দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ঈশ্বরের মর্মান্তিক মৃত্যু ইউরোপে তার ভক্তদের শোক প্রকাশের সময়টুকুও পর্যন্ত দেয়নি। জীবনযুদ্ধের কঠিন লড়াইয়ে নিয়োজিত মানুষগুলো শুধু এটুকু বুঝেছিল, আমাদের মাথার উপর দেখবার মত আর কেউ রইল না। কারুর কাছে নালিশ, ক্ষোভ, প্রতিকার জানিয়ে আর লাভ নেই। মৃত ঈশ্বরের নাম জপ করে সময় নষ্ট করার চেয়ে একঘন্টা বেশি শ্রম করলে দুটো পয়সা বেশি রোজগার হবে। আর একটু বেশি রোজগার মানে একটু ভাল করে বেঁচে থাকা। তাই ঈশ্বর নিয়ে মরাকান্নার সময় হলো না তাদের।... কি আর করা, পাদ্রিরাই বেচারা ঈশ্বরের মৃত দেহটাকে টেনেটুনে গির্জার ভেতরে নিয়ে গিয়ে তুলে রাখে। মানুষ টিকিট কেটে এখন গির্জায় যায় সেই ঈশ্বরকেই দেখতে। পাদ্রিরা যদি মৃত ঈশ্বরকে দেখিয়ে এখন দুটো পয়সা রোজগার করে তাদের পেট চালায় আপনাদের কোন আপত্তি আছে?
পৃথিবীর সবচাইতে বেশি দরিদ্র মানুষের বাস যেখানে সেখানে এখনো ঈশ্বরের মৃত্যু হয়নি। এই গরীব মানুষগুলো তাই এখনো আকাশে হাত তুলে ফরিয়াদ জানায়, নালিশ, আর্জি, ভক্তি, ক্ষোভ, প্রতিকার, শোক, শান্তি...। মূলত এখানে আরবের ঈশ্বরের একচেটিয়া কারবার বহাল। তিনি মূলত সৌদি নাগরিক। প্রতিবছর তার ভক্তরা ভিসা-টিকিট কেটে তার ঘরের সামনে গিয়ে হাজির হয়ে জানান দেয়, হুজুর, আমি এসেছি! এই হাজির হওনেঅলারা আবার মূলত ধনীই হয়ে থাকেন। গরীব মানুষের ঈশ্বরের বাসায় যাওয়া সামর্থ হয়ে উঠে না। তিনি সর্বত্র বিরজমান, তবু কেন তিনি সৌদিকেন্দ্রি হয়ে গেলেন বুঝা যায় না...।
এই ঈশ্বরের মৃত্যুও আসন্ন। তিনি এখন ধুঁকছেন। নিজের বানানো জালে এখন তিনিই আটকে গেছেন। তার সন্ত্রাসী বাহিনী এমন এক নেটওয়ার্ক তৈরি করেছে, যে নেটওয়ার্ক গোটা অঞ্চলটাকে রোজ কয়েকশ বার প্রকম্পিত করে তুলেছে ভারি অস্ত্র আর বোমা হামলায়। পরমানু অস্ত্র কি পারমানবিক বোমা যদি তারা হস্তগত করতে পারে তাহলে সেটা ফাটিয়ে দিতে তাদের দুবার ভাবার প্রয়োজন হবে না। পরকালের খিদে ইহকালকে অসম্পূর্ণ রাখতে দ্বিধা করবে না। মানুষ তাই এখনি এদের জঙ্গি নামে ডাকছে। কোন যোদ্ধা, সৈনিক নয়, একদম জঙ্গি। বলছে ইসলামী জঙ্গি। যদিও বলছে ঈশ্বর ও তার বন্ধু খুব ভাল মানুষ, কিন্তু তাদের নাম ভাঙ্গিয়ে কিছু লোক হাঙ্গামা শুরু করেছে...।
এই ঠেকও ধোপে টিকবে না বেশিদিন। গত পাঁচ-ছয় বছর ধরে ঈশ্বরের বাণী ও তার ঘনিষ্ট বন্ধুর বাণী খুঁজে খুঁজে দেখা হচ্ছে যা আগে কখনো পুরোহিত ছাড়া সাধারণ মানুষ মাথা ঘামায়নি। লোকে কেবল জানতে শুরু করেছে সন্ত্রাসবাদের গুরু ও শুরু কে ও কোথায়। এ এক বড় আঘাত। তাই প্রথমেই আসছে ক্রুদ্ধ প্রতিক্রিয়া। ক্ষোভে ফেটে পড়ছে ভক্তকূল ঈশ্বরের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হওয়ায়। মামলা-হামলা, চাপাতি, গুলি, বোমার শেষ হয়ে মানুষ যখন থিতু হয়ে বসবে, তখন নিভৃতে সে ভেবে দেখবে-। নিজের ভেতরে এমন এক রসায়ন ঘটবে যে নিজে থেকেই চুপসে যাবে। নিরব এক বিপ্লব ঘটে যাবে সবার অলক্ষ্যে অথচ সবার একান্ত নিজের মধ্যে। কেউ হয়ত এখন ঠোঁট বাঁকিয়ে হেসে ভাবছেন আমি বলতে চাচ্ছি বুঝি, ঈশ্বরের ঘরগুলো তখন সব আলু রাখার কোলেস্টরল হয়ে যাবে? আরে না! ঈশ্বরের ঘর ঠিকই থাকবে, তবে সেখানে মানুষ যাবে টিকিট কেটে মৃত এক ঈশ্বরের জাদুঘর দেখার জন্য। পূর্বপুরুষরা করে এসেছে সেই নিয়ম মেনে হাজিরা দেয়া। এসব কোন্ ভাবিকালের কথা আমি জানি না। নির্দিষ্ট করে আমি বলতে পারবো না। শুধু বলতে পারি, এই আরবের ঈশ্বর এখন মৃত্যুশয্যায়। তার মৃত্যু আসন্ন। তার সৎকারের আয়োজন শুরু হয়েছে। এটা একটা শুরু, পথ অনেক...।