somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মোদিকে নিয়ে ইন্ডিয়ার জয়ধ্বনি

২৪ শে এপ্রিল, ২০১৪ রাত ১০:৫৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


ভারতের নির্বাচন একই সাথে সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ ছড়াচ্ছে গোটা ভারতীয় উপমহাদেশে। এটা এ অঞ্চলের রাজনীতি সচেতন মানুষের মধ্যেও বেশ উত্তাপ ছড়াচ্ছে। এবং অনেকের জন্য বিব্রতকর। কারণ ভারতের মত একটি দেশের কাছ থেকে এ অঞ্চলের মানুষ এমন প্রচারণা আশা করে না। অন্যদিকে ভারতে যে গণতন্ত্রের আড়ালে ব্যাপকভাবে সাম্প্রদায়িকতার চর্চা হয় এটা গোটা বিশ্ব বুঝতে পারছে। হিন্দু-মুসলিম বিদ্বেষ ছড়াতে ভারত যে কত ওস্তাদ সেটা আর বলার অপেক্ষা রাখেনা। ভারতের নির্বাচনি প্রচারণা এটাও প্রমাণ করে দিচ্ছে- হিন্দু-মুসলিম সাম্প্রদায়িকতার জন্মভূমিও ভারত। বিশ্বের বড় এই গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রটি শুধু গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসাবে বড় নয় সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ ছড়ানোর জন্যও বড় ভূমিকা রাখছে।
জনগণ যদি ভয়ঙ্কর স্বভাবের হয় তাহলে রাষ্ট্রের যেমন ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি হয় তেমনি আশেপাশেও সঙ্কট তৈরি হয়। ভারতের বিভিন্ন জরিপ যখন বার বার বিজেপির ক্ষমতারোহণের সম্ভাবনাকে পরিস্কার করছে তখন ভারতীয় জনগণের চেহারা ও চাহিদাও সহজে বোঝা যায়। তারা-জনগণ মানে ভোটাররা- কতটা অসাম্প্রদায়িক? তারা যদি সাম্প্রদায়িকতা লালন না করত তাহলে বিজেপির ক্ষমতায় যাওয়ার সম্ভাবনাটা তৈরি হত না। কারণ ভারতীয় জনগণই ভোটার। তারা আরও সঙ্কট তৈরি করেছে। বিজেপি ক্ষমতায় যাওয়ার সম্ভাবনার কথা শোনার পরও, বিজেপির কর্মকা-ের অতীত স্মরণ করিয়ে দেওয়ার পরও ভারতের জনগণ শেষ সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি বিজেপিকে ভোট না দেয়ার। এবং ভারতের জনগণ সাম্প্রদায়িকতার জন্য বিজেপির কাছে কোন ক্ষমা প্রার্থনার দাবিও করেনি। কোন ধরনের কায় ক্লেশ ছাড়াই বিজেপি ক্ষমতারোহণের সুযোগ পেয়ে যাচ্ছে। বলতে গেলে ভারতীয় জনগণের ভয়ঙ্কর বদান্যতা। এটা ভারতীয় গণতন্ত্রের আশীর্বাদ!
যেমন বিজেপির নির্বাচনী ইশতেহার -যেখানে রামমন্দির নির্মাণের বিষয়টি তাদের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের অংশ বলে দাবি করেছে। এছাড়া কোরবানির ঈদে গরু জবাই নিষিদ্ধ করবে বলে ঘোষণা দিয়েছে। যা এক ও অভিন্ন নাগরিক নীতির নামে চালানোর চেষ্টা হচ্ছে। মোদির ঘনিষ্ট বলে পরিচিত অমিত শাহ বলেছেন, বিজেপিকে ভোট দিয়ে প্রতিশোধ নেয়ার জন্য যেখানে হিন্দুদের হত্যাকারিদের কংগ্রেস সরকার রক্ষা করেছে এবং পুরস্কৃত করেছে।
আর একজন কলামিস্ট মোদির সম্পর্কে বলেছেন, আধুনিক ভারতের সবচেয়ে সংগঠিত সাম্প্রদায়িক দাঙ্গাগুলোর একটি মোদির পৌরহিত্যে সংঘটিত হয়েছে। এজন্য তার রাজ্য মন্ত্রিসভার একাধিক সদস্যের বিরুদ্ধে দাঙ্গায় প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ ভূমিকার অভিযোগ আদালতে প্রমাণিত হয়েছে। এবং যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যে মোদির প্রবেশের ওপর কার্যত ১০ বছর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছিল। ২০০২ সালে গুজরাটে দাঙ্গা এবং পরবর্তি কয়েক বছর এ নরেন্দ্র মোদির বক্তব্য ছিল অনেক বেশি সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষে ভরা।
এবং‘নরেন্দ্র মোদি তাঁর নির্বাচনী প্রচারকালে নিজেই স্বীকার করেন যে সোনিয়া গান্ধীর সামনে এক বছরে প্রায় ৭০০ সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা সংঘটিত হয়েছে এবং উত্তর প্রদেশে প্রায় ২৫০টি হিন্দু-মুসলমান দাঙ্গার রেকর্ড করা হয়েছে।’
এভাবে বিজেপি সাম্প্রদায়িকতার বাইরে প্রতিবেশিদের মধ্যেও উত্তেজনা ছড়াচ্ছে। বাংলাদেশ দখল করার কথা বলছে। পাকিস্তান নিয়েও নানা কথা বলছে।
বিজেপির সাম্প্রদায়িক উস্কানি শুধু ভারতেই সীমাবদ্ধ থাকছে না। তার আশে পাশের রাষ্ট্র ও বিশ্বের মানুষ জানছে। বিশেষ করে বাংলাদেশের মত প্রতিবেশি দেশগুলোতে যেখানে ভারতের সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার সূত্র ধরেই বহু সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা হয়েছে সেখানকার সুযোগসন্ধানী সাম্প্রদায়িক অপশক্তির জন্য একটি হাতিয়ার তৈরি করে দিচ্ছে। এবং তাদের প্রস্তুতি গ্রহণের জন্য ডাক দিয়ে যাচ্ছে। এরমধ্যে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারে সাম্প্রদায়িক সহিংসতায় বহু সংখ্যালঘু সম্প্রদায় ব্যাপক ক্ষতির স্বীকার হয়েছে। আর মিয়ানমারে রোহিঙ্গা মুসলমানদের বর্বর নির্যাতন চালিয়েছে বৌদ্ধরা। যেখানে বৃহৎ রাষ্ট্র হিসাবে ভারতের অসাম্প্রদায়িকতার নজির সৃষ্টি করার কথা সেখানে তারা ব্যাপক সাম্প্রদায়িক বীজ বপন করছে এ অঞ্চলের মানুষের মনে। হয়তো যার এক ভয়ঙ্কর পরিণতি অপেক্ষা করছে। তাদের এ উস্কানি শুধু ভারত ছারখার করবে তা নয়, প্রতিবেশি সাম্প্রদায়িক অপশক্তিকে শক্তি যোগাচ্ছে। অর্থাৎ এমন নির্বাচনি প্রচারণা অন্য দেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিকেও হুমকির মুখে ফেলে দিচ্ছে। ভারতের গণতন্ত্র ও নেতৃত্ব এত বেশি সমৃদ্ধ হলে সেখানকার নেতাদের মুখ দিয়ে এমন বক্তব্য বের হয় কিভাবে। এটা ভারতের মত কোন রাষ্ট্রকে নেতৃত্ব দেয়ার যোগ্যতা বলেও মনে হয় না।
এখানে একটা কথা আছে। সেখানকার জনগণ। তারা যদি এমন সাম্প্রদায়িক নেতাদের আশ্বাস না দেন তাহলে তারা এমন উদ্বাহু হয় কিভাবে। নিশ্চয়ই কোন কারণে ভারতীয় জনগণ এই সাম্প্রদায়িকতাকে লালন করে। প্রশ্রয় দেয়। হয়ত অনেক সময় সাম্প্রদায়িকতায় তারা খুশিও। না হলে কেন তারা বিজেপির মত একটি সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠিকে শক্তিশালী করে তুলছে।
দুর্নীতিই কংগ্রেস সরকার ও বর্তমান কংগ্রেস দলের নির্বাচনি ভরাডুবির সম্ভাবনার কথা জরিপগুলো বলছে। জরিপগুলো বার বার কংগ্রেসকে সতর্ক করলেও কার্যত কংগ্রেস নিজেদের রক্ষার জন্য কোন পূর্ব প্রস্তুতি নেয়নি। সোনিয়াকে অনেক প্রভাবশালি বলা হলেও কার্যত তার নেতৃত্বে নিজের পুত্র রাহুলকে গড়ে তুলতে পারেননি। বিজেপির এক নেতা রাহুলকে এখনও ‘শিশু’ বলে মন্তব্য করেছেন। দুর্নীতি এবং সোনিয়ার ব্যর্থতাই মূলত ভারতে সাম্প্রদায়িক শক্তিকে উৎসাহ যোগাচ্ছে। এবং জোর সম্ভাবনার উপর দাঁড়িয়ে আছে সাম্প্রদায়িক শক্তি।
শুধু তাই নয় ভারতীয় বংশোদ্ভূত যুক্তরাজ্যের ৭২ জন বরেণ্য অধ্যাপক ও শিক্ষাবিদ ‘মোদি ক্ষমতায়’ এমন ভাবনা আমাদের শঙ্কিত করে তোলে শিরোনামে একটি খোলা চিঠি লিখেছেন যা যুক্তরাজ্যের ইনডিপেনডেন্ট পত্রিকায় ছাপানো হয়েছে। এসব বিশ্ববরেণ্য ভারতীয়রা বলেছেন, বিজেপি সরকার গঠন করলে ভারতে গণতন্ত্র, বহুগোষ্ঠির সহাবস্থান, মানবাধিকারের কি হবে তা নিয়ে আমরা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। তারা বলেছেন, মোদির সংঘগোষ্ঠির বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময়ে সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে সাম্প্রদায়িক সহিংসতায় ইন্ধন দেয়ার ইতিহাস আছে। ইত্যাদি নানা শঙ্কা প্রকাশের পরও ভারতীয় ভোটাররা নরেন্দ্র মোদিকে নিয়ে উদ্বাহু। যা ভারতের বাইরেও শঙ্কা তৈরি করছে।



১৫টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

যুক্তরাষ্ট্রে ইসরাইল বিরোধী প্রতিবাদ বিক্ষোভ

লিখেছেন হাসান কালবৈশাখী, ০৩ রা মে, ২০২৪ সকাল ৮:০২

গাজায় হামাস উচ্ছেদ অতি সন্নিকটে হওয়ায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নিউইয়র্ক ও লসএঞ্জেলসে কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পরেছিল। আস্তে আস্তে নিউ ইয়র্ক ও অন্যান্ন ইউনিভার্সিটিতে বিক্ষোভকারীরা রীতিমত তাঁবু টানিয়ে সেখানে অবস্থান নিয়েছিল।


... ...বাকিটুকু পড়ুন

৫০১–এর মুক্তিতে অনেকেই আলহামদুলিল্লাহ বলছে…

লিখেছেন বিচার মানি তালগাছ আমার, ০৩ রা মে, ২০২৪ বিকাল ৩:০০



১. মামুনুল হক কোন সময় ৫০১-এ ধরা পড়েছিলেন? যে সময় অনেক মাদ্রাসা ছাত্র রাজনৈতিক হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছিল। দেশ তখন উত্তাল। ঐ সময় তার মত পরিচিত একজন লোকের কীভাবে মাথায় আসলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

মেহেদীর পরিবার সংক্রান্ত আপডেট

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৮:৪৯


মার্চ মাস থেকেই বিষয়টি নিয়ে ভাবছিলাম। ক'দিন আগেও খুলনায় যাওয়ার ইচ্ছের কথা জানিয়েও আমার বিগত লিখায় কিছু তথ্য চেয়েছিলাম। অনেক ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও মেহেদীর পরিবারকে দেখতে আমার খুলনা যাওয়া হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

'চুরি তো চুরি, আবার সিনাজুরি'

লিখেছেন এমজেডএফ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৮


নীলসাধুকে চকলেট বিতরণের দায়িত্ব দিয়ে প্রবাসী ব্লগার সোহানীর যে তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছিল তা বিলম্বে হলেও আমরা জেনেছি। যাদেরকে চকলেট দেওয়ার কথা ছিল তাদের একজনকেও তিনি চকলেট দেননি। এমতাবস্থায় প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বরাবর ব্লগ কর্তৃপক্ষ

লিখেছেন নীলসাধু, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২২

আমি ব্লগে নিয়মিত নই।
মাঝে মাঝে আসি। নিজের লেখা পোষ্ট করি আবার চলে যাই।
মাঝেমাঝে সহ ব্লগারদের পোষ্টে মন্তব্য করি
তাদের লেখা পড়ি।
এই ব্লগের কয়েকজন ব্লগার নিজ নিক ও ফেইক... ...বাকিটুকু পড়ুন

×