somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের তিক্ত অভিজ্ঞতা শাটল ট্রেনে

১১ ই অক্টোবর, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:৫২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া শিক্ষার্থীদের সবচেয়ে বেশি তিক্ত অভিজ্ঞতা হয় শাটল ট্রেনে। ১ নাম্বাওর আছে সিট না পাওয়া। ২ নাম্বার বগি মেম্বারদের সিট দখল। ৩ নাম্বার আছে শাটলে বহিরাগতদের উৎপাত।
নোংরা কাপড় পরা ওইসব মানুষদের শাটলের দরজা, ছাদে বসে থাকতে দেখে বিরক্তেতে নাকমুখ কুঁচকে উঠে সবার। নিজেদেরই যেখানে দাড়ানোর জায়গা নেই, সেখানে এসব মানুষদের দেখে অনেকের মাথায় রক্ত উঠে যায়। কখনো তো এরা গাটটি বোচঁকা সাথে নিয়ে উঠে। দেখে মনে হয় শাটল তো না, যেনো ভুলে একটা মালগাড়িতে উঠে পড়লাম।
আজ শাটলে এমনই ৩ জনকে মহিলাকে দেখলাম তাদের বাচ্চা আর নাতিকে নিয়ে উঠে পড়েছে। উঠেই আবার মেঝেতে বসে গেছে। ডেমু ট্রেনে বেশিরভাগকে দাড়িয়ে থাকতে হয়। সেখানে এদের গেড়ে বসা দেখে অনেকেই হাক মারতে লাগলো।‘উঠেন তো! বসবেন না। দাঁড়ায় থাকেন।’ মহিলা ১টা ভয়ে দাড়িয়েও পড়লো। অন্যরা মুখে ভয় আর লজ্জা মিশ্রিত হাসি ফুটিয়ে মুখটা নিচু করে রাখলো।
মহিলাগুলো আমার সামনেই বসেছিলো। হাতের বইটা পড়ার ফাঁকে ফাঁকে তাদের দেখতে লাগলাম। বাচ্চাগুলোকে দেখে মনে হলো না তাদের মনে এর কোনো প্রভাব পড়েছে। আড়াই বছরের একটা বাচ্চা তার ময়লা হাত দিয়ে মায়ের সামনের চুলগুলো কিছু খুলে খুলে সামনে এনে দুষ্টুমি করছিলো।
ট্রেন স্টেশনে থামার জন্য অপেক্ষা করতে লাগলাম।
ট্রেন থামার পর সবাই যার যার ফ্যাকাল্টির উদ্দেশ্যে রওনা দিলো।মহিলাগুলোও নেমে পড়লো। একটু অপেক্ষা করতেই দেখলাম, একটা মহিলা তার হাতে থাকা উড়না দিয়ে মুখে নেকাবের মতো বেঁধে নিলো। তার কোলে একটা আর পাশে আরেকটা বাচ্চা।
আরেকটা মহিলা তার নাতির হাতে একটা পুরনো আর নোংরা বাজারের ব্যাগ ধরিয়ে দিলো। বাচ্চাটা নিজের পকেট থেকে একটা টুপি বের করে মাথায় পড়ে নিলো। আরেকটা মহিলাকে কোথাও দেখলাম না।
বুঝতে পারলাম এরা সবাই ভিক্ষার উদ্দেশ্যে এখানে এসেছে।
কিছুক্ষণ ইতস্তত করে কোলে বাচ্চা নিয়ে রাখা মহিলাটার উদ্দেশ্যে পা বাড়ালাম। তিনি একটা দোকানের সামনে দাড়িয়ে আছেন। তার ছেলে দোকানটা থেকে পয়সা চাইছে।
মহিলাকে জিজ্ঞেস করলাম, আপনি কোথ থেকে এসেছেন? তিনি বললেন, নতুন ব্রিজ থেকে।
এতদূর? ট্রেনে এতক্ষণ ছেলে মেয়েরা আপনাদের সাথে এরকম খারাপ আচরণ করলো আপনাদের খারাপ লাগেনি?
মহিলা উত্তর দিলেন না।
আবার জিজ্ঞেস করলাম, এখানে কেনো এসেছেন? ভিক্ষা করতে।
এইখানে? এর পর কোথায় যাবেন?
১ নাম্বার গেট। এরপর ওখান থেকে ভিক্ষা করতে করতে বালুছড়া। সেখান থেকে আবার অক্সিজেন। তারপর বাসে বাসা।
আপনি ভিক্ষা কেনো করেন? আপনার স্বামী কই?
সে চলে গেছে। আমার দুইটা বাচ্চারে খাওয়ামু কেমনে যদি আমি ভিক্ষা না করি। তবে প্রতিদিন না। সপ্তাহে দুইদিন ভিক্ষা করি। বাকি কয়দিন কোনোদিকে কাজ খুজে নেই। বাচ্চা দুইটার খিদা সহ্য হয়না। তাই তাদের সাথে নিয়ে ভিক্ষায় নামি।
বুঝতে পারলাম না। শাটল ট্রেনে উঠে আমাদের ডিস্টার্ব করার জন্য এদের দোষ দিবো? নাকি মেনে নিবো?
এদের ব্যবস্থা কিভাবে হবে? যেখানে দেশ দ্রুতগতিতে ডিজেটাল পদ্ধতিতে এগিয়ে যাচ্ছে। সেখানে এখনো বিনা টিকিটে ভ্রমন করতে মানুষ মুখিয়ে থাকে।
এই বাচ্চাগুলোর জীবন শুরু হয়েছে ক্ষুধা আর দারিদ্র্যের মধ্য দিয়ে। এদের কাছে শিক্ষা মানে হাসির কথা। আর আমরা প্রতিদিন সকালে কাধেঁ ব্যাগ ঝুলিয়ে শাটলের ঝাঁকুনি খেতে খেতে পা ব্যথা করতে করতে ছুটি।
আমরা ভাবি আমাদের ভবিষ্যত বিসিএস ক্যাডার হওয়া। ভালো একটা চাকরি করা।
আর এরা? ভাঙ্গারি বিক্রি করা, তরমুজ বিক্রি করা আর . . . . .
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই অক্টোবর, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:৫২
৬টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হুজুররা প্রেমিক হলে বাংলাদেশ বদলে যাবে

লিখেছেন মিশু মিলন, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ৯:২০



তখন প্রথম বর্ষের ছাত্র। আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে আমাদের আরেক বন্ধুর জন্মদিনের উপহার কিনতে গেছি মৌচাক মার্কেটের পিছনে, আনারকলি মার্কেটের সামনের ক্রাফটের দোকানগুলোতে। একটা নারীর ভাস্কর্য দেখে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইসলামের বিধান হতে হলে কোন কথা হাদিসে থাকতেই হবে এটা জরুরী না

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ১০:৫৫



সূরাঃ ৫ মায়িদাহ, ৩ নং আয়াতের অনুবাদ-
৩। তোমাদের জন্য হারাম করা হয়েছে মৃত, রক্ত, শূকরমাংস, আল্লাহ ব্যতীত অপরের নামে যবেহকৃত পশু, আর শ্বাসরোধে মৃত জন্তু, প্রহারে মৃত... ...বাকিটুকু পড়ুন

লবণ্যময়ী হাসি দিয়ে ভাইরাল হওয়া পিয়া জান্নাতুল কে নিয়ে কিছু কথা

লিখেছেন সম্রাট সাদ্দাম, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১:৫৪

ব্যারিস্টার সুমনের পেছনে দাঁড়িয়ে কয়েকদিন আগে মুচকি হাসি দিয়ে রাতারাতি ভাইরাল হয়েছিল শোবিজ অঙ্গনে আলোচিত মুখ পিয়া জান্নাতুল। যিনি একাধারে একজন আইনজীবি, অভিনেত্রী, মডেল ও একজন মা।



মুচকি হাসি ভাইরাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবন চলবেই ... কারো জন্য থেমে থাকবে না

লিখেছেন অপু তানভীর, ০২ রা মে, ২০২৪ সকাল ১০:০৪



নাইমদের বাসার ঠিক সামনেই ছিল দোকানটা । দোকানের মাথার উপরে একটা সাইনবোর্ডে লেখা থাকতও ওয়ান টু নাইন্টি নাইন সপ ! তবে মূলত সেটা ছিল একটা ডিপার্টমেন্টাল স্টোর। প্রায়ই... ...বাকিটুকু পড়ুন

দেশ এগিয়ে যাচ্ছে; ভাবতে ভালই লাগে

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০২ রা মে, ২০২৪ দুপুর ১:০৩


বিশ্বব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ১৯৭২ সালে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার ছিল নেতিবাচক। একই বছরে পাকিস্তানের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার ছিল প্রায় ১ শতাংশ। ১৯৭৩ সালে পাকিস্তানের অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রবৃদ্ধি ছিল ৭... ...বাকিটুকু পড়ুন

×