“পাকিস্তানের দালাল” ওরফে “পাদা” নামের কুৎসিত এক ধরণের প্রাণী আছে বাংলাদেশে। এরা দ্রুত প্রজনন ক্ষমতা রাখে বিধায় অনুকূল পরিবেশে বাংলায় এদের বংশ বিস্তার হয়েছে ব্যাপক। বিপরীতে “ভাদা” ওরফে “ভারতের দালাল” বলতে একটা শব্দ ব্লগে চালু আছে যা মূলত “পাকিস্তানের দালালদের” তরফ থেকেই যত্র-তত্র যাকে-তাকে ট্যাগ মারা হয়। তবে এই ট্যাগ নতুন কিছু নয়। যারা এটা ব্লগসহ ইন্টারনেটের অন্যান্য মাধ্যমের দেয়ালে সাঁটায় তারা তাদের পিতৃ পদঙ্ক অনুসরন করেই এটা করছে। আজ থেকে ৪২ বছর আগে তাদের বাপ-দাদারা “ইন্ডিয়ার দালাল” খুঁজে বেড়াতো। সময়ের ফেরে সেটাই এখন “ভাদা”। আসুন দেখি কারা এই দেশে বারবার “ভাদা” বা “ভারতের দালাল” ট্যাগ পেয়ে আসছে।
কারা এদেশের “ভারতের দালাল”? পাকিস্তান ভাঙ্গার সঙ্গে যারা জড়িত ছিল তারাই “ভারতের দালাল”। এই তালিকায় একদম প্রথম সারিতে আছেন শেখ মুজিব, তাজউদ্দিন, নজরুল ইসলাম প্রমুখ। আছে স্বাধীনতা সংগ্রামের সূর্য সন্তানরা। মুক্তিবাহিনী ও তাদের সহযোগীরা। তারা সবাই ভারতের দালাল! আমার কথা বিশ্বাস না করলে তখনকার দৈনিক সংগ্রাম খুলে দেখুন। মুক্তিযোদ্ধাদের “ভারতের দালাল” “ভারতের চড়” “বিচ্ছিন্নবাদী ইত্যাদি বিশেষণে তখনকার মুসলিম লীগ, নেজামে ইসলাম, জামায়াতে ইসলাম বিশেষিত করেছে। সাঈদী-নিজামী আর গো. আযমরা পাকিস্তানকে রক্ষা করার জন্য মুক্তিবাহিনীর পাল্টা রাজাকার, আল বদর বাহিনী গঠন করে। পাড়ায় পাড়ায় শান্তি কমিটি গঠন করে “ভারতের দালালদের” সাইজ করার জন্য। দেশ স্বাধীন হবার পর এই “পাকিস্তানী দালালদের” বিচারের জন্য দালাল আইন করে বিচারের উদ্যোগ নেয় হয়। অনেকেই দন্ডিত হয় তখন। কারুর নাগরিত্ব চলে যায়। কারোর সাজা হয়। বেশির ভাগই গর্তে গিয়ে লুকায়।
ভারত বিরোধীতা আমাদের ঐতিহাসিক দিক। আমরা ভারতকে সব সময় সন্দেহের চোখে দেখি। ভারত যে কোন সময় আমাদের দখল করে ফেলবে। শুধুমাত্র এই থিমকে কাজে লাগিয়ে বিএনপির মত দল সবচেয়ে বেশিবার বাংলাদেশকে শাসন করতে পেরেছে। ভারতপন্থি বলে আওয়ামী লীগকে নির্বাচনের সময় চরম অস্বস্তিতে পরতে হয়। বাংলাদেশের রাজনীতিতে ভারত এক ফ্যাক্ট। কম-বেশি আমরা সবাই ভারত বিরোধী। এ কারণেই বরাবর “ভারতের দালাল” হালে পানি পেয়েছে। এটাকেই কাজে লাগিয়েছে পাকিস্তানের দালালরা। এই পাদারা “ভাদা” নামকরণ করছে যাদেরকে খেয়াল করলেই দেখা যাবে তারা সবাই এই দেশের মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পক্ষের, প্রগতিশীল ব্যক্তিবর্গ।
২০১৩ সালের শাহবাগ মুভমেন্টের সময়ও এই আন্দোলনে ইন্ডিয়ার গন্ধ খুঁজে পেয়েছে পাদারা। ‘মরহুম’ আমার দেশে কাগজে চোখ বুলালে মহা চুদুরবুদুর মাহমুদুর আপনাকে দেখাতে পারবে ইন্ডিয়ার ষড়যন্ত্র কোনখানে। কোলকাতার দেশ পত্রিকায় শাহবাগকে প্রচ্ছদ করা সংখ্যা দেখিয়ে বলা হয়েছে মাহমুদুরের কাগজে, এটাই নাকি প্রমাণ ইন্ডিয়ার টাকায় শাহবাগে নাচানাচি চলছে!
ভারতের সঙ্গে আমাদের অমিমাংসিত সমস্যাগুলো রাজনৈতিক ও কুটনৈতিকভাবে দুই দেশের সরকার মিটিয়ে ফেলবে এই আমাদের আশা। সীমান্তে হত্যাযজ্ঞ, পানিবন্টন সমস্যা এগুলো সুষ্ঠু কুটনৈতিক ও রাজনৈতিক সম্পর্কের উপর সমাধান নির্ভর করে। ভারত একটি রাষ্ট্র, রামকৃষ্ণ মিশন নয়, বাংলাদেশও আঞ্জুমানে মফিদুল ইসলাম নয়, কাজেই যে যার স্বার্থটাকে আগে রাখবে এটাই বাস্তবতা। কিন্তু পাকিস্তানের দালালরা ওরফে পাদারা এটাকেই ভিন্নখানে প্রবাহিত করছে পাবলিক সেন্টিমেন্টকে কাজে লাগিয়ে। পাকিস্তানের দালালের উপর ভারতের দালাল চাপিয়ে দিয়ে ইতিহাস মুছে ফেলার এ এক ব্যর্থ প্রয়াস। চাইলেই কি সব মুছা যায়? না, যায় না। পাকিস্তানের দালাল তথা পাদারা ইতিহাসের নিমর্ম সত্য। এই পাদারা এখনো সক্রিয় তাদের পাকিস্তান প্রেতাত্মাকে কাঁধে নিয়ে। বাংলাদেশে পাদারা অচ্ছুত, নিকৃষ্ট, ঘৃণ্য এক জীব। শাহবাগের নতুন প্রজন্মের শ্লোগানে এরা নিজেদের অস্তিত্ব সংকটে ভুগছিল। তাই যতটা নিচে নামতে হয় এই আন্দোলনকে স্তব্ধ করার জন্য তার কোনটাই বাদ দেয়নি। ৭১-এর পুরোনো চেহারায় তাই আমরা তাদেরকে আবার রাজপথে দেখতে পেলাম। বারবার আমরা একটা কথা বলি, আরেকটা মুক্তিযুদ্ধ, এবার তাহলে সরিয়াসলি ভাবতেই হবে, সেই আরেকটা মুক্তিযুদ্ধ কি এবং কেমন করে? তার রূপরেখাই বা কে দিবে?