ইতিহাসে এই প্রথম বাংলাদেশ মুদ্রা বিনিময় চুক্তির আওতায় বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থেকে ২০০ মিলিয়ন ডলার ঋণ শ্রীলঙ্কাকে দিতে সম্মত হয়েছে যেখানে দেশটি বিগত ৪০ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন ক্রেডিট রেটিং (CCC+ - নিচের দিক থেকে ৪র্থ) নিয়ে কঠিন সময় পার করছে! চুক্তি অনুযায়ী এ টাকা মাত্র ৩ মাসের জন্য দেয়া হচ্ছে যদিও 'ক্রেডিট রেটিং' বলছে নিকট ভবিষ্যতে তা পাওয়ার সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ! তাহলে আমরা কেন এ ঝুঁকি নিচ্ছি! শুধু বন্ধুর দুঃসময়ে সহযোগিতা তত্ত্ব নাকি থলের বেড়াল অন্যকিছু!!!
সম্ভবত ২০২১-২২ এর আসন্ন বাজেট হতে যাচ্ছে দেশের গত ৩০ বছরের সবচেয়ে বড় ঘাটতি বাজেট যেখানে ঘাটতির পরিমাণ সম্ভাব্য ৬.৫%. অন্যদিকে কথিত আছে সরকার তার 'মাইলস্টোন' প্রজেক্টের ঘাটতি পুরনের জন্য অপেক্ষাকৃত ছোট প্রজেক্ট কে স্থগিত করছে! তাহলে এ অবস্থায় মাত্র ২%+লাইবর রেট এ [অনিশ্চিত] ঋণ প্রাদানের এ সিদ্ধান্ত আমাদের কি উপকারে আসবে?
সন্দেহ নেই, শ্রীলঙ্কা আমাদের অন্যতম বন্ধুপ্রতিম! রাজনৈতিক,সাংস্কৃতিক ও কুটনৈতিক বিষয়ে পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ - সহযোগিতার রেওয়াজ আমাদের দীর্ঘদিনের! বন্ধুর প্রয়োজনে বন্ধু এগিয়ে আসবে এটা স্বাভাবিক! বিশেষত যখন 'মধ্যম আয়ের' দেশের কাতারে আমাদের সদ্য অবস্থান। এ কোভিড পরিস্থিতিতেও 'আশ্চর্য ভালো' প্রবৃদ্ধির পরিসংখ্যান! আবার দেশের ইতিহাসের 'রেকর্ড' পরিমান রিজার্ভ অর্থের মজুত। সুতরাং, এ ঋণ বাহ্যিক ভাবে আমাদের একটি 'মারাত্মক ভাল ভাবমূর্তি' তৈরী করবে সন্দেহ নাই যা সমুদ্রপথে আমদানি-রপ্তানী বানিজ্যে ইতিবাচক প্রভাব রাখার কথা! [শ্রীলঙ্কার সমুদ্র বন্দর ব্যবহার তুলনামূলক সাশ্রয়ী]।
কিন্তু প্রশ্ন জাগছে অন্যকারনে! ভু-রাজনৈতিক মেরুকরণে শ্রীলঙ্কা বর্তমানে অনেক বেশি চীনপন্থী! বিশেষতঃ হ্যাম্বানটোটা বন্দর চীনের ইজারায় যাওয়ার পর থেকে দেশটি ভারত-বলয় থেকে বেরিয়ে গেছে বলে মনে হচ্ছে! ৭৩ বছরের সবচেয়ে বড় অর্থনৈতিক মন্দার কবল থেকে মুক্তি পেতে সম্প্রতি দেশটি চীন-ভারত ও বাংলাদেশের কাছে সহায়তা চায়। চীন ইতমধ্যে ৫০ কোটি ডলার প্রদান করলেও পৃথিবীর অন্যতম বৃহৎ অর্থনীতির দেশ ভারত এখনো কোন কিছু বলছেনা! ভারতীয় গণমাধ্যমে গত বছর তিনেক ধরেই চীনের বিভিন্ন 'সহযোগীতা' প্রকল্পকে 'সাহায্যের নামে আধিপত্য' বলে প্রচার করছে! চীন-পাকিস্তানের সম্পর্ক সর্বজন সিকৃত। হ্যাম্বানটোটা বন্দরে চীনের আধিপত্য এবং আমাদের পায়রা বন্দরে চীনের অর্থায়ন কে ভারত দেখছে সমুদ্র পথে বানিজ্যের কভারে সাম্রাজ্যবাদের পুরানো কৌশল। এরইমধ্যে স্পর্শকাতর তিস্তা প্রকল্পে চীনের বিশাল বিনিয়োগ প্রস্তাব ভারতের এ 'সাম্রাজ্যবাদ' তত্ত্বের আগুনে ঘী ঢেলেছে! অন্যদিকে নিকট অতীতে বেশ কিছু ইস্যুতে চীনের অবস্থান বিশেষতঃ রোহিংগা, কোভিড টিকা, কোয়াড সহ কিছু ইস্যুতে চীনের অবস্থান বাংলাদেশের উপর চীনের 'প্রভাব' থিওরির পালে হাওয়া দিচ্ছে! এ অবস্থায় চীনের 'বিশেষ বন্ধু' কে অর্থ সহায়তার বিষয়টি 'প্রভাবিত' তা উড়িয়ে দেয়া যায় কি?
তবে যাইহোক, 'প্রভাবিত' হোক বা না হোক উভয় ক্ষেত্রেই আমাদের সুবিধাজনক অবস্থান নিশ্চিত করবে বলেই মনে হয়! হয় সামরিক/ভু-রাজনৈতিক জোটের গুরুত্বপূর্ণ অংশ অথবা অপেক্ষাকৃত শক্তিশালী অর্থনৈতিক শক্তি হিসাবে স্থানীয় রাজনীতিতে আবির্ভাব!
@একান্ত ব্যাক্তিগত মতামত!