পৃথিবীতে এখন তুমুল আলোচনার বিষয় এঞ্জেলিকা মার্কেলকে নিয়ে
সম্প্রতি তিনি নীরবে বিদায় নিয়েছেন জার্মানির চ্যান্সেলর এর পদ থেকে
তিনি দীর্ঘদিন প্রচন্ড ক্ষমতাশালী একনম্বর মহিলা হিসাবে সম্মানিত হয়ে আসছিলেন ।
ইউরোপের ২৭ দেশের মধ্যে সবথেকে শক্তিশালী অর্থনীতির চালিকা বলতে এঞ্জেলিকা মার্কেলকেল এর জার্মানকে বুঝাত।
(Merkel announced that she would stand down as Leader of the CDU at the party convention, and would not seek a fifth term as Chancellor in 2021.)
আসুন উনার সংক্ষিপ্ত বায়োগ্রাফী দেখি : -
জন্ম: ১৭ই জুলাই, ১৯৫৪ (বয়স ৬৭ বছর), হামবুর্গ, জার্মানি
অফিস: ২০০৫ সাল থেকে জার্মানির চ্যান্সেলর
স্বামী : জোয়াকিম সৌর (মি। ১৯৯৮), উলরিচ মের্কেল (মি। ১৯৭৭–১৯৮২)
শিক্ষা: বার্লিনে জার্মান বিজ্ঞান একাডেমি (১৯৮৬), আরও
পূর্ববর্তী অফিসগুলি: বুন্ডেস্টাগের সদস্য (২০০২-২০০৫), আরও
বই: ৩১ তম সিঙ্গাপুর বক্তৃতা: সিঙ্গাপুর বক্তৃতা, ২ জুন ২০১১, নোবেল পদার্থবিদ উপর পড়াশোনা
২০০৯ সালে জহরলাল নেহরু পদক, শার্লাম্যাগন পুরস্কার, ইত্যাদি ।
পৃথিবীতে এইরকম বিরল নেতা আর কয় জন আছে?
জার্মানি এবং তার নাগরিকদের উন্নতির শিখরে রেখে এঞ্জেলিকা মার্কেল নিঃশব্দে সরে দাঁড়ালেন, প্রায় ছ'মিনিট করতালি ধ্বনি দিয়ে পুরো জার্মানি বিদায় জানালো এঞ্জেলিকা মার্কেলকে কয়েক দিন আগে, যাকে আঠারো বছর আগে জার্মানির
মানুষ বেছে নিয়েছিল তাদের নেত্রী হিসেবে।
বিনিময়ে মার্কেল জার্মানির আট কোটি মানুষকে উপহার দিয়ে গেলেন সুশাসন, অর্থনৈতিক বিকাশ, উন্নত জীবন আর নিরাপত্তা।
শুধু তাই নয় লক্ষ লক্ষ সিরিয়া প্যালেস্টাইনের শরনার্থীদের আশ্রয় দিতে বিশ্ব মানবতার এক অনন্য উদাহরণ রেখে গেছেন।
গত আঠারো বছরে জার্মানিতে তার বিরুদ্ধে একটিও অনৈতিক কাজের অভিযোগ ওঠেনি। একটিও স্বজন পোষণের অভিযোগ নেই।
এই আঠারো বছরে তিনি একবারের জন্যও টিভিতে বা কোনো জনসভায় নিজের কৃতিত্ব দাবী করেন নি।
তার ছবি আর বানী নিয়ে জার্মানির কোনো রাস্তায় কখনো মিছিল হয়নি, কারন শাসন ক্ষমতা জিইয়ে রাখবার জন্য তিনি কোন
বাহিনী তৈরী করেননি, আত্মপ্রচার করবার শিক্ষা তার ছিল না। বিরোধীরা নির্ভয়ে তার বিরোধিতা করেছেন। তার মুখে মানুষ কখনো হাস্যকর, নির্বোধের মত কথাবার্তা শোনেনি। মানুষকে তিনি মিথ্যা আশ্বাস বা প্রতিশ্রুতি দেননি।উন্নতির মিথ্যা খতিয়ান দেননি।
বার্লিনের রাস্তায় তিনি নিজের এবং দলের প্রচারের জন্য একটি ছবিও লাগাননি। বিরোধী নেতাদের চরিত্র হনন করেননি।
এঞ্জেলিকা মার্কেলকে বিশ্ব চেনে 'Lady of the world' নামে।
প্রবাদ আছে , তিনি নাকি একাই ষাট লক্ষ পুরুষের সমান।
তার বিদায়কালে মানুষ যে ভাবে আবেগতাড়িত হয়েছেন, জার্মানির ইতিহাসে তা নজিরবিহীন। সারা জার্মানি জুড়ে মানুষ বাড়ির ব্যালকনিতে এসে প্রায় ছ' মিনিট ধরে তাকে হাত তালি দিয়ে বিদায় জানিয়েছেন।কেউ তার নামে কবিতা লিখে ছাপায়নি।
কোনো চিত্রকর ছবি এঁকে তার প্রচার করেনি। তবু মানুষ আবেগে ভেসে গিয়েছেন। সমস্ত জার্মানি এক হয়ে দাঁড়িয়ে, ভেদাভেদ ভুলে, তাদের নেত্রীকে বিদায় জানিয়েছেন, সভ্য জাতি হিসাবে চরম শিখরে আজ তাদের অবস্হান ।
মার্কেল পূর্ব জার্মানির মানুষ। অনাড়ম্বর সাধারণ জীবন যাপনে অভ্যস্ত। ক্ষমতার শিখরে থেকেও তার জীবন অনাড়ম্বরই ছিল। একটি সাধারণ নিজস্ব গাড়ি ছাড়া তার ব্যক্তিগত প্লেন, ইয়ট এমনকি বিলাস বহুল কোনো এপার্টমেন্ট বা বাড়ি নেই।
অন্যান্য ছাপোষা জার্মান নাগরিকের মত তিনি একটি অতি সাধারন এপার্টমেন্টে থাকেন ।
অবিশ্বাস্য শোনালেও মার্কেলকে মানুষ একই পোশাকে আঠারো বছর ধরে দেখে এসেছে। একটি প্রেস কনফারেন্সে একজন মহিলা সাংবাদিক জানতে চেয়েছিলেন, তার কি অন্য স্যুট নেই।
মার্কেল উত্তরে বলেন তিনি রাজনীতিবিদ, মডেল নন।
অন্য একটি সন্মেলনে সাংবাদিকেরা জানতে চান, তিনি এত ব্যস্ত, তার বাড়ির কাজ কে করেন?
তার বাড়িতে কাজের লোক, রান্নার লোক আছে কিনা।
উত্তরে মার্কেল জানান, তার বাড়িতে একজন মহিলা এবং একজন পুরুষ কাজের লোক আছে।
মহিলাটি তিনি নিজে, এবং পুরুষটি তার স্বামী। সাংবাদিকেরা মজা করে জানতে চান, কাপড় জামা কে ধোয়? তিনি না তার স্বামী? মার্কেল জানান, তিনি কাপড় জামা ওয়াশিং মেশিনে ঢোকান। সাবানের গুড়ো ঢেলে দেন।
তার স্বামী মেশিন চালান।তারা রাতে ওয়াশিং মেশিন চালান, কারন এই সময় বিদ্যুতের চাহিদা কম থাকে।
এরপর সাংবাদিকদের তিনি জানান,
তিনি আশা করবেন অবান্তর প্রশ্ন না করে সংবাদ কর্মীরা যেন তার সরকারের সাফল্য এবং ব্যর্থতা নিয়ে প্রশ্ন করে।
.. . ............. এঞ্জেলিকা মার্কেল। ইউরোপের সব থেকে শক্তিশালী অর্থনীতির চালিকা। ...............
তিনি কেন পদত্যাগ করেছেন , এই প্রশ্নটি ভাইরাল :
*জার্মানির অ্যাঞ্জেলা মার্কেল জানিয়েছেন, সাম্প্রতিক নির্বাচনী ব্যর্থতার পরে ২০২১ সালে তিনি চ্যান্সেলর পদ থেকে পদত্যাগ করবেন।
** তিনি বার্লিনে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছিলেন,আমার মেয়াদ শেষ হওয়ার পরে আমি কোনও রাজনৈতিক পদ চাইব না,"
***তিনি আরও বলেছিলেন যে তিনি ডিসেম্বরে কেন্দ্রীয়-ডান সিডিইউ দলের নেতা হিসাবে পুনরায় নির্বাচন চাইবেন না।
২০০০ সাল থেকে তিনি এই পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন।
****রোববারের হেসে রাজ্যের জরিপে সিডিইউ মারাত্মকভাবে দুর্বল হয়ে পড়েছিল, এটি আরেকটি গুরুতর ধাক্কা।
*****সিডিইউ এবং এর জাতীয় জোটের অংশীদার, সোশ্যাল ডেমোক্র্যাটস, উভয়ই সেখানে আগের জরিপে দশ শতাংশ
পয়েন্ট হ্রাস পেয়েছিলো।
****** রাজ্য সংসদের ভোটে মিসেস মের্কেলের বাভেরিয়ান বোন দল, সিএসইউর বিশাল ক্ষতির মুখোমুখি হওয়ার
মাত্র কয়েক সপ্তাহ পরে এই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে।
..................................... ধন্য এসব দেশের মানুষ আর তাদের নেত্রী এঞ্জেলিকা মার্কেল।............................
সুত্র : অর্ন্তজাল, দৈনিক পত্রিকা (সংকলিত)