somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নবীজীবনের একটি ঘটনা : নবীশিক্ষার একটি ঝলক।

০৮ ই আগস্ট, ২০১৩ রাত ১:২০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :





হযরত আমর ইবনে আবাসা (রাঃ) বলেন, জাহেলী যুগে আমি যখন মানুষকে মূর্তিপূজা করতে দেখতাম আমার কাছে মনে হত, নিশ্চয়ই এরা পথভ্রষ্ট। এদের এ সকল কাজ সম্পূর্ণ অসার। হঠাৎ একদিন শুনতে পেলাম, মক্কায় এক ব্যক্তির আবির্ভাব হয়েছে যিনি গায়েবের খবর বলেন। তখন আমি মক্কার উদ্দেশে বের হলাম। মক্কায় পৌঁছে জানলাম, তিনি গোপনে ইসলাম প্রচার করছেন আর কওম তাঁর প্রতি চরম ক্ষিপ্ত হয়ে আছে।

আমি চুপিচুপি তাঁকে খুঁজতে লাগলাম। তিনি মক্কায় ওকাজ নামক স্থানে ছিলেন। আমি সেখানে পৌঁছে তাঁকে সালাম দিলাম। এবং জিজ্ঞাসা করলাম, ‘আপনার পরিচয় কী?’ তিনি বললেন, ‘আমি আল্লাহর নবী।’ বললাম, ‘আল্লাহর নবী মানে কী?’ তিনি বললেন, ‘আল্লাহর বার্তাবাহক।’ বললাম, ‘কে আপনাকে পাঠিয়েছেন?’ বললেন, ‘আল্লাহ।’ আমি বললাম, ‘সত্যিই কি আপনাকে আল্লাহ পাঠিয়েছেন?’ তিনি বললেন, ‘হ্যাঁ।’ বললাম, ‘(আল্লাহ) আপনাকে কী বার্তা দিয়ে পাঠিয়েছেন?’ তিনি বললেন, ‘আত্মীয়তা রক্ষা করা, মূর্তি (মূর্তি পূজা) ও সকল বাতিল ধর্ম বিলুপ্ত করা, রক্তপাত-হানাহানি বন্ধ করা, মানুষের (জানমাল) চলার পথের নিরাপত্তা বিধান করা, আল্লাহকে এক বলে বিশ্বাস করা ও তাঁর সাথে কাউকে শরীক না করা।’ আমি বললাম, ‘আপনার রব কত সুন্দর সুন্দর বিষয় দিয়ে আপনাকে পাঠিয়েছেন!’ আমি আপনাকে সাক্ষী রাখছি, আমি আপনার উপর ঈমান আনলাম এবং আপনাকে সত্য নবী বলে বিশ্বাস করলাম। আর কে কে আপনার এই দ্বীন গ্রহণ করেছে?’ বললেন, ‘একজন আযাদ ও একজন গোলাম (অর্থাৎ আবু বকর রাঃ ও বেলাল রাঃ)।’

আমি আরজ করলাম, ‘আল্লাহর রাসূল! আমি আপনার সাথে থাকতে চাই এবং আপনার অনুসরণ করতে চাই।’ বললেন, ‘এখন তা সম্ভব নয়। দেখছ না, পরিস্থিতি কত প্রতিকূল? আমি গোপনে দাওয়াত দিচ্ছি আর আমার কওম চরম বিরোধিতা করছে। তুমি এখন পরিবারের কাছে ফিরে যাও। যখন শুনবে আমার বিজয় হয়েছে তখন আমার কাছে চলে এসো।’ একথা শুনে আমি আমার পরিবারের কাছে ফিরে এলাম।

আমর ইবনে আবাসা বলতেন, ‘তখন আমি ছিলাম ইসলামের (মুসলমানদের) চারভাগের একভাগ। অর্থাৎ চারজনের একজন।’

এরপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদীনায় হিজরত করলেন। আমি স্বদেশেই অবস্থান করছিলাম ও সব খবরাখবর রাখছিলাম। ইতিমধ্যে একদিন মদীনার একটি কাফেলা এল। আমি জিজ্ঞাসা করলাম, ‘মক্কা থেকে যিনি মদীনায় গিয়েছেন তার খবর কী?’ তারা বলল, ‘মানুষ খুব দ্রুত তাঁর ধর্ম গ্রহণ করছে। তাঁর কওম তাকে হত্যা করতে চেয়েছিল, পারেনি।’

তখন আমি মদীনায় গেলাম ও রাসূলের সাথে সাক্ষাত করে বললাম, ‘আল্লাহর রাসূল! আপনি কি আমাকে চিনতে পেরেছেন?’ তিনি বললেন, ‘মক্কায় আমার সাথে তোমার সাক্ষাত হয়েছিল।’

আমি বললাম, ‘জ্বি, হাঁ।’ তারপর আরজ করলাম, ‘আল্লাহর রাসূল! আমার অজানা বিষয়, যা আল্লাহ তাআলা আপনাকে শিখিয়েছেন তা থেকে আমাকে কিছু শিক্ষা দিন। আমাকে নামায শেখান।’ আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘ফজরের নামায আদায় করবে। তারপর সূর্য পূর্বাকাশে উঁচু হওয়া পর্যন্ত নামায পড়া থেকে বিরত থাকবে। কারণ সূর্য উদিত হয় শয়তানের দুই শিংয়ের মাঝে। ঐ সময় কাফেররা সূর্যকে সিজদা করে।

‘যখন সূর্য উঁচু হয় তখন নামায পড়বে। কারণ নামায আল্লাহর দরবারে পেশ করা হয়। এরপর যখন বর্শার ছায়া সংক্ষিপ্ত হয় (অর্থাৎ সূর্য মধ্য গগণে উঠে আসে) তখন নামায পড়া থেকে বিরত থাকবে। কারণ এ সময় জাহান্নাম উত্তপ্ত করা হয়।

এরপর যখন ছায়া দীর্ঘ হতে আরম্ভ করে তখন নামায পড়বে। মনে রাখবে, সকল নামায আল্লাহর দরবারে উপস্থাপন করা হয়।

আসরের নামাযের পর সূর্যাস্ত পর্যন্ত নামায পড়া থেকে বিরত থাকবে। কারণ সূর্য অস্ত যায় শয়তানের দুই শিংয়ের মাঝে। ঐ সময় কাফেররা সূর্যকে সিজদা করে।

আমি আরজ করলাম, ‘আল্লাহর রাসূল! আমাকে অযু শেখান।’ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘যখন তোমার সামনে অযুর পানি আসবে প্রথমে কুলি করবে। তারপর নাকে পানি দিবে ও নাক ঝাড়বে। তখন চেহারার, মুখের ও নাকের গুনাহসমূহ ঝরে পড়বে। এরপর যখন আল্লাহর নির্দেশ মোতাবেক মুখমন্ডল ধৌত করবে তখন পানির সাথে দাড়ির অগ্রভাগ দিয়ে চেহারার গুনাহসমুহ ঝরে পড়বে। এরপর যখন কনুইসহ দুই হাত ধৌত করবে তখন আঙ্গুলের অগ্রভাগ দিয়ে দুই হাতের গুনাহসমুহ ঝরে পড়বে। এরপর যখন মাথা মাসেহ করবে তখন চুলের অগ্রভাগ দিয়ে মাথার গুনাহসমূহ ঝরে পড়বে। এরপর যখন টাখনুসহ দুই পা ধৌত করবে তখন পায়ের আঙ্গুলির অগ্রভাগ দিয়ে পায়ের গুনাহসমূহ ঝরে পড়বে। এরপর যদি বান্দা নামাযে দাঁড়ায় এবং আল্লাহর শান মোতাবেক হামদ, ছানা ও তাঁর মহত্ব বর্ণনা করে, অন্তরকে সবকিছু থেকে খালি করে একমাত্র আল্লাহমুখী হয়, তাহলে সে নামায শেষ করার পর সদ্যজাত শিশুর মতো নিষ্পাপ হয়ে যায়।’

এ হাদীস শুনে সাহাবী আবু উমামা (রাঃ) বললেন, ‘হে আমর ইবনে আবাসা! কী বলছেন ভেবে দেখুন। এভাবে একবার নামায পড়লেই বান্দা এই ফযীলত লাভ করবে?

আমর বললেন, ‘আবু উমামা! আমায় বয়স হয়েছে, মৃত্যুর সময় ঘনিয়ে এসেছে। এ অবস্থায় কীসের আশায় আমি আল্লাহর রাসূলের নামে মিথ্যা বলতে যাব? আমি যদি রাসূল থেকে এ কথা একবার দুইবার তিনবার সাতবার না শুনতাম আমি তা বর্ণনা করতাম না। আমি তো এই কথা আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট থেকে এর চেয়েও বেশিবার শুনেছি।’

তথ্যসূত্র : সহীহ মুসলিম, হাদীস : ৮৩২; মুসতাদরাকে হাকেম, হাদীস : ৪৪৭৫; আসসিরাতুয যাহাযিবয়্যাহ ২/৬৮-৬৯

## আপনার প্রিয়জনদের কাছে পৌঁছে দিন ইসলামের শাশ্বত বাণী। হৃদয় থেকে হৃদয় উদ্ভাসিত হোক ঈমানের আলোকচ্ছটায়


ফেইস বুক পেইজঃ বিশ্বনবী মুহাম্মদ (সাঃ) থেকে।
১২টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। আমের খাট্টা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৪



তাতানো গরমে কাল দুপুরে কাচা আমের খাট্টা দেখে ব্যাপারটা স্বর্গীয় মনে হল । আহা কি স্বাদ তার । অন্যান্য জিনিসের মত কাচা আমের দাম বাড়াতে ভুল করেনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ডাক্তার ডেথঃ হ্যারল্ড শিপম্যান

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:০৪



উপরওয়ালার পরে আমরা আমাদের জীবনের ডাক্তারদের উপর ভরশা করি । যারা অবিশ্বাসী তারা তো এক নম্বরেই ডাক্তারের ভরশা করে । এটা ছাড়া অবশ্য আমাদের আর কোন উপায়ই থাকে না... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার ইতং বিতং কিচ্ছার একটা দিন!!!

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:০৩



এলার্ম এর যন্ত্রণায় প্রতিদিন সকালে ঘুম ভাঙ্গে আমার। পুরাপুরি সজাগ হওয়ার আগেই আমার প্রথম কাজ হয় মোবাইলের এলার্ম বন্ধ করা, আর স্ক্রীণে এক ঝলক ব্লগের চেহারা দেখা। পরে কিছু মনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিসিএস শুধু দেশের রাজধানী মুখস্ত করার পরীক্ষা নয়।

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:১৪

"আমার বিসিএস এক্সামের সিট পরেছিলো ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট এ, প্রিপারেশন তো ভালোনা, পড়াশুনাও করিনাই, ৭০০ টাকা খরচ করে এপ্লাই করেছি এই ভেবে এক্সাম দিতে যাওয়া। আমার সামনের সিটেই এক মেয়ে,... ...বাকিটুকু পড়ুন

কে কাকে বিশ্বাস করবে?

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৩৯


করোনার সময় এক লোক ৯৯৯ এ ফোন করে সাহায্য চেয়েছিল। খবরটা স্থানীয় চেয়ারম্যানের কানে গেলে ওনি লোকটাকে ধরে এনে পিটিয়েছিলেন। কারণ, ৯৯৯ এ ফোন দেওয়ায় তার সম্মানহানি হয়েছে।

সমাজে এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×