somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কারবালার মর্মান্তিক ঘটনা আমাদের তাহলে কোন সত্যর মুখোমুখি করে তোলে?

১৪ ই নভেম্বর, ২০১৩ সকাল ১০:৫১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

কারবালার প্রান্তরে কে কার সঙ্গে যুদ্ধ করেছিল? ইসলাম ধর্ম দুনিয়ায় আগমনের উদ্দেশ্যই হলো শান্তি প্রতিষ্ঠা করা। একমাত্র শান্তির পথই হলো ইসলাম। এই বুলিগুলোর মুখে এক প্রচন্ড চপেটাঘাত হলো কারবালার মর্মান্তিক ঘটনা। কোন ইহুদী-খ্রিস্টান বা মূর্তি উপাসক প্যাগনদের সঙ্গে আল্লার নবীর দৌহিত্রর যুদ্ধ বাঁধেনি, বেধেছে ইসলামের বিখ্যাত সাহাবীর পূত্র ইয়াজিতের সঙ্গে। লড়াইটা কোন মহৎ উদ্দেশ্য বা লক্ষ্যের জন্যও নয়, ক্ষমতায় বসার জন্য। এখন ইয়াজিত স্বৈরাচার, অগণতান্ত্রিক আর পক্ষান্তরে ইমাম হোসেন মসনদের ন্যায্য দাবীদার, গণতন্ত্রপন্থি ইত্যাদি কথামালা কপচিয়ে শাক দিয়ে কি মাছ ঢাকা যাবে?

ইসলামের চার খলিফার তিনজনই খুন হন এই ক্ষমতার কামড়াকামড়ির জেরে। এই চারজনের সবাই ক্ষমতাকে আঁকড়ে থেকেছেন শত আন্দোলন সংগ্রামের মুখে। তাদের ক্ষমতার লোভ ইসলামের সিংহাসনকে করেছে রক্তাক্ত, কলঙ্কিত। শান্তির ধর্ম ইসলাম হয়েছে সোনার পাথর বাটি। ইসলাম হচ্ছে ভাইয়ের হাতে ভাইয়ের হত্যার ইতিহাস। ইসলামের ইতিহাস প্রাসাদ ষড়যন্ত্রের ইতিহাস। শান্তির ধর্মের আড়ালে রাজনীতি ও ক্ষমতার যে বিষবৃক্ষ একদিন আরবের বুকে জন্ম নিয়েছিল তার ভয়ংকর ফল হলো কারবালা।

নবী মুহাম্মদ রাজনীতি করেছেন। রাষ্ট্র ক্ষমতার অধিকারী হয়েছেন। শাসনদন্ড হাতে নিয়েছেন। রাজ্য বিস্তারে মনোনিবেশ করেছেন। তিনি প্রিন্স, শাসক, আইনপ্রণেতা, সর্বচ্চ ক্ষমতার অধিকারী। এত সব কিছুর আগে তিনি প্রফেট। যেন তেন কোন প্রফেট নন, দাবী করা হয় তাঁর জন্যই দুনিয়া সৃজন করা হয়েছে। এই বিচিত্র বিপুলা পৃথিবীর সৃষ্টির কারণ খুঁজতে, ঈশ্বরের মনোবাসনা বুঝতে যখন যুগে যুগে দার্শনিকরা উচ্চমার্গের ভাববাদী কথা আওড়িয়েছেন তখন সিম্পলি বলে দেয়া হয়েছে, এই বসুন্ধরা কেবল মুহাম্মদের উদ্দেশ্যে নিবেদিত! আর কিচছু না! ৫৭০ খ্রিস্টাব্দে আরবের পৌত্তলিক গোত্রে জন্ম নেয়া এই মানুষটি মৃত্যুর পর ১৫০০ বছর কেটে গেছে। তারপরও পৃথিবীর ঘুরে চলেছে তার কক্ষপথে অবিরাম। পৃথিবী একবারের জন্যও থেমে থাকেনি এই মানুষটির জন্য। মানব সভ্যতার অগ্রগতি বিষ্ময়কর গতিতে ছুটে চলেছে। কালের বিচারে তুল্যমূল্য চলছে আজ তাকে নিয়েও। তার রাজনীতি, রাষ্ট্রনীতির সুদূর প্রসারী প্রতিক্রিয়া, তার ধর্ম, ধর্মগ্রন্থ আজকের বিশ্বে যে প্রভাব বিস্তার করে চলেছে তার নিমর্ম সমালোচনা যতই তার ভক্তদের অসহ্য লাগুক তা সামনে চলে আসবে বার বার ঘটনায়, দিবসে, আচারের প্রাসঙ্গিকতায়। যেমন এই আশুরায়। কেন পালিত হয় আশুরা?

কারবালার মর্মান্তিক ঘটনা আমাদের তাহলে কোন সত্যর মুখোমুখি করে তোলে? ইসলাম যদি ন্যায় প্রতিষ্ঠার জন্য দুনিয়াতে এসে থাকে তাহলে ইমাম হোসেনের প্রতি কথিত অন্যায় কেমন করে সম্ভব হলো? ইসলাম আরব ভুখন্ডে ন্যায় ও শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য এসেছে। আরবের বিদ্যমান অন্য ধর্মগুলোকে অশান্তি ও বিবাদের জন্য দায়ী করে ইসলাম ইহুদী, খ্রিস্টান আর মূর্তি পূজারীদের মেরে ধরে খেদিয়ে নিজেকে নিষকংকট করেও শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে পারলো না! ক্ষমতার কি নোংরা আর কুৎসিত রূপ ধারন করলে শাশুড়ি জামাতা পরস্পর যুদ্ধে নামে? নবী মুহাম্মদের কন্যাকে সপরিবারে পুড়িয়ে মারার মত ধৃষ্ঠতা দেখায় ইসলামের অঘোষিত নবী ওমর! নবী বংশকে রাষ্ট্রীয়ভাবে বঞ্চিত করার জন্য রাষ্ট্রীয় ফরমান জারি করা হয়। ইতিহাসের এই নির্মম সত্যগুলোকে লুকানোর সব রকম চেষ্টাই করা হয়েছে। তাই আশুরাকে তাই চিত্রিত করা হয়েছে স্বৈরাচারী, অত্যাচারী শাসকের বিরুদ্ধে গণতান্ত্রিক (!) নেতার আত্মত্যাগ। এমন কি ইয়াজিদকে কাফের বলতেও দ্বিধা করেননি অনেক ইসলামিস্ট! তবু শেষ রক্ষা হবে কি?

একজন সাধারণ মুসলমান যখন কারবালা নিয়ে কৌতূহলী পড়াশোনা শুরু করবে তখন সে দেখবে ইসলামের শান্তি আর ন্যায় প্রতিষ্ঠার বেলুন মুসলমানের হাতেই ফেঁটে চুপসে গেছে! দেখবে নবী মুহাম্মদের প্রতিষ্ঠিত সাম্রাজ্যর উত্তরাধীকার নিয়ে ভয়াবহ সংঘাত আর রক্তপাত। ইসলাম কেমন করে তাহলে দুনিয়াতে শান্তি স্থাপন করবে? আবু বকর যা পারেনি, ওরম, আলী, ওসমান যা পারেনি তা পারবে শফি-মফি-মাদানী-পাদানী... পীর সাহেব চরমনাই? এরা কি আলীর চেয়ে শ্রেষ্ঠ? শান্তি প্রতিষ্ঠায় এরা চার খলিফার চেয়ে দক্ষ?

আশুরা শিয়াদের সেই শোকাবহ দিন যেদিন তারা বঞ্চিত হয়েছিল চুড়ান্তভাবে। শিয়ারাই চিরকাল আশুরাকে সামনে এনে জগতবাসীকে দেখাবে তারা বঞ্চিত হয়েছিল। তাদের রক্তে সিক্ত হয়েছিল কারবালার প্রান্তর। ইসলামের সুমহান ভ্রাত্রিত্ব আর শান্তি প্রতিষ্ঠার মুখে এহেন চুনকালি তার রাজনৈতিক চরিত্রটিকেই পরিস্ফুটিত করে তুলবে। সুন্নি মুসলমান তাই আশুরাকে নব সাজে পালনের তোড়জোর শুরু করেছে কয়েক বছর থেকে। ভারতীয় উপমহাদেশে এই আশুরা বা মহরমকে চিরকাল কারবালার বেদনাবিধুর শোকাবহ ঘটনা স্মরণে পালিত হয়ে আসছে। গত কয়েক বছর থেকে দেখছি এই আশুরাকে ইমাম হোসেনের হত্যা দিবস হিসেবে নয়, মুসা নবীর ফেরাউন থেকে নাজাতের স্মরণে, ইউনুস নবীর জেল থেকে মুক্তি দিবস স্মরণে পালন করছে। কারবালা আউট! আমি নিজে অনেক ব্যক্তিকে দেখেছি নবী মুহাম্মদের মৃত্যু, তিন খলিফার অস্বাভাবিক মুত্যু ও কারবালার ঘটনা বিস্তারিত জেনে ইসলাম সম্পর্কে সন্দিহান হয়ে পড়েছে যে এটা আসলেই কোন ঈশ্বর প্রেরিত ধর্ম কিনা? বেশির ভাগ লোকে জানে না এসব ঘটনা। জানে না কারবালার ঘটনায় জড়িয়ে আছে নারী কেলেঙ্কারির মত অনুসঙ্গ। নবী দৌহিত্র অন্যের ভাবী বধূকে জেনেশুনে কেমন করে বিয়ের প্রস্তাব পাঠায়? এতটা বেয়াক্কেল কেমন করে হতে পারে বেহেস্তে শহীদদের সর্দার!

সুন্নিরা রাখঢাগ করে আশুরাকে যেভাবেই প্রমাণ করতে চাক শেষ রক্ষা হবে না। কারণ সত্য প্রতিষ্ঠা হবেই। ইসলামের ইতিহাস ক্ষমতা ও পেশিবলের ইতিহাস যা এসেছে রক্তাক্ত পথ বেয়ে। যারা এই দেশে ইসলাম কায়েম করতে চান তারা কারবালার মর্মান্তিক পরিণতির জবাব না দিয়ে কোন্ সোনার খেলাফতের স্বপ্ন দেখান আমাদের? নতুন করে কোন বিষবৃক্ষ ফলাতে চান? ইতিহাস তো বলেই দিচ্ছে তার ফল কতটা করুন মর্মান্তিক...।
১৫টি মন্তব্য ৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ব্লগে বিরোধী মতের কাউকে নীতি মালায় নিলে কি সত্যি আনন্দ পাওয়া যায়।

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১৮

ব্লগ এমন এক স্থান, যেখানে মতের অমিলের কারণে, চকলেটের কারণে, ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের কারণে অনেক তর্কাতর্কি বিতর্ক কাটা কাটি মারামারি মন্তব্যে প্রতিমন্তব্যে আঘাত এগুলো যেনো নিত্য নৈমিত্তিক বিষয়। ব্লগটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

সিকান্দার রাজার চেয়ে একজন পতিতাও ভালো।

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ৮:০৭

সিকান্দার রাজা কোকের বোতল সামনে থেকে সরিয়ে রাতারাতি হিরো বনে গেছেন! কিন্তু তাকে যারা হিরো বানিয়েছেন, তারা কেউ দেখছেন না তিনি কত বড় নেমকহারামি করেছেন। তারা নিজেদেরকে ধার্মিক বলে দাবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগার'স ইন্টারভিউঃ আজকের অতিথি ব্লগার শায়মা

লিখেছেন অপু তানভীর, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ১১:০৫



সামুতে ব্লগারদের ইন্টারভিউ নেওয়াটা নতুন না । অনেক ব্লগারই সিরিজ আকারে এই ধরণের পোস্ট করেছেন । যদিও সেগুলো বেশ আগের ঘটনা । ইন্টারভিউ মূলক পোস্ট অনেক দিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

...এবং উচ্চতায় তুমি কখনই পর্বত প্রমাণ হতে পারবে না

লিখেছেন নতুন নকিব, ০৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৫৬

...এবং উচ্চতায় তুমি কখনই পর্বত প্রমাণ হতে পারবে না

ছবি কৃতজ্ঞতাঃ অন্তর্জাল।

ছোটবেলায় মুরব্বিদের মুখে শোনা গুরুত্বপূর্ণ অনেক ছড়া কবিতার মত নিচের এই লাইন দুইটাকে আজও অনেক প্রাসঙ্গিক বলে মনে হয়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমেরিকার গ্র্যান্ড কেনিয়ন পৃথিবীর বুকে এক বিস্ময়

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪১


প্রচলিত কিংবদন্তি অনুসারে হাতে গাছের ডাল আর পরনে সাধা পোশাক পরিহিত এক মহিলার ভাটাকতে হুয়ে আতমা গ্র্যান্ড কেনিয়নের নীচে ঘুরে বেড়ায়। লোকমুখে প্রচলিত এই কেনিয়নের গভীরেই মহিলাটি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×