somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিবর্তন সম্ভব?

১৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৫ দুপুর ১:২৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

- ড. খুরশিদ আলম

. | 22-07-2015


1

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিবর্তন সম্ভব? - ড. খুরশিদ আলম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে জাতির প্রত্যাশা অনেক। কারণ এটিকে এক সময় প্রাচ্যের অক্সফোর্ড বলা হতো। বিশ্ববিদ্যালয়টি ১৯২১ সালের ১ জুলাই মাসে যাত্রা শুরু করে। এটি এখন বিশ্বমানের বিবেচনায় পৃথিবীর প্রথম ৩০০০ বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে স্থান পাচ্ছে না।

আবার কারও কারও মতে, বিশ্ববিদ্যালয়টির অবস্থান অতটা খারাপ নয়। কেন এটিকে প্রাচ্যের অক্সফোর্ড বলা হতো, কোথায় এর সমস্যা এবং কীভাবে এর উত্তরণ সম্ভব? এ ক'টি বিষয় নিয়ে এখানে আলোচনা করা হলো।



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে কেন প্রাচ্যের অক্সফোর্ড বলা হতো এ কথা এখনকার শিক্ষার্থীরা জানেন না। বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে এ বিষয়ে তেমন কিছু নেই। প্রাচ্যের অক্সফোর্ড বলার অন্যতম কারণ ছিল, সত্যেন বোসের আইনস্টাইনের সংশোধনী, বোসন কণার আবিষ্কার, কাজী মোতাহার হোসেনের পরিসংখ্যান বিষয়ে তত্ত্ব, আর সি মজুমদারের ভারতের ইতিহাসের বিশ্লেষণসহ অসংখ্য অবদান পৃথিবীব্যাপী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনাম বয়ে আনে। এদের অবদান নিয়ে আজও পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে গবেষণা হচ্ছে। তাই বোধকরি তখনকার বাস্তবতায় এটিকে প্রাচ্যের অক্সফোর্ড বলা অসমীচীন ছিল না। সেই ধারা বজায় রেখে পাকিস্তানি ঔপনিবেশিক শাসনামলেও এ বিশ্ববিদ্যালয় একটি বিশেষ মান ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছিল।



বস্তুত বলা যায়, পুরো ঔপনিবেশিক আমলে এর অবস্থান ছিল ঈর্ষা করার মতো। পাকিস্তানি ঔপনিবেশিক আমলেও এখানে শিক্ষকতা করেছেন বিশ্বমানের শিক্ষকরা, যেমন_ ইতিহাসের আহমদ হাসান দানী, বাংলা সাহিত্যের অনেক কিংবদন্তি, বিজ্ঞানের মতিন চৌধুরী, সমাজবিজ্ঞানের নজমুল করিম, রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক রাজ্জাক এবং দর্শনের জে সি দেবের মতো পণ্ডিতরা। পাকিস্তানের আবদুস সালামের নাম নোবেল প্রাইজের জন্য প্রস্তাব করেছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মতিন চৌধুরী, যা তার মুখে শুনেছি।



দেশ স্বাধীন হওয়ার পর আস্তে আস্তে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের মান কমতে থাকে। এটি প্রথমত স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় শহীদ বুদ্ধিজীবীদের হত্যার মাধ্যমে শুরু হয়। তারপর একে একে এটির নিম্নদশা অব্যাহত থাকে। শিক্ষক নিয়োগে সর্বোচ্চ মেধা বাদ দিয়ে বা তাদের প্রাধান্য না দিয়ে এবং পরে দলীয় বিবেচনায় লোক নেওয়ার মাধ্যমে এটি শুরু হয়। এর সঙ্গে যেটি সবচেয়ে ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায় তা হচ্ছে, শিক্ষকদের এক ধরনের অটো-প্রমোশন দেওয়া। এমনকি কোনো একটি গবেষণাধর্মী জার্নালে পাবলিকেশন ছাড়াও প্রফেসর পর্যন্ত প্রমোশন পাওয়া কিংবা কোনো একটিও আন্তর্জাতিক প্রকাশনা ছাড়া প্রফেসর পদে উন্নীত হওয়ার নজির রয়েছে। পৃথিবীর অন্য কোথাও এমন উদাহরণ নেই। এমনকি পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে পিএইচডিসহ কিছু আন্তর্জাতিক প্রকাশনা নিয়ে এখন বিশ্ববিদ্যালয়ের লেকচারার হওয়া পর্যন্ত কষ্টকর। এ ছাড়াও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জার্নালগুলোর মান দেখে যে কেউ বিবেচনা করবে সে বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণার মান তেমন একটা ভালো নয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জার্নালে প্রকাশিত প্রবন্ধ এমনকি এই বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা পর্যন্ত তাদের গবেষণা প্রবন্ধে উল্লেখ (সাইটেশন) করেন না।



প্রশ্ন হলো, এ অবস্থার পরিবর্তন সম্ভব কিনা? হলে কীভাবে সম্ভব? বিশ্ববিদ্যালয়ের দায়িত্ব দুটি যার একটি হচ্ছে, জ্ঞান বিতরণ করা এবং অপরটি হচ্ছে জ্ঞান সৃষ্টি করা। যে বিশ্ববিদ্যালয় জ্ঞান সৃষ্টি করে না সে বিশ্ববিদ্যালয়ের গর্ব করার কিছু থাকে না। কারণ তার সঙ্গে কলেজগুলোর তেমন তফাত নেই। বর্তমান বছরের বাজেটে দেখা গেছে, ১৮০৫ শিক্ষক দ্বারা পরিচালিত, ৩৩,১১২ জন ছাত্রের জন্য মাত্র ৪.৫ কোটি টাকা গবেষণার জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এর মানে হচ্ছে, গড়ে প্রতি শিক্ষকের জন্য ২৪,৯৩০ টাকা গবেষণা বরাদ্দ রয়েছে। এ বাজেটে সরকার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে গবেষণায় তেমন বরাদ্দ দেয়নি বলে সবাই এক বাক্যে স্বীকার করবেন।



এ কথাও ভাবতে হবে যে, সরকার এ বিশ্ববিদ্যালয়টিকে কত টাকা বরাদ্দ দেবে এবং কোন খাতে কত টাকা দেবে তার কি কোনো পরিকল্পনা এ বিশ্ববিদ্যালয়ের আছে? এর কি কোনো চাহিদাভিত্তিক বাজেট তৈরি করা আছে? অর্থাৎ মোট বাজেটের কত অংশ গবেষণা খাতে ব্যয় করা হবে এবং তা পরিকল্পনা করে সরকারের কাছে জমা দেওয়া হয়েছে কিনা জানা নেই। আগামী অর্থবছরে বিশ্ববিদ্যালয় পরিবার কী কী গবেষণা করতে চায় এবং কী কী আন্তর্জাতিক প্রকাশনা করতে চায় তার পরিকল্পনা আছে কিনা? যদি থাকে তার জন্য কত টাকা দরকার? এটি জানা থাকলে কেবল সরকারের সঙ্গে গবেষণা খাতে বরাদ্দের জন্য দরকষাকষি করা যায়। তখন তা বিবেচনায় নিয়ে সরকার অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাজেটে কত টাকা দিতে পারে সে সিদ্ধান্ত নিতে পারে।



এমনকি গবেষণার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় কত টাকা সংগ্রহ করবে এবং সরকার কত টাকা দেবে তার একটি হিসাব করা যেতে পারে। যে বিশ্ববিদ্যালয় যত টাকা সংগ্রহ করবে সে বিশ্ববিদ্যালয়কে তত বেশি টাকা ম্যাচিং ফান্ড হিসেবে দেওয়া যেতে পারে; যেমন ৮০ :২০ হারে বা ৯০ :১০ হারে। এমনকি বছর শেষে যে টাকা সরকার ব্যয় করতে পারছে না বলে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় থেকে ফেরত যাচ্ছে, সেখান থেকেও গবেষণার জন্য বরাদ্দ দেওয়া যেতে পারে। এই গবেষণা বরাদ্দ কেবল দিলেই তার সুফল পাওয়া যাবে তা নয়, এর যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করা আমাদের দেশে অনেক কঠিন। কারণ সরকারি অনুদান যেসব জায়গায় দেওয়া হচ্ছে, সেসব জায়গা থেকে খুব ভালো গবেষণা করা হয় না বলে অনেক অভিযোগ শোনা যায়।



প্রতি বছর সরকারি ব্যাংকগুলোর তহবিল পুনর্ভরণের জন্য ৪০০০-৫০০০ কোটি টাকা দেওয়া হচ্ছে, তা কতটা যৌক্তিক বা কতটা দেশের কল্যাণে ব্যয় করা হচ্ছে? দক্ষতার সঙ্গে ব্যবহারের কথা নাই-বা বলা হলো। তার চেয়ে প্রতি বছর যদি ১০০০ কোটি টাকা ইউজিসির মাধ্যমে গবেষণার জন্য দেওয়া হয় এবং এভাবে প্রতি বছর বরাদ্দ বৃদ্ধি করলে সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর গবেষণার অর্থের অভাব হবে না। দেশের কোনো সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা বরাদ্দ যদি মাত্র ২-৩ লাখ টাকা হয় তা দিয়ে কোনোভাবে সে বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণার মান উন্নয়ন করা সম্ভব নয়। বিশ্বমান তো দূরে থাকুক, দক্ষিণ এশিয়ার মানও অর্জন করা সম্ভব নয়। আমাদের দেশের একটি প্রতিষ্ঠান বিআইডিএস যদি বিশ্বের ১০০টি থিঙ্কট্যাঙ্কে স্থান করে নিতে পারে, তাহলে ঢাকা বিশ্ববিদালয় এমনকি কেন এশিয়ার ১০০টির মধ্যে স্থান করে নিতে পারবে না? সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ের মাননীয় উপাচার্যরা অভিযোগ করেছেন, তাদের যথাযথ মর্যাদা দেওয়া হয় না। বস্তুত মর্যাদা কেউ কাউকে দেয় না, তা নিজগুণে আদায় করে নিতে হয়। আর জ্ঞান-বিজ্ঞানের রাজ্যে অবদান যে যত বেশি রাখতে পারে তাকে তত বেশি মর্যাদা দেওয়া হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের মর্যাদা না থাকলে তার উপাচার্যের মর্যাদা বৃদ্ধি পাবে কীভাবে?



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান অটো-প্রমোশন বন্ধ করে অন্যান্য দেশে যেভাবে প্রমোশন দেওয়া হয়, সেভাবে এখানে দিতে হবে। সেরা গবেষক এবং পণ্ডিতদের সরাসরি অধ্যাপক পদে নিয়োগ দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে, যেমন বিদেশে দেওয়া হয়। বার্ষিক গবেষণা এবং প্রকাশনা পরিকল্পনা তৈরি করতে হবে। গবেষণার জন্য নিজেদের অর্থ সংগ্রহের ব্যাপারে দেশে-বিদেশে প্রয়াস থাকতে হবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান বিজ্ঞ উপাচার্য সে নেতৃত্ব দেবেন কি?



লেখক: চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট

অব সোশ্যাল রিসার্চ ট্রাস্ট
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৫ দুপুর ১:২৭
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

পিআর পদ্ধতিতে জাতীয় সংসদের উচ্চ কক্ষের নির্বাচন আগে দিয়ে দেখতে দিন কে বাঘ কে বিড়াল?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:৪৬



সব দলের অংশগ্রহণে পিআর পদ্ধতিতে জাতীয় সংসদের উচ্চ কক্ষের নির্বাচন আগে দিন। কোন দলকে জনগণ প্রত্যাখ্যান করেছে কি করেনি সেইটাও জাতিকে দেখতে দিন। পিআর পদ্ধতির জাতীয় সংসদের উচ্চ... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিশ্চিত থাকেন জামায়েত ইসলাম এবার সরকার গঠন করবে

লিখেছেন সূচরিতা সেন, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৪২


আমাদের বুঝ হওয়ার পর থেকেই শুনে এসেছি জামায়েত ইসলাম,রাজাকার আলবদর ছিল,এবং সেই সূত্র ধরে বিগত সরকারদের আমলে
জামায়েত ইসলামের উপরে নানান ধরনের বিচার কার্য এমন কি জামায়েতের অনেক নেতা... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রকৌশলী এবং অসততা

লিখেছেন ফাহমিদা বারী, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:৫৭


যখন নব্বইয়ের দশকে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার সিদ্ধান্ত নিলাম এবং পছন্দ করলাম পুরকৌশল, তখন পরিচিত অপরিচিত অনেকেই অনেকরকম জ্ঞান দিলেন। জানেন তো, বাঙালির ইঞ্জিনিয়ারিং এবং ডাক্তারিতে পিএইচডি করা আছে। জেনারেল পিএইচডি। সবাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি ভারতকে যাহা দিয়াছি, ভারত উহা সারা জীবন মনে রাখিবে… :) =p~

লিখেছেন নতুন নকিব, ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১:১৫

আমি ভারতকে যাহা দিয়াছি, ভারত উহা সারা জীবন মনে রাখিবে… :) =p~

ছবি, এআই জেনারেটেড।

ইহা আর মানিয়া নেওয়া যাইতেছে না। একের পর এক মামলায় তাহাকে সাজা দেওয়া... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযুদ্ধের কবিতাঃ আমি বীরাঙ্গনা বলছি

লিখেছেন ইসিয়াক, ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:১৫


এখনো রক্তের দাগ লেগে আছে আমার অত্যাচারিত সারা শরীরে।
এখনো চামড়া পোড়া কটু গন্ধের ক্ষতে মাছিরা বসে মাঝে মাঝে।

এখনো চামড়ার বেল্টের বিভৎস কারুকাজ খচিত দাগ
আমার তীব্র কষ্টের দিনগুলোর কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×