somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গল্পঃ জীবনের কেন্দ্রবিন্দু

০৬ ই জুলাই, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:২৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :




ভাই বিয়েটা করতে পারছি না।
–তা এখন?

এটা তো আমার অন্যায় কোন চাহিদা না। খুবই যৌক্তিক চাহিদা। কি করা যায় ভাই?
–কি করার আছে বলে মনে হয়?

আমার এই গরীবি হালতে কে আমাকে তার মেয়ে বিয়ে দিবে বলেন?
–আপনার চেষ্টা আপনি করুন। যার দেয়ার সে দিবে। আর, আল্লাহর উপর ভরসা করার চেষ্টা করুন।

এতটুকেই কথা শেষ হয়েছিল আমার সেদিন ইয়াসিন ভাইয়ের সাথে। তারপর তিনি রাত হয়ে গেছে বলে তার বাসার দিকে হাঁটা দিলেন। তারপর, সপ্তাহ খানেক পর দেখা। ইয়াসিন ভাই আমার দিকে তাকিয়ে বললেন, আপনার মাথা থেকে বিয়ের ভূত নেমেছে?

–ভাই এ কি নামার মত ভূত?

ইয়াসিন ভাই যেন আমার কথা শুনতে পায়নি এমন ভাব করে বললেন, আজ আমার সাথে এক জায়গায় চলুন।

তিনি আমাকে কোথায় নিতে চান আমি এসব কিছুই জিজ্ঞেস না করে তার সাথে যাওয়ার জন্য রাজি হয়ে গেলাম। ইয়াসিন ভাই একটা রিকশা ডেকে দাঁড় করালো। আমরা উঠে পড়লাম। রিকশার চাকা ঘুড়তে শুরু করলো।

ইয়াসিন ভাইকে বিরক্ত করবার জন্য নাকি কেন জানি না, আমি ভাইকে বললাম, একটা রিকশারও চাকা ঘুড়ে, আমার বিয়ের চাকা ঘুড়ে না কেন ভাই? আমার "সে" আসে না কেন?

–আপনি একটু চুপচাপ বসে থাকুন। এরপর দ্বিতীয় কথাটি বলার আগে মাথায় রাখবেন, আপনাকে এক ধাক্কায় রিকশা থেকে ফেলা হবে। তখন রাস্তায় গাড়ির চাকার তলে পড়বার আগে বলতে পারেন, বিয়ে করিনি, আমায় মারবেন না!

ভাইয়ের রসিকতায় আমার হাসি পেল না। তবে আমি চুপই হয়ে গেলাম।

খানিক পথ পেরুবার পর রিকশাটা একটা অন্ধকার রকমের জায়গায় এসে দাঁড়াল। ইয়াসিন ভাই রাস্তা দেখিয়েই এখানে নিয়ে এলেন।

আমরা নামলাম। ইয়াসিন ভাই আমাকে সাথে নিয়ে একটু সামনে গেলেন। দেখলাম একজন বৃদ্ধ মানুষ শুয়ে আছেন৷ কংকালের মতো জীর্ণশীর্ণ দেহ। শরীরের চামড়া হাড্ডির সাথে লেগে আছে।

তিনি ঘুমাচ্ছিলেন নাকি শুয়ে আছেন বুঝলাম না, তবে বুঝলাম এরকম একটা জায়গাও কারো শুবার জায়গা।

ইয়াসিন ভাই একটু সামনে যেয়ে তাকে সালাম দিলেন।

তিনি উঠে দাঁড়ালেন। ক্ষীণ কন্ঠে বললেন, ওয়ালাইকুম আসসালাম।

ইয়াসিন ভাই তার হাতের খাবারের প্যাকেট লোকটির দিকে বাড়িয়ে দিলেন। তিনি প্যাকেটটা নিতেই সিজদাহ তে পড়ে গেলেন। তিনি কাঁদছেন, খুব কাঁদছেন। কাঁদতে কাঁদতে বিড়বিড় করে কী জানি বলছেন।

আমি এই দৃশ্য দেখে চোখের পানি বহু কষ্টে আটকিয়ে রাখলাম। ইয়াসিন ভাই আমাকে নিয়ে সেখান থেকে চলে এলেন।


সেদিনের পর থেকে বহুদিন পেরিয়ে গেল। বিয়ের ভূত মাথা থেকে কষ্ট করে নামাতে হল না, সে ঘটনার পর আপনা আপনিই নেমে গেল। আল্লাহ যেমন রেখেছেন, যা দিয়েছেন তাতেই আমি সন্তুষ্ট থাকার চেষ্টা করছি।

আশ্চর্য ব্যাপারটা হল; বিয়ে কেন করতে পারছি না এই পেরেশানি থেকে মুখ ফিরিয়ে আল্লাহর দিকে যখন মুখ স্থির করলাম, মুখাপেক্ষী হলাম; আমার জীবন যেন বসন্তের ডালি সাজিয়ে আমার সামনে এসে উপস্থিত হলো।

ধীরে ধীরে সব লাইনে চলে এলো। একটা মানানসই জায়গায় চাকরি হয়ে গেল। আমি ভাবিনি, এমন জায়গা থেকে এক টুকরো বসন্ত এসে হাজির হলো আমার জীবনে।


আমার সামনে যেই যুবতীটি বসে আছেন, সে-ই আমার দ্বীনের অর্ধেক। আজ বিয়ে হলো আমাদের। আমার মুখ দিয়ে তখনও কোন কথা বেরুচ্ছিল না।

তবু জড়তা কাটিয়ে বললাম, এতদিন পর এলেন কেন?

আমার মুখে 'আপনি' শুনে সে কিছু ভাবলো নাকি তার কথাটি বুঝতে সময় লাগলো, বুঝিনি। যেন প্রথমে অন্যমনস্কতার কারণে ছুটে যাওয়া কথা একটু পর বুঝেছে, সেভাবে; যেদিকে ফিরে ছিল সেদিক থেকেই বললো, 'আপনাকেও যদি আমি একই প্রশ্ন করি?'

–আমি তো বলবো, আল্লাহ যখন চেয়েছে তখন এসেছি।

আপনার উত্তর জানা থাকার পরও জিজ্ঞেস করছেন কেন?

আমি হাসলাম। আচ্ছা হাসতে হাসতেই কি মানুষ কেঁদে ফেলতে পারে? আমার জানা নেই। আমি কাঁদি নি, মৃদু হেসেই তাকে বললাম, 'আমার সাথে দুই রাকাত সালাতুস শোকর পড়বেন?'
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই জুলাই, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:২৫
৭টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×