায় প্রেস রিলিজ পাঠালাম। খবর ছাপাও হলো অনেক জায়গায়। তিনদিনের আল্টিমেটাম শেষ হলো। কিন্তু কর্তৃপক্ষের কোন শীত গ্রীষ্ম নেই। অগত্যা নির্ধারিত দিনে আবার মানব বন্ধন ও সচিবলায় ঘেরাও কর্মসূচি শুরু হলো। এবার স্মারকলিপি দেয়া হবে শিক্ষামন্ত্রী বরাবর। শিক্ষামন্ত্রী তখন ডাঃ বদরুদ্দোজা চৌধুরী। আগেই জানতাম তিনিও ঢাকা কলেজের ছাত্র। পুলিশের কর্তাব্যক্তিরা আন্দোলনরত পরীক্ষার্থীদের প্রতিনিধি হিসেবে আমাদের দু’ তিনজনকে সচিবালয়ের অভ্যান্তরে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে নিয়ে গেলেন। কোন অপেক্ষা ছাড়াই মন্ত্রীর কক্ষে প্রবেশ করলাম। বেশ অমায়িক ও মিষ্টি ব্যবহার তার। স্মারকলিপিটি তার হাতে দিয়ে খুব অল্পকথার মধ্যে আমাদের যুক্তিগুলো উপস্থাপন করলাম। সাথে একটু ঠেস ও দিলাম ‘স্যার বিশাল এক স্বপ্ননিয়ে ৯০’র আন্দোলন করেছি, ৬ মাস রাজপথে থেকেছি, ক্লাশ করতে পারিনি, আমাদের আন্দোলনের কারনেই দেশে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা ফিরে এসেছে, আপনারমত ত্যাগী নেতাকে শিক্ষামন্ত্রী হিসেবে পেয়েছি; এখন যদি আপনারাই আমাদের ভুলে যান, আমাদের জীবনের এই চরম দুর্দিনে যদি পাশে না থাকেন তবে লক্ষ লক্ষ পরীক্ষার্থীর ফলাফল বিপর্যয় তথা জীবন ধ্বংসের দায় কিন্তু আপনার উপরই বর্তাবে!’ সামনে শিক্ষা-সচিবও বসা ছিলেন। স্যার হেসে দিয়ে বললেন ‘কথাতো ভালই বলতে জান’। সচিবের দিকে ইঙ্গিত করে বললেন ‘দেখতে হবে না কোন কলেজের ছাত্র? যাও আর রাজপথে থাকতে হবে না, মনদিয়ে পড়াশুনা করো, দেখি কি করা যায়!’। ব্যাস সিগন্যাল পেয়ে সরাসরি বি চৌধুরীর লেগে হাত দিয়ে কদমবুচি। চৌধুরী সাহেব মন দিয়ে দোয়া করলেন। হৈ হৈ করে বিজয়ীর বেশে ফিরে এলাম।

দুদিন পরে ঘোষণা হল-পরীক্ষা তিন মাস পিছিয়ে আগষ্টে নেয়া হয়েছে। ভেবেছিলাম এক মাস পিছাবে। সেখানে তিন মাস! জানে পানি এলো। ইতোমধ্যে সব বই ও নোট মোটামুটি গুছিয়েছি। এখন শুধু পড়ে যাওয়া। পড়াশুনা শুরু করলাম। দিন-রাত প্রায় ১৮ ঘন্টা পরিশ্রম করি। স্কুলে আমাদের এক বড়ভাই ছিলেন, তিনি মেট্রিক পরীক্ষার্থী হিসেবে উচ্চ শিক্ষার্থে ভিলেজ গমন করলেন। কিন্তু পরীক্ষার সময় হলে গিয়ে ‘ক’ লিখতে ভুলে গিয়েছিলেন। সুতরং হাত খোলারও একটা বিষয় আছে। এক মাসের একটি মিনি প্রস্তুতির পর চিন্তা করলাম যদি একটা ডামি পরীক্ষা দেয়া যায়, তবে কিছুটা টেনশন ফ্রি হওয়া যায়। কিন্তু কে হবে সেই পরীক্ষক? আমি আর শাহেদ দুই বন্ধু বেড় হলাম তেমন একটি কোচিং সেন্টারের খোঁজে। ধানমন্ডি আট নম্বরে ‘মিশাও’ নামের একটি কোচিং সেন্টার কে রাজী করালাম। তিন বন্ধুর নামের অদ্যাক্ষর দিয়ে আজিব এই ‘মিশাও’ শব্দটি তৈরি হয়েছে। দুদিন পরপর তারা পরীক্ষা নিবে, তাদের রেগুলার ছাত্রদের সাথে; দরদাম ঠিক করলাম।

একটা কি দুইটা পরীক্ষা দিলাম। কোচিং মালিক তিনবন্ধুর ভিতর ক্যাচাল বাঁধলে হঠাৎ একদিন বিনা নোটিশে মিশাও উধাও হয়ে গেল। তারপর গেলাম কলাবাগানের ই’হক কোচিংয়ের কর্ণধর ইমাদুল হকের কাছে। ই’হকে তখন এইচ এসসির কয়েকটি ব্যাচ। ‘মডেল টেষ্ট’ ট্রেন্ডটি বোধ হয় তখনও আবিস্কৃত হয় নি। ভদ্রলোক ভালোই মজা পাইলেন। ইনষ্ট্যান্ট তার শিক্ষকদের নিয়ে আমাদের সাথে মিটিং করলেন। দরদাম ও ঠিক হলো কিন্তু শর্ত দিল আরো ৮/১০ নিয়ে আসতে হবে। আমরা সানন্দে রাজী হলাম। আমার কবি বন্ধু পলাশ, সুব্রত, জুলফিকারসহ বেশ কয়েকজন বন্ধু যোগ দিলাম ফাইনালের এই ওয়ার্ম-আপে। ই’হকের রেগুলার ছাত্র-ছাত্রীরাও অনেকে যোগ দিলেন। বেশ কিছু সুন্দরীও ছিল। পলি, শিলা, নাজমা..। নাজমা ছিলো আকিজ গ্রুপের মেয়ে। এক শবে বরাতের রাতে গাড়ীতে করে এক টিফিনকারী খাবার পাঠিয়েছিল নাজমা। পরে অবশ্য আর কারো সাথেই যোগাযোগ রাখা হয়নি। বেশ ভলোভাবেই পরীক্ষাগুলো দিলাম। একমাত্র পরিসংখ্যান ছাড়া। কেননা পরিসংখ্যান কিছুই পড়া হয়নি। রুটিনে পরিসংখ্যানের আগে ১৫ দিন ছুটি আছে। পরিসংখ্যান নিয়ে বাজারে একটি প্রচলিত জোকস আছে। মিথ্যা তিন প্রকারের। মিথ্যা, ডাহা মিথ্যা ও পরিসংখ্যান। এই মহা-মিথ্যা বিদ্যা আমারমত সত্যবাদিদের আর কতটুকুই হৃদয়োঙ্গম হবে। তাই ওটির জন্য ছুটির ১৫ দিন বরাদ্দ রাখলাম।

এরমধ্যে হঠাৎ পরীক্ষার কয়েকদিন আগে কলেজে ছাত্রলীগ-ছাত্রদল মারামারি লাগলো। অনেক ছাত্র হল ছাড়লো। আমার কোন সমস্যা হওয়ার কথা নয়। এরমধ্যে দোস্ত শাকিল হলে এসে বললো তোর হলে থাকতে হবে না, আমার সাথে বাসায় চল, দুই বন্ধু একসাথে পরীক্ষা দিব। শাকিল একপ্রকার অধিকার খাটিয়েই আমাকে নিয়ে গেল। শাকিল দোহারের ছেলে। ফরিদাবাদ আইজি গেটে ওর নানার বাসা। ওখানে থেকেই ও পড়াশুনা করে। নানার মুল বাসার সামনে দোতলা একটা পুরনো ছোট বাড়ি। ওটার দুই তলার একটি চিলে কোঠায় শাকিল থাকে। বাংলা ফাইভের দাম সোয়া দুই টাকা থেকে বেড়ে পৌনে তিন টাকা হলো। সিগেরেটের খরচ কমানোর জন্য মিক্সার কিনলাম। এরিনমোর সুগা, মিক্সার মেশিন ও সিগার পেপার। জানতাম বঙ্গবন্ধুও খেত।
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মুসলিম কি সাহাবায়ে কেরামের (রা.) অনুরূপ মতভেদে লিপ্ত হয়ে পরস্পর যুদ্ধ করবে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪৯




সূরাঃ ৩ আলে-ইমরান, ১০৫ নং আয়াতের অনুবাদ-
১০৫। তোমরা তাদের মত হবে না যারা তাদের নিকট সুস্পষ্ট প্রমাণ আসার পর বিচ্ছিন্ন হয়েছে ও নিজেদের মাঝে মতভেদ সৃষ্টি করেছে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদে মসজিদে মোল্লা,ও কমিটি নতুন আইনে চালাচ্ছে সমাজ.

লিখেছেন এম ডি মুসা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সকাল ১০:২৩

গত সপ্তাহে ভোলার জাহানপুর ইউনিয়নের চরফ্যাশন ওমরাবাজ গ্রামের এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। লোকটি নিয়মিত মসজিদে যেত না, মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়েনি, জানা গেল সে আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসী ছিল, স্বীকারোক্তিতে সে... ...বাকিটুকু পড়ুন

গল্পঃ অনাকাঙ্ক্ষিত অতিথি

লিখেছেন ইসিয়াক, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ দুপুর ১:১২

(১)
মাছ বাজারে ঢোকার মুখে "মায়া" মাছগুলোর উপর আমার  চোখ আটকে গেল।বেশ তাজা মাছ। মনে পড়লো আব্বা "মায়া" মাছ চচ্চড়ি দারুণ পছন্দ করেন। মাসের শেষ যদিও হাতটানাটানি চলছে তবুও একশো কুড়ি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগে বিরোধী মতের কাউকে নীতি মালায় নিলে কি সত্যি আনন্দ পাওয়া যায়।

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১৮

ব্লগ এমন এক স্থান, যেখানে মতের অমিলের কারণে, চকলেটের কারণে, ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের কারণে অনেক তর্কাতর্কি বিতর্ক কাটা কাটি মারামারি মন্তব্যে প্রতিমন্তব্যে আঘাত এগুলো যেনো নিত্য নৈমিত্তিক বিষয়। ব্লগটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগার'স ইন্টারভিউঃ আজকের অতিথি ব্লগার শায়মা

লিখেছেন অপু তানভীর, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ১১:০৫



সামুতে ব্লগারদের ইন্টারভিউ নেওয়াটা নতুন না । অনেক ব্লগারই সিরিজ আকারে এই ধরণের পোস্ট করেছেন । যদিও সেগুলো বেশ আগের ঘটনা । ইন্টারভিউ মূলক পোস্ট অনেক দিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×