somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ছোটগল্পঃ একজন শুকন্তলা

১৭ ই নভেম্বর, ২০১৪ রাত ২:৩৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



১৬ বছর বয়সে শুকন্তলার বিয়ে হয় হাসানের সাথে। কবুল বলার সময় তার থেকে বিদায় নেয় জীবনের সব সুখ। কাঁদতে কাঁদতে নিজের বাসা ছেড়ে বুকভরা আবেগ ঢেকে চলে আসে অন্যের ঘড়ে। হয়ে যায় অন্যকারো।

লাল টুকটুকে এক শাড়ি পরে সে আসে সম্পূর্ণ অপরিচিত এই পরিবেশে। কিন্তু কেউ একটু চোখ তুলেও তাকায় না। যে যার যার কাজে ব্যস্ত। যেই ঘরে তার বিয়ে হয় সেখানকার বেশিরভাগেরই মত ছিল না বিয়েতে। তারা চেয়েছিল এমন এক মেয়ের সাথে বিয়ে হোক যে ভাল মত শিক্ষিত। কিন্তু হাসানের কাছে শিক্ষার চেয়ে সৌন্দর্যের গুরুত্ব বেশি হওয়ায় বিয়েটা হয়।

এভাবেই প্রথমত পরিবারের কাছ থেকে অবহেলিত হয়ে কেটে যায় বছরখানেক। হাসান সাহেব একটু ভাল অবস্থানে আসলে ছোট একটি বাসা নেয় শহরে। গ্রাম ছেড়ে শহরে চলে আসার সময় শুকন্তলার সে কি উত্তেজনা। ইতিমধ্যে তার একটি ছেলে হয়। আবার নতুন করে স্বপ্ন দেখতে শুরু করে সে। ছেলেকে নিজের মত করে বড় করার স্বপ্ন, একটি সাজানো সংসারের স্বপ্ন। ছিমছাম বাসা। একটা বারান্দা। পাশেই ছোট বাগান। সে, তার ছেলে এবং স্বামী সুখে থাকবে। ব্যাস, এতটুকুই।

তারা গ্রাম ছেড়ে চলে আসে শহরে। কিন্তু সে যা ভেবেছিল তার কিছুই হয় না। হাসান সাহেব সারাদিন কাজে থাকে বাসার বাইরে। সকালে বের হয়, রাতে বাসায় ফিরে। ভাত খেয়ে ঘুম। যেন একটা নিয়মেই আবদ্ধ তার জীবন। শুকন্তলা বাসায় সারাদিন একা। বড় বিরক্ত লাগে তার। রাতে হাসান সাহেব ফিরলে, খাওয়ার টেবিলে তার ইচ্ছে করে ভাত খেতে খেতে জীবনের সুখের গল্প গুলো করতে। কিন্তু হাসান সাহেবের গম্ভীর অভিব্যক্তি দেখে সাহস হয় না। খাওয়ার রুচিও থাকে না তার। কতদিন আর এসব আলু ভর্তা, শাখ সবজি দিয়ে খাওয়া যায়। মাছ মাংস দূরে থাক, একটা ডিম ভেজে খাওয়াও যেন তাদের বিলাসিতা হয়ে যাবে। নিঃশব্দে ভাত খেয়ে উঠে আসে শুকন্তলা। নীরবে চলে যায় ছাদে। তার একটি অদ্ভুত স্বভাব আছে। মন খারাপ হলে আকাশ দেখতে ইচ্ছা করে। মাঝে মাঝে নির্বাক সময় কাটে তারা ভরা আকাশের নিচে, মাঝে মাঝে ঝাপসা হয়ে আসে দৃষ্টি।

নিজে দিনে নিয়ম করে একবার কাঁদলেও অন্য কাউকে কাঁদতে দেখলে তার অবাক লাগে। অদ্ভুত এক প্রশ্ন জাগে মনে, যার কোন মা বাবা থাকে না। 'মানুষ কাঁদে কেন? তারা যদি আমার জায়গা থেকে দেখতে পারত তাদের জীবন!'

বৃষ্টি হলেও সে চলে যায় ছাদে কিংবা জনশূন্য রাস্তায়। কোন মানুষকে দেখতে না পেয়ে কিছুটা হতাশ হয়। আজকাল মানুষ কি এতই ব্যস্ত যে একটু বৃষ্টিতে ভেজার সময়ও হয় না? তাদের শৈশবের সময় তো ঠিক এমন ছিল না সবকিছু। বৃষ্টির স্পর্শে নস্টালজিক হয়ে যায় শুকন্তলা। এক এক করে মনে পড়ে হারিয়ে যাওয়া দিনগুলোর কথা। কি জীবন সে কাটিয়ে এসেছে আর এখন তা হয়েছে কেমন? ভাই বোন সবাই মিলে কত বৃষ্টিতে ভিজেছে। স্কুল বন্ধের দিনে একসাথে কত রাত কাটিয়েছে গল্প করে। সারারাত এক রুমে গোল করে বসে গল্প করা শেষে কাকডাকা ভোরে সুখের রেশ নিয়ে যে যার রুমে ঘুমুতে গিয়েছে বুকভরা তৃপ্তি নিয়ে। স্কুল খোলা থাকলে গ্রামের আঁকাবাঁকা পথে হেটে একসাথে গিয়েছে স্কুলে। কত হাসি, কত কান্না। কত ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ভাললাগা।
শুকন্তলা উদাস মনে ভাবে, এখন কোথায় সে দিনগুলো?

সময় গড়িয়ে যায়। রাস্তায় হেটে যাওয়ার সময় প্রচন্ড ধনীব্যক্তি দেখলে শুকন্তলা তাকিয়ে থাকে মুগ্ধ দৃষ্টিতে। মস্তিষ্কে পুরাতন সেই ইচ্ছে আবার জেগে উঠে- 'কবে আমি টাকা কামাবো। কবে তাদের মত সুখী হবো'। পর মুহূর্তেই ঘোর ভাঙ্গে। একজন শুকন্তলার জীবনে বাস্তবতার প্রলেপ এতটাই প্রখর যে খুব বেশিক্ষণ কল্পনায় ডুবে থাকতে পারে না তারা।

শুকন্তলার ছেলে বড় হয়। স্কুলে ভর্তি করানোর সময় আসে। দিনে ঠিকমত ভাত খেতে পারাই সমস্যা সেখানে ছেলের লেখাপড়ার খরচ চালাবে কেমনে? এখন আর এতকিছু সে চিন্তা করতে পারে না। বুকের ভেতরটা কেমন খালি খালি লাগে। সে চিন্তাভাবনা বন্ধ করে বিধাতার কাছে প্রতবাদ জানায়, হায় খোদা এত মানুষ থাকতে কেন আমি? এক টুকরো সুখের আশায় কি কেটে যাবে পুরো জীবন? সে সময় কি কখনই আসবে না যখন অনেকের মত আমিও মনের সবটুকু তৃপ্তি মেঠানোর হাসি হেসে বলবো, জীবন এত সুন্দর কেন?

শুকন্তলাদের জীবনের গল্প এমনই হয়। খুব বেশি চাওয়া পাওয়া তাদের থাকে না। সুযোগ কিংবা পরিস্থিতিও নেই। অল্প যা কিছু চায় তাও তারা পায় না। তবু মনে আশা থাকে, একদিন সুখ আসবে। আফসোস, সেই একদিন আসার আগেই তাদের সবকিছু অসমাপ্ত রেখে পৃথিবীর মায়া ছেড়ে চলে যাওয়ার দিন চলে আসে।
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই নভেম্বর, ২০১৪ ভোর ৬:০৭
২১টি মন্তব্য ২১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

যুক্তরাষ্ট্রে ইসরাইল বিরোধী প্রতিবাদ বিক্ষোভ

লিখেছেন হাসান কালবৈশাখী, ০৩ রা মে, ২০২৪ সকাল ৮:০২

গাজায় হামাস উচ্ছেদ অতি সন্নিকটে হওয়ায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নিউইয়র্ক ও লসএঞ্জেলসে কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পরেছিল। আস্তে আস্তে নিউ ইয়র্ক ও অন্যান্ন ইউনিভার্সিটিতে বিক্ষোভকারীরা রীতিমত তাঁবু টানিয়ে সেখানে অবস্থান নিয়েছিল।


... ...বাকিটুকু পড়ুন

৫০১–এর মুক্তিতে অনেকেই আলহামদুলিল্লাহ বলছে…

লিখেছেন বিচার মানি তালগাছ আমার, ০৩ রা মে, ২০২৪ বিকাল ৩:০০



১. মামুনুল হক কোন সময় ৫০১-এ ধরা পড়েছিলেন? যে সময় অনেক মাদ্রাসা ছাত্র রাজনৈতিক হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছিল। দেশ তখন উত্তাল। ঐ সময় তার মত পরিচিত একজন লোকের কীভাবে মাথায় আসলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

মেহেদীর পরিবার সংক্রান্ত আপডেট

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৮:৪৯


মার্চ মাস থেকেই বিষয়টি নিয়ে ভাবছিলাম। ক'দিন আগেও খুলনায় যাওয়ার ইচ্ছের কথা জানিয়েও আমার বিগত লিখায় কিছু তথ্য চেয়েছিলাম। অনেক ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও মেহেদীর পরিবারকে দেখতে আমার খুলনা যাওয়া হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

'চুরি তো চুরি, আবার সিনাজুরি'

লিখেছেন এমজেডএফ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৮


নীলসাধুকে চকলেট বিতরণের দায়িত্ব দিয়ে প্রবাসী ব্লগার সোহানীর যে তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছিল তা বিলম্বে হলেও আমরা জেনেছি। যাদেরকে চকলেট দেওয়ার কথা ছিল তাদের একজনকেও তিনি চকলেট দেননি। এমতাবস্থায় প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বরাবর ব্লগ কর্তৃপক্ষ

লিখেছেন নীলসাধু, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২২

আমি ব্লগে নিয়মিত নই।
মাঝে মাঝে আসি। নিজের লেখা পোষ্ট করি আবার চলে যাই।
মাঝেমাঝে সহ ব্লগারদের পোষ্টে মন্তব্য করি
তাদের লেখা পড়ি।
এই ব্লগের কয়েকজন ব্লগার নিজ নিক ও ফেইক... ...বাকিটুকু পড়ুন

×