অণুগল্প
গরুভুনা
স্বীকৃতি প্রসাদ বড়ুয়া
তিনি একজন রকস্টার। এই বাংলার সেরা একজন ব্যান্ড শিল্পী। এক নামেই চেনেন তাকে। গুরু বলেই ডাকেন সবাই। শহুরে বাউল তিনি সবার নয়নের মণি, তিনি গুরুদা। এই গুরুদার গানে যেমন বৈচিত্র্য আছে, তেমনি তার স্বভাব চরিত্রেও আছে পিকুউলিয়ার কিছু নেচার। সিগনেচার টিউনের মতো কিছু সিগনেচার আচরণ তাঁর চরিত্রকে আরো বেশি মহিমান্বিত করেছে। তিনি হাঁটেন এক হাত নিচের দিকে ঝুলিয়ে, কথা বলেন চিবিয়ে চিবিয়ে। আর তুই ছাড়া কাউকেই বলেন না তিনি। বুড়ো থেকে ছোকরা সবাইকেই তুই তোকারি করা তাঁর স্বভাব। গুরু দা স্টেজে উঠেই বলেন : কেমন আছিস তোরা?। এই যে তোরা বলে সবাইকে আপন করে নেয়া, এটা সবাই পারে না। পারেন না বলেই গুরু দার মতো জনপ্রিয় নন তারা। একদিন গুরুদার ছিল দেশের নামকরা একটা টেলিভিশনে লাইভ শো। তো শো হবে রাত বারো টা থেকে দু’টা। সেদিন প্রযোজক সকাল থেকে রাত দশটা পর্যন্ত গুরু দাকে একের পর এক কল করেই যাচ্ছেন। কিন্তু অপর প্রান্তে শুধু- মোবাইল ক্যান নট বি.. আর বিজি পাওয়া যাচ্ছে। এদিকে প্রযোজকের হাতের তালু থেকে পায়ের তালু ঠাণ্ডা হয়ে জিরো ডিগ্রীতে নামার উপক্রম। রাত সাড়ে দশটার সময় প্রযোজককে গুরুদার পিএস ফোন করে জানালেন তারা রওনা দিয়েছে টিভির উদ্দেশ্যে : সবকিছু যেন রেডি থাকে। ফোন পেয়ে প্রযোজক আশ্বস্ত যে না শো হচ্ছে, আর কোন অলটারনেটিভ শোর ব্যবস্থা করতে হবে না। তিনি স্টুডিও থেকে খাবার দাবার থেকে শুরু করে সম্মানী সবই ঠিক ঠাক মতো করে রাখলেন। যাতে গুরুদার গানের শোতে ব্যাঘাত না ঘটে। যথারীতি গুরুদা ব্যান্ড মেম্বারদের নিয়ে টেলিভিশনে হাজির। প্রযোজক, অ্যাসিস্ট্যান্ট থেকে টিভির হর্তা কর্তা সবাই একেবারে গুরুদাকে পেয়ে যথারীতি উৎসব শুরু করে দিলো। রাত তখন এগারো টা। আর শো শুরু হতে বাকি আছে এক ঘন্টা। এবার খাবার দাবার খাওয়ার পালা। গুরুদার জন্য বিশেষ রেস্টুরেন্ট থেকে আনা হয়েছে বার্গার, স্যান্ডুইচ ইত্যাদি। এসব খাবার দেখে গুরুদা গেলেন খেপে প্রযোজকের উপর। এসব খেয়ে আমাকে শো করতে হবে? আমি পারবো না। প্রযোজক তো পরে গেলেন কঠিন সমস্যায়। তিনি জিজ্ঞেস করলেন ভাই, গুরুদা আপনি কি খাবেন বলুন?। তখন গুরুদা বললেন : আমি গরুভুনা আর সাদা ভাত ছাড়া কিছুই খাবো না, আর এগুলো না খাওয়াতে পারলে আমি এই শো ও করতে পারবো না। এই কথা শোনার পর প্রযোজক ঢাকার যত হোটেল আছে সব খানে লোক পাঠালেন গরুভুনা আর সাদা ভাত আনতে। কিন্তু সবখান থেকে শুধু পাওয়া যাচ্ছে না, যাচ্ছে না এই আওয়াজ আসছে। এদিকে প্রযোজকের শো আর খাবারের টেনশনে একেবারে মরে যাবার মতো অবস্থা। কোথাও গরুভুনা পাওয়া যায়নি। অগত্যা প্রযোজক ফোন করলেন তার বাসায়। কিছু গরুর মাংস কেনা ছিল ফ্রিজে। এত রাতে যে বউকে বলবে গরুভুনা রান্না করতে, তাও পারছে না, একে তো রাত তার ওপর বউকে ভীষণ ভয় পায় প্রযোজক। যা হওয়ার তাই হলো। গরুভুনা না পাওয়ায় সেদিনের সেই বিশেষ শো টিও আর সম্প্রচার করা হলো না। শুধু সেই টেলিভিশনের নীচের স্ক্রলে ভাসতে লাগলো....বিশেষ কারণে আজ সেই ব্যান্ড শো টি প্রচার করা সম্ভব হচ্ছে না, আমরা দুঃখিত।
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই নভেম্বর, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:৪৪