somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

স্বরচিতা স্বপ্নচারিণী
অবসরে বই পড়তে পছন্দ করি, মুভি দেখতেও ভালো লাগে। ঘোরাঘুরিও পছন্দ তবে সেটা খুব একটা হয়ে উঠে না। বাকেট লিস্ট আছে অনেক লম্বা। হয়তো কোন একদিন সম্ভব হবে, হয়তো কোনদিন হবে না। কিন্তু স্বপ্ন দেখতে জানি, প্রত্যাশা করতে জানি। তাই সেটাই করে যাচ্ছি।

কিছু ক্ল্যাসিক মালায়ালাম সিনেমা (পর্ব -১)

২২ শে জুলাই, ২০২০ বিকাল ৪:৪২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :




পুরানো মুভি দেখতে আমার বরাবরই বেশি ভালো লাগে, আর এটাই বেশি দেখা হয়। সেটা হতে পারে বাংলা, হিন্দি কিংবা ইংরেজি।পঞ্চাশ আর ষাটের দশকের ফিল্মগুলো বেশি টানে। এই তিনটি ভাষার নতুন ফিল্ম বরং দেখা হয় না, পুরানো গুলো নিয়েই অনেক সন্তুষ্ট আমি। নতুন মুভির ভিতর শুধু মালায়ালাম বেশি দেখা হয় আর মাঝে মাঝে ইরানিয়ান ফিল্ম একটু দেখি।২০১৭ সালের শেষের দিকে আমি মূলত মালায়ালাম ফিল্ম দেখা শুরু করেছিলাম। প্রথম দিকে নতুন মুভিগুলো দিয়ে দেখা শুরু করলেও গত বছর থেকে পুরানো আশির আর নব্বইয়ের দশকের মালায়ালাম মুভি গুলো দেখা শুরু করি। এর থেকে পুরানো গুলো দেখা হয়নি কারণ সাবটাইটেল পাওয়া টা মূল সমস্যা। সে যাই হোক, এখন এই পুরানো মালায়ালাম মুভি দেখতে দেখতে এমন অবস্থা হয়েছে নতুন মুভির থেকে পুরানো গুলোই বেশি দেখা হয়। কারণ আগেই বলেছি, আমি যে কোন ভাষার পুরানো মুভি দেখতে অনেক পছন্দ করি।
যাই হোক, মালায়ালামে আমার সব থেকে প্রিয় অভিনেত্রী হলেন শোবানা। প্রথমে তাকে মিন্নারাম ফিল্মে দেখি আর সেখান থেকেই তার ভক্ত হয়ে যাই। অবশ্য এর আগে তাকে প্রিয়দর্শনের হিন্দি ফিল্ম মেরে বাপ পেহলে আপে দেখেছিলাম (এটাও একটা মালায়ালাম ফিল্মের রিমেক)। কিন্তু তখন তাকে চিনতাম না।


১) Minnaram:
এটার পরিচালনা প্রিয়দর্শনের ছিল। এই প্রিয়দর্শনের ফিল্ম আমার দেখা হয় খুব। কমেডি ফিল্মের জন্য তার বেশ নাম ডাক রয়েছে। হিন্দিতে তিনি যতগুলো ফিল্ম বানিয়েছেন তার বেশিরভাগই মালায়ালাম ফিল্মের রিমেক। কিন্তু আমি তার কাছে কৃতজ্ঞ তিনি এটার রিমেক করেন নি। রিমেক করাকে খারাপ বলছি না, তার পরিচালিত হিন্দি রিমেকগুলো আমার অনেক প্রিয়। তবে এটা রিমেক না করাতে ভালো হয়েছে।
ববির ছোটবেলায় মা-বাবা মারা যাওয়ায় সে তার মামার কাছে বড় হয়েছে। মামাকে সে নিজের বাবার মতই শ্রদ্ধা করে, আর মামার ছেলে বেবিকে নিজের বড় ভাইয়ের মত মান্য করে। বেবির পাঁচ ছেলেমেয়ে দুনিয়ার পাজি। স্কুল থেকে তাদের সাসপেন্ড করা হয়েছে, আর বাসায় কোন টিচারও তাদের দুষ্টামির যন্ত্রনায় টিকতে পারে না। কিন্তু বাড়িতে শুধুমাত্র ববির সাথেই তাদের একটু সদ্ভাব আছে। ববির বিয়ে ঠিক হয়ে আছে তার মামার একজন বিজনেস পার্টনারের মেয়ের সাথে। এমন অবস্থায় নীনা নামের একটা মেয়ে তার বাড়িতে এসে ববির স্ত্রী বলে নিজেকে দাবি করে। একটা বাচ্চা মেয়েকে সে ববির মেয়ে বলে পরিচয় দেয়। ববির তো আক্কেল গুড়ুম হওয়ার দশা। নীনা ববির ক্লাসমেট ছিল কলেজ লাইফে কিন্তু একদিন কাউকে কিছু না জানিয়ে সে হোস্টেল ছেড়ে চলে যায়। ববি তাই নীনার এই সব অদ্ভুত কর্মকাণ্ডের কোন কারণ খুঁজে পায় না। সে যতই বলে সে নির্দোষ, ববির মামা নীনাকে তার বাড়িতে থাকার অনুমতি দেয় যতদিন পর্যন্ত না ব্যাপারটার কোন মীমাংসা হচ্ছে। এদিকে বাড়িতে থাকতে থাকতে বেবির পাঁচ ছেলেমেয়ের সাথে নীনার বেশ ভাব হয়ে যায়। এটা সবার কাছেই অপ্রত্যাশিত ছিল।
শোবানা এই ফিল্মের প্রাণ বলা যায়। সাথে আছে প্রিয়দর্শনের কমেডি। উপরি পাওয়া হিসেবে আছে এই ফিল্মের গান গুলো, প্রতিটি গান অনেক সুন্দর।
প্রিয়দর্শন একই বছর শোবানা এবং মোহনলালকে নিয়ে Thenmavin Kombath নামে আরও একটি ফিল্ম বানিয়েছিলেন। এই ফিল্মটি জাতীয় পুরস্কার এবং ফিল্মফেয়ারে কয়েকটি ক্যাটেগরিতে পুরস্কার পায়। আর শোবানা সেরা অভিনেত্রী হিসেবে ফিল্মফেয়ার পেয়েছিলেন। কিন্তু আমার কাছে এই থেনমাভিন কোমবাথের থেকে মিন্নারাম বেশি ভালো লেগেছে। থেনমাভিন কোমবাথ হিন্দিতে রিমেক হয়েছে সাত রাঙ্গ কি সাপনে নামে, জুহি আর অরবিন্দ লীড রোলে ছিল। তবে অরিজিনাল টা বেশি ভালো।

মুক্তির তারিখ - ১৬ সেপ্টেম্বর ১৯৯৪
আইএমডিবি রেটিং - ৭.৫/১০
ব্যক্তিগত রেটিং - ১০/১০
এইন্থুসান লিংক - Minnaram - Einthusan
ইউটিউব লিংক - Minnaram - Youtube
সাবটাইটেল লিংক - Minnaram - Subtitle




২) Manichitrathazhu :
এটাকে অবশ্য পুরোপুরি শোবানার ফিল্ম বলা যায়। এই ফিল্মে অভিনয়ের জন্য তিনি জাতীয় পুরস্কার এবং কেরালা স্টেট পুরস্কার পেয়েছিলেন। এটার পরিচালনা ফজিলের ছিল, প্রিয়দর্শন ছিলেন সহকারী পরিচালক হিসেবে। পরে এই ফিল্মের অনেক গুলো ভাষায় রিমেক হয়, সবশেষে রিমেক হয় হিন্দিতে ভুল ভুলাইয়া নামে। যেটার পরিচালনা প্রিয়দর্শন করেছিলেন। হিন্দিতে শোবানা আর মোহনলালের চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন বিদ্যা আর অক্ষয়। এটার কাহিনী মোটামুটি সবাই জানেন তাই আর লিখছি না। শুধু বলে রাখি এটার হিন্দি আর মালায়ালাম ভার্সন দুটোই আমার প্রিয়। তবে মালায়ালামটা পুরানো আর অরিজিনাল বলে একটা অন্য রকম ভালো লাগা কাজ করে।

মুক্তির তারিখ - ২৬ ডিসেম্বর ১৯৯৩
আইএমডিবি রেটিং - ৮.৭/১০
ব্যক্তিগত রেটিং - ১০/১০
উল্লেখযোগ্য পুরস্কার - জাতীয় পুরস্কার (২টি), কেরালা স্টেট পুরস্কার (৩টি)
এইন্থুসান লিংক - Manichitrathazhu - Einthusan
ইউটিউব লিংক - Manichitrathazhu - Youtube




৩) Innale:
এই পরিচালকের (পদ্মরঞ্জন) কয়েকটি ফিল্ম আগে দেখা হয়েছে, তবে এটা বেশি ভালো লেগেছে। অ্যাক্সিডেন্টে শুধুমাত্র দুইজন বাদে একটি বাসের অন্য সব যাত্রী নিহত হয়। বেঁচে যাওয়া দুইজনের ভিতর একজন পুরোপুরি প্যারালাইজড হয়ে যায়। আর অন্যজন থাকে একটি মেয়ে, যে তার সব স্মৃতি ভুলে যায়। সে তার নাম পর্যন্ত মনে করতে পারে না। ডাক্তার সন্ধ্যা তার চিকিৎসা করছিলেন। ডাক্তার সন্ধ্যার ছেলে সারাথ সেই হাসপাতালের ম্যানেজার হিসেবে কর্মরত আছে। সে মেয়েটির নাম দেয় মায়া। মায়ার ছবি পেপারে ছাপিয়ে বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়। কিন্তু এক একজন এসে বিরক্ত করা শুরু করে। হাসপাতাল ছাড়াও সারাথের মালিকানায় একটি স্কুল আছে। সেই স্কুলে সারাথ মায়াকে একটি চাকুরী পাইয়ে দেয়। আর এর ভিতর বিভিন্ন মানুষের আনাগোনা লেগেই আছে। মায়াকে তাদের ভাইঝি, মেয়ে ইত্যাদি বলে খুঁজতে আসে। কেউ কেউ হতাশ হয়ে ফিরে যায় আবার কেউ অসৎ উদ্দেশ্য নিয়ে আসে। এর ভিতর সারাথ মায়াকে পছন্দ করতে শুরু করে। মায়ারও ভাল লাগে সারাথকে। এমন সময় এক দম্পতি এসে মায়াকে তাদের মেয়ে ইন্দু বলে দাবি করেন। আর তারপরই নরেন্দ্র নামে একজন বিজ্ঞানী আমেরিকা থেকে এসে হাজির হন। তার স্ত্রী গৌরি বাস অ্যাক্সিডেন্টে নিখোঁজ হয়, তাই মায়ার খোঁজে আসেন যদি মায়াই গৌরি হয়।
এন্ডিং টা ভালো আবার কনফিউজিং। কেমন রিঅ্যাক্ট করা উচিত বুঝতে পারা দায়। শোবানা এই ফিল্মে অভিনয়ের জন্য প্রথমবারের মত ফিল্মফেয়ার পুরস্কার পান।

মুক্তির তারিখ - ১৯৮৯
আইএমডিবি রেটিং - ৮/১০
ব্যক্তিগত রেটিং - ৮/১০
উল্লেখযোগ্য পুরস্কার - কেরালা স্টেট পুরস্কার (১টি), ফিল্মফেয়ার (১টি)
ইউটিউব লিংক - Innale - Youtube
সাবটাইটেল লিংক - Innale - Subtitle





*** ইউটিউব আর এইন্থুসানে যে লিংক পাওয়া গিয়েছে, ফিল্মের সাথে দিয়ে দিয়েছি। এইন্থুসানে সাবটাইটেল সহ আছে। আর ইউটিউবে যেগুলোতে সাবটাইটেল নেই, আলাদা সাবটাইটেলের লিংক দিয়ে দিয়েছি। এক্ষেত্রে ইউটিউব থেকে মুভিটি নামিয়ে সাবটাইটেল দিয়ে দেখতে হবে। কোন কোন ক্ষেত্রে সিংক করা লাগতে পারে।
হ্যাপি ওয়াচিং!



“We love films because they makes us feel something. They speak to our desires, which are never small. They allow us to escape and to dream and to gaze into the eyes that are impossibly beautiful and huge. They fill us with longing. But also, they tell us to remember; they remind us of life. Remember, they say, how much it hurts to have your heart broken.” ― Nina LaCour
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই নভেম্বর, ২০২২ রাত ৯:০১
৭টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছবির গল্প, গল্পের ছবি

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৩:১৫



সজিনা বিক্রি করছে ছোট্ট বিক্রেতা। এতো ছোট বিক্রেতা ও আমাদের ক্যামেরা দেখে যখন আশেপাশের মানুষ জমা হয়েছিল তখন বাচ্চাটি খুবই লজ্জায় পড়ে যায়। পরে আমরা তাকে আর বিরক্ত না করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে লীগ আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে জামাত

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৪৬


বাংলাদেশে রাজনৈতিক ছদ্মবেশের প্রথম কারিগর জামাত-শিবির। নিরাপত্তার অজুহাতে উনারা এটি করে থাকেন। আইনী কোন বাঁধা নেই এতে,তবে নৈতিক ব্যাপারটা তো অবশ্যই থাকে, রাজনৈতিক সংহিতার কারণেই এটি বেশি হয়ে থাকে। বাংলাদেশে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৪৩

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

চা বাগানের ছবি কৃতজ্ঞতা: http://www.peakpx.com এর প্রতি।

আমাদের সময় একাডেমিক পড়াশোনার একটা আলাদা বৈশিষ্ট্য ছিল। চয়নিকা বইয়ের গল্পগুলো বেশ আনন্দদায়ক ছিল। যেমন, চাষীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×