"Black and white creates a strange dreamscape that color never can." ― Jack Antonoff
আশা করছি সবাই ভালো আছেন। আমি এর আগে বিভিন্ন ইন্ডাস্ট্রির ফিল্ম নিয়ে লিখলেও কখনও হলিউড ফিল্ম নিয়ে কিছু লিখিনি। আসলে এখনকার হলিউড ফিল্ম আমাকে তেমন আকর্ষণ করেনা তাই দেখাও হয়না সেই ভাবে। তবে আমি ওল্ড হলিউডের অনেক বড় ফ্যান। যত ইংলিশ মুভি দেখা হয়েছে বেশিরভাগই সব পুরানো দিনের। তাই চিন্তা করলাম এটা নিয়ে একটা নতুন সিরিজ লেখার চেষ্টা করি।
তাছাড়া নতুন মুভি গুলো নিয়ে লেখার মানুষের অভাব নেই, তাই আমার লেখা নতুন করে কে পড়বে। ক্ল্যাসিক ফিল্মগুলো নিয়ে রিভিউ খুব কম চোখে পড়ে। তাই এই ফিল্ম গুলো নিয়ে নিজের ভালো লাগা এবং মন্দ লাগা গুলো একটু শেয়ার করার চেষ্টা করছি। যারা পুরানো ফিল্ম দেখতে অনেক পছন্দ করেন আশা করছি তাদের ভালো লাগবে। বিখ্যাত হলিউড পরিচালক ফ্রাংক কাপরার চারটি ফিল্ম আজকের পোস্টে তুলে ধরলাম।
১) It's a Wonderful Life:
এই ফিল্মের কাহিনী শুরু হয় জর্জ বেইলি নামের এক বালককে ঘিরে। সে ছোট বেলায় তার ভাইকে বাঁচাতে গিয়ে একটা কানের শ্রবণ ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। তার একটা ফ্রেন্ড ছিল মেরি নামে। ছোটবেলা থেকেই মেরি জর্জকে পছন্দ করতো। বড় হওয়ার পরও তার এই পছন্দের পরিবর্তন হয়নি। জর্জের বাবা হঠাৎ মারা যাওয়ায় তাকে ব্যবসার দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিতে হয়। পড়াশুনা তাই সে শেষ করে উঠতে পারেনা। তবে তার ছোট ভাই হ্যারিকে সে ঠিকই পড়াশুনা করতে পাঠায়। এদিকে মেরির সাথে জর্জের আবার পরিচয় হয় বড় হওয়ার পর। এবার জর্জও পছন্দ করতে শুরু করে মেরি কে। ঘটনা ভালোভাবেই চলছিল। জর্জ তার জীবনে খুব খুশি ছিল। কিন্তু হঠাৎ করেই সব এলোমেলো হয়ে যায়। জর্জ একটা বিপদের সম্মুখীন হয়। জীবনের প্রতি খুব বিষাদগ্রস্থ হয়ে পড়ে। জীবনটা তার কাছে অর্থহীন মনে হয়। তার মনে হতে থাকে তার জন্মই যদি না হত এই পৃথিবীতে তাহলে কতই না ভালো হত। মৃত্যুকে সেই মুহূর্তে তার কাছে সব সমস্যার একমাত্র সমাধান বলে মনে হয়। কিন্তু সিনেমার টাইটেলেই তো বলা আছে জীবন অনেক সুন্দর। তাহলে সেটা কিভাবেই বা অর্থহীন হয়!
আমার মনে হয় পুরানো হলিউড ফিল্ম খুব বেশি না দেখলেও এমনিতে নতুন হলিউড মুভি যারা নিয়মিত দেখেন তারাও মোটামুটি সবাই এই ফিল্ম দেখে ফেলেছেন। কিন্তু তারপরও এটা নিয়ে লিখেছি কারণ ফ্রাঙ্ক কাপরার নাম মনে হলেই এই ফিল্মের কথা আমার সবার আগে পড়ে মনে পড়ে। তার পরিচালিত এটাই আমার প্রথম দেখা ফিল্ম ছিল। এই ফিল্মটা দেখেছিলাম অনেক আগে যখন আমি এখনকার মত এত বেশি পুরানো হলিউড ফিল্ম দেখিনি। এই ফিল্ম দেখেই আমি জেমস স্টুয়ার্টকে চিনি। কিন্তু তখন আমি তাকে জর্জ বেইলি বলতাম। পরে আমি তার অনেক সিনেমা দেখেছি। কিন্তু তারপরও এই সিনেমার কল্যাণে আমি তাকে বেশ অনেক বছর ধরেই জর্জ বেইলি বলতাম। জীবন নিয়ে খুব হতাশায় থাকলে অনেকেই এই ফিল্মটি দেখার জন্য সাজেস্ট করে থাকে। আমি অবশ্য তেমন কিছু বলছিনা। কারণ একজন ডিপ্রেসড মানুষ কখনই ফিল্ম দেখে হতাশা কাটিয়ে ফেলতে সক্ষম হবে না। তবে এই ফিল্মটি দেখার পর অনেকেই জীবন নিয়ে একটু ভিন্নভাবে চিন্তা করতে বাধ্য হবে।
মুক্তির তারিখ ― ২০ ডিসেম্বর ১৯৪৬
আইএমডিবি রেটিং ― ৮.৬/১০
ব্যক্তিগত রেটিং ― ১০/১০
জনরা ― ফ্যান্টাসি, ড্রামা, রোমান্স
উল্লেখযোগ্য পুরস্কার ― অ্যাকাডেমি পুরস্কার (১টি)
২) Arsenic and Old Lace:
এই ফিল্মের কাহিনী যে কিভাবে লিখবো তাই বুঝতে পারছিনা। বেশি কিছু লিখে ফেললে স্পয়লার হয়ে যেতে পারে।
এর কাহিনী শুরু হয় মরটিমার ও ইলেইনকে নিয়ে। মরটিমার ইলেইনকে অনেক ভালোবাসলেও সে ইলেইনকে বিয়ে করতে অনেক ভয় পায়। তারপরও ইলেইন তাকে কনভিন্স করে বিয়ে করার জন্য। তাদের বিয়ে হয়ে যায়। মরটিমারের বিয়ের পর তার দুইজন ফুফু মার্থা এবং অ্যাবি ব্যাপক খুশি হয়। মরটিমারের মা-বাবা বেঁচে না থাকায় তারাই মরটিমারের ফ্যামিলির অভিভাবক। মরটিমারের বিয়েভীতির পিছনের কারণ হল তার ভাই টেডির মাথায় মারাত্মক সমস্যা আছে। সে সবসময় নিজেকে রাজনীতিবিদ রুজভেল্ট মনে করে এবং তার মতই আচরণ করে। টেডির কর্মকান্ড হাস্যকর হলেও, এতে কারও কোনো ক্ষতি হয়না। কিন্তু মরটিমার চিন্তা করে পাগলামি প্রায় সময় বংশগত হয়ে থাকে। মরটিমার নিজেও যদি ভবিষ্যতে মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ে তখন ইলেইনের অনেক প্রবলেম হবে। এই চিন্তা করে সে বিয়ের প্রতি কিছুটা অনীহা প্রকাশ করতো। কিন্তু হঠাৎ করে মরটিমার আবিষ্কার করে তার দুই ফুফুও মানসিকভাবে অসুস্থ এবং তাদের কর্মকাণ্ড টেডির মত হার্মলেস নয়। ঘটনা আরও গুরুতর করার জন্য আবির্ভাব হয় মরটিমারের আরও এক ভাই জোনাথনের। তার অবস্থা খুব সিরিয়াস পর্যায়ের। একদিনের ভিতর এত জিনিস হজম করা মরটিমারের জন্য অসম্ভব হয়ে দাঁড়ায়। সে চিন্তা করে বিয়ে করে আসলেই অনেক বড় ভুল করে ফেলেছে।
ক্যারি গ্রান্টের ভক্তরা যারা এই ফিল্ম এখনও দেখেন নি, তাড়াতাড়ি এটা নিয়ে বসে পড়ুন। দেখতে দেখতে ভাববেন এটা কিভাবে মিস হয়ে গিয়েছিল। সবাই জানে তার কমিক টাইমিং দূর্দান্ত। এই ফিল্মে তিনি অসাধারণ ছিলেন। প্রিয় হলিউড অভিনেতার কথা জিজ্ঞাসা করা হলে আমি ক্যারি গ্রান্টের কথা সবার আগে বলবো। ভবিষ্যতে শুধু তার মুভি নিয়ে আমার অন্তত একটা পোস্ট লেখার ইচ্ছা আছে।
মুক্তির তারিখ ― ১ সেপ্টেম্বর ১৯৪৪
আইএমডিবি রেটিং ― ৭.৯/১০
ব্যক্তিগত রেটিং ― ১০/১০
জনরা ― ব্ল্যাক কমেডি, থ্রিলার
৩) It Happened One Night:
এই ফিল্মের গল্প শুরু হয় এলি নামের একটি মেয়েকে ঘিরে। সে তার বাবাকে জানায় সে কিং নামের একজনকে বিয়ে করেছে। তার বাবা আলেকজান্ডার চান এলি এই বিয়ে যেন বাতিল করার জন্য আবেদন করে। আলেকজান্ডারের ধারণা কিং মূলত তার সম্পত্তির জন্য এলিকে বিয়ে করেছে। আর তাছাড়া তিনি মনে করেন এলি আসলে কিংকে আদৌ ভালবাসে না। আলেকজান্ডার তার মেয়েকে অনেক বেশি প্যাম্পার করেন তাই সে কিছুটা জেদী হয়ে গিয়েছে। সবসময় সে জেদ করে তার বাবার অপছন্দের কাজ করতে পছন্দ করে। আলেকজান্ডারের ধারণা কিংকে সে জেদের বশেই বিয়ে করেছে। এই বিয়ে অ্যানাল করার জন্য তাই আলেকজান্ডার নানাভাবে এলিকে মানানোর চেষ্টা করতে থাকে। এক পর্যায়ে এলি পালিয়ে যায়। সে কিং এর সাথে দেখা করার জন্য নিউ ইয়র্কের উদ্দেশ্যে বাসে যাত্রা শুরু করে। বাসে তার দেখা হয় পিটার নামের এক নিউজ রিপোর্টারের সাথে। পিটার সদ্যই তার চাকুরী হারিয়েছে। পুরো জার্নিতে নানারকম ঘটনা ঘটে। পিটারের সাথে এলি কখনও ঝগড়া করে আবার কখনও তার ভালো বন্ধু হয়ে উঠে। এদিকে আলেকজান্ডার মেয়েকে হারিয়ে খুব দুর্দশাগ্রস্থ। মেয়েকে পাওয়ার জন্য যে কোনো কিছু তিনি করতে রাজি হন।
এই কাহিনী নিয়ে এত সিনেমা বানানো হয়েছে যে তার কোনো হিসাব নেই। উত্তম সুচিত্রার "চাওয়া পাওয়া" এবং আমির খান ও পূজা ভাটের "দিল হে কি মানতা নাহি" এই ফিল্মের রিমেক। অন্যদিকে এই ফিল্মের কাহিনী থেকে ইন্সপায়ার হয়ে দেব আনন্দ এবং ওয়াহিদা রেহমানের "সোলভা সাল" ফিল্মটিও বানানো হয়েছে। এর কাহিনীতে অনেক পরিবর্তন থাকলেও গল্পের থিম একই। এছাড়া আমি ছোটবেলায় একটা বাংলা নাটক দেখেছিলাম এই কাহিনীর উপর ভিত্তি করে বানানো। কিন্তু এগুলোর সবগুলো ছাপিয়ে গিয়েছে ইট হ্যাপেনড ওয়ান নাইট সিনেমাটি। অরিজিনাল যে সব সময় বেস্ট সেটাই এই ফিল্মটি প্রমাণ করে। ফিল্মের মূল অভিনেতা অভিনেত্রী সহ বেশ কয়েকটি শাখায় এটি অস্কার জিতে নেয়। এই ফিল্মের জন্য ফ্রাঙ্ক কাপরাও শ্রেষ্ঠ পরিচালক হিসেবে তার প্রথম অস্কার পান।
মুক্তির তারিখ ― ২২ ফেব্রুয়ারি ১৯৩৪
আইএমডিবি রেটিং ― ৮.১/১০
ব্যক্তিগত রেটিং ― ৯.৫/১০
জনরা ― রোমান্স, কমেডি
উল্লেখযোগ্য পুরস্কার ― অ্যাকাডেমি পুরস্কার (৫টি)
৪) Mr. Deeds Goes to Town:
মার্টিন সেম্পেল নামের একজন ভদ্রলোক সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেলে তার একজন দূর সম্পর্কের ভাগ্নে মিস্টার লংফেলো ডীডস তার সম্পত্তির মালিক বনে যায়। ডীডস এর আগে কখনও মার্টিন সেম্পেলকে দেখেনি। তাই তাকে এত সম্পত্তি দিয়ে গিয়েছেন বলে সে একটু অবাক হয়। সে একজন খুব সাধারণ মানুষ। তার বড়লোক হওয়ার বিশেষ কোনো শখ কোনকালে ছিল না। শহরে এসে সবকিছু দেখে তার মাথা খারাপ হবার দশা। কাকে বিশ্বাস করবে আর কাকে করবেনা সেটাই বুঝতে পারেনা। মার্টিন সেম্পেলের অন্য আত্মীয় ক্রমাগত চেষ্টা করে যাচ্ছে কিভাবে এই সম্পত্তি আইনত দখল করা যায়। এদিকে মিস বেব বেনেট নামের একজন সাংবাদিক মিথ্যা পরিচয় দিয়ে ডীডসের সাথে পরিচিত হয়। প্রতিদিন তার সাথে ডীডসের দেখা হয়। ডীডস অদ্ভুত সব ঘটনা ঘটায় আর বেনেট তার টীম মেম্বারদের সাহায্যে ডীডসের ছবি তুলে রাখে। বেনেট নিউজপেপারে ডীডসকে নিয়ে মজার সব আর্টিকেল লিখে এবং তার ছবিগুলো ছাপায়। তার নিক নেইম দেয় মিস্টার সিনডারেলা ম্যান। এমন সব কর্মকাণ্ডের জন্য মিস্টার সেম্পলের আত্মীয় সুযোগ পেয়ে যায় তার রেখে যাওয়া সম্পত্তি ক্লেইম করার।
মুক্তির তারিখ ― ১২ এপ্রিল ১৯৩৬
আইএমডিবি রেটিং ― ৭.৮/১০
ব্যক্তিগত রেটিং ― ১০/১০
জনরা ― কমেডি, ড্রামা, রোমান্স
উল্লেখযোগ্য পুরস্কার ― অ্যাকাডেমি পুরস্কার (১টি)
"Cinema is a mirror by which we often see ourselves." ― Alejandro Gonzalez Inarritu
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে ডিসেম্বর, ২০২২ দুপুর ২:১২