somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মাহবুব লীলেন'’র ‘তৃণতুচ্ছ উনকল্প’: গল্পদের ঊর্ধ্বে যে অগল্প

২৯ শে এপ্রিল, ২০০৯ সন্ধ্যা ৭:০০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মাহবুব লীলেন'’র ‘তৃণতুচ্ছ উনকল্প’: গল্পদের ঊর্ধ্বে যে অগল্প


১।
বেশ কয়েক মাস পরে একটি বই পড়লাম আমি - ব্যস্ততার অজুহাতে কুঁড়ে পাঠক - পড়লাম মানে কি, প’ড়ে একেবারে শেষও ক’রে ফেললাম! এই কারণেও, এবং বইটির ধরনের কারণেও সে বইটি নিয়ে কিছু বলতে চাচ্ছি, মানে লিখতে যাচ্ছি্। সাহস করছি বড়মুখ ক’রে- লীলেন ভাই কিংবা তার বা আমাদের এই উনকল্প মহাগল্পের সঙ্গে আমার কোনো জড়িতির দাবি, দায় বা সুযোগে নয়, বরং বলা যায় সে জড়িতি সত্ত্বেও লিখছি, কারণ ভালোই ইচ্ছে করছে লিখতে। বিচারমূলক পুস্তক পর্যালোচনা তো নয়, এগুলো আসোলে (লীলেন ভাইয়ের মতো ক’রে লিখলাম) তো সহব্লগারের পাঠানুভূতিই। তাই, লীলেন ভাইয়ের অনুমতি না নিয়েই এটুকু স্পর্ধা করছি সরল বিশ্বাসে। :)

গ্রন্থ: তৃণতুচ্ছ ঊনকল্প
লেখক: মাহবুব লীলেন
প্রচ্ছদের আলোকচিত্রী: জুবায়ের আলী খান লোদী
প্রচ্ছদশিল্পী: নজরুল ইসলাম
প্রথম প্রকাশ: ফেব্রু“য়ারি ২০০৯
প্রকাশক: শুদ্ধস্বর

২।
সম্ভ্রমাদায়ী এই ভদ্রলোকের সঙ্গে আমার পরিচয়ে ঈশ্বরের কোনো ইশারার উপস্থিতি তো দূরের কথা, ঈশ্বর প্রকারের কারো এমনি উপস্থিতিই আমি জানি না, মানি না। তবে, কোথায় যেন এটা হওয়ারই ছিল বেশ শক্তপোক্তভাবে। জানি না কে কেন কোথায় এই যোগাযোগের একটা মহান দায়িত্ব নিয়ে বসেছিল গোপন নেপথ্যে! বিলিভ ইট অর নট, চার-চারবার পরিচয় হয়েছে তার সাথে আমার- টেস্ট ক্রিকেটের পূর্বাভাসহীন চার-চারটে পৃথক ইনিংসের মতোই, উত্তরোত্তর টানটান! কারণ সত্যিই একটা ভাঁজখোলা ক্রমপর্যায় চলছিলো আমাদের এই পরিচয়ে, ভাইসে ভার্সা-টা না ঘটলেও অন্তত আমার দিক থেকে লীলেন ভাইয়ের পরিচয় প্রতিভাস উন্মোচনের ক্ষেত্রে। প্রথমবার সেই ২০০১-এর শেষদিকে ঢাকার একটা থিয়েটার গ্র“পে, যখন অর্বাচীনত্বের নিষ্পাত্তা ভারাক্রান্ত আমার চোখে আমার ছয় মাসের মেয়াদমধ্যে যথেষ্ট অসংশ্লিষ্ট একজন দূরবর্তী ভাবাক্রান্ত ব্যক্তিই মনে হয়েছে তাকে। বছর-কয়েক পর দ্বিতীয়বার হ’লো ‘আজিজ’র উপরে একটি হঠাৎ ফিল্ম সোসাইটি-তে, যেই সন্ধ্যায় আমি সেটার এক সভায় হঠাৎ নতুন সভ্যপ্রয়াসী, আর তিনি দেরিতে এসে প্রায় সভাশেষে সাক্ষাতের সৌজন্যে যোগ দেয়া অন্যতম সভ্য। দ্বিতীয় জন্মের এই সাক্ষাতের পরিচয়পর্বে অবশ্য স্মরণ-নিউরনে আমার বিনয়ী গুঁতো খেয়ে তিনি আমার চেহারা মনে ক’রে আনতে পেরেছিলেন সেই নাটক-কালের গহ্বর থেকে। তৃতীয় ধাপটি তার নাটক-সিনেমা-শিক্ষা-সুবাদের বন্ধুচক্রের মাধ্যমে, তার কোনো উপচক্রে আমিও প’ড়ে ছিলাম ব’লে। দেরিতে হ’লেও নিয়মিত এপাড়া ওপাড়ায় দেখাটেখা হ’লে এক-আধটু হাই-হেলো এই পর্বেই যা একটু হয়েছে আমার আর লীলেন ভাইয়ের। এবং সেই উপচক্রের বদান্যতায় তার লেখাশৈলীর বিস্তার আর গভীরতার সঙ্গেও আমার এক-আধটু পরিচয় শুরু হয়েছে আসোলে ওই পর্বেই- ভদ্রলোকের মাথায় কিডনি আছে!- সেই বোঝাবুঝি হয়ে যাওয়ায় আমার ছোট্ট মাথা থেকে হঠাৎ নেমে গ্যালো উনার আপাত ভাব-ভারের বোঝাটাও। কারণ, আমি তখন যথাবিহিত শ্রদ্ধাপূর্বক এই সিদ্ধান্তে আসতে পারলাম যে তার এই ভারটা শোম্যানশিপ নয়, এটা একাধারে জনপ্রিয় এবং ওয়েল-ডিজার্ভড একটা ওজন। তারপর, ২০০৮-এর শেষদিকে এসে হঠাৎ যখন ওকেশনাল ব্লগার হয়ে যাচ্ছি আমি, তখন ভিতরে ঢুকেই যে কয়টা ব্যক্তিকে দেখতে পেলাম সম্মানিত সমাসীন, তাদের মধ্যেও কর্মগুণে যথেষ্ট উজ্জ্বল ব্যক্তিটির নাম মাহবুব লীলেন। চতুর্থ মোকাবেলার সেই বেলাতেও শুধু নাম দেখে তিনি আমাকে চিনতে পারেননি। পরে আমার ছবিছাড়া বর্ণনায় আবার ঠাহর করানো গিয়েছিল অবশ্য, যদিও আমার মতো একটা চুনোপুটিরও আফ্রিকান মাগুরের মতো খানখান বিপজ্জনক এমন বাহারী ত্রিপদ নাম হ’তে পারে কি না- তাতে তার অবিশ্বাস ছিল যথেষ্ট! :)

৩।
‘নিমনাখারা’ দিয়ে মাহবুবলীলেন-পাঠের সেই শুরুতেই কম-পড়া-জানা আমি দেখলাম- বই আর লেখকের বিষয়ে বইয়ের মোড়কে যে দু’টো ফ্ল্যাপ থাকে ড্রয়িং আর ডাইনিং রুমের অভ্যর্থনাপ্রতিম, সেই দু’জায়গা থেকেই দুর্ধর্ষ অ্যাবস্ট্রাক্ট (অ্যাবসার্ড নয় মোটেই) কাব্য শুরু হয়ে যায় গদ্যপদ্যের এই উভচারী ব্যক্তিটির। ফ্ল্যাপ-ও বুঝি এমন অনিন্দ্য সুন্দর হ’তে পারে কোনো বইয়ের! আমার সেই মুগ্ধতায় আর এখন পর্যন্তও তেমন কোনো ছেদ দেখিনি আমি। আমার জন্য ঠিক এই সময়ে এটাও সহজ আর সৌভাগ্যজনক একটা ব্যাপার, যে- যাদের কাছে আমার এই কথাগুলো পৌঁছুচ্ছে ব্লগের প্রশস্ততায়, তাদের সকলেরও মোটামুটি জানাই আছে মহামতি মাহবুব লীলেনের সকল মহিমা। এমনকি, সেই ভ্রূƒণপর্ব থেকে শুরু ক’রে ‘তৃণতুচ্ছ উনকল্প’র রবি-খরিফ-শস্যপর্বও অনেকেরই জানা। এক কথার একটি সত্যকে নিয়ে অনুসন্ধান-অনুশীলনের অভিনব আর বিরল অভিপ্রায়ে ব্লগান্তরে দু'’সময়ে দু’টি বিশাল টপিকের মাধ্যমে হয়েছে গল্প বা অগল্পের বা গল্পোর্ধ্ব এই চাষাবাদ। আমিই বরং বেশি দেরিতে এবং কম ছুঁতে পেরেছিলাম এই অভিনব মহাআখ্যানকে। "“বিলাপ থেকে যায় বিলাপের স্তরেই / গল্পটা হয়ে উঠে গল্প না হবার প্রমাণ"”- লেখকের এই শানদার ডিসক্লেইমার বা আততায়ী উপশিরোণাম ইতিমধ্যেই দেখে থাকবেন আপনারা, যারা পড়েছেন এই গ্রন্থরূপ। যারা পড়েছেন, তারা নিজেরাই এ-ও দেখে নিয়েছেন নিশ্চয়ই- ‘গল্প’ না হয়েও এই গল্প অন্য আরো কতোকিছু হয়ে উঠেছে কতো দিকে কতো মাপে! আউট-অব-দ্য-বক্স ক্রিয়েটিভ মানুষের অভিনব আইডিয়ায় আর দুর্দান্ত স্মার্ট গ্রন্থণশৈলীতে, কালের কালের মুখের মনের ছায়ায় ছায়ায় এখানে মিলেছে মুক্তিযুদ্ধের ভীষণ ধারাবাহিক সুদীর্ঘ সুগভীর সচেতন পাঠ-চর্চা আর গভীরতর অন্তরচর্যা, বস্তুনিষ্ঠ আর ভাবসত্য অতো অতো দলিল, দেশ আর মানুষের প্রতি দেশের মানুষের পরম সহমর্মিতা- অর্থাৎ প্রশ্নের ঊর্ধ্বের হিউম্যান এমপ্যাথি, দেশোর্ধ্ব মানবতা, মানবিকতা, স্বার্থের ঊর্ধ্বে নামের ঊর্ধ্বে আরো কীসের কীসের যেন দায়বদ্ধতা, এমন বিরল একটা অনুশীলনে এতগুলো মানুষের নিজ নিজ বোধবুদ্ধির দাখিল আর আন্তরিক পরিশীলন, আর কী না!

৪।
ও মাইও মাইও গো। মাইয়া লোকরে অত অত্যাচার ...

বীরাঙ্গনা বিষয়টিকে অনেকের মতো আমিও জেনেছি বিভিন্ন পর্যায়ে, ধাপে ধাপে একটু একটু ক’রে। শব্দগত ব্যুৎপত্তিক অর্থটার থেকে বেশ অনেক পরে যখন সত্যিকারের নামগত অর্থটা জানতে পেরেছিলাম, সেটা কীরকম নাড়িয়ে দিয়েছিল ভেতরটাকে, তা আজ অতোকাল পরেও ব্যাখ্যা করা কঠিন হবে বুঝতে পারি। আমাদের ‘লজ্জা’-রক্ষণ-শীল সমাজের কারণেই হোক, আর বাস্তবতার কাঠিন্য ভুলে সহজে নির্বিকার নির্লজ্জ সুখী হওয়ার প্রবৃত্তির জন্যই হোক- বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের বীরাঙ্গনারা গুটিকয় লোকের ভাবনায় এবং আরো অল্প কিছু লেখায় ছবিতে ছাড়া তেমন একটা জায়গা আসোলে পাননি কোথাও। মাহবুব লীলেন-ও তার উৎসর্গপত্রে লিখতে মিস করেননি - "“নাম না জানা অগুনতি বীরাঙ্গনা / যারা না পেয়েছেন সম্মান / না পেয়েছেন জীবন”"। শরীরে মনে মাথায় কী ভীষণ পৌনঃপুনিক পীড়ন, বিড়ম্বনা আর বিব্রতি নিয়ে বেঁচেছেন মরেছেন বাঁচছেন কতো বীরাঙ্গনা! জানি না- কতো কিছু তাঁদের রুদ্রনম্র ঐশ্বর্যমূর্তির চরণে দিলে পরে সেই ঋণ শোধ হ’তে পারতো কোনোদিন কিংবা আদৌ তা হ’তে পারতো কি না! ‘তৃণতুচ্ছ উনকল্প’ গ্রন্থে সচল-টপিক-এর বাইরে থেকে যুক্ত একটি নব-উন্মোচনে যখন জানি কোনো এক নন্দিতাকে যুদ্ধের শেষ পর্যন্ত হানাদার-রাজাকারদের সেবা দেয়ার পরে যুদ্ধশেষে আরো বহুদিন যুদ্ধফেরত মুক্তিযোদ্ধাদেরকেও সেই একই সেবা দিতে হয়েছিল, তখন বিব্রতির সাথে কী বিষম এক লজ্জাও যেন অ্যাতোটুকু সংবেদী সমস্ত পুরুষের (যদিও এ প্রজাতির পুরুষেরা সংখ্যায় একদমই লঘু) কাঁধেই চ’লে আসে। সে লজ্জা রাখার জায়গা কোথায় পাবো? না, পাবো না। উপায়হীন অন্ধ উপত্যকায় যাদের নিরীহ শরীরগুলোর উপরে-নিচে-মধ্যে চললো আধিপত্যবাদ আর স্বাধিকার-স্বাধীনতার পাঞ্জা খেলা, তাদের স্বাধীন হওয়া হ’লো কই?! হ’লো না তো!! হায়!!! :(

৫।
লিখনকৌশলে লীলেন ভাইয়ের ক্ষমতার তুলনায় এখানে হয়তো কমই ক্যারিশমা দেখেছি আমরা, হয়তো পরিকল্পিত বস্তুনিষ্ঠ কন্টেন্ট-এর যে কনফাইনমেন্ট ছিল সেটারই অনিবার্যতায়। তারপরও ইন্ডিপেন্ডেন্টলি এই বিষয়বস্তুর এই বিন্যাস অবশ্যই যেকারো জন্যই চমকপ্রদ হবে। যে প্রথম পড়ছে পুরো বিষয়টাই - একটা গল্পের জন্য শব্দ বাক্য কল্পনা চেয়ে চেয়ে বেড়ানো থেকে শুরু ক’রে - সে এর অভিনবত্বে এবং গতিবিধি-ভঙ্গিমায় জায়গায় জায়গায় নতুন ক’রে সংশ্লিষ্ট হওয়ার তাগাদা আর স্বাদ পাবে নিঃসন্দেহে। আমাদের জন্য যেটা চমক, সেটা বেশি এই টপিক থেকে গ্রন্থে রূপান্তরের কিছু সূক্ষ্ম কৌশলে। আমি হ’লে কী করতাম জানি না, তবে লীলেন ভাই যেভাবে এই ট্র্যান্সফর্মেশন রি-ফর্মেশনের কাজগুলো করেছেন সূক্ষ বিচক্ষণতায়, তা সত্যিই মজাদার। টপিক পোস্ট করা থেকে চিঠির মাধ্যমে ডাক পাঠানো, পড়া থেকে গল্পকল্পালোচনায় মুখোমুখি উপস্থিত হওয়া, কমেন্ট করা থেকে সামনাসামনি কথা বলা, এমনকি লিখে চ’লে যাওয়া বা লগ-আউট করা থেকে গল্পাংশের কিংবা ক্ষেত্রবিশেষে ব্যর্থতার বয়ান ক’রে নাতিদূরের টিলাটির দিকে চ’লে যাওয়ার এই যে চমৎকার বদলগুলো - যা টপিক থেকে বই পর্যন্ত ওই যুথবদ্ধতার ইন্টারঅ্যাকটিভিটি’র চিত্রক্ষেপগুলোকে অনেক বেশি সচল দৃশ্যমান বোধগম্য জীবন্ত আর অর্থবহ করে - অবশ্যই ফর্মে দিয়েছে নতুন মাত্রা, নতুন স্বাদ, আর যথেষ্ট অ্যালিয়েনেশন নিয়েও এক জাদুকরী নতুন ইনভল্ভমেন্ট! জানা জিনিসগুলোও অজানা ভাঁজগুলো খুলে খুলে আবিষ্কারের মজাটা পাওয়া গ্যাছে সেজন্যেই। লীলেন ভাইয়ের পরিচিত স্নেহধন্য আমার আর এক বন্ধু এ বইটি পড়ার পর যখন আলাপ হচ্ছিল - আমিই তাকে এ বইয়ের সন্ধান জানিয়েছিলাম ব’লে, আর বইয়ে আমার নামটিও নিদেন উচ্চারিত ব’লেও - তখন আমি ব্লগের ইন্টারঅ্যাকশনের পন্থাটি ব’লে বুঝাচ্ছিলাম বইয়ে রূপান্তরকালে লেখক কীভাবে জিনিসগুলোকে চাক্ষুস অংশগ্রহণের রূপ দিয়েছেন, আর দেখেও বুঝতে পারছিলাম যে এই জানাটিও সেই বন্ধুর পাঠ-পর্যালোচনাকে যথেষ্টই আমোদ দিচ্ছিল। তবে কী- আর একটা কাজ বোধ হয় করা যেতো ব্লগের বাইরের পাঠকদের সুবিধার্থে - যথার্থ প্রপার নাউন ছাড়া ব্লগারদের যে অন্য নিক-গুলো আছে বইয়ে অবিকল, সেগুলোতে অন্তত সিঙ্গেল ইনভার্শন কমা দিলে বোধ হয় সবার কাছে আরো একটু পরিষ্কার হ’তো ব্যাপারটি। সুবিধার জায়গাটি হ’লো- চরিত্র কথা বলতে শুরু করলেই না-বোঝার ধাক্কা না খেয়ে সেটাকে চরিত্র হিসেবে সেন্স এবং বিলিভ ক’রে নিতে পারাটা। শুধু-ধাক্কায় আপত্তি থাকতে পারে না, তবে না-বোঝার ভ্রুকুঞ্চন থেকে গেলে একটু দূরবর্তী হয়ে যাওয়া হয় বুঝি-বা! হ্যাঁ, এটা একদম জরুরি না, এটা না করায় মহা কোনোকিছুই অশুদ্ধও হয়ে যায়নি। হ’তেই পারে- এ ব্যাপারটি লীলেন ভাই বেখেয়ালের স্লিপে মিস-ও করেননি, সচেতনেই এভাবে রেখেছেন। যাক। :)

৬।
ভালোর তো আর শেষ নেই। কারো জন্যই নেই। লীলেন ভাইয়ের সাথে এ বিষয়ে কথা না ব’লেও নিশ্চিত ব’লে দিতে পারি আমি - তার ভিতরে বিস্তর অতৃপ্তি থেকে গ্যাছে বইয়ের নানাকিছু নিয়ে, যেই অতৃপ্তি কমবেশি থাকবেই। না থাকা সম্ভব যেমন না, কাম্যও না। তৃপ্ত হ’লে শিল্পী না কি মৃত হন! আমরাও জানি- এটি ভালোর যেমন সীমা নয়, লীলেন ভাইয়েরও সর্বোচ্চ সীমা নয়। আর, এটিও বোধ হয় একটা বড় বিষয়, যে- ফর্ম, অ্যাপ্রোচ আর সাহিত্যমানের চেয়ে এই রেসপন্সিব্ল/প্রপাগান্ডিস্ট/যা-ই-বলি-না-কেন পুস্তকটির বরং অন্যবিধ গুরুত্ব আছে বিষয়, বক্তব্য আর উদ্দেশ্যে। এই অনুশীলন বলেছে অনেক কিছু, বলতে পারেনি আরো অনেক কিছু, আর পাঠকমাত্রকে ভাবাবে আরো অনেক অনেক বেশি কিছু।

৭।
বইটির নামটি কঠিন হয়েছে। বিজ্ঞাপনের ভাষায় যেটাকে আমরা বলি “মাউথেবল না”। :) বলতে ভুল করবে অনেকেই। মনে রাখার পক্ষেও কঠিন। তবে, আমার হঠাৎ এটাও মনে হ’লো- বইটি যাকে যতোটুকু স্পর্শ করবে যেভাবে, সেই অনুসারে কেউ কেউ হয়তো নিজে নিজে এমনিতেই একটা নাম দিয়ে নিতে পারেন এটার। :) আমার কাছে যেমন লেখকের উচ্চাশা আর হতাশার পাশাপাশি বিনয়টাও বোধগম্য হ’লেও এ গল্প বা অগল্পকে কোনো অর্থেই ‘তুচ্ছ’ বা ‘ঊন’ ঠাহর হয়নি। অন্যেরাও বলবেন হয়তো এ বইয়ের বিষয়ে আরো, প্রতিক্রিয়া বা অনুভূতি। আমাকে কোনো ভুল-বলা বা কিছু বলতে-না-পারার জন্য গালি দিতে চাইলে তা-ও তো বলবেনই। একই অঙ্গে বহুরূপী আরেক নাক্ষত্রিক প্রতিভা নজরুল ভাইয়ের করা এই বইয়ের অনবদ্য প্রচ্ছদটার কথাও এক বাক্যে স্মরণ ক’রে যাচ্ছি আবারও এখানে, যদিও আগে টপিকান্তরে তাকেও দু-দু’বার বলেছি সেই মুগ্ধতার কথা। লেখকের অ্যাকনোলেজমেন্ট-এর বাইরে আমি এই বিষয়োত্থাপনের অবকাশে অভিবাদনও জানাতে চাই মাহবুব লীলেন’র সাথে আরো যারা এই গল্পোর্ধ্ব অগল্পে ইট-সিমেন্ট-বালু-শ্রম-ঘাম দিয়েছেন সেই সহ-ব্লগারদেরকে। অভিনন্দন, প্রকাশক আহমেদুর রশীদ টুটুল ভাইকেও। :)

৫ মার্চ ২০০৯
মহাখালী, ঢাকা

সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে এপ্রিল, ২০০৯ দুপুর ১২:৩৪
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

নারী একা কেন হবে চরিত্রহীন।পুরুষ তুমি কেন নিবি না এই বোজার ঋন।

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ১২:৫৪



আমাদের সমাজে সারাজীবন ধরে মেয়েদেরকেই কেনও ভালো মেয়ে হিসাবে প্রমান করতে হবে! মেয়ে বোলে কি ? নাকি মেয়েরা এই সমাজে অন্য কোন গ্রহ থেকে ভাড়া এসেছে । সব... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুসলিম কি সাহাবায়ে কেরামের (রা.) অনুরূপ মতভেদে লিপ্ত হয়ে পরস্পর যুদ্ধ করবে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪৯




সূরাঃ ৩ আলে-ইমরান, ১০৫ নং আয়াতের অনুবাদ-
১০৫। তোমরা তাদের মত হবে না যারা তাদের নিকট সুস্পষ্ট প্রমাণ আসার পর বিচ্ছিন্ন হয়েছে ও নিজেদের মাঝে মতভেদ সৃষ্টি করেছে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদে মসজিদে মোল্লা,ও কমিটি নতুন আইনে চালাচ্ছে সমাজ.

লিখেছেন এম ডি মুসা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সকাল ১০:২৩

গত সপ্তাহে ভোলার জাহানপুর ইউনিয়নের চরফ্যাশন ওমরাবাজ গ্রামের এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। লোকটি নিয়মিত মসজিদে যেত না, মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়েনি, জানা গেল সে আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসী ছিল, স্বীকারোক্তিতে সে... ...বাকিটুকু পড়ুন

=সকল বিষাদ পিছনে রেখে হাঁটো পথ=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৮



©কাজী ফাতেমা ছবি

বিতৃষ্ণায় যদি মন ছেয়ে যায় তোমার কখনো
অথবা রোদ্দুর পুড়া সময়ের আক্রমণে তুমি নাজেহাল
বিষাদ মনে পুষো কখনো অথবা,
বাস্তবতার পেরেশানী মাথায় নিয়ে কখনো পথ চলো,
কিংবা বিরহ ব্যথায় কাতর তুমি, চুপসে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগে বিরোধী মতের কাউকে নীতি মালায় নিলে কি সত্যি আনন্দ পাওয়া যায়।

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১৮

ব্লগ এমন এক স্থান, যেখানে মতের অমিলের কারণে, চকলেটের কারণে, ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের কারণে অনেক তর্কাতর্কি বিতর্ক কাটা কাটি মারামারি মন্তব্যে প্রতিমন্তব্যে আঘাত এগুলো যেনো নিত্য নৈমিত্তিক বিষয়। ব্লগটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×