২০০২ সাল। এই প্রথম আমি আমার পরিবারের বাহিরে, সুমি আপু আমাকে জড়িয়ে ধরে এক কান্ড। কি অদ্ভুত! সেদিন যে চুড়িগুলো দোকানে কিনতে গিয়েও কিনিনি, মেয়েটা আজ তাই আমাকে গিফট করল (আমার জীবনের প্রথম চুড়ি)।
অচেনা অজানা একটা মেয়ে আমার জন্য এত কিছু করল
![:)](https://s3.amazonaws.com/somewherein/assets/css/images/emot-slices_03.gif)
খুব ভাল লাগা নিয়ে রাতে ঘুমুতে গেলাম। একটা কষ্ট তখন আমাকে চেপে ধরল। আমার প্রতিটা জন্মদিনে যে আমাকে সবার আগে wish করে, আজ সে wish করতে পারেনি। কি করে করবে? ওর কাছে তো মোবাইল নেই।
ভোর ৬টা। হোস্টেলের বুয়া দরজা ধাক্কাচ্ছে। আমার কাছে নাকি গেস্ট এসেছে। ওহ! বুয়াকে কি করে বুঝাই আমার কাছে কেউ আসবে না। হয়ত অন্য কারো গেস্ট। বুয়া ভুল করছে। এ শহরে এত ভোরে আমার কাছে আসার মত কেউ নেই। তবু বুয়া বার বার বলছে একবার গিয়ে দেখে আসতে। কাল অনেক রাতে ঘুমিয়েছি, এত ভোরে অকারনে উঠতে হচ্ছে বলে মেজাজ খারাপ।
:তুই?
:হুম, কাল রাতের লঞ্চে আমি রওনা দিয়েছি। আম্মু তোর জন্য একটা ড্রেস পাঠিয়েছে।
(সেটা ছিল আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ জন্মদিন। আজো প্রতিটা জন্মদিনে আমার সেই দিনটার কথা মনে পড়ে। BMC তে সেটা ছিল আমার প্রথম জন্মদিন। আমার বন্ধুরা আমাকে সেদিন যে সারপ্রাইজ দিয়েছিল,সেটা ছিল আমার জন্য অপ্রত্যাশিত।
![:)](https://s3.amazonaws.com/somewherein/assets/css/images/emot-slices_03.gif)
রিক্সার টুং টাং শব্দ আর রাতের নিস্তব্দতা, বাতাসে হাল্কা শীতের আমেজ, খালি রাস্তায় রিক্সা চলছে রাজকীয় ভঙ্গিতে। পরিচিত ঢাকার এ এক অন্য রূপ। শাহাবাগের মোড়ে এলেই মনটা ভাল হয়ে যায়। এখানটায় এলেই রনি পরোটা ডিম খেতে চায়।
![:)](https://s3.amazonaws.com/somewherein/assets/css/images/emot-slices_03.gif)
এই মোড় থেকেই প্রতিদিন আমরা রিক্সায় উঠি। আজিজ সুপার মার্কেটটা পার হতেই রনি বলল, ওহ! আপু, Happy Birthday. (বরাবরের মত সবার প্রথমে না, আজ দিন শেষে কথাটা বলল)।
আমাকে চুপ থাকতে দেখে আবার ও বলল, মন খারাপ করিস না আপু। দেখবি তোর আগামী জন্মদিনে আমরা খুব মজা করবো। ওর কথা শুনে চোখে পানি এসে পরছিল, গলায় যেন পিণ্ড আটকে গেছে, ঢোক গিলতে বড় কষ্ট।
বললাম, এটাই বা খারাপ কি। হাসপাতালে থাকলেও আব্বু-আম্মু তো আমাদের সাথেই আছে। চারজন একসাথে আছি।
মধ্য দুপুরে আদনান এসেছিল বারডেমে। না, আমাকে wish করেনি সে। যাবার সময় বলেছে, ‘কোন প্রয়োজন হলে ফোন দিও’।
প্রতিটি সন্ধ্যার মত জিলানী এসেছে সন্ধ্যা মিলাতেই। হাসি-দুস্টুমিতে মাতিয়ে রেখেছে যতক্ষণ ছিল। যাবার সময় মাথায় হাত রেখে মৃদু হাসল। ওর হাসিটাকে দেখাচ্ছিল কান্নার মত। সৈকত এসেও আব্বুকে দেখে গেছে। আম্মুকেও কিছুক্ষনের জন্য ভুলিয়ে রেখেছিল গভীরতম শোক। এখন তাড়াতাড়ি বাসায় যাওয়া দরকার। প্রায় ১২টা বাজতে চলল। ভাত না খেয়ে বসে আছে লাবনী।
কেউ সেদিন শুভেচ্ছা জানায়নি আমাকে। আমার দুঃখে দুঃখী হয়ে বুঝিয়েছে কতটা কাছে আছে তারা। সময়ের স্রোতে এখন হয়ত আমাদের দেখা হয় না। কালে ভদ্রে ফোনে কথা হয়। তবু আমি জানি, এই মানুষ গুলোই আমার আপনজন।
দিনের শুরুটা করেছিলাম আমার শ্রেষ্ঠ জন্মদিনের ঘটনা দিয়ে। শেষ করছি সবচেয়ে কষ্টকর জন্মদিনের ঘটনা জানিয়ে। এই দুটো জন্মদিন একে অপরের সাথে এমনভাবে মিশে আছে, কিছুতেই আলাদা করতে পারিনা।
১৭ই অক্টোবর আব্বুর ৫ম মৃত্যুবার্ষিকী। ২০০৮ সালের এই ঘটনার ৭দিন পর আব্বু চলে যায় আমাদের ছেড়ে। রনিকে সেদিন বলতে পারিনি কিন্তু আমি বুঝতে পেরেছিলাম এটাই আব্বুর সাথে কাটানো আমার শেষ জন্মদিন।