somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সামহয়্যার ইন ব্লগঃ আমার যতো অনুভব

১৫ ই ডিসেম্বর, ২০০৯ রাত ১০:১১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


২০০৫ এর পনেরই ডিসেম্বরের সকালটি নিশ্চয়ই এ পৃথিবীতে অন্যরকম এক ঔজ্বল্য অনুভব নিয়ে আবির্ভূত হয়েছিল। সারা পৃথিবীর বাংলা ভাষাভাষীদের জন্য সেদিন উন্মুক্ত অপার আকাশ জুড়ে ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল নতুন একটি কবিতার খাতা। তারা সেদিন অপার আনন্দ নিয়ে চোখ রেখেছিল মুখর কথামালার বিস্মিত এক নতুন জানালায়।

হয়তো সেদিন শহরে খুব বৃষ্টি ছিল। অথবা তীব্র রোদ্দুর।
তবু সেই অঝর বৃষ্টি অথবা খা খা রোদ্দুরের মাঝেও বিশ্বের সকল বাঙালীরা শুনেছিল নতুন এক আওয়াজ। সে আওয়াজ বাঁধ ভাঙার আওয়াজ । সে আওয়াজ নতুন এক সৃষ্টির আওয়াজ। সে আওয়াজ “ যেমন ইচ্ছে লেখার আমার কবিতার খাতা”-য় লিখতে পারার মতো অপার বিস্মিত এক আনন্দ-অভিব্যক্তির আওয়াজ !

সেই শুরু। সেই অদ্ভুত এক বাঁধ ভাঙার আনন্দ চীৎকারের মধ্য দিয়েই যাত্রা শুরু আমাদের প্রিয় সামহয়্যারইনের। সেই শুরু, আরেক ‘অসামান্য মুগ্ধতা’র হাত ধরে পাশাপাশি পথচলা। সেই শুরু, আরেক ‘অপ্রতিরোধ্য ভালবাসা’কে আজীবনের জন্য সঙ্গী করে নেওয়া।

সামহয়্যারকে নিয়ে ভাবতে বসলে আমি আমার ভালবাসার এ প্ল্যাটফমর্টিকে এভাবেই ভাবি। জীবনের ভালোলাগা যতো অনুভব আর ভালোবাসার স্মৃতিগুলোকে যে কোন মানুষ যেভাবে খুব যত্ন করে বুকের মধ্যে আলাদা এক খামে ভরে রাখে, সামহয়্যার-ইন সেভাবেই সারাক্ষণ এক গভীর যত্নে বিরাজ করে আমার ভেতর।

সামহয়্যারে খুব একটা সময় দিতে পারিনা, কিন্তু তারপরেও সামহয়্যার এক অপার আনন্দের কবিতার খাতার মতোই অনিন্দ্য সৌরভ ছড়িয়ে সারাক্ষণ আমার অস্তিত্ব অনুভবে মিশে থাকে।

আমি যখন কর্মস্রোতে ক্লান্ত হয়ে পড়ি, বাসায় ফিরেই অপার আনন্দে চোখ রাখি এই বিমুগ্ধ জানালায়। আমি যখন রাস্তার জ্যামে আটকে গেছি ঘন্টার পর ঘন্টা, তখন আমার মোবাইলের অপেরা মিনির উইন্ডোতে মুক্ত বাতাস নিয়ে হাজির প্রিয় সামহয়্যার ইন। আমি যখন তীব্র অসুস্থতায় হাসপাতালে, আমার জন্য যখন এতোটুকু নড়াচড়াও নিষেধ, জুনিয়র ডাক্তারের কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বলি, তুমি কী কোনভাবে ইন্টারনেট মডেমযুক্ত একটা ল্যাপটপ আমাকে এনে দিতে পারো? আমি আমার সামহয়্যার-কে একপলক দেখতে চাই।...

- কে সে? তোমার খুব প্রিয় কোন জন?
- হ্যা প্রিয়, খুব বেশী প্রিয়। সে এমন এক প্রিয়, যার কাছে পৌঁছাতে পারলেই পৃথিবীর অজস্র ভালবাসাকে ছোঁয়া যায়, যার কাছে পৌঁছাতে পারলেই পৃথিবীর অজস্র সব প্রিয় মানুষের সেরা অনুভব গুলো স্পর্শ করা যায়। যার কাছে পৌঁছাতে পারলেই, আমার চোখ- পরম প্রাপ্তির তীব্র আনন্দ অনুভবে ভিজে ওঠে।......

সামহয়্যারে লিখতে বসে প্রথম লিখেছিলাম, ‘এলেম স্বপ্নের দেশে, বাঁধ ভাঙার বিস্ময়কর আয়োজনে’...। লেখার বিপরীতে মানুষের কী প্রবল ভালবাসাই না পেয়ে গেলাম ! পাঠকের ভালবাসার তীব্র আলোক বিচ্ছুরণে আমি যেন নতুন এক পথের দেখা পেলাম। বৃষ্টির দিনের যতো গান নিয়ে লিখলাম- ‘যে গান বৃষ্টির, যে গান একান্ত অনুভবের’। সাদিক মোহাম্মদ আলম এর দেওয়া ইংরেজী কবিতার নয় আঙিকের বাংলা অনুবাদ করে তা দিয়ে দিলাম আরেক পোষ্ট। এরপর অসুস্থ ‘প্রাপ্তি’কে নিয়ে লেখা কবিতা- ‘কোথায় রাখবে তুমি সরিয়ে প্রাপ্তিকে, আর কতদূর?’

এইতো, এভাবেই আস্তে আস্তে শুরু নতুন এক আলোর রেখায় গুটি গুটি পায়ে পথচলা। যখন লিখতে পারিনা, যখন একেবারেই সময় পাইনা মুখ রাখতে এই প্রিয় জানালায়, তখন হঠাৎ একদিন এসে লগ-ইন করে লিখে ফেলি- ‘তুমি কেমন আছো? তুমি কেমন আছো প্রিয় সামহয়্যার ইন’?

আমার ব্লগজীবনের সবচেয়ে আশ্চর্য্যজনক একটি দিনের কথা বলি। একবার মাঝে লম্বা এক বিরতি দেওয়ার পর একদিন খুব ভোরে উঠে ব্লগে ঢুকেছি। চোখ গেল ডানদিকের মন্তব্য কলামের দিকে। হঠাৎ দেখি সেখানে একটি লেখার শিরোনাম- ‘সুনীল সমুদ্রের কবিতা’। আমি বিস্মিত, হতবাক। এ লেখাটি কার? কী বিষয় নিয়ে এ লেখা? আমি দ্রুত ক্লিক করে লেখাটিতে ঢুকে পড়লাম। কে জানতো, আমার জন্য এতো বিরাট বিস্ময় অপেক্ষা করছে ! দেখলাম- এই ব্লগের বিশিষ্ট ব্লগার ও গীতিকার/লেখক জনাব শেখ জলিল (তখনো পর্যন্ত শেখ জলিল ভাই আমার অচেনা, তার সাথে কোনদিন দেখাও হয়নি) ব্লগে প্রকাশিত আমার বিভিন্ন কবিতা থেকে উদ্ধৃতি ব্যবহার করে বিশ্লেষণমূলক এক বিশাল লেখা লিখেছেন আমার কবিতা বিষয়ে। দেখে আমার চোখে পানি এসে যাবার মতো অবস্থা। মানুষের এতো পাহাড় সমান ভালবাসার প্রতিদান আমি কীভাবে দেবো? আমি তো বিরাট কোন কবি নই। এই আমাকে নিয়ে শেখ জলিল কেন এমন একটি লেখা লিখলেন?

সামহয়্যারকে নিয়ে জড়িয়ে আছে আরো অনেক অনেক স্মৃতি। ২০০৬ সালের ২৩ শে জুন ‘প্রাপ্তি’ নামের ছোট্ট এক শিশুকে বাঁচানোর আন্দোলনে নেমে ব্লগাররা সব একত্রিত হয়েছিল কালপুরুষদার বাসায়। সেখানেই পরিচয় ঘটেছিলো শক্তিমান সব ব্লগারদের সাথে। সামহয়্যারের পাতায় তখন উৎসাহী ব্লগারদের কী প্রবল মানসম্মত সমৃদ্ধ সব লেখাই না পেতাম! আমার মনে আছে, কৌশিকদা একবার ‘আগুনের পরশমণি’ নামে একটা সিরিজ চালু করেছিলেন, যেখানে উপস্থিত থেকে ( আগে থেকেই নির্ধারণ করা) এক এক জন ব্লগার সারাদিন ধরে অন্যান্য পাঠক ব্লগারদের নানা প্রশ্নের উত্তর দিতেন। কী প্রবল জমজমাটই না ছিল সেইসব ক্রিয়েটিভ ব্লগ আড্ডা।

সাদিক মোহাম্মদ আলম মাঝে মাঝেই বিশ্বখ্যাত কবিদের সেরা সব কবিতার সংকলন ভিত্তিক (ইংরেজী অনুবাদ সহ) পোষ্ট দিতেন। একদিন ব্লগে ঢুকে দেখি- সাদিকের তেমনই এক পোষ্টের মন্তব্য কলামে একটি কবিতার চার লাইনের ইংরেজীর বিপরীতে বাংলা অনুবাদ কী হবে, সেই নিয়ে একের পর এক মন্তব্য পোষ্ট দেওয়া হচ্ছে- রীতিমতো কবিতা অনুবাদের প্রতিযোগিতার আসরের মতোই।...আমার কাছে সেইসময়ের সেইসব ক্রিয়েটিভ কর্মকান্ডে ব্লগারদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণের স্মৃতিটা খুব উজ্জ্বল হয়ে গেঁথে আছে!

প্রথমদিকে সামহয়্যারে লিখতে বসলেই আমি সারাক্ষণ ভাবতাম, কারা আছে- এই সুন্দর সুপ্রকাশিত কবিতার সৃদৃশ্য খাতাটির পেছনে? কারা প্রতিদিন অমন যত্ন করে সাজায় এই খোলা জানালার অপরূপ সব দৃশ্যাবলী? তখনও আরিল আর জানা একেবারেই আমার অজানা। আমি তখনো চিনিনা হাসিন আর ইমরান-কে, যাদের হাতে ‘একশো একটা’ লাল পদ্ম এনে দিলেও তাদের অমূল্য অবদানের ঋণ হয়তো কখনোই শোধ হবেনা।...

আস্তে আস্তে জানা হলো সব। সুন্দরের স্বপ্নে, সুন্দরের আয়োজনে কী প্রবল যুদ্ধে জয়ী হতে চাইছে নেপথ্যের কিছু স্বপ্ন-কারিগর। তারা একে একে বাংলা ফোনেটিকের যুদ্ধে জয়ী হলো, তারা একে একে সামহয়্যারকে বৈশাখী ফন্ট থেকে ইউনিকোডে রূপান্তরের যুদ্ধে জয়ী হলো। ২০০৭ এর ১ লা বোশেখের সকালে আমরা সামহয়্যারকে পেলাম নতুন এক অন্যরকম অবয়বে। সে অবয়ব হারিয়ে যাবার নয়। সে অবয়ব চিরস্থায়ী হতে পারার অনন্য এক গৌরবের। কেননা ‘ইউনিকোড বাংলা’য় সেদিনের সেই ঐতিহাসিক পরিবর্তনের কারণেই আজ থেকে একশো বছর পরেও সার্চ ইঞ্জিন দিয়ে খুঁজে পাওয়া যাবে সামহয়্যারের যে কোন লেখা..। বাংলা ভাষাভাষীদের হৃদয়ে এই অর্জনের আনন্দ তাই সীমাহীন।

সামহয়্যারের খোলা জানালাটিকে আজ যারা সাজাচ্ছে, তাদেরই একজন লাভলুদার সাথে সেদিন পরিচিত হলাম। এইসব স্বপ্ন কারিগরদের আমি আসলে অবাক চোখে তাকিয়ে তাকিয়ে শুধু দেখি। কতো সহজেই তারা আমাদের প্রত্যাশিত স্বপ্নগুলোকে সুন্দরভাবে সাজিয়ে দেয় সামহয়্যারের পাতায় পাতায়। কী প্রবল দৃপ্ত আনন্দে অনন্য সৌকর্য্য দিয়ে তারা আমাদের সকল ব্লগের পাতায় পাতায় উড়িয়ে দেয় বিজয় দিবসের মহান মর্যাদার জাতীয় পতাকা। যতোদিন সামহয়্যার থাকবে, সামহয়্যারের সাথে জড়িত নেপথ্যের সবার কষ্ট আর পরিশ্রমের স্রোত নিশ্চয়ই উজ্জ্বল এক স্রোতধারার মতো বইতে থাকবে ব্লগের পাতায় পাতায়, অনন্য অসাধারণ এক অববাহিকায়।

আজ থেকে একশো বছর পরেও হয়তো আবার এক ১৫ই ডিসেম্বরে আবার আকাশ জুড়ে খোলা হবে নতুন এক কবিতার খাতা। এক দুই তিন..তেত্রিশ, তেহাত্তর... কতো শত বাংলা ব্লগই না তখন মাতিয়ে রাখবে আগামীদিনের লেখক প্রজন্মদের। কিন্তু তারপরেও একটি ইতিহাস হয়ে যাওয়া পাখীর ডানায়, একটি ঐতিহাসিক মমর্র পাথরের বুকে দৃপ্ত আনন্দের অক্ষরে লেখা থাকবে কয়েকটি লাইন-

‘আমিই সামহয়্যার ইন ব্লগ-
আমিই উন্মুক্ত আকাশ জুড়ে লেখা তোমাদের সেই প্রথম কবিতার খাতা...
যাকে তোমরা ভালবেসেছো আজীবন!

যাকে তোমরা লালন করেছো সোচ্চার উচ্চারণে,
সকল আনন্দ-বেদনায়, সাগ্রহে- সাবলীল!’



২৪টি মন্তব্য ১৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ব্লগে বিরোধী মতের কাউকে নীতি মালায় নিলে কি সত্যি আনন্দ পাওয়া যায়।

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১৮

ব্লগ এমন এক স্থান, যেখানে মতের অমিলের কারণে, চকলেটের কারণে, ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের কারণে অনেক তর্কাতর্কি বিতর্ক কাটা কাটি মারামারি মন্তব্যে প্রতিমন্তব্যে আঘাত এগুলো যেনো নিত্য নৈমিত্তিক বিষয়। ব্লগটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

সিকান্দার রাজার চেয়ে একজন পতিতাও ভালো।

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ৮:০৭

সিকান্দার রাজা কোকের বোতল সামনে থেকে সরিয়ে রাতারাতি হিরো বনে গেছেন! কিন্তু তাকে যারা হিরো বানিয়েছেন, তারা কেউ দেখছেন না তিনি কত বড় নেমকহারামি করেছেন। তারা নিজেদেরকে ধার্মিক বলে দাবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগার'স ইন্টারভিউঃ আজকের অতিথি ব্লগার শায়মা

লিখেছেন অপু তানভীর, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ১১:০৫



সামুতে ব্লগারদের ইন্টারভিউ নেওয়াটা নতুন না । অনেক ব্লগারই সিরিজ আকারে এই ধরণের পোস্ট করেছেন । যদিও সেগুলো বেশ আগের ঘটনা । ইন্টারভিউ মূলক পোস্ট অনেক দিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

...এবং উচ্চতায় তুমি কখনই পর্বত প্রমাণ হতে পারবে না

লিখেছেন নতুন নকিব, ০৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৫৬

...এবং উচ্চতায় তুমি কখনই পর্বত প্রমাণ হতে পারবে না

ছবি কৃতজ্ঞতাঃ অন্তর্জাল।

ছোটবেলায় মুরব্বিদের মুখে শোনা গুরুত্বপূর্ণ অনেক ছড়া কবিতার মত নিচের এই লাইন দুইটাকে আজও অনেক প্রাসঙ্গিক বলে মনে হয়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমেরিকার গ্র্যান্ড কেনিয়ন পৃথিবীর বুকে এক বিস্ময়

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪১


প্রচলিত কিংবদন্তি অনুসারে হাতে গাছের ডাল আর পরনে সাধা পোশাক পরিহিত এক মহিলার ভাটাকতে হুয়ে আতমা গ্র্যান্ড কেনিয়নের নীচে ঘুরে বেড়ায়। লোকমুখে প্রচলিত এই কেনিয়নের গভীরেই মহিলাটি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×