somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কুরবানী সম্পর্কে জরুরী ২টি প্রশ্ন ও তার উত্তর সহীহ হাদিস থেকে

০৭ ই নভেম্বর, ২০১১ রাত ২:১৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সবাইকে ঈদ মোবারক।
যদিও এ প্রশ্ন গুলো এবং এর উত্তর সহ পোষ্ট আনেক আগে দেওয়া দরকার ছিল, কিন্তু সময়ের অভাবে দিতে দেরী হয়েছে তাই দু:খিত।

প্রশ্ন (১): ভাই-বোনে পৃথক পরিবার। তারা কি একত্রে কুরবানী দিতে পারবে?

উত্তর : প্রতিটি পরিবারের জন্য পৃথক পৃথক কুরবানী দেওয়াই ছহীহ হাদীছ সম্মত। বিদায় হজ্জে আরাফার দিনে সমবেত জনমন্ডলীকে উদ্দেশ্য করে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এরশাদ করেন, হে জনগণ! নিশ্চয় প্রত্যেক পরিবারের উপরে প্রতি বছর একটি করে কুরবানী’ (তিরমিযী, আবুদাঊদ, নাসাঈ, ইবনু মাজাহ, মিশকাত হা/১৪৭৮)। সুতরাং ভাই-বোনে যেহেতু পৃথক পরিবার, সেহেতু তাদেরকে পৃথক ভাবে একটি করে কুরবানী দিতে হবে। একটি কুরবানী অর্থ একটি পশু। পশুর ভাগা নয়।

প্রশ্ন (২) : সাত ভাগে কুরবানী দেয়ার পক্ষে অনেক আলেমকেই জোর প্রচারণা চালাতে দেখা যায়। বিষয়টি কেন শরী‘আত সম্মত হবে না- তা ছহীহ হাদীছের আলোকে বিস্তারিতভাবে জানিয়ে বাধিত করবেন।

উত্তর : ‘মুক্বীম’ অবস্থায় ৭ ভাগে কুরবানী করার কোন দলীল পাওয়া যায় না। তাই একটি পরিবারের পক্ষ থেকে একটি পশু কুরবানী করাই যথেষ্ট। তবে সামর্থ্য থাকলে একাধিক পশুও কুরবানী করতে পারবে। ‘রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) নিজ হাত দ্বারা দু’টি শিংওয়ালা দুম্বা কুরবানী করেছেন’ (ছহীহ বুখারী হা/৫৫৬৪-৬৫; ছহীহ মুসলিম, মিশকাত হা/১৪৫৩ প্রভৃতি)। কখনও তিনি দু’-এর অধিক দুম্বা, খাসী, বকরী (ছাগল), গরু ও উট কুরবানী করেছেন (ফাৎহুল বারী ১০/৯ পৃঃ ৫৭; মিরা‘আত হা/১৪৭৪, ২/৩৫৪ পৃঃ)। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বিদায় হজ্জে আরাফার দিনে সমবেত জনমন্ডলীকে উদ্দেশ্য করে বলেন, يَا أَيُّهَا النَّاسُ إِنَّ عَلَى كُلِّ أَهْلِ بَيْتٍ فِى كُلِّ عَامٍ أُضْحِيَةً ‘হে জনমন্ডলী! নিশ্চয়ই প্রতিটি পরিবারের উপরে প্রতি বছর একটি করে কুরবানী’ (সনদ ছহীহ, আলবানী-ছহীহ তিরমিযী হা/১২২৫; ছহীহ আবুদাউদ হা/২৪২১; ছহীহ নাসাঈ হা/৩৯৪০; ছহীহ ইবনে মাজাহ হা/২৫৩৩; মিশকাত হা/১৪৭৮)। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর মৃত্যুর পরেও তাঁর সুন্নাত অনুযায়ী ছাহাবীগণের মধ্যে প্রত্যেক পরিবারের পক্ষ থেকে একটা করে বকরী কুরবানী করার প্রচলন ছিল (ছহীহ তিরমিযী হা/১২১৬ ‘কুরবানী’ অধ্যায়; ছহীহ ইবনে মাজাহ হা/২৫৩৩ ‘নিজ পরিবারের পক্ষ হ’তে একটা বকরী কুরবানী করা’ অনুচ্ছেদ, ‘কুরবানী’ অধ্যায়)। প্রখ্যাত ছাহাবী আবু ছারীহা (রাঃ) বলেন, ‘একটি পরিবারের পক্ষ থেকে একটা অথবা দু’টা করে বকরী কুরবানী করা হ’ত (ছহীহ ইবনে মাজাহ হা/২৫৪৭)।’
ভাগা কুরবানী : সফরে থাকাকালীন সময়ে ঈদুল আযহা উপস্থিত হ’লে একটি পশুতে একে অপরে শরীক হয়ে ভাগে কুরবানী করা যায়। নিম্নে দলীল সহ বর্ণিত হ’ল-
(ক) আব্দুল্লাহ ইবনু আববাস (রাঃ) বলেন, كُنَّا مَعَ رَسُولِ اللهِ -صلى الله عليه وسلم- فِى سَفَرٍ فَحَضَرَ الأَضْحَى فَاشْتَرَكْنَا فِى الْبَقَرَةِ سَبْعَةً وَفِى الْبَعِيرِ عَشَرَةً অর্থ : আমরা রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর সাথে এক সফরে ছিলাম। এমতাবস্থায় কুরবানীর ঈদ উপস্থিত হ’ল। তখন আমরা সাত জন একটি গরুতে ও দশ জন একটি উটে শরীক হ’লাম (তিরমিযী, ইবনে মাজাহ, নাসাঈ, মিশকাত হা/১৪৬৯)।
(খ) জাবির (রাঃ) বলেন, نَحَرْنَا مَعَ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بالْحُدَيْبِيَةِ الْبُدَنَةَ عَنْ سَبْعَةٍ وَالْبَقَرَةَ عَنْ سَبْعَةٍ ‘হুদায়বিয়ার সফরে আমরা রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর সাথে ছিলাম। তখন একটি গরুতে সাত জন ও একটি উটে সাত শরীক হয়ে কুরবানী করেছিলাম’ (মুসলিম, আবুদাউদ, তিরমিযী, ইবনে মাজাহ, মিশকাত হা/২৬৩৬)।
(গ) জাবির (রাঃ) বলেন, حَجَجْنَا مَعَ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَنَحَرْنَا الْبَعِيرَ عَنْ سَبْعَةٍ وَالْبَقَرَةَ عَنْ سَبْعَةٍ ‘আমরা রাসূল (ছাঃ)-এর সাথে হজ্জের সফরে ছিলাম। তখন সাত জনের পক্ষ থেকে একটি উট এবং সাত জনের পক্ষ থেকে একটি গরু কুরবানী করেছিলাম’ (মুসলিম হা/৩২৪৯)।
(ঘ) উক্ত জাবির (রাঃ) বলেন, كُنَّا نَتَمَتَّعُ مَعَ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَنَذْبَحُ الْبَقَرَةَ عَنْ سَبْعَةٍ ‘আমরা নবী করীম (ছাঃ)-এর সঙ্গে তামাত্তু হজ্জের সফরে ছিলাম। তখন সাত জনে মিলে একটি গরু কুরবানী করেছিলাম’ (মুসলিম হা/৩২৫২, নাসাঈ হা/৪৩৯৩, আবুদাউদ হা/২৮০৭)। উলে¬খ্য যে, জাবির (রাঃ) বর্ণিত এ মর্মে আরো হাদীছ রয়েছে।
উপরোক্ত আলোচনা থেকে মুক্বীম ও মুসাফির অবস্থায় কুরবানী করার বিষয়টি সুস্পষ্টভাবে ফুটে উঠেছে।
বিভ্রান্তির কারণ : মুক্বীম অবস্থায় শুধু সাত জন মিলে নয়; বরং সাতটি পরিবারের পক্ষ থেকে একটি গরু কুরবানী করার প্রথা সমাজে চালু হওয়ার কারণ সম্ভবতঃ জাবির (রাঃ) বর্ণিত নিম্নের ব্যাখ্যা শূন্য হাদীছটি, যা শুধু আবুদাঊদে বর্ণিত হয়েছে। قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّي اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الْبَقَرَةُ عَنْ سَبْعَةٍ وَالْجَزُورُ عَنْ سَبْعَةٍ ‘রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, ‘একটি গরু সাত জনের পক্ষ থেকে ও একটি উট সাত জনের পক্ষ থেকে’। অথচ এই হাদীছটিও সফরে ভাগে কুরবানী করার সাথে সম্পৃক্ত। কারণ একই রাবী জাবির (রাঃ) থেকেই উপরোক্ত পরস্পর (খ, গ, ঘ নং) তিনটি হাদীছ বর্ণিত হয়েছে। যেখানে বিস্তারিত ব্যাখ্যা সহ অর্থাৎ সফরের কথা বলা হয়েছে। তাছাড়া দলীলের ক্ষেত্রে কোন বিষয়ে একই রাবীর বর্ণিত সংক্ষিপ্ত হাদীছের স্থলে বিস্তারিত ও ব্যাখ্যা সম্বলিত হাদীছ গ্রহণ করাই মুহাদ্দিছগণের রীতি। দ্বিতীয়ত : ইমাম আবুদাউদ (রহঃ) উপরোক্ত খ ও ঘ নং ব্যাখ্যা সম্বলিত হাদীছ দু’টি যে অধ্যায়ে নিয়ে এসেছেন, এই ব্যাখ্যাশূন্য হাদীছটিও ঐ একই অধ্যায়ে নিয়ে এসেছেন। অতএব বিভ্রান্তির কোন প্রশ্নই উঠে না। তাছাড়া ১ম হিজরী সনে কুরবানীর বিধান চালু হওয়ার পর মুক্বীম অবস্থায় রাসূল (ছাঃ), খোলাফায়ে রাশেদীন বা ছাহাবীগণ ভাগে কুরবানী করেছেন মর্মে কোন ছহীহ, যঈফ হাদীছ বা আছার পাওয়া যায় না। তাই এ থেকে বিরত থাকাই কর্তব্য। আল্লাহই অধিক অবগত।

ধন্যবাদ।
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই নভেম্বর, ২০১১ দুপুর ২:১৯
৫টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

লুঙ্গিসুট

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:২৪



ছোটবেলায় হরেক রঙের খেলা খেলেছি। লাটিম,চেঙ্গু পান্টি, ঘুড়ি,মার্বেল,আরো কত কি। আমার মতো আপনারাও খেলেছেন এগুলো।রোদ ঝড় বৃষ্টি কোনো বাধাই মানতাম না। আগে খেলা তারপর সব কিছু।
ছোটবেলায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বর্ণাক্ষরে লিখে রাখার মত মুফতি তাকি উসমানী সাহেবের কিছু কথা

লিখেছেন নতুন নকিব, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:২৫

স্বর্ণাক্ষরে লিখে রাখার মত মুফতি তাকি উসমানী সাহেবের কিছু কথা

ছবি কৃতজ্ঞতা: অন্তর্জাল।

একবার শাইখুল হাদিস মুফতি তাকি উসমানী দামাত বারাকাতুহুম সাহেবকে জিজ্ঞেস করা হল, জীবনের সারকথা কী? উত্তরে তিনি এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

=মৃত্যু কাছে, অথবা দূরেও নয়=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:০৭



©কাজী ফাতেমা ছবি
দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে দিয়ে বলি, আমারও সময় হবে যাবার
কি করে চলে যায় মানুষ হুটহাট, না বলে কয়ে,
মৃত্যু কী খুব কাছে নয়, অথবা খুব দূরে!
দূরে তবু ধরে নেই... ...বাকিটুকু পড়ুন

সবুজ চোখের মানুষের ধাঁধা

লিখেছেন করুণাধারা, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:২৯



এই ধাঁধার নাম সবুজ চোখের মানুষের ধাঁধা; নিচের লিংকে এটার ভিডিও আছে।

স্বৈরশাসকের বন্দী

এই ধাঁধাটি আমার ভালো লেগেছিল, তাই অনেক আগে আমার একটা পোস্টে এই ধাঁধাটি দিয়েছিলাম। কিন্তু সেই পোস্টে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইসলামের চার খলিফার ধারাবাহিকতা কে নির্ধারণ করেছেন?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১০:৩৭




সূরাঃ ৩ আলে-ইমরান, ২৬ নং আয়াতের অনুবাদ-
২৬। বল হে সার্বভৈৗম শক্তির (রাজত্বের) মালিক আল্লাহ! তুমি যাকে ইচ্ছা ক্ষমতা (রাজত্ব) প্রদান কর এবং যার থেকে ইচ্ছা ক্ষমতা (রাজত্ব)... ...বাকিটুকু পড়ুন

×