somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমার প্রাইমারি স্কুল

০৫ ই অক্টোবর, ২০১৬ রাত ১০:৫৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


স্কুলে যাওয়ার আগে বেশি পছন্দ করেছি দেখতে,শুনতে,খেতে ও খেলতে।
তারপর প্রতিবেশি বড়দের দেখে আস্তে আস্তে আগ্রহ জেগেছে স্কুলে যেতে।
বিদ্যালয়ে যাওয়ার আগে শিখেছি গণনা,সুন্দর সুন্দর ছড়া, টেনে বই পড়া,
প্রথম স্কুলে গিয়েছি ভয়ে ভয়ে বড় ভাই বোনদের সাথে জুতা ও বই ছাড়া।

স্কুলে গিয়ে শুনেছি ক্লাস থ্রী-এর ছাত্র-ছাত্রীরা গোল হয়ে দাঁড়িয়ে সুরকরে-
ছন্দে ছন্দে মুখস্ত করছে নামতা,পাঁচএকে পাঁচ,পাঁচদুগুণে দশ,তিনপাঁচে পনের।
শুনেছি, “এক দুই তিন করবেনা কেউ ঋণ, সাত আট নয় খোকা পাঠ হয়,
দশ এগার বার জামা-কাপড় পর।” ইত্যাদি অনেক শিক্ষামূলক কৌশল।

সে সময় কাগজে লেখার প্রচলন ছিলনা, তাল পাতা,কলা পাতায় লিখতাম,
এক ধরণের গাছের পাতা চেঁছে তার ঘন রস দিয়ে কঞ্চির মাথা চোখা করে,
কৌটায় রস রেখে কঞ্চি-কলম ডুবিয়ে বাড়ির কাজ লিখে নিতাম পাতায়।
দুই ক্লাস পর লেখার মাধ্যম ছিল কাঠের ফ্রেমে বাঁধানো কালো রঙের শ্লেট,

কালো পাথরের পেন্সিলে মনের আনন্দে লিখতাম সারাদিন শ্লেটে ইচ্ছেমত,
ইচ্ছে হলে যখন তখন মুখে হা দিয়ে ভিজিয়ে মুছে ফেলতাম শ্লেটের লেখা।
তখন স্কুলের টিফিন ছিল ছাতুর মণ্ড,ছাতুর সাথে পানি মিশিয়ে তৈরি হত তা,
অনেক শিশুই মন্ড খাওয়ার লোভে চলে আসতো উলঙ্গ, দেখে কী মজাই হত।

ক্লাস ওয়ানে পড়েছি ধারাপাত,গণিত, বাংলা তখন ইংরেজি বই পাঠ্য ছিলনা।
ক্লাস টুয়ে উঠে নতুন বই পেলাম না, হন্য হয়ে খুঁজতে লাগলাম পুরাতন বই,
শিক্ষানুরাগী আম্মা আগেই ধান বিক্রি করে আমাকে দিয়েছিল বইয়ের টাকা।
জানতে পারলাম, পশ্চিম পাড়ার রজব আলী অভাবে ছেড়ে দিয়েছে পড়া।

আত্মহারা হয়ে বই আনতে চলে গেলাম রজব আলীর বাড়ি পশ্চিম পাড়া,
তখন বই পেয়ে বাড়ি গিয়ে খুশিতে শুরু করে দিলাম মন দিয়ে লেখাপড়া।
শুনেছি নরেশ স্যার অনেক কড়া, পড়া না পারলে দিত কঠিন বেতের ঝাড়া,
যত কিছুই করি না কেন, রাতে শিখে রাখতাম রঞ্জিত ও নরেশ স্যারের পড়া।

গাছে উঠা ও খেলার জন্য ক্লাস শুরুর অনেক আগে স্কুলে চলে যেতাম সবাই,
গোল্লাছুট,বল খেলা,গাছে চড়া, ঝগড়া সব কিছুই চলত স্যারেরা আসার আগে।
আমি যখন ক্লাস থ্রী-এ ইন্তাজ স্যার বদলি হয়ে প্রথম আসলেন আমাদের স্কুলে।
নতুন এসেছেন বলে তাঁকে ডাকতাম নয়া স্যার তিনি সবাইকে করতেন আদর,

চল্লিশ কাহনিয়া থেকে পাঁচ মাইল হেঁটে প্রতিদিন আসা-যাওয়া করতেন তিনি।
আমার গান গাওয়া, আঁকা ও লেখা-পড়া দেখে প্রশংসা করতেন তিনি প্রচুর,
এ থেকে নিজেকে বুঝতে শুরু করলাম এবং পড়ার আগ্রহ বেড়ে গেল অনেকগুণ,
প্রচেষ্টা চলল লেখা-পড়ায় ভাল করে কীভাবে যাবো এ বছরেই সবার উপরে।

পাঁচ ছয়টি গ্রাম মিলে স্কুল ছিল একটি “ইন্দ্রপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়,
ছিলনা কোন বেড়া-দরজা-জানালা, বেঞ্চ অল্প, দুই তিনটি চেয়ার-টেবিল ছিল।
পড়া নেয়ার সময় স্যারের টেবিলের চারপাশে গোল হয়ে দাঁড়িয়ে পড়া বলতাম।

আমাদের গ্রামটি ছিল স্কুলের পূর্বে, আধা মাইল দূরে নদীর উত্তর পাড়ে ‘সনুড়া’।
কাল বৈশাখী ঝড়ে স্কুলটি যেত উড়ে, ক্লাস নিত গফুর স্যারের কাচারি ঘরে।
পাশে ছিল বাচ্চুদের বাড়ি, সেখানে আম,জাম, কাঠাল, কুলসহ ছিল বাঁশঝাড়,
কেউ পড়া না পারলে নরেশ স্যার বলতো রেগে, “নিয়ে আয় বাঁশের কঞ্চি”।
স্যারের ছেলের রোল হত এক, আমি,রাখাল,সুবোধের হত দুই,তিন, বা চার,

ভুলতে পারিনা রাখাল,সুবোধ,পরিচয়,ভাগিনী কুলসুম ও বোন হালিমার কথা,
ভয় পেয়েছিল কুলসুম ভূত দেখে, মনে আছে চল্লিশ বছর আগের স্মৃতির পাতা।
গত বছরের ঈদে বাড়ি থেকে আসার সময় রাস্তায় তার সাথে কিছুক্ষণের কথা,
মনে হলো চার দশক আগের বালিকা কিন্তু সে পঞ্চাশ বছরের দাদী ও মাতা।

প্রাইমারি থেকে বিশ্ববিদ্যালয়,অন্তরে ছিল মাতা-পিতা,শিক্ষাগুরুর ভক্তির কথা।
শিখেছিলাম প্রাইমারির যে কোন শ্রেণিতে কবি ‘কাজী কাদের নেওয়াজ’এর লেখা
‘শিক্ষাগুরুর মর্যাদা’ কবিতায়, এখন কোন পাঠ্য বইয়ে পাওয়া যাবেনা খুঁজে,
এমন ভক্তি-শ্রদ্ধা ও নীতিকথা, নষ্ট হয়ে গেছে বর্তমান যুগের ছাত্র-ছাত্রীদের মাথা।

বিশ বছরের শিক্ষা জীবনে,কখনও গ্রামে গেলে পা ছুঁয়ে সালাম করেছি, স্যারকে।
সেই দিন ফিরবে যদি বদলানো যায় শিক্ষাণীতি ও শ্রেণিকক্ষে পাঠদানের রীতি,
এখনই খুঁজা উচিত আমাদের কীভাবে তৈরী হবে আলোকিত, নীতিবান জাতি।
উন্নত বীজ মানে উন্নত ফল, বীজের যত্ন সঠিক হলে আমরা পাব উন্নত ফলাফল।
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই অক্টোবর, ২০১৬ রাত ৯:২৬
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

যুক্তরাষ্ট্রে ইসরাইল বিরোধী প্রতিবাদ বিক্ষোভ

লিখেছেন হাসান কালবৈশাখী, ০৩ রা মে, ২০২৪ সকাল ৮:০২

গাজায় হামাস উচ্ছেদ অতি সন্নিকটে হওয়ায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নিউইয়র্ক ও লসএঞ্জেলসে কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পরেছিল। আস্তে আস্তে নিউ ইয়র্ক ও অন্যান্ন ইউনিভার্সিটিতে বিক্ষোভকারীরা রীতিমত তাঁবু টানিয়ে সেখানে অবস্থান নিয়েছিল।


... ...বাকিটুকু পড়ুন

৫০১–এর মুক্তিতে অনেকেই আলহামদুলিল্লাহ বলছে…

লিখেছেন বিচার মানি তালগাছ আমার, ০৩ রা মে, ২০২৪ বিকাল ৩:০০



১. মামুনুল হক কোন সময় ৫০১-এ ধরা পড়েছিলেন? যে সময় অনেক মাদ্রাসা ছাত্র রাজনৈতিক হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছিল। দেশ তখন উত্তাল। ঐ সময় তার মত পরিচিত একজন লোকের কীভাবে মাথায় আসলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

মেহেদীর পরিবার সংক্রান্ত আপডেট

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৮:৪৯


মার্চ মাস থেকেই বিষয়টি নিয়ে ভাবছিলাম। ক'দিন আগেও খুলনায় যাওয়ার ইচ্ছের কথা জানিয়েও আমার বিগত লিখায় কিছু তথ্য চেয়েছিলাম। অনেক ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও মেহেদীর পরিবারকে দেখতে আমার খুলনা যাওয়া হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

'চুরি তো চুরি, আবার সিনাজুরি'

লিখেছেন এমজেডএফ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৮


নীলসাধুকে চকলেট বিতরণের দায়িত্ব দিয়ে প্রবাসী ব্লগার সোহানীর যে তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছিল তা বিলম্বে হলেও আমরা জেনেছি। যাদেরকে চকলেট দেওয়ার কথা ছিল তাদের একজনকেও তিনি চকলেট দেননি। এমতাবস্থায় প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বরাবর ব্লগ কর্তৃপক্ষ

লিখেছেন নীলসাধু, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২২

আমি ব্লগে নিয়মিত নই।
মাঝে মাঝে আসি। নিজের লেখা পোষ্ট করি আবার চলে যাই।
মাঝেমাঝে সহ ব্লগারদের পোষ্টে মন্তব্য করি
তাদের লেখা পড়ি।
এই ব্লগের কয়েকজন ব্লগার নিজ নিক ও ফেইক... ...বাকিটুকু পড়ুন

×