somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বিশ্ব মানবতার এক মহান আলোকশিখা মহাত্মা গান্ধী (বাপুজী)!

২৫ শে অক্টোবর, ২০০৯ দুপুর ১২:১১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

তমাল আর যুথি দুই ভাই-বোন, বয়সে মাত্র একবছরের ছোটবড়। ঢাকার একটা অভিজাত ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে একই সাথে পড়ালেখা করছে ওরা। সহসাই এ লেভেল শেষ করতে যাচ্ছে। ওদের ইচ্ছে দেশের বাইরে যাবে উচ্চতর ডিগ্রির জন্য কিন্তু মা বাবা দুজনেরই ইচ্ছে ওরা যেন দেশেই থাকে। বেচে থাকার অবলম্বন দুই ছেলে মেয়েকে কিছুতেই হাতছাড়া করতে রাজী নন তারা। বাবা তাদের গ্রামের প্রকৃতির সৌন্দর্য বোঝানোর চেষ্টা করেন কিন্তু অতি আধুনিক ছেলে মেয়ের কাছে সেটা ভাল লাগবে কেন? যুথির বাবা আকমল সাহেব জানতে পারলেন তার বন্ধু নাসিফ ইকবাল সম্প্রতিই দেশে এসেছে। ইকবাল সাহেব আর আকমল সাহেব দুজনেই বাল্যবন্ধু। একসাথে কাটিয়েছেন জীবনের লম্বাসময়। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম ডিগ্রিটা পাওয়ার পরই অতি মেধাবী ছাত্র ইকবালের সুযোগ হয় দেশের বাইরে পড়ালেখার। সে পড়ালেখা করে বিভিন্ন দেশের কৃষ্টি-কালচার, ইতিহাস এর উপর। সর্বশেষ অর্জন ছিল ইসলামের ইতিহাসের উপর পিএইচডি ডিগ্রি। আর তারপর হতেই চষে বেড়িয়েছে পৃথিবীর এক প্রান্ত হতে অন্যপ্রান্ত। কখনো দায়িত্ব পালন করেছেন জাতিসংঘের কান্ট্রি ডিরেক্টর হিসেবে কিংবা মানবতার আহবানে সাড়া দিয়ে কখনো ছুটে গেছেন রেডক্রিসেন্টের প্রতিনিধি হিসেবে বিভিন্ন দেশের দুর্গত আর অসহায় মানুষের কাছে। এখন দায়িত্বরত আছেন বিশ্বের সর্ববৃহৎ মুসলিম সংস্থা ওআইসি এর গুরুত্বপুর্ন পদে। ঢাকায় বেশ কিছুদিন কাটানোর পর তিনি এখন আছেন তার শৈববের অতিপ্রিয় গ্রাম গোপালগঞ্জের ননীক্ষীরে।
আগষ্টের জাতীয় শোকদিবস উপলক্ষে বেশকদিন সরকারী ছুটি উপলক্ষে সরকারী বেসরকারী প্রতিষ্ঠান গুলো বন্ধ ঘোষনা করা হয়েছে। পরিবার নিয়ে আকমল সাহেব এই সময়টা গ্রামেই কাটাতে চান। সন্তানদের গ্রামের প্রকৃতির ছোয়া দিতে চান। গ্রামে অবস্থানরত আকমল সাহেবের সাথে কখা বলেন তিনি। হ্যা, সেও বেশ অবসর সময় কাটাচ্ছে গ্রামে। এই তো সুযোগ, এই সুযোগটা তিনি হাত ছাড়া করতে চান না। অফিস হতে বেশ কদিন ছুটি বাড়িয়ে নিলেন। অতপর সন্তানদের নিয়ে একদিন হাজির হলেন গ্রামে। ছেলে মেয়েদের পরিচয় করিয়ে দেন তার বন্ধু আকমল সাহেবের সাথে। যুথি আর তমাল সহজেই এই মানুষটিকে বন্ধু করে নেয়। ইকবাল সাহেব তাদের নিয়ে ঘুরেঘুরে পুরো গ্রাম দেখান। দেশ বিদেশের ইতিহাস শোনান। শোনান গ্রীক মিথ হতে আধুনিক সভ্যতার বহু গুরুত্বপুর্ন ঘটনা। দুই ভাইবোন যতই শোনে ততই মুগ্ধ হয়ে যায়। সত্যিই তারা যেন এক মহাজ্ঞানীর দেখা পেয়েছে যার ভান্ডারে শত সহস্র বছরের জ্ঞান সঞ্চিত রয়েছে। পনেরই আগষ্টের দিনে তারা জেলার শোক দিবসের বিভিন্ন কার্যক্রম গুলো ঘুরেঘুরে দেখে। ইকবাল সাহেব তাদের শোনান জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর জীবন গাথা ইতিহাস। তার ভাষনের কিছু উল্লেখযোগ্য অংশ যা যুগযুগ ধরে আজো মানুষকে সংগ্রামী হবার অনুপ্রেরনা দিয়ে যাচ্ছে, শোনা মাত্রই শিরদাড়া বেয়ে শীতল এক অনুভুতি পায়ের গোড়ালিতে গিয়ে পৌছায়। তিনি তাদের ব্যাখ্যা করে বোঝান এই মহান নেতা কিভাবে মঞ্চে দাড়িয়ে তাৎক্ষনিক ভাবে বিশাল এক ভাষন রচনা করে মানুষকে স্বাধীনতার জন্য অনুপ্রানিত করে গিয়েছিলেন; বলেছিলেন “আমরা ওদের ভাতে মারব, পানিতে মারব, তোমাদের যার যা কিছু আছে তাই নিয়ে যুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়, এবারের সংগ্রাম আমাদের স্বাধীনতার সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম” তাৎক্ষনিক ভাবে কিভাবে তিনি গেরিলা যুদ্ধের সমস্ত উপায় আর রন কৌশল বলে দিয়ে গিয়েছিলেন এক মঞ্চে দাড়িয়েই যা ভেবে আজও সামরিক বিশ্লেষকরা অবাক হয়ে যান এও কি করে সম্ভব হয়েছিল কোন প্রকার পুর্বপ্রস্তুতি ছাড়াই। তিনি ছিলেন এমনই এক নেতা।
যুথি আর তমালকে তিনি শোনান দ্বিগবিজয়ী সম্রাট আলেকজান্ডারের কথা, মাত্র একুশ বছর বয়সেই সে কি করে পৃথিবী দখল করেছিল। মঙ্গলিয়ানদের স্থপতি বর্ণমলিন ত্বকের চেঙ্গিস খানের কথা, সামান্য এক দাস হতে কি করে তিনি মঙ্গলিয়ানদের স্থপতি হয়েছিলেন, কি করে তিনি মৃত্যুকে জয় করতে চেয়েছিলেন। ইসলামের ইতিহাসে দ্বিবিজয়ী সম্রাটদের কথা, তাদের ন্যায় পরানয়তার কথা। অন্ধকারাচ্ছন্ন আরবের বুকে মোহাম্মদের হাত ধরে কিভাবে আলোর ছোয়া এসেছিল আর সেই আলোর ছটা ছড়িয়ে পড়েছিল বিশ্বময়। মানবতার মহান আলোকদুত, ইশ্বরের সর্বশেষ প্রতিনিধি পুরো আরবের সম্রাট হয়েও কিভাবে তিনি অনাড়ম্বর দিনাতিপাত করতেন। কিম্বা ইসলামের খলিফা হযরত উমরের কথা। খেজুর পাতার একটি বিছানা আর একটি পানির সোহারীই ছিল তার বাসার একমাত্র সম্বল। মরুর বুকে খেজুর গা্ছের ছায়ায় বসে তিনি অবসর কাটাতেন। তিনি তাদের শোনান এজ এ হিউম্যান ফ্রমএ (মানুষরুপে) ঈশ্বর কিভাবে পৃথিবীতে এসেছিলেন আর সেই মানব জাতির কথা যারা তাদের স্বয়ং ঈশ্বরকেই হত্যা করেছিল। সম্রাট সোলায়মান কিভাবে তামাম দুনিয়ার প্রানীদেরকে নিজের আজ্ঞাধীন করেছিলেন। তরুন বয়সেই এক বিজ্ঞানী ক্যালকুলাস আবিস্কার করে কিভাবে পুরো বিশ্বভ্রক্ষান্ডের প্রতি মানুষের চিন্তাধারাকে নিমেষেই পরিবর্তন করে দেন। আর সর্বশেষ স্টিফেন হকিং মাত্র একুশ বছর বয়সেই মটর নিউরন রোগে আক্রান্ত হয়ে অচল শরীর নিয়ে কিভাবে সৃষ্টি রহস্যকে ব্যাখা করেছেন। এইতো পৃথিবীর ইতিহাস, যা একট একটু করে মানুষের সভ্যতার বিকাশকে পাল্টে দিচ্ছে। নিয়ে যাচ্ছে অনন্তের পথে, স্রষ্টার খুবই কাছাকাছি। সেই দিন হয়তো আর বেশী দুরে নয় যেদিন মানুষ স্বয়ং স্রষ্টাকেই খুজে পাবে কিংবা হয়তো তিনিই স্বয়ং ধরা দেবেন মানুষের খুব কাছে এসে।

আকমল সাহেব তাদের শোনান বাদশা ফেরাউনের ইতিহাস। যিনি ছিলেন অত্যাধিক মাতৃভক্ত। আল্লাহর নির্দেশে মুসা ফেরাউনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে কিছুতেই তাকে কাবু করতে না পেরে আল্লাহর কাছে অনুযোগ করলেন “হে আল্লাহ, কেন তুমি আমাকে ফেরাউনের সামনে বারবার লজ্জায় ফেলছ? তুমি কি আমার বিজয় চাও না, তুমি কি চাও না তোমার পবিত্র বানীর জয় হোক? আল্লাহ ফেরাউনকে জানালেন; “হে মুসা, ফেরাউন কখনো তার মাকে অসম্মান করে নি আর মায়ের কথার অবাধ্যও হয় নি। তার গর্ভধারীনি মা তার উপর সন্তুষ্ট, তাহলে আমি স্বয়ং আল্লাহ কি ভাবে তার উপর অসন্তুষ্ট হতে ‍পারি? তুমি চেষ্টা কর তার মা যেন তার উপর অসন্তুষ্ট হয়ে যায় তবে আমিও তার উপর গজব পাঠিয়ে দেব।” ফেরাউন ছিলেন এমনই আল্লাহ (স্রষ্টা) ভক্ত সে প্রতিদিন মুসার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতেন আর রাতে আধারে আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে বলতেন করত; “হে আল্লাহ তুমি এই যুদ্ধে আমার বিজয় এনে দাও।” নীলনদের পানিতে যখন তার সৈন্যবাহিনীকে ডুবিয়ে দেয়া হয় ফেরাউন আল্লাহর কাছে কেদে কেদে প্রার্থনা করেছিলেন “হে আল্লাহ শেষবারের মত আমি তোমার কাছে প্রার্থনা করছি তুমি আমাকে এই পানিতে নিশ্চিহ্ন করে দিও না।” আর তাই তো স্বয়ং আল্লাহ তার কাছে প্রতিজ্ঞা করেছিলেন “আমি তোমাকে নিশ্চিহ্ন করব না তবে তোমার দেহবশেষ পৃথিবী ধ্বংসের পুর্বপর্যন্ত রক্ষা করব।” আল্লাহর প্রতি এই বিশ্বাসের জন্য আল্লাহ হয়তো তাকে এভাবে সম্মানিত করেছেন। এটা ছিল আল্লাহর পক্ষ হতে তার ‍অপ্রিয় এক বান্দার জন্য উপহার অথচ যে তাকে মনপ্রান দিয়ে বিশ্বাস করত ও ভালবাসত। ঠিক যেভাবে ফেরেশতাদের নেতা আযাযিল আল্লাহকে সর্বোচ্চ সম্মান করতো বলেই মানুষের সামনে মাথা নত করে নি। কারন আল্লাহ পুর্বেই বলে দিয়েছিলেন এই বিশ্বভ্রক্ষান্ডে আমি আল্লাহই এক মাত্র সেজদা পাওয়ার যোগ্য। যখন তিনি দেখতে চাইলেন তার সৃষ্ট ফেরেশতাদের বিচারবুদ্ধি কেমন আর তিনি নির্দেশ দিলেন তোমরা এই মানব কে সেজদা কর। আল্লাহর নির্দেশ তাই সবাই পালন করল কিন্তু স্বর্গ দেবতাদের নেতা আযাযিল চিন্তা করল এই অনন্ত মহবিশ্বে একমাত্র আল্লাহই তো সর্বশক্তিমান এবং সেজদা পাওয়ার যোগ্য তবে কেন আমি এই তুচ্ছ মানবের কাছে মাথা নত করব? আর আল্লাহ এতই সন্তুষ্ট হলেন এবং আবারো ঘোষনা করলেন নিশ্চয়ই আমিই সর্বোচ্চ জ্ঞানী, বিচক্ষন এবং সর্ববিষয়ে জ্ঞাত। কারন তিনি কখনো ভুল করে না। তিনি সবসময়ই সঠিক ব্যাক্তি কে সঠিক স্থানে স্থাপন করেন।

হাটতে হাটতে, খেতে বসে কিংবা রাতের অন্ধকারে বাড়ির আঙিনায় বসে দুই ভাইবোনকে পৃথিবীর আদ্যপান্ত ইতিহাস শোনান ইকবাল সাহেব। এভাবে ইকবাল সাহেব দুই জ্ঞান পিপাসু তরুন-তরুনীর অন্তরে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ বন্ধু হিসেবে ধরা দেন। যতই দিন যায় তাদের মন ক্রমশই অস্থির হতে থাকে কারন তাদের ঢাকা ফিরে যাবার দিন যে ঘনিয়ে এসেছে। এই জ্ঞান সমুদ্র ছেড়ে যেতে তাদের কিছুতেই মন চাইছে না। যতই দিন যায় জ্ঞাঢন সমুদ্রের নুড়ি পাথর নিয়ে আরো খেলার জন্য তাদের মন অস্থির হতে থাকে। ওদের জানার আগ্রহ ক্রমশই বাড়তে থাকে। একেই কি বলে সত্যিকারের জ্ঞান পিপাসু? না আরো জানতে হবে, ওদের মধ্যে জানার প্রবল আগ্রহ চেপে বসে।

একদিন ওরা ইকবাল সাহেবকে প্রশ্ন করে; আচ্ছা আংকেল। পবিত্র কোরানে আল্লাহ তো বলেছেন তিনি প্রত্যেক জাতির জন্য এক বা একাধিক পথপ্রদর্শক পাঠিয়েছেন। কিন্তু এই ভারতীয় উপমহাদেশের জন্য কি কেউ শান্তির বানী নিয়ে স্রষ্টার পক্ষ হতে এসেছিল?
ইকবাল সাহেব প্রশ্নটা শুনে বেশ চিন্তায় পড়ে গেলেন; তাই তো! এমন করে তো কখনো ভাবেন নি। তিনি তার জ্ঞানের ঝুলি হাতড়ে চলে গেলেন ভারতীয় উপমহাদেশের ইতিহাসের পাতায়, তন্ন-তন্ন করে খুজলেন স্রষ্টার অভিধান গুলো, পাঠ করলেন স্মৃতির পৃষ্ঠায়-পৃষ্ঠায়। অবশেষে তিনি একজন ব্যাক্তির দেখা পান, যার ব্যাক্তিত্ব আর জীবন কার্যক্রমকে তুলনা করা যেতে পারে সেই সব মহান মানুষগুলোর সাথে যারা অন্ধাকারাচ্ছন্ন আরবের বুকে একবিন্দু আলোর ছটা এনে ছড়িয়ে দিয়েছিলেন বিশ্বময়। কিন্তু তিনি স্রষ্টা প্রেরিত আলোর দুত ছিলেন কিনা? এই প্রশ্নের উত্তর খুজে পান না তিনি। হ্যা, তার মনে পড়ে ভগবান শ্রীকৃষ্ণের বিখ্যাত উক্তি, তিনি যুগে-যুগে মানুষ রুপে এই পৃথিবীতে এসেছেন এবং আসবেন। তিনি আসবেন মানব সভ্যতার যে কোন ক্রান্তিলগ্নে। যেমন এসেছিলেন ভারতীয় উপমহাদেশের এই অতি সাধারন মানুষটি। তিনি ঈশ্বরের একজন প্রতিনিধিও হতে পারতেন!

ইকবাল সাহেব ওদের আরো কাছে এসে বসতে বলেন। নতুন কিছু শোনার উদ্দিপনায় দুজনের শরীর শিহরিত হয়ে ওঠে। ইকবাল সাহেব বলতে লাগলেন; আমাদের এই ভারতীয় উপমহাদেশে এমন একজন ব্যাক্তি জম্নেছিলেন যাকে মানুষরুপে স্রষ্টার জম্নগ্রহন বললেও হয়তো ভুল হবে না। তার জীবনাদর্শকে তুলনা করা যেতে পারে সেই সব মহা মানবদের সাথে যারা যুগে যুগে এই পৃথিবীকে অন্ধকার মুক্ত করার জন্য শান্তির বানী নিয়ে এসেছিলেন। তবে আমি জানি না তিনি স্রষ্টা প্রেরিত কোন পথপ্রদর্শক ছিলেন কিনা। তিনি ছিলেন অন্যতম প্রধান ভারতীয় রাজনীতিবিদ, ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের রুপকার এবং প্রভাবশালী আধ্যাত্মিক নেতা। তিনি ছিলেন সত্যাগ্রহ আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতা। এর মাধ্যমে স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে জনসাধারণের অবাধ্যতা ঘোষিত হয়েছিল। এ আন্দোলন প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল অহিংস মতবাদ বা দর্শনের উপর এবং এটি ছিল ভারতীয় স্বাধীনতা আন্দোলনের অন্যতম চালিকা শক্তি, সারা বিশ্বে মানুষের স্বাধীনতা এবং অধিকার পাওয়ার আন্দোলনের অন্যতম অনুপ্রেরণা। তিনি ভারতের জাতির জনক মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধী বা মহাত্মা গান্ধী যিনি আগামী প্রজন্মের জন্য আদর্শ*। ভারতে এবং বিশ্ব জুড়ে মহাত্মা (মহান আত্মা) এবং বাপু (বাবা) নামে তিনি পরিচিত। মহাত্মা গান্ধী সমস্ত পরিস্থিতিতেই অহিংস মতবাদ এবং সত্যের ব্যাপারে অটল থেকেছেন। তিনি অতি সাধারণ জীবনযাপন করতেন।

এই মহান মানুষটির পরিধেয় কাপড় ছিল একটুকরো ঐতিহ্যবাহী ভারতীয় ধুতি এবং শাল যা তিনি নিজেই চরকায় বুনতেন এবং যা কখনোই তার পুরো শরীরকে আচ্ছাদিত করার জন্য যথেষ্ট ছিল না। এমনকি তিনি নিজের পরিধেয় কাপড় নিজেই পরিস্কার করতেন। তিনি সাধারণ নিরামিষ খাবার খেতেন। আত্মশুদ্ধি এবং প্রতিবাদের কারণে দীর্ঘ সময়ের জন্য উপবাসও থাকতেন। তার মুলনীতি ছিল: সত্য, অহিংসা, নিরামিষভোজন, ব্রহ্মচর্য, বিশ্বাস এবং সরলত্ব।

মহাত্মা গান্ধী তার জীবনকে সত্য অনুসন্ধানের বৃহৎ উদ্দেশ্যে উৎসর্গ করেছিলেন। তিনি নিজের ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে, এবং নিজের উপর নিরীক্ষা চালিয়ে তা অর্জন করেছিলেন। গান্ধী বলেন তাঁর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যুদ্ধ ছিল নিজের অন্ধকার, ভয় ও নিরাপত্তাহীনতাকে কাটিয়ে ওঠা। গান্ধী তাঁর বিশ্বাসকে সংক্ষিপ্ত করে বলেন, ঈশ্বর হল সত্য এবং সত্য হল ঈশ্বর। এর অর্থ সত্যই হল ঈশ্বরের ক্ষেত্রে গান্ধীর দর্শন।

অহিংসার ধারনার বহিঃপ্রকাশ হিন্দু ধর্মীয় চিন্তাধারা এবং নিদর্শন হিসেবে হিন্দু, বৌদ্ধ, জৈন, ইহুদি এবং খ্রিষ্টান বর্ণণায় পাওয়া যায়। গান্ধীজী বলেন: যখন আমি হতাশ হই , আমি স্মরণ করি সমগ্র ইতিহাসেই সত্য ও ভালবাসার জয় হয়েছে । দুঃশাসক ও হত্যাকারীদের কখনো কখনো অপরাজেয় মনে হলেও শেষ সবসময়ই তাদের পতন ঘটে সর্বদাই।

শিশু থাকতে গান্ধী পরীক্ষামূলকভাবে মাংস খান। এটি হয়ত তার বংশগত কৌতুহল ও তার বন্ধু শেখ মেহতাবের কারণে হয়েছিল। নিরামিষভোজন এর ধারণা হিন্দু ও জৈন ধর্মে গভীরভাবে বিদ্যমান। নিরামিষভোজনই ছিল ব্রহ্মচর্চায় তার গভীর মনযোগের সূচনা। মুখের উপর নিয়ন্ত্রণ না আনতে পারলে তার ব্রহ্মচার্য্য ব্যর্থ হতে পারত বলে তিনি বলে গেছেন।

গান্ধীর ষোল বছর বয়সে তার বাবা ভীষণ অসুস্থ হয়ে পড়েন। গান্ধী তার বাবার অসুস্থতার পুরো সময় তার সাথে থাকেন। একরাতে গান্ধীর চাচা এসে তাকে বিশ্রাম নেবার সুযোগ করে দেন। তিনি তার বেডরুমে ফিরে যান এবং কামনার বশবর্তী হয়ে তার স্ত্রীর সাথে প্রণয়ে লিপ্ত হন। এর সামান্য পরেই একজন কর্মচারি এসে তার পিতার মৃত্যুসংবাদ জানায়। তিনি এ ঘটনাটিকে দ্বিগুণ লজ্জা হিসেবে আখ্যায়িত করেন। এই ঘটনাটি গান্ধীকে ৩৬ বছর বয়সে বিবাহিত থাকা অবস্থায় একজন সেলিবেট হতে বাধ্য করে। এই সিদ্ধান্তের পেছনে ব্রহ্মচর্যের দর্শন তাকে ব্যাপকভাবে প্ররোচিত করে, যা আদর্শগত ও বাস্তবগত পবিত্রতার চর্চা করে। গান্ধী ব্রহ্মাচারকে ঈশ্বরের সান্নিধ্য লাভ এবং আত্মোপলব্ধির পন্থা হিসেবে দেখতেন। গান্ধী তার আত্মজীবনীতে তার শৈশবের স্ত্রী কাস্তুর্বার সম্পর্কে তার কামলালসা এবং হিংসার বিরুদ্ধে সংগ্রাম করার কথা বলেন। গান্ধী আত্মনিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে আদর্শ হবার প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখেন যেন তিনি ভোগ করার বদলে ভালোবাসতে শেখেন। গান্ধীর কাছে ব্রহ্মচর্যের অর্থ ছিল "চিন্তা, বাক্য ও কর্মের নিয়ন্ত্রণ"।

তিনি বলেন “হিন্দুবাদ আমাকে পরিপূর্ণভাবে তৃপ্ত করে, আমার সম্পুর্ণ স্বত্ত্বাকে পরিপূর্ণ করেছে। যখন সংশয় আমাকে আঘাত করে, যখন হতাশা আমার মুখের দিকে কড়া চোখে তাকায়, এবং যখন দিগন্তে আমি একবিন্দু আলোও দেখতে পাই না, তখন আমি ভগবত গীতার দিকে ফিরে তাকাই, এবং নিজেকে শান্ত করার একটি পংক্তি খুঁজে নিই; এবং আমি অনতিবিলম্বে অত্যাধিক কষ্টের মাঝেও হেসে উঠি। আমি ভগবত গীতার শিক্ষার কাছে কৃতজ্ঞ। যদি আমি খ্রিস্টান ধর্মকে নিখুঁত এবং শ্রেষ্টতম ধর্ম হিসেবে মেনে নিতে না পারি, তবে হিন্দু ধর্মকেও সেভাবে মেনে নিতে পারি না। যদি অস্পৃশ্যতা হিন্দু ধর্মের অংশ হয় তবে, এটি একটি পচা অংশ বা আঁচিল। বেদবাক্যগুলোকে ঈশ্বরের অনুপ্রাণিত উক্তি বলার কারণ কি? যদি এগুলো অনুপ্রাণিত হয় তবে বাইবেল বা কোরান কেন নয়। যখনি আমরা নৈতিক ভিত্তি হারিয়ে ফেলি, আমরা ধার্মিক হওয়া থেকে ক্ষান্ত হই। নৈতিকতা হারিয়ে ধার্মিক হওয়া বলতে কিছু নেই। যেমন মানুষ মিথ্যাবাদী, নির্মম এবং আত্মসংযমহীন হয়ে দাবি করতে পারে না যে ঈশ্বর তার সাথে আছেন। হ্যাঁ, আমি তাই। এ ছাড়াও আমি একজন খ্রিস্টান, একজন মুসলিম, একজন বৌদ্ধ এবং একজন ইহুদি।”

গান্ধী প্রবলভাবে বিশ্বাস করতেন যে, সামাজিক কাজে নিয়োজিত একজন ব্যক্তি অবশ্যই সাধারণ জীবন যাপন করবে যেটা তার মতে তাকে ব্রহ্মচর্যের পথে নিয়ে যাবে । তাঁর সরলত্বের সূচনা ঘটে দক্ষিণ আফ্রিকায় যাপিত পশ্চিমি জীবনাচরণ ত্যাগ করার মাধ্যমে। তিনি এটিকে "শুন্যে নেমে যাওয়া" হিসেবে আখ্যায়িত করেন যার মধ্যে ছিল অপ্রয়োজনীয় খরচ কমিয়ে ফেলা, সাদামাটা জীবনযাপন গ্রহণ করা এবং নিজের কাপড় নিজে ধোয়া। আর তাই তো এই মহান মানুষটির পরিধেয় কাপড় ছিল একটুকরো ঐতিহ্যবাহী ভারতীয় ধুতি এবং শাল যা তিনি নিজেই চরকায় বুনতেন এবং যা কখনোই তার পুরো শরীরকে আচ্ছাদিত করার জন্য যথেষ্ট ছিল না এবং তিনি নিজের পরিধেয় কাপড় নিজেই পরিস্কার করতেন।

অন্যায়ের বিরুদ্ধে গান্ধীর অস্ত্র ছিল অসহযোগ এবং শান্তিপূর্ণ প্রতিরোধ এবং মানুষকে ভালবাসতেন তিনি নিজের চেয়েও বেশী। অসত্যের বিরুদ্ধে তিনি ছিলেন ইস্পাতের মত কঠিন আর মানবতার কাছে কর্পুর সম। দি থিওরি ‍অফ সাইক্লিক্যালি সিমেট্রিক এস্কপ্রেসন সর্ম্পকে জান তমাল, যুথি? প্রশ্ন করেন ইকবাল সাহেব।
দুজনে একে অপরের মুখের দিকে তাকায় ওরা। হ্যা, জানি। আমরা ম্যাথমেটিকসে পড়েছিলাম। সংক্ষেপে একে সাইক্লিক ‍অর্ডার বলা হয়।
আমাদের এই বিশ্ব ভ্রক্ষান্ড চলছে এই সাইক্লিক অর্ডার মতে। তাই ঘুরেফিরে ঘটনাগুলো আবর্তিত হয়। মানবতার মহান এক পথপ্রদর্শককে বিতাড়িত করা হয়েছিল তার প্রিয় মাতৃভুমি হতে। তিনি মাতৃভুমি ত্যাগ কালে চোখের পানি ফেলতে ফেলতে বলেছিলেন “হে আমার স্বদেশ তুমি কতই অপরুপ, আমি তোমাকে ভালবাসি কিন্তু তোমার সন্তানেরাই তো আমাকে থাকতে দিল না।” আর ক্রশবিদ্ধ হয়ে ইশ্বর কি বলেছিলেন জান? “পবিত্র পিতা কেন তুমি আমাকে ত্যাগ করেছ? এরা তো জানে না এরা কি করছে? তুমি এদের ক্ষমা করে দাও।” আর সেই ঘটনাও পুনরাবৃত্তি হয়েছিল আমাদের বাপুজীর ক্ষেত্রেও। ১৯৪৮ সালের ৩০ জানুয়ারি গান্ধীকে গুলি করে হত্যা করা হয়। যখন তিনি নতুন দিল্লীর বিরলা ভবন মাঝে রাত্রিকালীন পথসভা করছিলেন আর মৃত্যু কালে শেষ উচ্চারন করেছিলেন “হে রাম”। "হে রাম" যাকে অনুবাদ করে বলা যায় "ও ঈশ্বর" এই শব্দ দুটিকে গান্ধীর শেষ কথা বলে বিশ্বাস করা হয়।

এবং বাপুজীর প্রতি মানুষের ভালবাসা ফুটে উঠেছিল এভাবে: "বন্ধু ও সহযোদ্ধারা আমাদের জীবন থেকে আলো হারিয়ে গেছে, এবং সেখানে শুধুই অন্ধকার এবং আমি ঠিক জানি না আপনাদের কি বলব, কেমন করে বলব। আমাদের প্রেমময় নেতা যাকে আমরা বাপু বলে থাকি, আমাদের জাতীর পিতা আর নেই। হয়ত এভাবে বলায় আমার ভূল হচ্ছে, তবে আমরা আর তাকে দেখতে পাব না যাকে আমরা বহুদিন ধরে দেখেছি, আমরা আর উপদেশ কিংবা স্বান্ত্বনার জন্য তার কাছে ছুটে যাব না এবং এটি এক ভয়াবহ আঘাত, শুধু আমার জন্যই নয়, এই দেশের লক্ষ লক্ষ মানুষের জন্য।"** হয়তো বা পুরো মানব জাতীর জন্যই।


*মহাত্মা গান্ধী, আগামী প্রজন্মের জন্য আদর্শ। (a role model for the generations to come) ; পদার্থবিজ্ঞানী অ্যালবার্ট আইনস্টাইন, ১৯৩১ খ্রিষ্টাব্দ।
**জাতীর উদ্দেশ্যে জওহরলাল নেহরুর বানী।

ইন্টারনেট হতে সংগৃহিত।
১৭টি মন্তব্য ১৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ব্যবহারে বংশের পরিচয় নয় ব্যক্তিক পরিচয়।

লিখেছেন এম ডি মুসা, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:১৫

১ম ধাপঃ

দৈনন্দিন জীবনে চলার পথে কত মানুষের সাথে দেখা হয়। মানুষের প্রকৃত বৈশিষ্ট্য আসলেই লুকিয়ে রাখে। এভাবেই চলাফেরা করে। মানুষের আভিজাত্য বৈশিষ্ট্য তার বৈশিষ্ট্য। সময়ের সাথে সাথে কেউ কেউ সম্পূর্ণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

মহিলা আম্পায়ার, কিছু খেলোয়ারদের নারী বিদ্বেষী মনোভাব লুকানো যায় নি

লিখেছেন হাসান কালবৈশাখী, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯



গত বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল প্রাইম ব্যাংক ও মোহামেডানের ম্যাচে আম্পায়ার হিসেবে ছিলেন সাথিরা জাকির জেসি। অভিযোগ উঠেছে, লিগে দুইয়ে থাকা মোহামেডান ও পাঁচে থাকা প্রাইমের মধ্যকার ম্যাচে নারী আম্পায়ার... ...বাকিটুকু পড়ুন

জানা আপুর আপডেট

লিখেছেন আরাফআহনাফ, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৫৭

জানা আপুর কোন আপডেট পাচ্ছি না অনেকদিন!
কেমন আছেন তিনি - জানলে কেউ কী জানবেন -প্লিজ?
প্রিয় আপুর জন্য অজস্র শুভ কামনা।



বি:দ্র:
নেটে খুঁজে পেলাম এই লিন্ক টা - সবার প্রোফাইল... ...বাকিটুকু পড়ুন

বন্ধুর বউ কে শাড়ি উপহার দিলেন ব্যারিস্টার সুমন। বাটার প্লাই এফেক্ট এর সুন্দর উদাহারন।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:০৭



এক দেশে ছিলো এক ছেলে। তিনি ছিলেন ব্যারিস্টার। তার নাম ব্যারিস্টার সুমন। তিনি একজন সম্মানিত আইনসভার সদস্য। তিনি সরকার কতৃক কিছু শাড়ি পায়, তার জনগণের মাঝে বিলি করার জন্য।... ...বাকিটুকু পড়ুন

অধুনা পাল্টে যাওয়া গ্রাম বা মফঃস্বল আর ভ্যাবাচ্যাকা খাওয়া শহুরে মানুষ!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:০০


দেশের দ্রব্যমুল্যের বাজারে আগুন। মধ্যবিত্তরা তো বটেই উচ্চবিত্তরা পর্যন্ত বাজারে গিয়ে আয়ের সাথে ব্যায়ের তাল মেলাতে হিমসিম খাচ্ছে- - একদিকে বাইরে সুর্য আগুনে উত্তাপ ছড়াচ্ছে অন্যদিকে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যমুল্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

×