গত ৬-৭ মাস আগে আমাদের নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের রোড দিয়ে বর্তমান যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের গিয়েছিলেন। যোগাযোগমন্ত্রী আসবেন বলে তড়িঘড়ি করে এক দিনের মাঝেই সোনাপুর থেকে ভার্সিটি পর্যন্ত রোডটিকে এক্কেবারে সমান করে ফেলেছিল। এই রোডে একটা পোলের মেরামতের কাজ চলছিল যেটা দীর্ঘদিন ধরে ভাঙ্গা অবস্থায় পড়ে ছিল। ওইদিনের মাঝেই সেই পোলের কাজ কোনভাবে শেষ করে ফেলা হল। যদিও এই ভাঙ্গা পোলের সংস্কারের জন্য দীর্ঘদিন ধরে ক্যাঁচাল করেও লাভ হয়নি। কতদিন যে জীবনের মায়া ত্যাগ করে দোয়া-দরূদ পড়তে পড়তে এই পোল পার হয়েছি তার ইয়ত্তা নাই! আর এই ভাঙ্গা পোল দিয়ে সমানে চলত বিশাল বিশাল বাস এবং ট্রাক।
তো, একদিনের মাঝে রোড সংস্কারের ফলাফল দাঁড়াল: এখন সেই রোডে যাতায়াত করার সময় মনে হয় যেন রোলার কোস্টারে চড়ছি। তবে একদিক থেকে ব্যাপারটা খারাপ না! ফ্রি-তে রোলার কোস্টারের রাইডিং এর স্বাদ উপভোগ করতে পারছি।
আজ হঠাৎ এই কথাগুলো মনে পড়ল। কেন? আজকে (মানে গতকাল, ১২টা বাইজা গেসে) নোয়াখালীতে আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এসেছিলেন। তিনি এখানকার হাউসিংয়ের বিশাল মাঠে সমাবেশে এসেছেন। এই উপলক্ষে গোটা নোয়াখালী আজ উৎসবমুখর। দলে দলে মানুষ শুধু সমাবেশে যোগদানের জন্য ট্রাকে করে, বাসে করে যাচ্ছিল। এমনকি ফেনী থেকে নোয়াখালী আসার সকল যানবাহনও আজকে রিসার্ভ ছিল শুধুমাত্র সমাবেশে যোগদানের জন্য।
আর প্রধানমন্ত্রীর সৌজন্যে নোয়াখালী’র মাইজদীর সড়কগুলো আজ কার্পেটের মত মোলায়েম করে ফেলা হয়েছে। (একথা তো আর বলতে হচ্ছেনা কাজটা কয়দিনে হয়েছে! ) তবে আসলে সব রাস্তা বললে ভুল হবে। প্রধানমন্ত্রী যেসব রোড দিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে, এবং যতটুকু পর্যন্ত উনার যাওয়ার সম্ভাবনা আছে, ঠিক ততটুকু পর্যন্তই রোড ঠিক করা হয়েছে। ব্যাপারটাকে কিভাবে বলা যায়– আমি ভাষা খুঁজে পাচ্ছিনা।
এখন আমার আফসোস হচ্ছে প্রধানমন্ত্রী কেন আমাদের ভার্সিটি রোডে আসলো না! তাহলে অন্তত কয়দিনের জন্য হলেও এই রোডে যাতায়াত করে আরাম পেতাম!
আর এরকম যদি প্রধানমন্ত্রী বা মন্ত্রী মহোদয়েরা দেশের সকল এলাকায় নিয়মিত পরিদর্শন করতে আসেন, তাহলে বাংলাদেশের রাস্তা-ঘাট গুলোকে মঙ্গল গ্রহের ভূমির সাথে তুলনা করে মজা নেয়া লাগতো না। বরং আমরা রাস্তায় গড়াগড়ি খাইতে পারতাম!!
লেখাটি এর আগে প্রথম-আলো ব্লগে এবং ফেনী ব্লগে প্রকাশিত হয়েছে।
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই জানুয়ারি, ২০১৩ রাত ২:২৯