somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মানবতার কথা বলুন, ধর্ম আপনাতেই প্রতিভাত হবে

১৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০১২ সকাল ১০:৪৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সারা বিশ্বে মুসলমানরা প্রতিবাদের ঝড় তুলছেন। বিষয় অতি তুচ্ছ মনে হয়েছে আমার কাছে। এরকম একটা ভিডিওয়ের জন্য মানুষ হত্যা করা আমাদের কাছে জায়েজ হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু কেন? আমরা কি বর্বর হতে চলেছি?

ভিডিওটি আমি দেখেছি। এই ভিডিওটি একটি বাজে, অশালীন এবং কোন অংশে একটা পর্ণ মুভির থেকে কম নয়। একজন মহান ব্যাক্তিত্বকে এরূপে উপস্থাপন করা নিঃসন্দেহে নিন্দাজনক। শুধু মোহাম্মাদকে কেন? যিশু খ্রিষ্ট, মুসা, গৌতম বুদ্ধকে নিয়ে কেউ এধরণের ভিডিও চিত্র নির্মাণ করলে আমি সেটারও বিরোধীতা করব। এটা কোন সুস্থ মস্তিষ্কের কাজ হতে পারে না।

যারা আন্দোলনের কথা বলছেন তাদের একটু ভাবতে বলি।

আফগানিস্তানে ২০০১ সালে একটি প্রকান্ড বুদ্ধ মূর্তি ভেঙ্গে ফেলা হয়েছিল। তখন বুদ্ধ ধর্মের অনুসারীরা কি এরকম তান্ডব করেছিলেন? এটা কি তাদের ধর্মের উপরে বিশাল আঘাতের মত ছিল না? তারা কোন মুসলমান দেশের রাষ্ট্রদূতকে হত্যা করেনি। দুই একটি ছিটেফোটা প্রতিবাদ তারা হয়ত করেছিল।

এই ঘটনা বলার প্রয়োজন এইজন্য যে, বুদ্ধ ধর্ম, খ্রিষ্ট ধর্ম, হিন্দু ধর্ম এসব ধর্মের লোকেদের মানসিক পরিবর্তন। লক্ষ্য করুন, আমেরিকা যখন ভিয়েতনামে যুদ্ধে নেমেছিল, তখন কেউই কি বলেছিলেন, আমেরিকা বৌদ্ধদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে নেমেছে? অথবা, এই ধরুন, নর্থ কোরিয়া। আমেরিকা যখন নর্থ কোরিয়াকে প্রকাশ্যে হুমকি দেয়, তখন কিন্তু খ্রিষ্ট সম্প্রদায় এটাকে খ্রিষ্টানদের উপর হামলা বলে না।

আমেরিকা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় যে কয়টি দেশ দখল করেছিল, ইতালি, জাপান (যার এখনও কোন সেনাবাহিনী নেই) ও জার্মানি, সেই সকল দেশ এখন অর্থনৈতিক উন্নতির শিখড়ে চলে গেছে। আমার প্রশ্ন, আমেরিকা কি তাদের দাবিয়ে রাখতে চেয়েছিল?

মুসলমানদের সমস্যা আছে। এটা স্বীকার করার সময় এখন এসেছে। আমেরিকা যখন আফগানিস্তানে হামলা চালায়, তখন সবাই বললেন, এটা নাকি মুসলমানদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র। আমার প্রশ্ন হলো, কেমন করে? তালেবান সরকার সেই দেশে দাড়ি রাখা বাধ্যতামূলক করেছিল, তারা নারী শিক্ষা বন্ধ করে দিয়েছিল, তারা মেয়েদেরকে বোরখা নয় শুধু চার দেয়ালের বদ্ধ ঘরে আটকে ফেলেছিল। এই যখন বাস্তবতা, তখন আমেরিকা সেখানে ইন্টারফেয়ার করেছে। সভ্যতার এহেন উৎকর্ষের ভেতরে কি একটা দেশ ১৪০০ বছর পিছিয়ে থাকতে পারে?

মুসলমানদের আরেকটি সমস্যা হলো কথায় কথায় মিথ্যার আশ্রয় নেওয়া। এই যেমন আফগানিস্তানের কথা বললাম, কোন মোল্লাকে জিজ্ঞেস করলেই সে বলবে এগুলো পশ্চিমা প্রপাগান্ডা ছিল। এরকম কিছুই নাকি তালেবানেরা করে নাই। এই মিথ্যার আবরণে সত্যকে ঢাকার প্রবণতা আমাদের আজ এমনই একটি পর্যায়ে নিয়ে গিয়েছে, যে কোন একটি হাদীস, বা কুর-আনের আয়াত পর্যন্ত বললে, ওপাশ থেকে শুনতে হয় এই হাদীস মিথ্যা, বা এই কুর-আনের আয়াতের অর্থ এমনটি নয়।

মিথ্যায় কোন কিছু গড়ে তুললে তা একদিন নষ্ট হবেই। এটাই সত্য, এবং এইটাই ইতিহাস। মুসলমানরা নামাজ পড়েন ঠিকই কিন্তু সভ্য হতে পারেন না। তাদের কাছে একটা মানুষের পোড়া ছবি দিয়ে সেটাকে "একটি ভালো খবর" বলে প্রচার করা কোন ব্যাপারই নয়। কিন্তু নবীজীর বিরুদ্ধে কিছু বলা যাবে না।

নবীজীর বিরুদ্ধে কিছু বলাটা আমি জাস্টিফাই করতে আসি নাই। ভেবে দেখুন একবার, আফগানিস্তানে বৌদ্ধ মূর্তি গুড়িয়ে দেওয়াতে কি বৌদ্ধ ধর্ম পৃথিবী থেকে বৌদ্ধ ধর্ম বিলুপ্ত হয়ে গেছে? অথবা, এই ধরুন ড্যান ব্রাউনের মত লোক, খ্রিষ্ট ধর্মকে তার একটি বই দিয়ে তুলোধুনা করে ছাড়লেন। তাতে কি খ্রিষ্ট ধর্ম নষ্ট হয়ে গেল? এসব বিষয় খ্রিষ্টানরা ভাল করেই বুঝেন। বৌদ্ধরাও বুঝেন হিন্দুরাও বুঝেন। তাই তাদের এসব বিষয়ে মাথা ব্যাথা নেই। আঘাতও লাগে না।

আমি বরাবরই একটা কথা বলে আসছি। সেটা হলো, আপনারা গর্ব করে বলেন, পশ্চিমাদের ইসলামো-ফোবিয়া আছে। কিন্তু মুসলমানদের যে পশ্চিমাফোবিয়া আছে সেটা কে আঙ্গুল দিয়ে দেখায় দিবে? পশ্চিমা দেশগুলো হলো গণতন্ত্রের ভিত্তিতে গড়ে ওঠা। গণতন্ত্রের মূল মন্ত্রই হলো মানুষের ব্যাক্তিগত স্বাধীনতা। যেটা মুসলমানদের চক্ষুশূল। ব্যাক্তিগত স্বাধীনতা থাকলে একজন ব্যাক্তি যে কোন সময় ধর্মান্তরিত হতেই পারেন। এইজন্য পৃথিবীর প্রায় সব মুসলিম দেশে একনায়কতন্ত্র রয়েছে। সিরিয়া, লিবিয়া, ইয়েমেন, মিসর, ইত্যাদি দেশ এর জলন্ত প্রমাণ। বাংলাদেশও একপ্রকার একনায়কের হাতেই বন্দী।

আধুনিক সমাজ ব্যাবস্থায়, মুসলমানরা পড়েছে দারুণ বেকায়দায়। একে তো তাদের ধর্ম পালন, অন্য দিকে রয়েছে আধুনিক সভ্যতা। এই দুইটা পালন করতে গিয়ে তাদের প্রতিদিন নিজের সাথে যুদ্ধ করতে হচ্ছে। অথচ এর একটা সহজ মুক্তি আছে। আর সেটা হলো, এই যে ধর্মকে আধুনিক করা। একটা স্ট্যাটিক জিনিস কখনই ডায়নামিক মানুষের ম্যানুয়াল হতে পারে না। এই স্ট্যাটিকটাকে পরিবর্তন করতে হবে।

মানুষ হত্যা করার ব্যাপারে ফিরে আসি। মানুষ হত্যা করা, মানবতা বিরোধি অপরাধ। সেটা যেই দেশই করুক না কেন। আমেরিকা যখন আফগানিস্তানে নির্বিচারে হামলা চালাল তখন অনেক নিরীহ মানুষও মারা গেছে। এই খবরটা আমি পশ্চিমা মিডিয়া থেকেই পেয়েছি। যেটাকে আমরা বলে থাকি, এক তরফা। আমেরিকার এই হামলারও নিন্দা আমি জানাই। কিন্ত সেই সাথে মুসলমানদের মানবতা বিরোধি অপরাধকেও অপরাধই মনে করতে হবে। মিথ্যা দিয়ে একে ঢেকে দেওয়া মানেই, আপনি আরও উগ্র হয়ে যাচ্ছেন। আপনার কাছে তখন ওসামা বিন লাদেনের হত্যাযজ্ঞ ভালো মনে হচ্ছে।

মোহাম্মদ (সঃ ) আজ জীবিত থাকলে তিনি কখনই এরকম হামলা সমর্থন করতেন না। কেননা এটা তাঁর জীবন থেকেই প্রতিভাত যে তাঁর রাস্তায় কাঁটা প্রদানকারী মহিলাকেও কেউ কিছু বলেনি। তাঁরই নিষেধ ছিল হয়ত। কেননা তিনি ছিলেন মানবতাবাদী।

মিথ্যা জিনিসটা এতই খারাপ যে এর থেকে উদ্ভূত সমস্যাই আমাদের কাল হয়ে দাড়াচ্ছে। বাংলাদেশের কোন মুসলমান খুজে পাওয়া যাবে না, যে এটা বিশ্বাস করে ৯/১১ এর সন্ত্রাসী হামলা মুসলমানরা করেছিল। এটা একটি সত্য, যা আমরা মিথ্যা দিয়ে ভরতে ভরতে মিথ্যা বানিয়ে দিয়েছি। মিথ্যা বানিয়ে কি লাভ? এই দায় থেকে কি আল্লাহ আমাদের মুক্তি দিয়ে দিবেন? তিনিই জানেন ভালো করেই কোনটা অন্যায় আর কোনটা অন্যায় নয়।

এবার ভেবে দেখুন, ভারতের মত হিন্দু অধ্যূষিত দেশে, জাকির নায়েক কিভাবে ইসলাম প্রচার করছেন। তিনি প্রকাশ্যে হিন্দু নেতাদের সমালোচনা করে থাকেন। তিনি সেখানে প্রকাশ্যে হিন্দুদের মুসলমান ধর্মে ধর্মান্তরিত করছেন। তাতে কি? হিন্দু ধর্মের লোকেরা এখন জাকির নায়েকের মাথার দাম ধরেছে? এই একই জিনিস কি একটা মুসলিম দেশে সম্ভব? আমার দেশে যদি একটা হিন্দু কি বৌদ্ধ লোক টেলিভিশন চ্যানেলে তার ধর্মে মানুষকে দিক্ষা দিতে পারবেন?

প্রশ্ন করে দেখুন নিজেকে। ইসলাম ধর্ম প্রসার লাভ করুক সেটা একজন মুসলমান হিসেবে কে না চাইবে। তবে, অন্য ধর্মের কেউই কি এর বিরুদ্ধে কথা বলছেন? কেন বলছেন না? কারণ তাদের কিছু যায় আসে না। তাদের কাছে ধর্ম এতটাই ইনসিগনিফিক্যান্ট একটা ব্যাপার যে এটা নিয়ে কে কি করল তাতে তাদের কিচ্ছু যায় আসে না। নীল আর্মস্ট্রং নিজে কখনও বলেননি কেন তিনি খ্রীষ্টান না মুসলিম? এত তাঁর কিচ্ছু যায় আসে না। তিনি একজন আধুনিক মানুষ ছিলেন। দাড়ি রাখেননি, টুপিও পড়েননি। তাঁর কাছে ধর্ম এমন কোন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় না। তাই তিনি বলেননি।

এবার একটা মজার কথা শুনুন। যিনি সত্য তিনি চিরদিনই সত্য। আফগানিস্তানে যে বৌদ্ধমূর্তি ধ্বংসের কথা আমি পোস্টের প্রথমে বলেছিলাম, সেই বৌদ্ধমূর্তি পুনরায় নির্মিত হয়েছে। পুরো কাজই এখন শেষ। তাহলে, সেই মূর্তি গুড়িয়ে দিয়ে লাভটা হলো কি? মহানবীকে আজ যারা অত্যন্ত বাজে ভাবে উপস্থাপন করেছে, এই তাদের অভিনেতা অভিনেত্রীগণই কি "দ্যা ম্যাসেজ" এর মত ছবি বানান নি?

বলার অনেক কিছুই ছিল। সময়ের স্বল্পতার জন্য বলতে পারলাম না। তবে, আমাদের মুসলমানদের এখন সময় এসেছে মসজিদের বাইরের পৃথিবীটাকে একটু চেনার, ও জানার। আপণ ধর্মের উপর দাঁড়িয়ে মানবতা কি জিনিস সেটা আমাদের শিখতে হবে। চারজন মানুষ হত্যা করাটা মোটেও কোন সমাধান নয়।
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

এ যুগের বুদ্ধিজীবীরা !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৪০


ডিসেম্বর মাসের চৌদ্দ তারিখ বাংলাদেশে বুদ্ধিজীবী দিবস পালন করা হয়। পাকিস্তান মিলিটারী ও তাদের সহযোগীরা মিলে ঘর থেকে ডেকে নিয়ে হত্যা করেন লেখক, ডাক্তার, চিকিৎসক সহ নানান পেশার বাংলাদেশপন্থী বুদ্ধিজীবীদের!... ...বাকিটুকু পড়ুন

মায়াময় স্মৃতি, পবিত্র হজ্জ্ব- ২০২৫….(৭)

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৭

ষষ্ঠ পর্বের লিঙ্কঃ মায়াময় স্মৃতি, পবিত্র হজ্জ্ব- ২০২৫-….(৬)

০৬ জুন ২০২৫ তারিখে সূর্যোদয়ের পরে পরেই আমাদেরকে বাসে করে আরাফাতের ময়দানে নিয়ে আসা হলো। এই দিনটি বছরের পবিত্রতম দিন।... ...বাকিটুকু পড়ুন

টাঙ্গাইল শাড়িঃ অবশেষে মিললো ইউনস্কর স্বীকৃতি

লিখেছেন কিরকুট, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:৫৭



চারিদিকে যে পরিমান দুঃসংবাদ ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে এর মধ্যে নতুন এক গৌরবময় অধ্যায়ের সূচনা হলো বাংলাদেশের টাঙ্গাইলের তাতের শাড়ি এর জন্য, ইউনেস্কো এই প্রাচীন হ্যান্ডলুম বুননের শিল্পকে Intangible Cultural... ...বাকিটুকু পড়ুন

আধা রাজাকারি পোষ্ট ......

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৫৬


আমি স্বাধীন বাংলাদেশে জন্মগ্রহণ করেছি। আমার কাছে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা, বা পূর্ব পাকিস্তানের সঙ্গে আজকের বাংলাদেশের তুলনা—এসব নিয়ে কোনো আবেগ বা নস্টালজিয়া নেই। আমি জন্মগতভাবেই স্বাধীন দেশের নাগরিক, কিন্তু... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্দিরা কেন ভারতীয় বাহিনীকে বাংলাদেশে দীর্ঘদিন রাখেনি?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:২০



কারণ, কোল্ডওয়ারের সেই যুগে (১৯৭১সাল ), আমেরিকা ও চীন পাকিস্তানের পক্ষে ছিলো; ইন্দিরা বাংলাদেশে সৈন্য রেখে বিশ্বের বড় শক্তিগুলোর সাথে বিতন্ডায় জড়াতে চাহেনি।

ব্লগে নতুন পাগলের উদ্ভব ঘটেছে;... ...বাকিটুকু পড়ুন

×