somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

এ এক অন্য স্মৃতির স্বাদ!

০৬ ই আগস্ট, ২০০৯ দুপুর ১:১৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

গত শনিবার রাত তিনটায় এসএমএস এর টিঁ টিঁ আগমন ধ্বনিতে কাঁচা ঘুম ভেঙ্গে গেলো। পরদিন সকালে উঠা খুবই জরুরী ছিলো। চোখ রগড়ে, 'কোন গাধার বাচ্চা এত রাতে...' শেষ না করতেই জিভে কামড় দিলাম। দেশ থেকে বন্ধুবৎসল এক নারীর শুভেচ্ছাবার্তা। রাত তিনটার সময় জানলাম, ২রা আগস্ট বন্ধুদিবস আর সেটার স্মরণেই মধ্যরাতে আমাকে স্মরণ করেছে হাজার মাইল দূরে থাকা এক রমণী। এই পোস্ট সেই রমণী বা বন্ধুদিবসের অভিজ্ঞত কোনটা নিয়েই নয়, বরং কিছু চিঠি নিয়ে। গত পোস্টও চিঠি নিয়ে ছিলো। না, আমাকে পত্ররোগে পায়নি। অনেক দিন পরে আকস্মিক এক বন্ধুর উদয় যে আনন্দ এনে দিতে পারে, সেটা ভাগাভাগি করার ইচ্ছাতেই এ' লেখা।

কিছুদিন আগে ফেসবুকে একটা মেসেজ পেলাম। এক ঝটকায় সেই চিঠিটা আমাকে নিয়ে ফেললো দু'দশক আগের পরিমন্ডলে। আমার ফেলে আসা শৈশব, অসাধারণ কিছু স্মৃতি, প্রিয় কিছু মানুষের মুখ নিমেষেই জায়গা করে নিলো চোখের পর্দায়। কেমন যেন নাটকীয় অনুভূতি! সেই চিঠি, উত্তর, প্রতিউত্তর হুবুহু তুলে দিচ্ছি অনুবাদ করে।


তাজীন,
আমি জানি তুমি ব্যস্ত জীবনযাপন করো, কিন্তু ২০ বছর পর পরিচিত কোন মুখ খুঁজে পেলে কেমন অনুভূতি হতে পারে, অনুমান করতে পারো? একটু ২০ বছর আগের অতীতে ফিরে যাও...রণকেলী প্রাইমারি স্কুল, ক্লাসের সবচেয়ে দুষ্ট ছেলে ডালিম। মনে পড়ে?

দুঃখিত যদি তোমাকে বিরক্ত করে থাকি।



আমি বাকহারা। সিলেটের গোলাপগঞ্জ উপজেলার এই স্কুলে বাবা-মার চাকরির সুবাদে কিছুটা সময় কাটিয়েছিলাম। গ্রাম্য পরিবেশের ছোঁয়া, অত্যন্ত সহজ জীবনযাপনের স্বাদ নেয়া, শীতের ভোরের কুয়াশা আর বেলাশেষে ধূলোমাখা পায়ে বাড়ি ফেরার অভিজ্ঞতা ৭/৮ বছরের আমার তখনই হয়েছিলো। আর কখনো ফিরে যাইনি সে জায়গাটাতে, বহুবার চেয়েছি কিন্তু কেন যেন যাওয়া হয়ে ওঠেনি। বছর দু'য়েকের প্রবল স্মৃতির ভার তবুও অনুজ্জ্বল হয়নি।

কিন্তু আমি ডালিমকে কিছুতেই মনে করতে পারলামনা।


প্রিয় ডালিম,
আমি কেন বিরক্ত হবো? ফেসবুকে ছোটবেলার কোন বন্ধু আমাকে খুঁজে পেয়েছে, এ তো রীতিমত আনন্দজনক ব্যাপার। ৮৯ সালে রণকেলী থেকে চলে আসি আমরা। কিন্তু সে জায়গার স্মৃতি আমাকে এখনো তাড়িয়ে বেড়ায়। এত সুন্দর কিছু সময় কাটিয়েছি ওখানে! কোন একদিন হুট করে চলে যাবো সে জায়গাটাতে, আশা রাখি।

স্বীকার করছি, তোমাকে আমি মনে করতে পারছিনা। এজন্য দুঃখিত। তুমি কি আমাকে একটু সাহায্য করবে? কোথায় থাকতে তোমরা বা পরিচিত কারো নাম বলতে পারো? আমি সত্যি তোমার কথা, রণকেলীর কথা কিংবা সেখানে থাকা আমার পরিচিত যে কারো কথা খুব আগ্রহ নিয়ে জানতে চাই।

তাজীন


এবার আমার বাল্যবন্ধু স্মৃতির ঝাঁপি খুলে বসলো। সবটুকু আমার মনে নেই। ২০ বছরে কত কিছুই হারিয়ে যায়।


আমিও তোমার সমসময়েই ওই জায়গা ছেড়েছি। কিন্তু নস্টালজিয়া আমার পিছু ছাড়েনি। তোমাদের মত আমি অত ভালো মানের ছাত্র ছিলামনা। সত্যি বলতে কি, তোমাদের দু'বোনের যখন আগমন ঘটলো আমাদের ক্লাসে (যতদূর মনে পড়ে ক্লাস থ্রি এর শেষভাগ), হঠাৎ করেই আমার নিজেকে গেঁয়ো আর আনস্মার্ট মনে হতে লাগলো। তোমরা দু'বোন শহর থেকে এসেছো। আমি কখনো এরকম পরিবেশ থেকে আসা ছেলেমেয়ের সাথে আগে মিশিনি। আমরা প্রাণপণ চেষ্টা করছি তোমাদের সাথে খাপ খাওয়াতে, প্রতিযোগিতায় মেতে উঠতে। আস্তে আস্তে পুরো ক্লাসের মধ্যে পরিবর্তন আসা শুরু করলো। পাভেল, যাকে তুমি 'বেল' ডাকতে, পড়াশুনায় বেশ ভালো করলো তোমাদের সাথে প্রতিযোগিতার নেশা থেকে। দিলওয়ারও বেশ ভালো ছিলো। তুমি অপি ছাড়া আর কারো সাথেই তেমন গল্প করতেনা। তোমাদের দু'বোনের মধ্যে পড়াশোনা নিয়ে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই ছিলো, এটা আমরা খুব এনজয় করতাম।

তুমি নাচ-গান করতে, আবৃত্তি করতে। তোমার কি একদিনের কথা মনে আছে যেদিন স্কুলের একটা ফাংশনে তোমার নাচ করার কথা ছিলো। কিন্তু হঠাৎ তুমি খুব অসুস্থ হয়ে পড়লে? তোমার আম্মা তোমাকে কিছুটা জোর করেই মঞ্চে তুলে দিলেন। শেষমেষ তুমি স্টেজে উঠে বমি করে দিলে!

আমি তোমাদের কাছ থেকেই 'we shall overcome' গানটা প্রথম শুনি। তোমার কি মনে আছে যে আমি আর আরো কয়েকজন তোমাদের বাসায় রিহার্সাল করতে যেতাম? একবার চা খাওয়ার পরে আমার গলার স্বর পুরা বন্ধ হয়ে গেলো। হা হা হা।

একদিন একদম ভরা ক্লাসের মধ্যে দৌড়াতে গিয়ে তোমার মাথার সাথে আমি জোরে বাড়ি খেলাম। তুমি তখন আমাকে উদ্দেশ্য করে শুধু একটা শব্দই বলেছিলে- "খবিস"। হা হা হা। আমি আমার সারাজীবনে এই ঘটনার কথা ভুলবোনা।

যাইহোক, নস্টালজিয়া কখনো শেষ হবার নয়। তোমার বাবা-মা আর জনীন,জেরিনদের আমার শুভেচ্ছা জানিও।

ডালিম


আমি রীতিমত থ। পুলকিত, শিহরিত। একটা কিশোর তার অতীতজীবনে আমাকে জড়িয়ে এত সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম ব্যাপার মনে রেখেছে! মনে হলো আমাকে কেউ খুব মূল্যবান কোন উপহার দিয়েছে। কারো স্মৃতি রোমন্থন যে আমাকে এতটা আনন্দ এনে দিতে পারে, কখনো ভাবিনি। উত্তর লিখলাম।



হায় খোদা, ডালিম, তুমি আমার, আমার পরিবার নিয়ে এতকিছু মনে রেখেছো? এটা আমার কাছে স্বপ্ন-সত্যি-হলো জাতীয় ব্যাপার। আমার নিজেকে ভীষণ গর্বিত মনে হচ্ছে। খুব ছোটবেলার একজন বন্ধুকে আবিষ্কার করতে পেরে আমার ভেতরটা সত্যি নড়ে উঠেছে। আমার মনে হয়না আমি আর কখনো তোমাকে হারাতে চাইবো।

'খবিস' এর জন্য আমি সত্যি দুঃখিত। তখন তো ছোট ছিলাম, আত্মসম্মান বেশি ছিলো। এখন ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি :)

তাজীন



এরপরে আরো কিছু চিঠিতে ডালিম জানালো তার জীবনের কথা। সেই ছোট্ট কিশোর থেকে আজ পর্যন্ত তার পথচলার সারসংক্ষেপ। জানালো অন্য বন্ধুদের কথাও। অনেককেই আমি ভুলে গেছি, ওর সাথে যোগাযোগ ছিলো কারো কারো। এখন ঢাকায় আছে।

ডালিম, আমার খুব ইচ্ছা, রণকেলীর সেই উঁচু টিলার উপর স্কুলটাতে আমি কখনো তোমাকে সাথে নিয়ে ঘুরতে যাবো। হয়ত একদিন সত্যি যাওয়া হবে আমাদের। একমুঠো কৈশোরকে হাত পেতে নিতে আমরা না হয় একটু পেছনেই ফিরে গেলাম।
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই আগস্ট, ২০০৯ দুপুর ১:২১
৩৪টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জামায়াত শিবির রাজাকারদের ফাসির প্রতিশোধ নিতে সামু ব্লগকে ব্লগার ও পাঠক শূন্য করার ষড়যন্ত্র করতে পারে।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৪৯


সামু ব্লগের সাথে রাজাকার এর সম্পর্ক বেজি আর সাপের মধ্যে। সামু ব্লগে রাজাকার জামায়াত শিবির নিষিদ্ধ। তাদের ছাগু নামকরণ করা হয় এই ব্লগ থেকেই। শুধু তাই নয় জারজ বেজন্মা... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাওরের রাস্তার সেই আলপনা ক্ষতিকর

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৫৯

বাংলা বর্ষবরণ উদযাপন উপলক্ষে দেশের ইতিহাসে দীর্ঘতম আলপনা আঁকা হয়েছে কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম হাওরের ‘অলওয়েদার’ রাস্তায়। মিঠামইন জিরো পয়েন্ট থেকে অষ্টগ্রাম জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত ১৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এই আলপনার রং পানিতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছবির গল্প, গল্পের ছবি

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৩:১৫



সজিনা বিক্রি করছে ছোট্ট বিক্রেতা। এতো ছোট বিক্রেতা ও আমাদের ক্যামেরা দেখে যখন আশেপাশের মানুষ জমা হয়েছিল তখন বাচ্চাটি খুবই লজ্জায় পড়ে যায়। পরে আমরা তাকে আর বিরক্ত না করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×